শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

দারুল উলূম দেওবন্দের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা দা.বা.-এর মূল্যবান ভাষণ

শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা হলেন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. (মৃ.১৪১৭হি.)-এর বিশিষ্ট ছাত্র। বর্তমান সময়ের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস,হানাফী মাযহাবের অনেক বড় আলেম ও বহু গ্রন্থের রচয়িতাভাষ্যকার ও মুহাক্কিক /সম্পাদক। সিরিয়ার হালাব/ আলেপ্প হল তাঁর মাতৃভমি। তিনি বর্তমানে মাদীনাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থান করছেন।
আকাবিরে দেওবন্দ উলামায়ে কেরামের প্রতি তাঁর রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালবাসাযা তাঁর কথা ও লিখনী থেকে অনুমান করা যায়। সে হিসেবে অনেক আগ থেকেই দারুল উলূম দেওবন্দে আগমনের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল প্রচণ্ড ও তীব্র।
আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ও  তাঁর মেহেরবানিতে গত ৯/৩/১৪৩২ হি. তারিখে তিনি দারুল উলূম দেওবন্দে আগমন করেন। তিনি দারুল উলূম দেওবন্দে পৌছলে সেখানকার দায়িত্বশীলগণ ও শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। উলামায়ে কেরামের মধ্যে ছিলেনশায়েখ আরশাদ মাদানীশায়েখ নিমাতুল্লাহ আযমীশায়খ নূরুল আলম খলীল আমীনী ও শায়খ আবদুল খালেক সাম্ভলী দা. বা.
তিনি সেখানে কয়েক দফায় বৈঠক করেন। প্রথম বৈঠক করেন মুহতামিম ছাহেবের কক্ষে দারুল উলূমের দায়ীত্বশীল ও শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের সঙ্গে। সে বৈঠকে তিনি উপস্থিত দায়ীত্বশীল ও উলামায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বলেন,
এটা আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত যেআপনারা আপনাদের যোগ্য পূর্বসূরী উলামা-মাশায়েখ হতে ইলমের এক বিশাল উত্তরাধিকার লাভ করেছেন। কাজেই এ বিশাল নিআমতের কদর করুন। আপনাদের সন্তানদেরকে এ ইলমী মারকায থাকা অবস্থায় বহির্বিশ্বের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ও বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর প্রয়োজন নেই।
আমি আপনাদেরকে দুটো বিষয় যতেœর সাথে খেয়াল রাখার উপর জোর দিচ্ছি :
এক. আপনাদের প্রতিষ্ঠানের সিলেবাসভুক্ত কিতাবগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পাঠদান করুন।
দুই. হাদীসে নববী মুখস্থের উপর জোর দান করুন।
আমি এ জামিয়ার এক দাওরায়ে হাদীস উত্তীর্ণ এক তালিবুল ইলমকে জিজ্ঞাসা করলাম,তোমার কতগুলো হাদীস মুখস্থ আছে। সে জবাব দিলপাঁচশত হাদীস। আমি তার এ জবাব শুনে বিস্মিত হলাম। বুখারীমুসলিমআবু দাউদতিরমিযীনাসায়ী ও ইবনে মাজাহ ইত্যাদি এতগুলো কিতাব অধ্যয়ন করার পরও মাত্র পাঁচশত হাদীস মুখস্থ করেছে।
প্রত্যেক তালিবুল ইলমের জন্য কমপক্ষে ইমাম নববী রচিত রিয়াযুস্সালিহীন’ মুখস্থ করা উচিত। কেননা এ কিতাবের দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এক. গ্রন্থকার এতে নির্ভরযোগ্য হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছেন।
দুই. তিনি যে হাদীসগুলো এখানে উল্লেখ করেছেন তা বাস্তব জীবনের আমলের সাথে সম্পৃক্ত। তাই সে তা অনুযায়ী আমল করবে ও অন্যান্যদেরকেও আমলের প্রতি দাওয়াত দিতে পারবে।
আরো একটি বিষয়ের প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিতা হলআপনাদের ছাত্রদেরকে বিভিন্ন বিষয়ের সংক্ষিপ্ত (মতন) মূলপাঠ মুখস্থ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করুন। 
পাকিস্তানের তাবলীগ জামাতের একজন আলেম ও আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ.-এর শাগরিদনাম শায়খ আহমদ জানতিনি একবার হালাবে এসেছিলেনআমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলামতিনি আমাকে  শুনিয়েছিলেন, ‘আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহ. মুতনের কিতাবসমূহ থেকে পঁচিশ হাজার শের মুখস্থ করেছিলেন।
এ থেকে বুঝা যায় আমাদের আকাবির উলামায়ে কেরাম মুতন হিফযের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। তাই আমাদেরও কর্তব্য হলআমাদের ছাত্রদেরকে বিভিন্ন বিষয়ের সংক্ষিপ্ত মতন (মূলপাঠ) মুখস্থ করাবো।
অতঃপর মাগরিবের পরপরই অনুষ্ঠিত হয় এক বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত থাকেন দারুল উলূমের দায়িত্বশীলগণআসাতিযায়ে কেরাম ও ছাত্রবৃন্দ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দারুল উলূমের উস্তায শওকত আহমদ কাসেমী। অনুষ্ঠান শুরু হয় কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। তিলাওয়াত করেন দারুল উলূমের কিরাত ও তাযবীদ বিভাগের উস্তায কারী আফতাব আলম।
এরপর শায়েখ আরশাদ মাদানী দা.বা. উপস্থিতজনদের সামনে উর্দু ভাষায় শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ্র সংক্ষিপ্ত পরিচয়তাঁর লিখিত কিতাবাদীজামিয়ার অতীত ও বর্তমান উলামায়ে কেরামের প্রতি শয়েখের ভক্তি ও শ্রদ্ধা এবং তাঁদের লিখিত কিতাবাদীর সাথে শায়েখের গভীর সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।
অনুরূপ শায়েখ শওকত আলী কাসেমী দা.বা.-ও আরবী ভাষায় শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ্র সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেন। আর জামিয়ার নায়েবে মুহতামিম আবদুল খালেক মাদরাসী দা.বা.-এর পক্ষ থেকে মানপত্র পাঠ করেন শায়খ আরিফ জামিল আযমী দা.বা.
এরপর শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা দা.বা. অত্যন্ত মূল্যবান নসীহত পেশ করেন। )
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسَّلام على سيّد الأنبياء والمــرسلين، وعلى آلـه وصحبه أجمعين، أما بعد   :
উপস্থিত শ্রদ্ধাভাজনবিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম ও আমার প্রিয় তালিবুল ইলম ভাইয়েরা!
আমার প্রতি আপনারা যে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন এতে আমি সত্যিই সংকুচিত বোধ করছি এবং তা আমার মর্যাদা ও যোগ্যতার অনেক অনেক ঊর্ধ্বের। এ শুধু আপনাদের মহানুভবতা ও সজ্জনতা এবং আমার ব্যাপারে আপনাদের সুধারণার প্রকাশ।
সায়্যেদুনা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এক আখলাকী শিক্ষা দান করেছেনইশারার মাধ্যমেইবারতের মাধ্যমে নয়। তিনি বলেছেনسيّد القوم خادمهمঅর্থাৎ কওমের নেতা কওমের সেবক।’ এ হাদীস শরীফে ইশারা আছেব্যক্তির মহত্ব ও মর্যাদা যত বাড়ে তার বিনয় ও তাওয়াযুও তত বাড়ে। তো আমাদের সায়্যেদইলম ও উলামার উত্তরসূরী শায়েখ আরশাদ মাদানী যখন মর্যাদা ও মহত্বে বড় হয়েছেন তাঁর তাওয়াযু ও বিনয়ও সমুচ্চ হয়েছে। তাই তিনি তার কোনো শাগরিদ বা জামিআর কোনো উস্তাযের মাধ্যমে নয়নিজে আমাকে আপনাদের সামনে এগিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন এবং আমাকে তাঁর সুধারণার স্তরে পৌঁছে দিন।
কুরআনে কারীম খাযির আ.-এর সঙ্গে হযরত মূসা আ.-এর যে ঘটনা বর্ণনা করেছে তাতেও এ বিষয়টি রয়েছে।  দেখুন হযরত মূসা আ. আল্লাহর নবী। বরং কুরআনের ভাষায় উলুল আয্ম’ রাসূলগণের একজন। কিন্তু যখন খাযির আ.-এর কাছে ইলম ও ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে গিয়েছেন তখন তাকে বলেছেন, ‘আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে প্রজ্ঞা ও হেদায়েত লাভ করেছেন তা অর্জনের জন্য আমি কি আপনার অনুগমন করতে পারি?’ সায়্যেদুনা মূসা আ. খাযির আ.-কে এ কথা বলেননিআমি আপনার সঙ্গে থাকব। তিনি অনুমতি প্রার্থনা করেছেন! আর অনুমতি প্রার্থনা করেছেন অনুগামী হওয়ার। তিনি অনুসরণকারী আর খাযির আ. অনুসরণীয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ তাআলা যখন মূসা আ.-কে  উঁচু মর্যাদা দান করেছেন তখন তাঁর বিনয় ও ন¤্রতা উঁচু হয়েছে।
আল্লামা রাযী তার তাফসীরে ইলম অন্বেষণের এ জাতীয় বারটি আদব এখান থেকে আহরণ করেছেন। অথচ বাক্যটির শব্দসংখ্যা দশেরও কম!
***
বন্ধুগণ! আমি এক ক্ষুদ্র তালিবুল ইলমতবে মুসাফির হওয়ায় আমাকে এ স্থানে বসানো হয়েছেনতুবা আমাদের ও আপনাদের শাইখগণই এ স্থানে বসার অধিক উপযুক্ত। আল্লাহ জানেনপঞ্চাশ বছর যাবৎ আমি এই ঘরখানি দেখারতাতে প্রবেশ করার এবং এর মুক্ত বায়ুতে অবগাহন করার ইচ্ছা লালন করে আসছি। কারণ এই ঘরের প্রতিএর আগের ও পরের মাশাইখের প্রতি আমার অন্তরে রয়েছে আস্থাবিশ্বাস ও ভালবাসা। আল্লাহ যেন এই ঘর ও এর দায়িত্বশীলগণকে এবং এর মতো আরো যত সহীহ ইলমের ঘর রয়েছে সবগুলোকে স্থিতিস্থায়িত্ব দান করেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত প্রভত দানে ভূষিত করেন।
হে তরুণ-দল! অদূর ভবিষ্যতের -ইনশাআল্লাহ- ইলমের পুরুষগণ! আমার প্রত্যাশা আমার নিজের কাছে,  তোমাদের কাছে এবং অন্য সকল তালিবুল ইলমের কাছে এই যেআমরা যেন আমাদের প্রতি আল্লাহর হক্ব ও ইলমের হক উপলব্ধি করি। আমাদের যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ইলমের মর্যাদার সাথে সম্বন্ধযুক্ত করেছেন আমরা যেন এই সম্বন্ধের মর্যাদা উপলব্ধি করি।
আমরা যখন এ ইলমের মর্যাদা গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারব তখন এর যথাযথ কদর করতে পারব। এবং এ ইলমের বিষয়ে অন্তরে কোনো হীনম্মন্যতা কাজ করবে না।
হে তরুণ ! হবে বন্ধু! মনে করো নাতুমি এক তালিবে ইলম। আর তোমার এলাকার প্রাইমারির সহপাঠীরা কেউ ডাক্তার হয়েছেকেউ ইঞ্জিনিয়ারকেউ আমলা আর তুমি একদরবেশ’! নাউযুবিল্লাহ! নাকখনো নয়নিজেকে চেনহে তালিবুল ইলম। তুমি তো এই ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ মর্যাদাশালী। আপন সত্তায় এই মহামর্যাদা অবলোকন কর।
এই হিন্দের পথে পথে তোমার সমবয়সী কত যুবক ক্ষয় ও অবক্ষয়ের শিকার! আর তোমরা?তোমাদের আল্লাহ নির্বাচন করেছেন এই আমানত ক্বালাল্লাহ’ ও ক্বালার রাসূল’-এর মর্যাদার জন্য। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তরসূরিতার আভিজাত্যের জন্য। সুতরাং কখনো ভেবো না, তুমি এক হীন অবস্থানে!
হে তালিবানে ইলম! তালিবুল ইলমের মর্যাদা অন্য সকলের উপরে সুতরাং ইলমের মর্যাদা উপলব্ধি কর। এরপর এর মর্যাদা রক্ষা কর। এই আমানত বিনষ্ট করো না। ভুলে যেও না, ‘আলিমের পদস্খলন আলমের পদস্খলন
আমি আমার নিজের কাছেতোমাদের কাছে এবং আমাদের মতো আরও যাদের আল্লাহ তাআলা ইলম অন্বেষণের মর্যাদা দিয়েছেন তাদের সকলের কাছে প্রত্যাশা করিএই চেতনা যেন সদা জাগরুক থাকে আমাদের হৃদয়েআমাদের চাল-চলনেআমাদের ঘরেবাইরে,মাদরাসায় আর এভাবে আমরা যেন হই তালিবুল ইলমের যথার্থজীবন্ত ও মহান ছবি।
***
আমি কিছু মৌলিক বিষয় আলোচনা করতে চাইযা যোগ্য তালিবে ইলম গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে কথা তো দীর্ঘআমি এখানে শুধু একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি।
এক. ইলম অর্জনের পর্যায়ক্রম রক্ষা করা। সব দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে তা রক্ষা করা হয়। তবে আমি এই পর্যায়ক্রমিক প্রয়াসের একটি পূর্ণাঙ্গ ফলাফলের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমরা উস্তাযগণ এটি লক্ষ্য করতে পারি। আমরা স্থির করতে পারি যে,আমাদের তালিবুল ইলমদের উম্মতের প্রয়োজন সামনে রেখে তিন স্তরে গড়ে তুলব।
প্রথম স্তর : এ স্তরে আমরা এমন কিছু তালিবুল ইলম তৈরি করব যারা  সাধারণ পড়াশোনায় পাকা ইসতিদাদের অধিকারী হবে। এদের মিম্বার ও মিহরাবের উপযুক্ত করে প্রস্তুত করা হবে। ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে সংশ্লিষ্ট এ দিকটি অবহেলাযোগ্য নয়। কেননা মুসলমানদের যোগ্য ইমামের প্রয়োজন রয়েছেযোগ্য খতীবের প্রয়োজন রয়েছে।
দ্বিতীয় স্তর : এ স্তর প্রথম স্তরের চেয়ে আরেকটু উপরের। উপরে উল্লেখিত স্তরের তালিবুল ইলমদের থেকে কিছু তালিবুল ইলমকে নির্বাচন করা হবে যাদেরকে যথাযথ নেগরানি ও তত্ত¡াবধানের মাধ্যমে এমন যোগ্য করে গড়ে তোলা হবে যাতে তারা নিজ নিজ দেশে জনসাধারণের আশ্রয়স্থল হতে পারে। জনগণ তাদের কাছ থেকে ফতোয়া ও পরামর্শ গ্রহণ করবে।
তৃতীয় স্তর : আর কিছু লোককে আমরা বিশ্বমানের আলেম রূপে গড়ে তুলব।
আমার উপমা সঠিক হলে বলবপ্রথম স্তরের আলেম নিজ নিজ মহল্লার আলেম। তারা নিজ নিজ ঘরে ও মহল্লায় মানুষকে দ্বীন শিক্ষা দিবে ও ইসলামের হেফাযত করবে।
দ্বিতীয় স্তরের আলেম শহর ও দেশের আলেম। তারা নিজ নিজ শহর ও দেশে ইসলামের হেফাযত করবে।
আর তৃতীয় স্তরের আলেম বিশ্বব্যাপী ইসলামকে হেফাজতের জন্য। ধরুন আপনি ভারতে আছেন। কিন্ত পূর্বে বা পশ্চিমের দূরবর্তী  যে কোনো দেশে ইসলাম সম্পর্কে কোনো বিকৃতি বা অপব্যাখ্যা সম্পর্কে জানতে পারলেন,  তো এখানে থেকেই ঐ বিভ্রান্তি খণ্ডনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন।
বন্ধুগণ! ইসলাম সম্পর্কে অপব্যাখ্যাইসলামের জ্ঞান ও শাস্ত্রসমূহের বিষয়ে বিষোদগারের তো শেষ নেই।
এ বিষয়ে আলোচনা সামনে অগ্রসর করার আগে আমি একটি উদাহরণ দিচ্ছি। একজন মানুষধরুন তার নাম হাইয়ান ইবনে বাইয়ান’, হে তরুণ-দল! এরা তো হাইয়ান ইবনে বাইয়ানই হয়ে থাকে । নাম পরিচয়হীন অখ্যাত ব্যক্তি। সে তিনটি বই’ লিখেছে। জিনায়াতুল বুখারী আলাল হাদীস’, (হাদীসের প্রতি বুখারীর জুলুম) জিনায়াতুশ শাফেয়ী আলাল ফিকহ’ (ফিকহের প্রতি শাফেয়ীর জুলুম) আর জিনায়াতু সীবাওয়াইহি আলান নাহ্ব’ (নাহব শাস্ত্রের প্রতি সীবাওয়াইহের জুলুম)। চিন্তা করুনইসলামের স্তম্ভগুলোর মধ্যে কোনটি তাহলে বাকি থাকলহাদীস-ফিকহ দুটোই যখন অনির্ভরযোগ্য তাহলে ইসলামের আর কী অবশিষ্ট থাকে?আমি আমার আগের কথায় ফিরে আসছি। আমাদের কর্তব্য বৈশ্বিক পর্যায়ের যোগ্য আলেম গড়ে তোলা। এ কাজ সহজ নয়। আর  প্রয়োজনের পরিধিও এত কম নয় যেঅল্প কজন ব্যক্তির মাধ্যমে এ প্রয়োজন পূরণ হবে। যেমন বিশাল হিন্দুস্তানের জন্য দুজনমিসরের জন্য একজনআর সিরিয়ার জন্য একজন। এটা যথেষ্ট নয়। বিশ্ব পরিস্থিতিতে এখন এই পর্যায়ের শতশত আলিমের প্রয়োজন। যাতে পরিস্থিতির হক আদায় হতে পারে।
হে তরুণ-দল! আমাদের শত্রæরা বিক্ষিপ্তভাবে নয়দলে দলে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে চলেছে। আমরা যদি শুধু সুন্নাহর উপর আসা আক্রমনই প্রতিহত করতে চাই তাহলেও বছরের পর বছর কাজ করে যেতে হবে। আমরা দীর্ঘ সময় মেহনত করে একজন বা দুইজন আলেম গড়ে তুলি যারা এই সয়লাবের  বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে আর ইসলামের শত্রæরা এরই মধ্যে দলে দলে লোক তৈরী করে ফেলে। আমরা পথের সূচনাতে আছি আর আমাদের শত্রæরা আমাদেরকে পিছনে রেখে বহুদূর চলে গেছে।
তাই আমাদের কাজ হলএই তিন স্তরে লোক তৈরী করা। মসজিদগুলোর জন্য ইমাম ও খতীব প্রস্তুত করাশহরগুলোর জন্য আলিম ও মুফতী প্রস্তুত করা আর ইসলামের উপর আসা হামলা প্রতিহত করার জন্য পর্বতসম অটল আলিম তৈরী করা।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই উম্মতের প্রত্যেক  সদস্যের উপর এক গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমার উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি ইসলামের এক এক পথের প্রহরীসাবধানতোমার দিক থেকে যেন ইসলাম আক্রান্ত না হয়।” (আস্সুন্নাহ লিল মারওয়াযীহা.২৮) [অর্থাৎ যার দ্বারা দ্বীনের কোন ক্ষতি হল তার দিক থেকেই ইসলাম আক্রান্ত হল]
সায়্যেদুনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামকে তুলনা করেছেন এক মহাদূর্গের সাথেযার রয়েছে অনেক জানালা।
বিষয়টি সহজে বুঝার জন্য একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। ধরুনএই যে মুবারক স্থান,  এর অনেক খোলা দিক ও অনেক জানালা আছে। এর প্রধান দায়িত্বশীল প্রত্যেক প্রবেশ পথে একজন করে তালিবুল ইলম নিযুক্ত করলেন এবং বলে দিলেনতুমি  এই জানালায় পাহারায় থাক,এরপর সকলকে কসম দিয়ে বললেন, সাবধান! তোমার জানালাপথে যেন শত্রæ প্রবেশ করতে না পারে। কেননা কোনো এক পথ দিয়ে যদি শত্রæ প্রবেশ করে -সে যতই ছোট হোক না কেন- তাহলে পুরো দূর্গটিকেই ধ্বংস করে দিবে।
সুতরাং এই দায়িত্বভার আমাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং আমানতদারির সাথে বহন করতে হবে।
কখনো একথা বলা উচিত হবে না যেএতে আমার কী আমি যদি বলিসর্বপ্রথম যে কুঠারটি ইসলামের গোড়ায় আঘাত করে তা হল, ‘আমার কী’ কথাটিÑ তাহলে অত্যুক্তি হবে না।
আমি আপনাদের একটি ঘটনা শোনাই।
উসমানী সালতানাতের এক সুলতান তার   কোনো এক সভাসদের সঙ্গে তার দেশে ইসলামের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করছিলেন এবং এ জন্য চিন্তিত ছিলেন। তিনি বললেনএ বিষয়ে আমি সবার আগে শায়খুল ইসলাম’-এর সঙ্গে আলোচনা করব। তিনি এক চিঠিতে তাঁকে সম্বোধন করে বললেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে দ্বীনী বিপর্যয় নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি। এ চিঠি শায়খুল ইসলমের কাছে পৌঁছলে তিনি তার উপরে লিখলেন এর সাথে আমার কী সম্পর্ক?’, নিচে স্বাক্ষর করে তা ফেরত পাঠিয়ে দিলেন।
সুলতানের কাছে চিঠি পৌঁছলে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে তাঁকে তৎক্ষণাত দরবারে হাজির করার আদেশ করেন। শায়খুল ইসলাম হাজির হলে সুলতান বললেন, “আপনিই তো প্রথম দায়িত্বশীলআপনি শায়খুল ইসলামকী করে আপনি লিখলেন এর সাথে আমার কী সম্পর্ক’?”
উত্তরে শায়খুল ইসলাম বললেনজনাবআমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। আমি তো আপনার হাতের আঙ্গুল মূল ব্যাধির উপর স্থাপন করেছি। ব্যাধি এই যেরাজ্যের প্রত্যেকেই বলেএ বিষয়ের সাথে আমার কী সম্পর্কপ্রত্যেকেই যদি তার করণীয় সম্পর্কে সচেতন হত এবং তা পালন করত তাহলে আজ আমাদের এ পরিণতি হত না।
নওজওয়ান বন্ধুরা!  এই গুরুদায়িত্ব ও মহান আমানতকে উপলব্ধি করুন যা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রত্যেকের উপর অর্পণ করেছেন।
আমি আমার আলোচ্য বিষয়ে ফিরছিতালিবুল ইলমকে মজবুতরূপে গড়ে উঠতে যে বিষয়গুলো সাহায্য করবে তা হল : এক. অক্লান্ত পরিশ্রম ও অবিরাম মগ্নতা। তালিবুল ইলমের কর্তব্যযখন সে দরসের বিরতি পাবে তখন বিরতির আগেই কোনো একটি কিতাব বা কোনো একটি আলোচনা ঠিক করে রাখবে যা সে বিরতিতে পড়বে। অথবা এ বিষয়ে কোনো এক উস্তাযের সঙ্গে আলোচনার জন্য সাক্ষাত করবে।
আমি আমার শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর শায়েখ রাগেব তব্বাখ রাহ.-এর একটি ঘটনা বলছি।
শায়েখ রাগেব তব্বাখের এক পুত্র যিনি বয়সেও ছিলেন সবার বড় এবং পিতার বিভিন্ন কাজও আঞ্জাম দিতেন। কিতাব ইত্যাদি ছাপানোর কাজও তার দায়িত্বে ন্যস্ত ছিল।
হঠাৎ একদিন ছেলেটি ইন্তেকাল করল। ছাত্ররা ভাবলআগামিকাল শায়খ হয়ত দরসে আসবেন না। কেননা তিনি পুত্রকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। কিন্তু পরদিন দেখা গেলশায়খ দরসে এলেন এমনকি ছাত্রদেরও অনেকের আগে এলেন। ছাত্ররা পরস্পরে ফিসফিস করে বলতে লাগলশায়খ এসেছেনশায়খ এসেছেন!
শায়খ বললেনকী হয়েছেছাত্ররা বললকিছু না। শায়খ আবার জিজ্ঞাসা করলেনহে আমার সন্তানেরা ! কী হয়েছে বল। এক ছাত্র বললসাইয়্যেদীআমরা ধারণা করেছিলাম,আপনি আজ দরসে আসবেন না। আর আমরা আপনার দরস না করে বিশ্রাম করব।
শায়খ তখন পূর্ণ আফসোস ও ইলমের প্রতি পূর্ণ গায়রত নিয়ে বললেনহায়! ছেলে হারিয়েছি ইলমের বরকতও কি হারাব! তবে তো ক্ষতির উপর ক্ষতি।
উপকারী বিষয় অর্জনের প্রতি এমনই ছিল আমাদের আকাবির মাশায়িখের আগ্রহ ও লোভ।
মালেকী মাযহাবের একজন বড় আলেম শায়খ শরীফ তিলমিসানী তাঁর শায়খ আবু যায়দের দরসে উপস্থিত ছিলেন। এটি ছিল তাঁর ইলম তলবের শুরুর দিক। শায়খের দরসের বিষয়বস্তু ছিল জান্নাতের নিআমত। শায়খ জান্নাতের বিবরণ দিতে গিয়ে বললেনজান্নাতে এই এই নিআমত থাকবে। জান্নাতের নিআমত বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তখন এই অল্প বয়সের তরুণ তালিবুল ইলম দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগলহে আমার শায়খজান্নাতে কি ইলম থাকবে। শায়খ সাধারণ জবাব দিয়ে বললেনতাতে মানুষের চাহিদা পূরণের সবই থাকবে যা দেখে তার চোখ জুড়াবে।
তালিবুল ইলম তখন শায়খকে বললযদি আপনি বলতেনতাতে ইলম নেই তবে আমি বলতামতবে তো তাতে আনন্দের কিছু নেই!
তো এই তালিবুল ইলম যখন ঐ জযবা   ও মগ্নতা নিয়ে ইলম তলব করতে এসেছে তো আল্লাহ তাআলাও তার জন্য ইলমের দরজা খুলতে থাকলেন।  কিছুদিন যেতে না যেতেই তার অবস্থা এই দাঁড়াল যেশায়খ আবু যায়েদ একদিন একটি মাসআলা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আলোচনাটি সঠিক ছিল না। তো ঐ তালিবুল ইলম দাঁড়িয়ে বললসাইয়্যেদী! বিষয়টি বোধহয় এ রকম।
শায়খ তা বুঝতে পারলেন এবং সঠিক মতের দিকে ফিরে এলেন। এরপর রসিকতা করে তাকে (কবি সালেহ আব্দুল কুদ্দুসের কবিতার) দুটি পঙক্তি শুনালেন,
দিনের পর দিন তাকে শিখিয়েছি তীর চালনা/ এরপর বাযু পাকা হলে সে আমাকেই বিদ্ধ করল।/ অল্পে অল্পে তাকে শেখালাম ছন্দ রচনা/ শেখা হলে পর সে আমারই হিজু’ করল।
বন্ধুরা এ আলেমের জীবনী যদি দেখেন মালেকী মাযহাবের ইমামগণের জীবনী গ্রন্থে তাহলে দেখতে পাবেন এক উঁচু মর্যাদাপূর্ণ জীবনী। যেমনটা বলেছেন ইমাম ইবনু আতাউল্লাহ আল ইস্কান্দারানী রাহ.,‘যার  নেই দগ্ধকারী সূচনা তার নেই উজ্জ্বল সমাপ্তি
হে তরুণ-দলসূচনা হচ্ছে সমাপ্তির ঔজ্জ্বল্য।
তৃতীয় কথালেখালেখি ও রচনা বিষয়েআমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যেতিনি উপযুক্ত রচনা ও গবেষণার দ্বারা এই ইলমের খেদমত করার তাওফীক দান করবেন। ইনশাআল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে আপনারা এমনই হবেন। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব তা হলনির্ভরযোগ্যসঠিক ও শক্তিশালী ইলমী ফায়েদা অনায়াসে অর্জিত হয় না। বরং এর জন্য  যে জিনিসের কোনো বিকল্প নেই তা হচ্ছে অনুসন্ধানঅনুসন্ধান এবং অনুসন্ধান। আমি অশুভ অনুভব থেকে নয়বাস্তবতার বর্ণনা হিসেবে বলছিকখনো এমনও হবেএকটি বিষয় দশ কিতাবে অনুসন্ধান করা হলকিন্তু পথ বন্ধ। এর অর্থ, আরো অনুসন্ধান প্রয়োজন। নিরাশ হওয়া নয়। তো বলতে চাচ্ছি যেইলম অনায়াসে আসে না। আপনাদের একটি গল্প শোনাই। কিছুটা দীর্ঘ তবুও শোনাই।
নাহ্ববিদ আবু নাসর মূসা ইবনে হারূনের ঘটনাতার শায়খ ছিলেন আবু আলী আল-ক্বালী,তিনি ভাষার অনেক বড় ইমাম ছিলেন। তিনি তাঁর দরসে হাজির হতেন এবং শায়েখও তার দ্রæত হাজির হওয়া পছন্দ করতেন। একদিন দ্রæত রওয়ানা হলেনকিন্তু  কোনো কারণে বিলম্ব হয়ে গেল এবং বৃষ্টিতে ভিজে  গেলেন। আপাদমস্তক জামা কাপড় ভিজা অবস্থায় কর্ডোভা জামে মসজিদে শায়খ আবু আলী ক্বালীর মজলিশে উপস্থিত হলেন। লজ্জিত ও সংঙ্কুচিত অবস্থা। শায়খ শান্তনা দিয়ে বললেনচিন্তার কিছু নেইচিন্তার কিছু নেই। তোমার কাপড় বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে তো কাপড় পরিবর্তন করে নিলেই হল। এ তো সহজ বিষয়।
আমারও একদিন তোমার মত ঘটনা ঘটেছিল। তুমি যেমন চেয়েছিলে বিলম্ব না করতে আমিও তা চেয়েছিলাম।  আমি শায়খ ক্বারী আবু বকর ইবনে মুজাহিদ রাহ.-এর দরসে হাজির হতাম। একদিন চেয়েছিলাম দ্রæত দরসে হাজির হব এবং দীর্ঘ পথ ছেড়ে সংক্ষিপ্ত কোনো পথে যাব। সে অনুযায়ী খুবই সংকীর্ণ একটি সুড়ঙ্গ পেয়ে গেলাম। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে পুরো দেহ সেই সংকীর্ণ সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করিয়ে দিলাম। ফলে গায়ের কাপড় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। বরং  দেহের কোনো কোনো হাড় থেকে মাংশ আলাদা হয়ে গেল। শরীরে এমন জখম হয়ে গেছে যা আমার সাথে কবর পর্যন্ত যাবে। সে হিসেবে তোমার তো কিছুই হয়নি,পানি এসে শুধু তোমার কাপড় ভিজিয়ে দিয়েছে।
কয়েকটি পঙক্তি আবৃত্তি করলেন,
মর্যাদার খোঁজে পথ চলছ অথচ অন্বেষীরা চলে গেছে বহুদূর
এরজন্য তারা কাপড়চোপর ফেলে গিয়েছে
মর্যাদার প্রতিযোগিতায় অনেকেই লিপ্ত হয়েছে অবশেষে অধিকাংশই ঝিমিয়ে পড়েছে
মর্যাদার দেখা তো সেই  পেয়েছে যে পূর্ণ চেষ্টা করেছে এবং ধৈর্র্য্যরে সাথে করেছে
তুমি মর্যাদাকে ভেবো না একটি খেজুরযা তুমি আনন্দে খেয়ে ফেলবে!
তুমি তো মর্যাদার দেখা পাবে না যে পর্যন্ত সবিরের তিক্ততা আস্বাদন না করবে।
ভেবো না যেসঠিক ও শক্তিশালী ইলম খেজুরের মত সহজেই তুমি খেয়ে ফেলবে ও তার স্বাদ আস্বাদন করবে। হে তরুণহে যুবক, ‘সবির’ হেকিমদের কাছে এক প্রসিদ্ধ ফল। কিন্তু আমি এখানে     ” শব্দটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি।      ” শব্দটি ব্যবহৃত হয় মধুর ক্ষেত্রে আর তা অল্প একটু চেখে দেখা নয় যেমন তুমি আঙ্গুলের এক পার্শ্ব দিয়ে একটুখানি চাখলে। নানাএই যে এভাবে বড় করে চাটলে তা হল লা’ তো তুমি তো মর্যাদার চড়ায় তখনই পৌঁছবে যখন সবিরের তিক্ততা ভোগ করবে এবং এরই মাঝে দীর্ঘ সময় পার করবে।
নওজওয়ান বন্ধুগণ! আমি একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। যদি আমরা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশ লতিকার কথা ধরি,
 هو سيدنا محمّد بن عبد الله بن عبد المطلب،  তিনি হলেনমুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব। তাঁর দাদা হলেন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশেম বিন আবদে মানাফহাশেম তাঁর পরদাদাআবদে মানাফ তাঁর তৃতীয় পুরুষকুসাই তাঁর চতুর্থ পুরুষ। যদি আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করিবংশপরম্পরায় কে সেই পুরুষ যার উপাধি কুরাইশআপনারা উত্তরে বলবেন, ‘ফিহ্রের উপাধি।
আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন কুরাইশ বংশের। কাজেই যার বংশ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশের সাথে ফিহর’ পর্যন্ত কোথাও মিলবে তিনিই কুরাইশ বংশের।
এখন আমরা যদি ধরে নেই ফিহর’ দশম পুরুষ। তাই কারো  বংশ যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সপ্তমঅষ্টমনবম বা দশম পুরুষে গিয়ে মিলিত হয় তাহলে সে কুরাইশ বংশের। কেউ যদি বলে, ‘কুরাইশ’ হচ্ছে চতুর্থ পুরুষ কুসাই’ এর উপাধী তাহলে এর অর্থ হবে যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে পঞ্চম পুরুষে গিয়ে মিলিত হবে সে কুরাইশ বংশের নয়। কেননা তাঁর তো কুসাই এর (কুরাইশ) সাথে সম্পর্ক নেইতার সম্পর্ক কুসাই-এর উপরের কোনো পুরুষের সাথে যে কুরাইশ নয়
কেউ বলতে পারেভাইকুরাইশ ফিহরের উপাধী হোক বা কুসাইর এতে এমন কী আসে যায়। এটা তো অতীত বিষয় যা গত হয়েছে। এ বিষয়ে এই দীর্ঘ আলোচনার কী প্রয়োজন। আমি বলবএটা খুবই নাযুক বিষয়! কিন্তু আমরা এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারিনি। আমরা যদি ইলমী কিতাবাদি ঘেটে দেখতাম তবে এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারতাম।
যে বলে চতুর্থ পুরুষ কুসাই’ হল কুরাইশএর পিছনে তার এক দুরভিসন্ধি কাজ করছেতা হলআবু বকর ও উমর রা.-এর বংশ তালিকা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে গিয়ে মিলিত হয় সপ্তম পুরুষেচতুর্থ পুরুষে নয়। তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায়আবু বকর ও উমর রা. কুরাইশ বংশের নন। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন,الأئمة من قريش ‘খলীফা হবে কুরাইশ বংশ থেকে।’ এ দিকে লক্ষ্য করলে আবু বকর ও উমর রা.-এর খেলাফত সঠিক খেলাফত ছিল না।
লক্ষ্য করুনআমার যুবক ভাইয়েরা! বিষয়টি কোথায় গিয়ে পৌঁছলভুল কোথায় আর কুফল কোথায়সুতরাং এ কথা বলা আমাদের জন্য জায়েয নয় যেইলমের বহু বিষয় খুবই সহজ ও গুরুত্বহীন। নাআমাদের কর্তব্য হলপ্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয় যতেœর সাথে অর্জন করা।
সময় থাকলে আরো কিছু উদাহরণ তুলে ধরতাম।
তো তালিবুল ইলমের ইলমী জীবন গঠনের মৌলিক আরেকটি দিক হলইলমের প্রতিটি বিষয় যতেœর সাথে গ্রহণ করা। আর অনুসন্ধান ও গবেষণার গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং দ্বীন,ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য এর প্রভাব ও প্রয়োজন উপলব্ধি করে অবিরাম অনুসন্ধান ও অক্লান্ত গবেষণায় অবতীর্ণ হওয়া।
وأسأل الله العظيم من فضله العظيم أن يمنّ عليّ وعليكم، وعلى مشايخنا وسادتنا وأهلالحقوق علينا، وعلى أهل العلم عامّةً، والطلاب وعلى المسلمين أن يمنّ علينا وعليهم بكلخير وتوفيق لما يحبّه ويرضاه، وأسأل الله العظيمأكرّر دعائي لكم ولهذه الديار دائما وأبدًا، ماأدعو أنا الآن أمامكم، لا، أنا أدعو بهذا الدعاء صبيحة كل يوم، والحمد لله رب العالمين، وأسألالله العظيم من فضله العظيم، أن يحفظ العلم وأهله في بيوته من العلماء العاملين، لا منكل من انتسب إلى هذا العلم، فالدخيل أصبح كثيرا في زماننا يا شبابأسأل الله العظيمأن يمنّ علينا بالعلم الصحيح الصافي السليم النافع لنا وللمسلمين متصلا بكابر عن كابر منعلمائنا  رضي الله عنهم  وصلى الله وسلم وبارك على سيد الأولين والآخرين وحبيب ربالعالمين، وعلى آله وصحبه أجمعين، والحمد لله رب العالمين.
ভাষান্তর : মুহাম্মাদ আব্দুল হাকীম    
স্থান : মসজিদে রশীদদেওবন্দ
তারিখ :  ০৯.০৬.১৪৩২হি./ ১৪.০২.২০১১ ঈ.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন