বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

স্বর্ণভর্তি জুতো (মুফতি আতিকুল্লাহ আতিক)


উসমানি খিলাফতকাল। ক্রোয়েশিয়ার এক শহর। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে একটা দশ বছর বয়েসী ছেলে হেঁটে যাচ্ছে। শীতে কাতর। হি হি করে কাঁপছে। জীর্ণ পোশাক। নগ্নপদ।
.
তাকে দেখে এক মহিলার মনে বড় দয়া হলো। ডেকে নিয়ে খোঁজখবর করলো। নাম যোশেফ। খ্রিস্টান। মুসলিম মহিলা নিজেও খুবই গরীব। তবুও ছেলেটার কষ্ট দেখে নিজের পায়ের বড় বড় জুতো জোড়া দিয়ে দিল। অন্তত হাঁটার কষ্ট থেকে বাঁচতে পারবে। 
.
ঘটনার পর বহু বছর কেটে গেছে। সেদিনের মহিলা এখন অতি বৃদ্ধ। অর্থনৈতিক অবস্থা আরও শোচনীয়। বুড়িমা একদিন শুয়ে ছিলেন। দরজায় খটখট আওয়াজ হলো। কে এল? আসার মতো কেউ তো ইনজনমে নেই? দরজা খুললেন। সামনেই একজোড়া জুতো রাখা আছে। আরে এই জুতো তো আমার ছিল। উঠিয়ে নিয়েই দেখতে পেলেন দুই জুতোই স্বর্ণভর্তি। 
.
কৌতূহলী হয়ে গলা বাড়িয়ে বাইরে তাকালেন। একজন উসমানী জেনারেল দাঁড়িয়ে আছেন। পুরোদস্তুর সামরিক পোশাক পরিহিত। মিটিমিটি হাসছেন। বুড়ি অবাক! এত বড় একজন মানুষ তার দরজায় কী করছে? তখন লোকটা বলে উঠলো:
-বুড়িমা জুতোজোড়া চিনতে পেরেছেন?
-জ্বি তা পেরেছি। কিন্তু এগুলো কোত্থেকে এল? এই জুতো আমি বহু বছর আগে এক ছোট্ট বালককে দিয়েছিলাম। 
-আমার দিকে একটু তাকান, ভাল করে দেখুন তো চিনতে পারেন কি না!
.
ছোট্ট যোশেফ মহিলার বদান্যতার কথা ভুলতে পারেন নি। তিনি পরবর্তীতে উসমানি খিলাফাহর নৌ-বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। অবশ্যই ইসলাম গ্রহণ করার পর। জন্মেছিলেন আনুমানিক ১৬০৪ সালে। মৃত্যু ১৬৪৬ সালে। নিজের যোগ্যতাবলে খিলাফাহ বাহিনীতে উঁচু পদে আসীন হয়েছিলেন। 
১৬৪৫ ক্রীট দ্বীপ দখল করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। বিয়ে করেছিলেন উসমানি সুলতান প্রথম ইবরাহীমের মেয়ে ফাতিমাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো: কুচক্রীদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারণে, সুলতান নিজের মেয়েজামাতাকে এক বছর পরই ফাঁসি দিয়েছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন