বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

মানসা মূসা


মানসা মূসা (আনুমানিক ১২৮০ থেকে আনুমানিক ১৩৩৭ পর্যন্ত) অথবা মালির প্রথম মূসা ছিলেন ১৪শতকের মালি সম্রাজ্যের একজন মানসা বা সম্রাট। তিনি ছিলেন মালি সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সান্দিয়াতা কেইতা'র ভাগ্নে। ১৩০৭ সালে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি প্রথম আফ্রিকান শাসক যিনি ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন।

মুসার সম্রাজ্য অনেক বিস্তৃত ছিল। তার সময়ে মালি সম্রাজ্য সবচেয়ে বেশি বিস্তার করে। ইতিহাসবিদদের মতে তার সম্রাজ্যের আয়তন ছিল প্রায় ১২,৯৪,৯৯৪ বর্গ কিলোমিটার।তাকে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যাক্তি বলা হয়ে থাকে।

মূসা অধিক পরিচিত ছিলেন তার হজ্জপালনের জন্য ( ১৩২৪ থেকে ১৩২৫ )। প্রচলিত আছে, তার হজ্জবহরের কাফেলায় রসদপূর্ণ থলে বহনকারী ৬০,০০০ লোক ছিল, সাথে ছিল ৫০০ গোলাম যারা প্রত্যেকে একটি করে সোনার দন্ড বহন করছিল এবং ৮০ থেকে ১০০টি উট ছিল, যেগুলো প্রত্যেকটি প্রায় ১৪০ কেজি সোনার গুড়ো বহন করছিলো। তার এই যাত্রাপথে তিনি প্রায় কয়েকশত কোটি টাকা মূল্যের সোনা বিতরণ করেছিলেন। কায়রোতে তিনি এত বেশি স্বর্ণ বিতরণ করেছিলেন যে, বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানে স্বর্ণের দাম তুলনামুলকভাবে অনেক কম ছিল।মিসরের অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছিল ১২ বছর!

মক্কায় পৌছে মুসা হজ্ব করেন। হজ্বের পর মক্কার জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভিভুত হয়ে পড়েন। তিনি মক্কা থেকে উট বোঝাই করে চিকিৎসা, জোতির্বিদ্যা, দর্শন, ভুগোল, ইতিহাস, গনিত শাস্ত্র এবং আইনের উপর প্রচুর বই নিয়ে আসেন। এবং মক্কা থেকে মেধাবী এবং সেরা গনিতবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আর্কিটেক্টদের আমন্ত্রন করে নিয়ে আসেন।

মক্কায় থাকার সময় গাও (Gao) এবং টিমবুকটু (Timbuktu ) তার সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনি মালি সম্রাজ্যের প্রায় ৪০০টি শহরকে আধুনিক করে গড়ে তোলেন। মুসার সাম্রাজ্যের সকল শহরের ভেতর টিমবুকটুকে বেশি উন্নত করে গড়ে তোলা হয়। গাও, ডিজেন, সেগু, নিয়ানি সহ অধিকাংশ শহরে তিনি মার্কেট, মাদ্রাসা, মসজিদ, গ্রন্থাগার, ইউনিভার্সিটি নির্মান করেন। টিম্বুকটুতে মুসা তার প্রধান প্রাসাদ এবং জিনগুয়ের্বার ( Djinguereber ) মসজিদ নির্মান করেন। এইজন্য আন্দালুসিয়া , স্পেন এবং কায়রো থেকে তিনি স্থাপত্যবিদদের আমন্ত্রন জানান।তার নির্মিত ইউনিভার্সিটি অফ সংকর/সংকর মাদ্রাসায় দেশ বিদেশের শিক্ষার্থীরা বিনামুল্যে অধ্যয়নের সুযোগ পেত।ধীরে ধীরে টিমবুকটু শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, এবং ব্যবসায়ের প্রানকেন্দ্র হয়ে ওঠে।

মানসা মূসা ইসলাম প্রচারেও সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি একজন অনুগত মুসলিম ছিলেন এবং কুর'আনের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে অনেকগুলো বিদ্যালয় নির্মাণ করেন। তিনি উত্তর আফ্রিকার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী প্রেরণ করতেন।মানসা মূসা তার রাজত্বকালে রাজ্যব্যবস্থা ও রাজকার্যাবলি নতুনভাবে সাজাতে সাহায্য করেছিলেন। তার রাজত্বকালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক স্থিতিশীল ছিলো।

সুত্রঃ উইকিপিডিয়া,সামহোয়ার ব্লগ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন