শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০১৫

ইমাম আবু হানীফাহ্‌ (রঃ)-এর আক্বীদাহ

(ক) তাওহীদ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ)-এর মতামত সমূহঃ

প্রথমতঃ আল্লাহ্‌র তাওহীদ (একত্ববাদ) সম্পর্কে তাঁর আক্বীদাহ এবং শারয়ী অছীলা ধরা (মাধ্যম ধরা)-এর বিবরণ ও বিদয়াতি অছীলা ধরা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনাঃ
(১) আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেছেনঃ “কোন ব্যক্তির উচিৎ নয় যে, সে আল্লাহকে অন্য কোন মাধ্যম দ্বারা আহবান করবে। যে দু’আ করতে অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং যার সঙ্গে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা হল, আল্লাহর উক্ত বাণী থেকে যা অর্জন করা হচ্ছে-
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থঃ আর আলস্নাহ্‌র জন্য সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, সুতরাং তোমরা তাকে সেই সব নামেই ডাকবে, আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে, সত্বরই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে।”
(সূরা আ’রাফ, ১৮০ আয়াত) [আদ- দুর্রুল মুখতার মিন হাশিয়াতি রদ্দির মুহ্‌তার, ৬ষ্ঠ খ-, ৩৯৬-৩৯৭ পৃঃ)
(২) আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেছেনঃ “অপছন্দনীয় কর্ম হচ্ছে, প্রার্থনাকারী আহবান করবে, অমুক ব্যক্তির হক্ব- এর ওয়াসিলায়, কিংবা আপনার নবী ও রাসূলদের হক্ব -এর ওয়াসিলায় এবং আল-বাইতুল হারাম ও আল-মাশআরম্নল হারাম- এর হক্ব-এর ওয়াসিলায় আপনার নিকট প্রার্থনা করছি।”
(শারহুল আক্বীদাতিত্‌-ত্বহাবিয়াহ, ২৩৪পৃঃ, ইতহাফুস-সাদাতিল মুত্তাক্বীন, ২য় খ-, ২৮৫পৃঃ, শারহু ফিকহিল আকবার, ১৯৮পৃঃ গ্রন্থকার, আল-ক্বারী)
(৩) আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেছেন : “কোন ব্যক্তির উচিৎ নয় যে, সে আলস্নাহকে অন্য কোন মাধ্যম দ্বারা আহবান করবে। আর আমি অপছন্দ করি, সে বলবেঃ আপনার আরশ হতে ইজ্জাত-এর আসন- এর ওয়াসিলায় আমি প্রার্থনা করছি।”
দ্বিতীয়তঃ গুনাবলী প্রমাণ করা বিষয়ে এবং জাহমিয়াদের প্রতিবাদ করা সন্বন্ধে তাঁর মতামতঃ
(৪) তিনি বলেছেনঃ “মাখলুক- এর গুণাবলীর সঙ্গে সাদৃশ্য করে আল্লাহর গুণ বর্ণনা করা যাবে না। তাঁর ক্রোধ ও সন্ত্মুষ্টি, তাঁর গুণাবলীর অন্যতম, এটা কেমন, বলা যাবে না। এটাই হচ্ছে আহ্‌লুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ- এর মন্ত্মব্য। তিনি ক্রুদ্ধ হন ও সন্ত্মুষ্ট হন। এটা বলা যাবে নাঃ তাঁর ক্রোধ হচ্ছে, তাঁর শাস্ত্মি প্রদান করা এবং তাঁর সন্তুষ্টি হল, তাঁর ছওয়াব দেয়া।
আমরা তাঁর ঐরূপ গুণ বর্ণনা করব, যেসব তিনি নিজের জন্য গুণাবলী বর্ণনা করেছেন। তিনি একক, তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বশক্তিমান, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, মহাজ্ঞানী। আলস্নাহ্‌র হাত তাদের উপর রয়েছে। ওটা তাঁর সৃষ্টজীব -এর হাতের মতো নয় এবং তাঁর চেহারা তাঁর সৃষ্টজীব -এর চেহারা- এর অনুরূপ নয়।” (আল-ফিকহুল আব্‌সাত্‌, ৫৬পৃঃ)
(৫) তিনি বলেছেন, “তাঁর হাত মুখমন্ডল ও আত্না রয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা এটা কুরআনে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং আল্লাহ কুরআনে তাঁর চেহারা, হাত ও আত্না সম্পর্কে যা কিছু উল্লেখ করেছেন, এগুলো তাঁর গুণাবলী। এটা কেমন তা বলা সম্ভব নয়। এবং এটা বলা যাবে না যে, নিশ্চয় তাঁর হাত দ্বারা তাঁর কুদরাত কিংবা নিয়ামত বুঝাচ্ছে। কেননা এর দ্বারা গুণাবলীকে বাতিল করে দিচ্ছে। আর এটা হচ্ছে কাদরিয়া ও মু’তাযিলাদের মাযহাব।” (আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২পৃঃ)
(৬) তিনি বলেছেন, “আল্লাহর জাত সম্পর্কে কোন বিষয়ে কোন ব্যক্তির মন্ত্মব্য করা উচিৎ হবে না। বরং সে তাঁর ঐরূপ গুণ বর্ণনা করবে, যেমন তিনি নিজের জন্য বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। তার সন্বন্ধে স্বীয় রা’য় দ্বারা কোন কিছু মন্ত্মব্য করবে না। বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ বরকতময় ও মহান।”
(শারহুল আক্বীদাতিত্‌-ত্বহাবিয়া, ২য় খ-, ৪২৭পৃঃ, তাহক্বীক্ব, ডঃ আত-তুরকী, জালাউল আইনাঈন, ৩৬৮পৃঃ)
(৭) “আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন” যখন তাঁকে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হল, উত্তরে তিনি বললেনঃ “তিনি অবতরণ করেন, তবে কিভাবে, তা জানা নেই।”
(আক্বীদাতুস-সালাফ আসহাবিল হাদীস, ৪২পৃঃ, দারম্নস সালাফিয়া থেকে মুদ্রিত। আল-আসমা ওয়াছ-ছিফাত, ৪৫৬পৃঃ গ্রন্থাকার, বায়হাকী; আল-কাওছারী এ সম্পর্কে মন্ত্মব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন। শারহুল আক্বীদাতিত্‌-ত্বহাবিয়াহ, ২৪৫পৃঃ, তাখরীজুল আলবানী ওয়া শারহুল ফিকহুল আকবার লিলক্বারী, ৬০পৃঃ)
(৮) আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেছেনঃ “উপরের দিক থেকে আল্লাহকে ডাকা হয়, নিচের দিক থেকে নয়। কেননা নিচের দিক, রম্নবুবিয়াহ ও উলুহিয়াহ- এর বৈশিষ্ট্য থেকে কোন কিছুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
(আল-ফিকহুল আব্‌সাত্ব, ৫১পৃঃ)
(৯) তিনি বলেছেন, “তিনি ক্রুদ্ধ এবং সন্ত্মুষ্ট হন। এটা বলা যাবে না- তাঁর ক্রোধ হচ্ছে, তাঁর শাস্ত্মি এবং তাঁর সন্ত্মুষ্ট হচ্ছে তাঁর ছওয়াব প্রদান করা।”
(আল-ফিকহুল আব্‌সাত্ব, ৫৬পৃঃ, উক্ত গ্রন্থের অনুসন্ধানকারী ‘আল- কাওছারী’ উক্ত বিষয়ে মন্ত্মব্য করা হতে নিরবতা অবলম্বন করেছেন)
(১০) তিনি বলেছেন, “তিনি সৃষ্টজীবের কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নন। কোন সৃষ্টজীব তাঁর সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। তিনি স্বীয় নাম ও গুণাবলীর সঙ্গে সদাসর্বদা বিদ্যমান আছেন।” (আল-ফিকহুল আকবার, ৩০১পৃঃ)
(১১) তিনি বলেছেন, “তাঁর গুণাবলী মাখলুক- এর গুণাবলীর বিপরীত। তিনি জানেন, কিন্ত্মু আমাদের জানার মত নয়। তিনি ক্ষমতাবান, কিন্ত্মু আমাদের ক্ষমতার অনুরূপ নয়। তিনি দেখেন, কিন্ত্মু আমাদের দেখার ন্যায় নয়। তিনি শ্রবণ করেন, কিন্ত্মু আমাদের শ্রবণ করার অনুরূপ নয়। তিনি কথা বলেন, কিন্ত্মু আমাদের বলার ন্যায় নয়।”
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২পৃঃ)
(১২) তিনি বলেছেন, “সৃষ্টজীব- এর গুণাবলীর সাথে সাদৃশ্য রেখে আল্লাহর গুণ বর্ণনা করা যাবে না।” (আল-ফিকহুল আব্‌সাত্ব, ৫৬পৃঃ)
(১৩) তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের অর্থসমূহের মধ্য হতে কোন অর্থের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে আল্লাহর গুণ বর্ণনা করল, তবে সে কাফির।
(আল-আক্বীদাতুত্‌-ত্বহাবিয়াহ্‌, ২৫পৃঃ আলবানীর টিকাসহ)
(১৪) তিনি বলেছেন, “তাঁর গুণাবলীর মধ্যে কিছু জাত (সত্তাগত) এবং কিছু কার্যমূলক। সত্তাগত হচ্ছে, হায়াত, শক্তি, ইল্‌ম, কথা বলা, শ্রবণ করা, দর্শন করা এবং ইচ্ছা করা। এবং কার্যমূলক হচ্ছে, সৃষ্টি করা, রিযিক দেয়া, প্রবর্তন করা, আবিস্কার করা এবং তৈরি করা ইত্যাদি, এগুলো তাঁর কর্মগত গুণাবলী। তিনি স্বীয় নাম ও গুণাবলীর সঙ্গে সর্বদা ছিলেন এবং সদা-সর্বদা থাকবেন।” (আল-ফিকহুল আকবার, ৩০১পৃঃ)
(১৫) তিনি বলেছেন, “তিনি স্বীয় কর্মের সাথে সবর্দা সম্পাদনকারী ছিলেন। আর কর্ম হচ্ছে ‘আযাল’ (চিরস্থায়ী)- এর মধ্যে একটি গুণ। কার্যসম্পাদনকারী হচ্ছেন আল্লাহ। কর্ম হচ্ছে ‘আযাল’ (চিরন্ত্মন)- এর মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য। আর কর্ম হচ্ছে মাখলুক বা সৃষ্টি। অথচ আল্লাহ্‌র কর্ম মাখলুক (সৃষ্টি) নয়।” (আল-ফিকহুল আকবার, ৩০১পৃঃ)
(১৬) তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি বলবে, আমার প্রতিপালক আকাশে না পৃথিবীতে আছেন আমি এটা চিনি না, তবে সে কাফির। তদ্রূপ যে ব্যক্তি বলবে, তিনি আরশে সমাসীন। কিন্ত্মু আমি এটা জানি না যে, আরশ আকাশে, না পৃথিবীতে।
(আল-ফিকহুল আবসাত্ব, ৪৬পৃঃ মাজমূউল ফাতাওয়া, ৫ম খ-, ৪৮পৃঃ- এর মধ্যে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ), ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামীয়া, ১৩৯পৃঃ- এর মধ্যে ইবনুল কাইয়্যিম, আল-উল্‌ও ১০১-১০২পৃঃ- এর মধ্যে যাহাবী, আল-উল্‌ও, ১১৬পৃঃ এর মধ্যে ইবনে কুদামা, শারহুত- ত্বহাবিয়া, ৩০১পৃঃ- এর মধ্যে ইবনে আবিল আয্‌ অনুরূপ শব্দে বর্ণনা করেছেন)
(১৭) ঐ নারী যে তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, যে ইলাহ- এর আপনি ইবাদত করেন, তিনি কোথায় থাকেন? এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, নিশ্চয় আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আকাশে আছেন, পৃথিবীতে নয়।
অতঃপর তাঁকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল আলস্নাহ তায়ালার বাণীঃ
وَهُوَ مَعَكُمْ অর্থঃ “তিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন।”
(সূরা হাদীদ, ৪)
এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কি?
উত্তরে তিনি বললেন, এটা হচ্ছে, আপনি যেমন এক ব্যক্তির জন্য লেখেন “নিশ্চয় আমি তোমার সঙ্গেই আছি” অথচ আপনি তার থেকে অনুপস্থিত। (আল-আসমা ওয়াছ্‌ ছিফাত, ৪২৯পৃঃ)
(১৮) তদ্রূপ তিনি বলেছেন, “আল্লাহ্‌র হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। তার হাত স্বীয় সৃষ্টজীবের হাতের সাদৃশ্য নয়।”
(আল-ফিকহুল আবসাত্ব, ৫৬পৃঃ)
(১৯) তিনি বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আকাশে রয়েছেন, পৃথিবীতে নয়। তাকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, আলস্নাহ তায়ালার বাণীঃ
وَهُوَ مَعَكُمْ অর্থঃ “তিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন।”
(সূরা হাদীদ, ৪)
এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
উত্তরে তিনি বললেন, এটা হচ্ছে, আপনি যেমন এক ব্যক্তির জন্য লিখেন, “নিশ্চয় আমি তোমার সঙ্গেই আছি” অথচ আপনি তার থেকে অনুপস্থিত। (আল-আসমা ওয়াছ ছিফাত, ২য় খ-, ১৭০পৃঃ)
(২০) তিনি বলেছেন, “কখনো তিনি বক্তা হয়ে থাকেন। কিন্তু মূসা (আঃ) কথা বলেননি। (আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২পৃঃ)
(২১) তিনি বলেছেন, “তিনি স্বীয় কথার সঙ্গে বক্তা হন। আর কথা বলা ‘আযাল’ (চিরন্ত্মন)- এর মধ্যে একটি গুণ।”
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২পৃঃ)
(২২) তিনি বলেছেন, তিনি কথা বলেন, কিন্তু আমাদের কথা বলার অনুরূপ নয়। (আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২পৃঃ)
(২৩) তিনি বলেছেন, মূসা (আঃ) আল্লাহ তায়ালার কালাম শ্রবণ করেছেন।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَىٰ تَكْلِيمًا
অর্থঃ ‘আল্লাহ মূসার সহিত সরাসরি কথা বলেছেন।’
(সূরা নিসা, ১৬৪)
নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বক্তা ছিলেন। আর মূসা (আঃ) কথা বলেননি।
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২পৃঃ)
(২৪) তিনি বলেছেন, “আল-কুরআন হচ্ছে আল্লাহর বাণী। গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং অন্তরে সংরক্ষিত আছে; মুখে পঠিত হয় এবং নাবী (সাঃ)- এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।”
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০১পৃঃ)
(২৫) তিনি বলেছেন, “আল-কুরআন মাখলুক (সৃষ্টি) নয়।”
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০১পৃঃ)
(খ) তাক্বদীর বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ)-এর অভিমতঃ
(১) এক ব্যক্তি ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ)- এর নিকট এসে তার সাথে তাকদীর বিষয়ে বিতর্ক করতে লাগল। অতঃপর তিনি তাকে বললেনঃ আপনি কি অবগত নন যে, নিশ্চয় তাকদীর বিষয়ে পর্যবেক্ষণকারী ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে সূর্যের মূল অংশ সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ করে। তার দৃষ্টি যতই বৃদ্ধি করবে, ততই সে দিশেহারা হয়ে পড়বে।
(কালায়িদু উকূদিল আইয়ান, (ق – ক্বাফ – ৭৭ – ب বা)
(২) ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেন, বিভিন্ন বস্তু, অস্তিত্মে আসার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা ‘আযাল’- এর মধ্যে ঐগুলো সম্পর্কে মহাজ্ঞানী ছিলেন। (আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২, ৩০৩পৃঃ)
(৩) তিনি বলেছেন, আলস্নাহ তায়ালা অস্তিত্মহীন বস্তু সম্পর্কে জানেন, যখন ওটা অস্তিত্মহীন অবস্থায় থাকে। এবং তিনি জানেন যখন এটাকে অস্তিত্মে আনবেন তখন এটা কিরূপ হবে? আল্লাহ তায়ালা বিদ্যমান বস্তুকে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় জানেন এবং তিনি এটাও জানেন যে, এটা কিরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। (আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২, ৩০৩পৃঃ)
(৪) ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেন, তাঁর তাকদীর লাওহে মাহফূযে সংরক্ষিত আছে। (আল-ফিকহুল আকবর, ৩০২পৃঃ)
(৫) তিনি বলেছেনঃ আমরা স্বীকার করছি যে, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা কলমকে লেখার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর কলম বলল, হে আমার রব, আমি কি লিখব?
আল্লাহ তায়ালা বললেন, কিয়ামত পর্যন্ত্ম যা কিছু সংঘটিত হবে, তা লিখে ফেল।
আলস্নাহ তায়ালার বাণীঃ
وَكُلُّ شَيْءٍ فَعَلُوهُ فِي الزُّبُرِ﴿٥٢﴾﴾وَكُلُّ صَغِيرٍ وَكَبِيرٍ مُّسْتَطَرٌ﴿٥٣﴾
অর্থঃ (৫২) তারা যা কিছু করেছে, সবই আমল নামায় লিপিবদ্ধ আছে।
(৫৩) ছোট ও বড় সবই লিপিবদ্ধ।
(সূরা ক্বামার, ৫২, ৫৩) [আল-ওয়াছিয়্যাই, ব্যাখ্যা সহ ২১পৃঃ]
(৬) ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেছেন, “দুনিয়া ও আখেরাতে এমন কোন বস্তু নেই যা আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল নয়।”
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২পৃঃ)
(৭) ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেন, “কোন কিছু থেকে গ্রহণ না করেই আল্লাহ তায়ালা সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন।”
(আল-ফিকহুল আকবর, ৩০২পৃঃ)
(৮) তিনি বলেছেন, “তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করার পূর্বেই স্রষ্টা ছিলেন।” (আল-ফিকহুল আকবর, ৩০৪পৃঃ)
(৯) তিনি বলেছেন, “আমরা স্বীকার করছি যে, নিশ্চয় বান্দা স্বীয় কর্ম, স্বীকৃতি ও জ্ঞান সহ সৃষ্টি। অতএব, যখন কর্তা স্বয়ং সৃষ্টি, সুতরাং তার কর্মসমূহ সৃষ্টি হওয়াই অধিকতর উপযোগী।”
(“আল-ওয়াছিয়্যাহ” স্বীয় ব্যাখ্যা সহ, ১৪পৃঃ)
(১০) তিনি বলেছেন, “চলাচল করা ও থেমে থাকা সহ বান্দার সকল কর্ম তাদের অর্জিত। আল্লাহ তায়ালা এর সৃষ্টিকারী। এর প্রত্যেকটি তাঁর ইচ্ছা, জ্ঞান, ফয়সালা ও তাকদীর- এর উপর নির্ভরশীল।”
(আল- ফিকহুল আকবার, ৩০৩পৃঃ)
(১১) ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেছেন, চলাচল করা ও থেমে থাকা সহ বান্দার সকল কর্ম বাস্তবেই তাদের অর্জিত। আল্লাহ তায়ালা এগুলো সৃষ্টি করেছেন। এর প্রত্যেকটি তাঁর ইচ্ছা, জ্ঞান, ফয়সালা ও তাকদীর- এর উপর নির্ভরশাল। আল্লাহর নির্দেশ, তাঁর ভালবাসা, তাঁর সন্ত্মুষ্টি, তাঁর ইল্‌ম, তাঁর ফয়সালা, তাঁর তাকদীর ও তাঁর ইচ্ছা- এর মাধ্যমেই সকল প্রকার আনুগত্য করা ওয়াজিব। শুধুমাত্র তাঁর ভালবাসা, তাঁর সন্তুষ্টি ও তাঁর নির্দ্দেশের জন্যই সকল আনুগত্য করা ওয়াজিব নয়। (আল-ফিকহুল আকবার, ৩০৩পৃঃ)
(১২) তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা কুফ্‌র ও ঈমান হতে মুক্ত রেখে মাখলূককে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে সম্বোধন করেছেন, নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিষেধ করেছেন। সুতরাং কোন ব্যক্তি স্বীয় কর্ম, অমান্য করা ও সত্যকে অস্বীকার করার মাধ্যমে কুফ্‌রী করেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাকেই শুধুমাত্র পরিত্যাগ করেছেন। এবং কোন ব্যক্তি স্বীয় কর্ম, স্বীকৃতি ও সত্যায়ন- এর মাধ্যমে ঈমান আনয়ন করেছে। আল্লাহ তায়ালা তাকে তাওফীক দিয়েছেন এবং সাহায্য করেছেন।
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২-৩০৩পৃঃ)
(১৩) তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা আদম (আঃ)-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে ছোট পিপিলিকার আকারে তাঁর সন্তানদেরকে বের করলেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে বোধশক্তি সম্পন্ন করলেন। তারপর তাদেরকে সম্বোধন করলেন এবং তাদেরকে ঈমান আনয়ন করতে নির্দেশ দিলেন ও কুফ্‌র করতে নিষেধ করলেন। তখন তারা তাঁর রুবুবিয়াত (প্রভুত্ব)-এর স্বীকৃতি প্রদান করে। অতএব, ওটা তাদের পক্ষ থেকে ঈমান- এর প্রমাণ ছিল। তারপর তারা ঐ ফিতরাত (ইসলাম)- এর উপর জন্মগ্রহণ করে। পক্ষান্তরে যারা কুফ্‌রী করে; তারা তো ওটার পর কুফ্‌রী করে। অতএব, সে তো পরিবর্তন ও বিকৃতি করে ফেললো। আর যে ব্যক্তি ঈমান আনয়ন করল ও সত্যায়ন করল, তবে সে তো ওর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকল। (আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২পৃঃ)
(১৪) তিনি বলেছেন, তিনিই তো সকল বস্তুকে পূর্বে নির্ধারণ করেছেন ও ফয়ছালা করে রেখেছেন। তাঁর ইচ্ছা, তাঁর ইল্‌ম, তাঁর ফয়সালা ও তাঁর পূর্ব নির্ধারিত ব্যতীত দুনিয়া ও আখেরাতে কোন বস্তু হতে পারে না। এটা তিনি লাওহে মাহ্‌ফূযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০২পৃঃ)
(১৫) তিনি বলেছেন, তিনি স্বীয় সৃষ্টজীবের কাউকে কুফ্‌র বা ঈমানের-এর উপর বাধ্য করেননি। কিন্তু তিনি তাদেরকে বিভিন্ন ব্যক্তি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। ঈমান ও কুফ্‌র হচ্ছে বান্দার কর্ম। কুফ্‌রী অবস্থায় যে ব্যক্তি তাঁকে অস্বীকার করবে তাকে তিনি কাফির হিসেবে জানেন। এরপর যখন সে ঈমান আনবে, তখন তাকে তিনি মু’মিন হিসেবে চেনেন ও তাকে ভালবাসেন। অথচ তার কোন ইল্‌ম- এর পরিবর্তন ঘটে না।
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০৩পৃঃ)
(গ) ঈমান বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ)- এর অভিমত।
(১) তিনি বলেছেন, ঈমান হচ্ছে, মৌখিক স্বীকৃতি ও অন্তরে বিশ্বাস।
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০৪পৃঃ)
(২) তিনি বলেছেন, মৌখিক স্বীকৃতি ও অন্তরে বিশ্বাসকে ঈমান বলে। শুধুমাত্র মৌখিক স্বীকৃতি ঈমান বলে বিবেচিত হবে না।
(‘কিতাবুল ওয়াছিয়্যাহ’, ব্যাখ্যা সহ, ২পৃঃ) ত্বাহাবী আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) ও তার দুই শিষ্যের নিকট হতে এটা বর্ণনা করেছেন। (আত-ত্বহাবিয়া ওয়া শারহুহা, ৩৬০পৃঃ)
(৩) আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেন, ঈমান বাড়েও না, কমেও না।
(কিতাবুল ওয়াছিয়্যাহ, ব্যাখ্যা সহ, ৩পৃঃ)
আমার মন্তব্য হচ্ছে,
তার অভিমত- ঈমান বাড়েও না, কমেও না। এবং নিশ্চয় আমল ঈমানের বাস্তবতার অন্ত্মর্ভুক্ত নয়।
তার উক্ত মন্তব্যই ঈমান বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ)- এর আকীদাহ্‌ ও ইসলামের সকল ইমামদের আকীদাহ্‌- এর মধ্যে পার্থক্যকারী। যেমন, মালিক, শাফিঈ, আহমাদ, ইসহাক, বুখারী (রঃ) ইত্যাদি। আর সত্য তাদের সঙ্গেই রয়েছে। আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ)- এর মন্তব্য সত্যের পার্শ্ববর্তী স্থানে অবস্থান করছে। উভয় অবস্থায় তিনি পারিশ্রমিক পাবেন। ইবনে আব্দুল বার এবং ইবনে আব্দুল আয্‌ উলেস্নখ করেছেন, যাতে বুঝা যায় যে, আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) স্বীয় অভিমত হতে প্রত্যাবর্তন করেছেন। আল্লাহই অধিক অবগত।
(আত- তামহীদ, ৯ম খ-, ২৪৭পৃঃ গ্রন্থকার, ইবনে আব্দুল বার; শারহুল আকীদাতিত্‌ ত্বহাবিয়াহ, ৩৯৫পৃঃ)
(ঘ) সাহাবা (রাঃ)-সম্পর্কে ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ)-এর অভিমত।
(১) ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেছেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর সাহাবাদের মধ্য হতে কাউকে কল্যাণ ব্যতীত উল্লেখ করিনা।
(আল-ফিকহুল আকবার, ৩০৪পৃঃ)
(২) তিনি বলেছেন, রসূলুলস্নাহ (সাঃ)- এর সাহাবাদের মধ্য হতে কারো সঙ্গে আমরা সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেইনা এবং একজন ব্যতীত অন্যজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করিনা। (আল-ফিকহুল আবসাত্ব, ৪০পৃঃ)
(৩) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর সঙ্গে তাঁদের কারো কিছুক্ষণ সময় অবস্থান করা, আমাদের কারো সারা জীবনের আমল হতেও উত্তম, যদিও তা দীর্ঘ হয়।
(মানাকিবু আবী হানীফাহ্‌, ৭৬পৃঃ গ্রন্থকার, আল- মাক্কী)
(৪) তিনি বলেছেন, আমরা স্বীকার করছি যে, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর পর এই উম্মাতের উত্তম ব্যক্তি হচ্ছেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ), অতঃপর উমার (রাঃ), তারপর উসমান (রাঃ), অতঃপর আলী (রাঃ)।
(আল-ওয়াছিয়্যাহ, ব্যাখ্যা সহ ১৪পৃঃ)
(৫) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর পর লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হচ্ছেনঃ আবূ বকর, উমার, উসমান ও আলী (রাঃ)। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর সকল সাহাবী সম্পর্কে আমরা উত্তম ধারণাই রাখব। আন-নূরম্নল লামি (ق – ক্বাফ ১৯৯ ب – বা)- এর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে।
(ঙ) দর্শন শাস্ত্র ও দ্বীন বিষয়ে বিবাদ ও ঝগড়া না করা সম্পর্কে তাঁর নিষেধাজ্ঞা।
(১) ইমাম আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) বলেছেন, বসরায় প্রবৃত্ত্বি পূজারীর সংখ্যা অনেক। আমি এখানে ত্রিশ- এর অধিক বার প্রবেশ করেছি। কোন কোন সময় তথায় এক বৎসর কিংবা এর বেশি, কিংবা কিছু কম সময় অবস্থান করেছি। তখন ইলমে কালাম(দর্শন) সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল এটা হচ্ছে সম্মানিত বিদ্যা। (মানাকিবু আবী হানীফাহ্‌, ১৩৭পৃঃ রচনায় আল-কুরদী)
(২) তিনি বলেছেন, দর্শন বিষয়ে আমি দৃষ্টিপাত করতেছিলাম। এমন কি আমি এর সীমায় পৌঁছে গেলাম, যেখানে আমার দিকে আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা হয়। আমরা হাম্মাদ ইবনে আবূ সুলাইমান- এর মজলিসের নিকটবর্তী বসতাম। অতঃপর আমার নিকট একজন মহিলা আগমন করে বলল, এক ব্যক্তির বাঁদী স্ত্রী রয়েছে। সে তাকে সুন্নাহ অনুযায়ী ত্বালাক দিতে চায়, তাকে কয়টি ত্বালাক দিবে?
আমি তাকে উত্তর দিলাম না। তাকে নির্দেশ করলাম, যেন সে হাম্মাদকে জিজ্ঞেস করে এবং ফিরে এসে আমাকে সংবাদ প্রদান করে। তখন সে হাম্মাদকে জিজ্ঞেস করল। তিনি তাকে বললেনঃ হায়েয ও সহবাস থেকে পবিত্রাবস্থায় তাকে একটি তালাক দিবে। অতঃপর তাকে পরিত্যাগ করে চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত্ম দুটি হায়েয না হচ্ছে। অতঃপর সে যখন গোসল করবে তখন সে স্বামীদের থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তারপর সে ফিরে এসে আমাকে সংবাদ দেয়। অতঃপর আমি বললামঃ দর্শন বিষয়ে আমার কোন প্রয়োজন নেই এবং আমি আমার জুতা নিয়ে নিলাম এবং হাম্মাদ- এর নিকট বসে গেলাম। (তারীখে বাগদাদ, ১৩শ খ-, ৩৩৩পৃঃ)
(৩) তিনি বলেছেন, আল্লাহ আমর ইবনে উবাইদ- এর উপর লা’নত করম্নন। কেননা সে দর্শন শাস্ত্রের দিকে লোকদের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। এটা এমন একটি বিষয়, দর্শন সম্পর্কে সে তাদের কোন উপকার করেনি।
(যাম্মুল কালাম, ২৮-৩১পৃঃ রচনায়, আল- হারাবী)
তাকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, দর্শন বিষয়ে লোকেরা যা উদ্ভাবন করেছে যেমন আরয ও জিসম্‌ (এগুলো ফালসাফাহ্‌- এর কিছু পরিভাষা)-এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি হাদীস ও সালাফদের পথকে আকড়ে ধরে থাক। সাবধান, প্রত্যেক নতুন জিনিসই বিদআত।
(যাম্মুল কালাম, ب – বা/১৯৪ গ্রন্থাকার, আল- হারাবী)
(৪) হাম্মাদ ইবনে আবূ হানীফাহ্‌ বলেছেন, একদিন আমার নিকট আমার পিতা (রঃ) প্রবেশ করলেন। তখন আমার কাছে দার্শনিকদের একদল লোক বসেছিলেন। আমরা একটি বিষয়ে বির্তক করছিলাম, এমনকি আমাদের আওয়াজ উচ্চস্বরে হচ্ছিল। যখন গৃহে আগমনের বিষয়টি বুঝতে পারলাম, আমি তার নিকট বেরিয়ে গেলাম।
তিনি আমাকে বললেন, হে হাম্মাদ, তোমার নিকট কে কে উপস্থিত রয়েছে? আমি বললাম, উমুক উমুক রয়েছে। যারা আমার নিকট ছিলেন, তাদের নাম বললাম। তিনি বললেন, তোমরা কোন্‌ বিষয় আলোচনা করছিলে? আমি বললাম, উমুক উমুক বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে হাম্মাদ, দর্শন পরিহার কর- সে বলল, আমার পিতাকে বিভ্রান্ত্মিকর ব্যক্তি পাইনি এবং তিনি এমনো ছিলেন না যে, কোন বিষয়ে নির্দেশ প্রদানের পর পুনরায় তা নিষেধ করবেন।
অতএব, আমি তাকে বললাম, আব্বু, আপনি কি আমাকে উক্ত বিষয়ে নির্দেশ দেননি? তিনি বললেন, হাঁ, হে আমার বৎস, আজকে আমি তোমাকে উক্ত বিষয় হতে নিষেধ করছি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তা কেন? তিনি বললেন, হে বৎস, নিশ্চয় এই লোকেরা দর্শন শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে, যা তুমি প্রত্যক্ষ করছ। অথচ তারা একই মতের উপর ছিল, একই দ্বীন- এর অন্তর্ভূক্ত ছিল, এমনকি শয়তান তাদের মধ্যে কুমন্ত্রণা দিল। অতঃপর সে তাদের মধ্যে শত্রম্নতা ও বিরোধ ছড়িয়ে দেয়, ফলে তারা পরস্পর বিরোধী হয়ে যায়।
(মানাকিবু আবী হানীফাহ্‌, ১৮৩-১৮৪পৃঃ, গ্রন্থকার, আল-মাক্কী)
(৫) আবূ হানীফাহ্‌ (রঃ) আবূ ইউসূফকে (রঃ) বলেছেন, সাধারণ লোকদের মধ্যে দ্বীন এর নীতিমালা বিষয়ে দর্শন হতে কথা বলবে না। কেননা তারা তোমার তাকলীদ করবে। অতঃপর তারা উক্ত বিষয়ে লিপ্ত হয়ে যাবে।
(মানাকিবু আবী হানীফাহ্‌, ৩৭৩পৃঃ, গ্রন্থকার, আল- মাক্কী)
এগুলো তার (রঃ) অভিমত ও দ্বীন- এর নীতিমালা সংক্রান্ত মাসআলায় তার ই’তিক্বাদ এবং দর্শন ও দার্শনিক সম্বন্ধে তার অবস্থানের সামান্য অংশ মাত্র।
চার ইমামের আক্বীদাহ- আবূ হানীফাহ্‌, মালিক, শাফিঈ ও আহমাদ আল্লাহ তাদের উপর রহম করুন- ওটাই ছিল, যা কিতাব ও সুন্নাহ বর্ণনা করেছে এবং সাহাবা ও তাবিয়ীগণ যে মতাদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ঐ সকল ইমামগণের মধ্যে দ্বীন- এর মূলনীতি বিষয়ে কোন বিবাদ ছিল না। বরং তারা সকলেই একমত যে, রব- এর গুণাবলীর উপর ঈমান রাখতে হবে এবং নিশ্চয় কোরআন আল্লাহর বাণী, সৃষ্টি নয়। নিশ্চয় ঈমান- এর জন্য অন্তরে বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি আবশ্যক। বরং তারা জাহমিয়া ও অন্যান্য দার্শনিকদের কথাকে ঘৃণা করতেন, যারা গ্রীক দর্শন এবং দার্শনিক মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।
– ইমাম আবু হানীফাহ্‌ (রঃ)-এর আক্বীদাহ ।
– ডঃ মুহাম্মাদ ইবনে আবদুর রহমান আল খামীস

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন