রবিবার, ৭ জুন, ২০১৫

তায়েফের মর্মান্তিক ঘটনা




হুজুরে পাক(সঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ইসলাম প্রচারের নিমিত্তে যে সমস্ত দুঃখ কষ্ট ও নির্যাতন ভোগ করেছেন ঐ সব কথা তো দুরের কথা উহা করার মত কল্পনা করাও আমাদের পক্ষে অসম্ভব। ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলী ঐ সমস্ত ঘটনায় পরিপূর্ণ রহিয়াছে। কিন্ত আমরা ঐ গুলির উপর আমল করাতো ভিন্ন কথা আমরা উহা জানিবার জন্য কষ্ট করিতেও কুন্ঠিত ।
নবুওত প্রাপ্তির পর দীর্ঘ নয় বছর যাবত নবীয়ে করিম (সঃ) পবিত্র মক্কা নগরীতে দ্বীন প্রচার করিতে থাকেন এবং জাতির দহদায়েতের জন্য সার্বন্তক চেষ্টা করিতে থাকেন। এই সময় স্বল্প সংখ্যক লোক যাহারা ইসলাম গ্রহণ করিয়া হুজুরে পাক (সঃ) এর প্রতি সাহায্র সহযোগিতা করিয়াছিলেন তাহারা ব্যতিত অধিকাংশ কাফেরই হুজুরে পাক(সঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) প্রতি অকথ্য অত্যাচার করিতেছিল । তাহারা ঠাট্রা বিদ্রুপ করিত এবং নির্যাতনমূলক যাহা ইচ্ছা তাহাই করিত। অমুসলিম হএয়া সত্বেও যাহারা হুজুরে পাক(সঃ) প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, হুজুরে পাক(সঃ) এর চাচা আবু তালেব তাহাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। যখন তাহার ইন্তেকাল হইয়া গেল তখন কাফেরগণ প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণে বাধা দিতে লাগল ও মুসলমানদের প্রতি অমানুষিক নির্যাতন করিতে আরম্ভ করিল।
এমতাবস্থায় হুজুরে পাক(সঃ) এই উদ্দেশ্যে তায়েফ গমণ করিলেন যে, হয়ত সেখানকার বিখ্যাত ছাক্বিফ গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করিবে যদদ্বারা মুসলমানগণ কাফেরদের অত্যাচার হইতে নাজাত পাইবে এবয ইসলাম প্রচারের ভিত্তিও মজবুত হইয়া যাইব ।
তায়েফ পৌছিয়া হুজুরে পাক(সঃ) তিনজন প্রভাবশালী লোকের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন এবং তাহাদিগকে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন ও আল্লাহর নবী অর্থ্যাৎ হুজুরে পাক(সঃ) এর সাহায্য করিতে আহবান করিলেন। কিন্ত তাহারা দ্বীন ইসলাম গ্রহণতো দুরের কথা আরব জাতির বৈশিষ্ট্য মেহমানদারী এ আতিথীয়তার প্রতিও ভ্রুক্ষেপ না করিয়া অত্যন্ত অভদ্র এবং রুক্ষ ব্যবার করিল।
তথায় হুজুরে পাক(সঃ) কিছু সময় অবস্থান করিবেন ইহাও তাহাদের সহ্য হইল না । তন্মধ্যে এক ব্যক্তি বলিল, এহ-হো তোমাকে নাকি আল্লাহ নবী করিয়া পাঠাইলেন ? দ্বিতীয় ব্যক্তি বলিল,নবী করিয়া পাঠাইবার জন্য আল্লাহ বুঝি তোমাকে ব্যতিত আর কোন লোক পাইলেন না ? তৃতীয় ব্যক্তি বলিল, আমি তোমার সহিত কথা বলিতে চাহিনা। যেহেতু তোমার দাবী অনুসারে তুমি যদি নবী হও তাহলে তোমার কথা অস্বিকার করিলে বড় বিপদ আছে । আর যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও তবে এহেন মিথ্যাবাদীর সহিত আমি কথা বলিতে চাহি না।
অতঃপর হুজুরে পাক(সঃ) সাহস করিয়া অন্যান্ন লোকদের সহিত কথা বলার জন্য ইচ্ছা করিলেন ক্নিত কেহই তাহার সহিত আলাপ করিতে সম্মত হইল না বরং রুঢ় কন্ঠে সকলেই একবাক্যে বলির এক্ষুনি তুমি আমাদের শহর হইতে বাহির হইয়া যথায় ইচ্ছা তথায় চলিয়া যাও । হুজুরে পাক(সঃ) যখন সম্পুর্ণ রুপে রিাশ হইয়া ফিরিয়া যাইতেছিলেন তখন তাহারা শহরের দুষ্ট ছেলেদিগকে তাহার পছনে লেলাইয়া দিল । ছেলেরা হাতে তালি বাজাইয়া ঠাট্রা ও বিদ্রুপ করিতে লাগিল এমন কি প্রিয় নবীজির উপর এমন ভাবে ইট-পাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করিতে লাগিল যদদ্বারা প্রিয় হুজুরে পাক(সঃ)এর মোবারক শরীর হইতে রক্তধারা প্রবাহিত হইতে লাগিল ও জুতা মোবারক পর্যন্ত রক্তে রন্জিত হইয়া গেল। এইরুপ ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়া হুজুরে পাক(সঃ) ফিরিয়া আসিলেন এবং দুষ্টমতি ছেলেদের অত্যাচার হইতে যখন কিছুটা নিস্কৃতি পাইলেন তখন এক জায়গায় ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হইয়া বসিয়া পড়িলেন এবং বড়ই কাতর স্বরে পরওয়ারদিগারে আলমের শাহী দরবারে এই বলিয়া প্রার্থনা করিতে লাগিলেনঃ
হে পরওয়ারদিগার ! আমি আমার দুর্বলতা এবং অসহায় অবস্থার জন্য এক মাত্র তোমার দরবারেই অভিযোগ করিতেছি । হে রাহমানুর রাহিম ! তুমিই একমাত্র দুর্বলদের পরওয়ারদিগার । তুমি আমাকে কাহার সোপর্দ করিতেছ ? তুমি আমাকে শক্তিশালী শত্রুর হাতে অথবা বদমেজাজ আড় চক্ষুওয়ালা অজানা ব্যক্তির হাতে সোপর্দ করিতেছ ? আয় মাওলা ! যদি তুমি আমার উপর অসন্তষ্ট না থাক তবে আমি কাহারও পরোয়া করি না বরং তোমার হেফাজতেই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি তোমার চেহারার সেই নূরের উসিলায় যদদ্বারা সারা বিশ্বভূবনের অন্ধকার বিদুরিত হইয়া গেল এবং যদদ্বারা ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় কার্য সম্পাদন হইয়া থাকে আশ্রয় চাহিতেছি যেন তুমি আমার উপর রাগান্মিত না হও । ইলাহি ! তোমার অসন্তষ্টিকে সন্তুষ্টি দ্বারা পরিবর্তন করাই আমার একমাত্র সাধনা ও কামনা। তুমিই একমাত্র শক্তিশালী ।
হযরত জিব্রাইল (আঃ) হাজির হইয়া আরজ করিলেন,আল্লাহপাক তায়েফবাসীদের ধৃষ্টতামূলক যাবতীয় আচরণ ও দুর্ব্যবহার লক্ষ্য করিয়াছেন এবং পাহাড় সমূহের খেদমত যাহার উপর ন্যস্ত এমন এক জবরদস্ত ফেরেশতা আপনার নিকট পাঠাইয়াছেন। আপনি তাহাকে যাহা ইচ্ছা তাহাই আদেশ করিতে পারিবেন। অতঃপর একজন ফেরেশতা হুজুরে পাক(সঃ) কে সালাম করিয়া আরজ করিলেন আমাকে যাহা ইচ্ছা আদেশ করিতে পারেন। যদি আপনার নির্দেশ পাই তবে তায়েফের উভয় পাশ্বের্র পাহাড়কে এমনভাবে মিলাইয়া দিব যেন সকলেই উহার মধ্যস্থলে নিষ্পেষিত হইয়া যায় । অথবা আপনার ইচ্ছানুসারে অন্য শাস্তির ব্যবস্থাও করিতে পারেন। কিন্ত দয়ার সাগর রাহমাতুল্লিল আলামীন হুজুরে পাক(সঃ) উত্তর করিলেন-আমি আল্লাহর দরবারে এই আশাই পোষন করি যে, যদি তায়েফবাসী পবিত্র ইসলাম গ্রহণ নাও করে তবুও তাহাদের বংশধরদের মধ্যে এমন লোক পয়দা হইবে যাহারা পবিত্র ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া একমাত্র আল্লাহ পাকের এবাদত বন্দেগী করিবে।
ইহাই হইল হুজুরে পাক(সঃ) এর পবিত্র আখলাক আমরা যাহার উম্মত বলিয়া সগর্বে দাবী করিয়া থাকি অথচ কেহ আমাদের প্রতি সামান্যতম অত্যাচার করিলে অথবা কটুক্তি বা কটুবাক্য বলিলে এমনিভাবে ব্যথিত হই যে আজীবন উহার প্রতিশোধ গ্রহণের অপেক্ষায় থাকি এবং অত্যাচারের প অত্যাচার করিতে থাকি অথচ হুজুরে পাক(সঃ) এর অনুগামী ও অনুসরনকারী বলিয়া দাবীও করিয়া থাকি । পক্ষান্তরে প্রিয় নবী হুজুরে পাক(সঃ) অকথ্য নির্যাতন সহ্য করিয়াও কোন প্রকার বদ-দোয়াও দিলেন না । প্রতিশোধও নিলেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন