বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কবি ফররুখ আহমদ


"আব্বা বলতেন, 'দাম্ভিক, পরহেজগারের চাইতে অনুতপ্ত পাপী ভালো।' ব্যক্তি জীবনে আব্বা ছিলেন পরহেজগার। জীবনে জ্ঞান থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছাকৃতভাবে সাধারণত নামাজ কাজা করেন নি তিনি। শরীর ভীষণ অসুস্থ থাকা অবস্থায় ত্রিশ রোজাই রেখেছেন। আব্বা ধার্মিক ছিলেন কিন্তু গোঁড়া ছিলেন না; সামপ্রদায়িক তো ছিলেনই না। আব্বার পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্যে দু'টো পায়জামা, দু'টো পাঞ্জাবী, একটি গেঞ্জী, একটি শেরওয়ানী, একজোড়া স্পঞ্জের সেন্ডেল, একজোড়া জুতো, শীতের সময় একটি পুলোভার এবং একটি আলোয়ানই যথেষ্ট ছিল। নবীজীর সুন্নতকে ভালবাসতেন বলে আব্বা কাপড়ে তালি দিয়ে পরতেন।

দরিদ্রদের আব্বা খুব ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন রসুল (সা.)-এর সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী, তাই রসুলেরই মত দরিদ্ররা ছিল আব্বার প্রিয়পাত্র। মহানবী (সা) শ্রমের মর্যাদার যে শিক্ষা দিয়েছেন, আব্বা তাঁর জীবনে সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়িত করেছেন।

সোনার চামচ মুখে নিয়েই আব্বার জন্ম হয়েছিলো, কিন্তু দু:সহ দারিদ্র্যের মধ্যে তাঁকে শেষনি:শ্বাস ত্যাগ করতে হয়েছে। দারিদ্র্য তাঁর মাথা নত করতে পারে নি। দারিদ্র্য তাঁকে সম্মান দান করেছে। এই মর্দে মুমিন জীবনে আল্লাহ্ ছাড়া কারো সামনে মাথা নত করেন নি। শির উঁচু রেখে সম্মানের সংগে এই জরাগ্রস্থ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছেন।

আব্বার ইন্তেকালের পরের ঘটনা বড়ই মর্মন্তুদ। কপর্দকহীন হয়ে আব্বা ইনত্মেকাল করেছেন। বাড়ী-গাড়ী, ব্যাংক-ব্যালেন্স এবং বিষয়-সম্পত্তি বলতে কিছুই রেখে যান নি। মুসাফির খালি হাতে আসে আর খালি হাতে ফিরে যায়। আব্বাও ছিলেন এমনি এক মুসাফির, -দুনিয়ার বুক থেকে যখন আব্বা বিদায় নিলেন, তখন ছুটে এলেন তাঁর অসংখ্য গুণমুগ্ধের দল, সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু আব্বা তখন অনেক দূরে। আব্বা তখন তাঁর প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছে গেছেন।''

-- কবি ফররুখ আহমদের কন্যা সাইয়েদা ইয়াসমিন বানু ('আব্বাকে যেমন দেখেছি', শাহাবুদ্দীন আহমদ-সম্পাদিত 'ফররুখ আহমদঃ ব্যক্তি ও কবি', প্রথম সংস্করণ ১৯৮৪, পৃষ্ঠা ২৮৩-২৮৫)

আজ ১৯ অক্টোবর "মুসলিম রেনেসাঁর কবি" কবি ফররুখ আহমদের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী।সত্য ও ন্যায়ের পথে কলম চলেছিল যার অবিরত, আল্লাহ তাঁকে উত্তম প্রতিদান দিন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন