শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০১৫

দুই শতাধিক প্রশ্নোত্তরে নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ

 / 

প্রশ্নঃ (১) বান্দার উপর সর্বপ্রথম ওয়াজিব কী?

উত্তরঃ বান্দার উপর সর্বপ্রথম ওয়াজিব হচ্ছে, তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, তাদের থেকে যে বিষয়ের অঙ্গীকার নিয়েছেন, যে বিষয় দিয়ে রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। এ বিষয়টির জন্যই আল্লাহ্ তাআলা দুনিয়া-আখেরাত, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ের জন্যেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে, দাড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে, আমলনামা প্রদান করা হবে। এ বিষয়টির কারণেই কেউ সৌভাগ্যবান হবে আবার কেউ হবে হতভাগা। এ অনুযায়ী কিয়ামতের দিন নূর বণ্টিত হবে। সে দিন আল্লাহ যাকে নূর দান করবেন না, তার কোন নূর থাকবে না।
প্রশ্নঃ (২) সুতরাং ঐ বিষয়টি কি, যার জন্য আল্লাহ্ তাআ’লা মানুষ সৃষ্টি করেছেন?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা মানুষ ও জিন জাতিকে পৃথিবীতে তাঁর একত্ববাদ ও এবাদত প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لاَعِبِينَ * مَا خَلَقْنَاهُمَا إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ
“আমি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবতী সবকিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি আকাশ ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বুঝে না”। (সূরা আদ্ দুখানঃ ৩৮-৩৯) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلاً ذَلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا
“আমি আকাশ ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে তা অযথা সৃষ্টি করি নি। এটা কাফেরদের ধারণা মাত্র”। (সূরা সোয়াদাঃ ২৭) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَخَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
“আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জনের ফল পায়। তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না”। (সূরা জাসিয়াঃ ২২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإِنسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ
“আর আমি জিন এবং মানব  কেবল আমার দাসত্ব করার জন্য সৃষ্টি করেছি”। (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬)
প্রশ্নঃ (৩) আব্দ অর্থ কি?
উত্তরঃ আব্দ দ্বারা যদি অধিনস্ত উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আসমান-যমীনের সকল জ্ঞানবান ও জ্ঞানহীন, তাজা-শুকনা, চলমান-স্থির, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কাফের-মুমিন, সৎ-অসৎ সব কিছুই উদ্দেশ্য। সবই আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহ কর্তৃক প্রতিপালিত, তাঁর অধিনস্ত, তাঁর পরিচালনাধীন। প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট একটি গন্তব্যস্থল রয়েছে। সেখানে গিয়ে তার যাত্রা শেষ হবে। প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট একটি সময়ের উদ্দেশ্যে চলমান। তার জন্যে নির্ধারিত সীমা ছেড়ে একটি সরিষার দানা পরিমাণ স্থানও অতিক্রম করতে পারবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
“আর এটি হল মহা পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর নির্ধারণ”। (সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮)
আর আব্দ দ্বারা যদি এবাদতকারী, অনুগত ও প্রিয় উদ্দেশ্য হয় তাহলে আব্দ অর্থ হবে আল্লাহর সম্মানিত মুমিন ব্যক্তিগণ। তারা হবেন আল্লাহর পরহেজগার বন্ধু। তাদের কোন ভয় নেই। আর তারা চিন্তিতও হবে না।
প্রশ্নঃ (৪) এবাদত কাকে বলে?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা বান্দার যেসমস্ত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে ভালবাসেন ও পছন্দ করেন এবং যে সমস্ত বিষয় আল্লাহর ভালবাসা ও পছন্দের বিপরীত ও পরিপন্থী, তা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার নামই এবাদত।
প্রশ্নঃ (৫) বান্দার আমল কখন এবাদতে পরিণত হয়?
উত্তরঃ আমলের মধ্যে যখন দু’টি বস্তু পরিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যাবে তখন তা এবাদতে পরিণত হবে। (১) আল্লাহকে পরিপূর্ণরূপে ভালবাসা এবং (২) আল্লাহর সামনে পরিপূর্ণভাবে বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশ করা। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ
“আর যারা ঈমানদার, তারা আল্লাহ্কে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে”। (সূরা বাকারাঃ ১৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ هُمْ مِنْ خَشْيَةِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ
“নিশ্চয়ই মুমিনগণ তাদের পালনকর্তার ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত থাকে”। (সূরা মুমিনূনঃ ৫৭) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ
“তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত”। (সূরা আম্বীয়াঃ ৯০)
প্রশ্নঃ (৬) বান্দা যে আল্লাহ্কে ভালবাসে, তার আলামত কী?
উত্তরঃ বান্দা কর্তৃক আল্লাহকে ভালবাসার প্রমাণ হল, সে আল্লাহর প্রিয় বস্তুকে ভালবাসবে এবং আল্লাহ যা অপছন্দ করেন, সে তা অপছন্দ করবে। আল্লাহর আদেশ মেনে চলবে এবং তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকবে। আল্লাহর বন্ধুদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর শত্রু মনে করবে। এ জন্যই আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃণা করা ঈমানের সবচেয়ে মজবুত হাতল।
প্রশ্নঃ (৭) বান্দা কিভাবে আল্লাহর প্রিয় ও সন্তুষজনক কাজগুলো জানতে পারবে?
উত্তরঃ আল্লাহ যা পছন্দ করেন ও ভালবাসেন, তা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন আদেশের মাধ্যমে এবং যা অপছন্দ করেন তা জানিয়ে দিয়েছেন নিষেধের মাধ্যমে। সুতরাং রাসূল প্রেরণ এবং আসমানী কিতাব নাযিলের মাধ্যমে বান্দাগণ আল্লাহর পছন্দনীয় আমলসমূহ জানতে পেরেছে। এর মাধ্যমেই তাদের নিকট আল্লাহর অকাট্য দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তাঁর পরিপূর্ণ হিকমত প্রকাশিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
رُسُلاً مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلاَ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ
“সুসংবাদদাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি। যাতে রাসূলগণকে প্রেরণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন সুযোগ না থাকে”। (সূরা নিসাঃ ১৬৫) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمْ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
“বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাক তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী ও দয়ালু”। (সূরা আল-ইমরানঃ ৩১)
প্রশ্নঃ (৮) ইবাদতের শর্ত কয়টি?
উত্তরঃ এবাদতের শর্ত হচ্ছে তিনটি। (১) ‘সিদকুল আযীমাহ’ তথা এবাদত করার সুদৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করা। আর এটি হচ্ছে এবাদতের অস্তিত্বের শর্ত। (২) নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া। (৩) আল্লাহ তা’আলা যে শরীয়ত (দ্বীন) অনুযায়ী এবাদত করতে বলেছেন, এবাদতটি সেই শরীয়ত অনুযায়ী হওয়া। শেষ দু’টি হচ্ছে এবাদত কবুল হওয়ার শর্ত।
প্রশ্নঃ (৯) ‘সিদকুল আযীমাহ’ তথা সুদৃঢ় ইচ্ছা বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ তা হচ্ছে এবাদত করতে গিয়ে সম্পূর্ণরূপে অলসতা পরিহার করা এবং কথা ও কাজে পরিপূর্ণ মিল থাকা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لاَ تَفْعَلُونَ * كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لاَ تَفْعَلُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা কর না তা বল কেন? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষ জনক”। (সূরা আস্ সাফঃ ২-৩)
প্রশ্নঃ (১০) নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়ার তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়ার অর্থ হচ্ছে বান্দা তার প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সকল কথা ও কাজের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَمَا أُمِرُوا إلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
“তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে”। (সূরা আল-বাইয়্যিনাহঃ ৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا لأَحَدٍ عِنْدَهُ مِنْ نِعْمَةٍ تُجْزَى* إِلاَّ ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الأَعْلَى
“এবং তাঁর উপর কারও এমন কোন অনুগ্রহ নেই, যার বিনিময় প্রদান করা হচ্ছে; বরং তার মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই”। (সূরা আল-লাইলঃ ১৯-২০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لاَ نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلاَ شُكُورًا
“তারা বলেঃ আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই তোমাদেরকে আহার প্রদান করি। তোমাদের পক্ষ হতে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না”। (সূরা আল-ইনসানঃ ৯) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ
“যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য সেই ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে এর কিছু দিয়ে দেই। আর পরকালে তার কোন অংশ থাকবে না”। (সূরা শুরাঃ ২০) এ মর্মে আরো আয়াত রয়েছে।
প্রশ্নঃ (১১) যেই শরীয়ত (দ্বীন) অনুযায়ী আল্লাহর এবাদত করতে বলা হয়েছে, তা কোনটি?
উত্তরঃ সেটি হচ্ছে, দ্বীনে হানীফ তথা মিল্লাতে ইবরাহীম। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الأِسْلاَمُ
“আল্লাহর নিকট ইসলাম হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন”। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالأرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا
“তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য কোন দ্বীন তালাশ করছে? অথচ আসমান-যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তারই অনুগত”। (সূরা আল-ইমরানঃ ৮৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلاَّ مَنْ سَفِهَ نَفْسَهُ
“দ্বীনে ইবরাহীম থেকে কেবল সেই ব্যক্তিই মুখ ফিরিয়ে নেয়, যে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করে”। (সূরা বাকারাঃ ১৩০) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنْ الْخَاسِرِينَ
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তা কখনও তার নিকট থেকে গ্রহণ করা হবেনা। আর আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত”। (সূরা আল-ইমরানঃ ৮৫) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنْ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ
“তাদের কি এমন শরীক আছে, যারা তাদের জন্য এমন দ্বীন নির্ধারণ করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ্ দেন নি?” (সূরা শুরাঃ ২১)
প্রশ্নঃ (১২) দ্বীনের স্তর কয়টি?
উত্তরঃ দ্বীনের স্তর হচ্ছে তিনটিঃ- (১) ইসলাম (الاسلام) (২) ঈমান (الإيمان) (৩) ইহসান ((الاحسان। এগুলো থেকে কোন একটি পৃথকভাবে উল্লেখ করা হলে পূর্ণ ইসলামকে বুঝাবে।
প্রশ্নঃ (১৩) ইসলাম কাকে বলে?
উত্তরঃ ইসলাম হলো তাওহীদ (একত্ববাদ) ও আনুগত্যের সহিত এক আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পন করা এবং শিরক থেকে সম্পর্কে ঘোষণা করা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَمَنْ أَحْسَنُ دِينًا مِمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে নিজেকে সোপর্দ করে, তার চাইতে উত্তম দ্বীন আর কারো নিকট আছে কি?” (সূরা নিসাঃ ১২৫) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى
“আর যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ন হয়ে স্বীয় মুখমণ্ডল আল্লাহ্ অভিমুখী করে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল”। (সূরা লুকমানঃ ২২) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرْ الْمُخْبِتِينَ
“তোমাদের সত্য মা’বুদ হচ্ছেন মাত্র একজন (আল্লাহ)। সুতরাং তোমরা তাঁরই জন্য অনুগত হও। আপনি বিনয়ীদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন”। (সূরা হজ্জঃ ৩৪)
প্রশ্নঃ (১৪) ইসলাম শব্দটি যখন এককভাবে ব্যবহৃত হবে, তখন দ্বীনের সকল স্তরকে অন্তর্ভূক্ত করার দলীল কী?
উত্তরঃ এ ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الأِسْلاَمُ
“আল্লাহর নিকট ইসলাম হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন”। (আল-ইমরানঃ ১৯) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
بَدَأَ الْإِسْلَامُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ
“গরীব অবস্থায় ইসলামের সূচনা হয়েছে। আর অচিরেই যেভাবে তার সূচনা হয়েছিল, সে রকম গরীব অবস্থায় ফেরত আসবে”। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
أَفْضَلُ الإِسْلاَمِ إِيْمَانٌ بِاللّهِ
“ইসলামের সর্বোত্তম কাজ হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা”।
প্রশ্নঃ (১৫) ইসলামকে পাঁচটি রুকনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার দলীল কী?
উত্তরঃ জিবরীল (আঃ) যখন দ্বীন সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, তখন উত্তরে তিনি বললেনঃ
الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً)
“ইসলাম হচ্ছে (১) এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসূল। (২) ছালাত কায়েম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) রামাযানে ছিয়াম পালন করা। (৫) সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ্জ আদায় করা।” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
“ইসলামের রুকন হচ্ছে পাঁচটি। এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) তাঁর রাসূল। (২) ছালাত (নামায) কায়েম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ্জ আদায় করা। (৫) রামাযানের রোযা পালন করা। এখানেও ইসলামের রুকন পাঁচটি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হজ্জকে রামাযানের রোজার পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রশ্নঃ (১৬) দ্বীনের মধ্যে শাহাদাতাইন তথা لاإله إلا الله محمد رسول الله)) এর মর্যাদা কতটুকু?
উত্তরঃ এ দু’টি তথা আল্লাহ্কে এক বলে সাক্ষ্য দেয়া এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল হিসাবে সাক্ষ্য দেয়া বাক্য পাঠ করা ব্যতীত কোন বান্দা ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ
“তারাই তো মুমিন, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করে”। (আন-নূরঃ ৬২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
“আমাকে মানুষের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে যে পর্যন্ত না তারা এ কথার স্বীকৃতি দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
প্রশ্নঃ (১৭)(لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ) আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই এ কথার দলীল কী?
উত্তরঃ “আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই।” একথার সাক্ষ্য দেয়ার দলীল হলো, আল্লাহর বাণী:
شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ وَالْمَلاَئِكَةُ وَأُوْلُوا الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
“আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই। ফেরেস্তাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়”। (সূরা আল-ইমরান: ১৮) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
“হে নবী! আপনি জেনে নিন যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই”। (সূরা মুহাম্মাদঃ ১৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا مِنْ إِلَهٍ إِلاَّ اللَّهُ
“আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা’বুদ নেই”। (সূরা আল-ইমরানঃ ৬২) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
مَا اتَّخَذَ اللَّهُ مِنْ وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَهٍ
“আল্লাহ তা’আলা কাউকে সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেন নি। আর তাঁর সাথে অন্য মাবুদও নেই”। (সূরা মুমিনূনঃ ৯১) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
قُلْ لَوْ كَانَ مَعَهُ آلِهَةٌ كَمَا يَقُولُونَ إِذًا لأبْتَغَوْا إِلَى ذِي الْعَرْشِ سَبِيلاً
“হে নবী! আপনি বলে দিন যে, তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্য কোন উপাস্য থাকত; তবে তারা আরশের মালিক পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা অন্বেষণ করত”। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৪২)
প্রশ্নঃ (১৮) ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ) এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ কি?
উত্তরঃ এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ এবাদতের যোগ্য হওয়ার কথা অস্বীকার করে শুধু আল্লাহর জন্য এবাদত সাব্যস্ত করা। তাঁর এবাদতে কোন অংশীদার নেই। যেমন তাঁর রাজ্যে কারও কোন অংশ নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ
“এটা এ কারণেও যে, আল্লাহই সত্য। আর তাঁকে ব্যতীত লোকেরা যাকে আহবান করে তা বাতিল। আর আল্লাহ তা’আলা সবার উচ্চে, মহান”। (সূরা হজ্জঃ ৬২)
প্রশ্নঃ (১৯) যে সমস্ত শর্ত ব্যতীত ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ) পাঠ করাতে কোন লাভ নেই সেগুলো কি কি?
উত্তরঃ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)এর শর্ত হচ্ছে সাতটি। (১) এই কালেমার অর্থ অবগত হওয়া। এর অর্থ হলো- এক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। এখানে দুটি দিক রয়েছেঃ একটি নেতিবাচক অপরটি ইতিবাচক। নেতিবাচক দিকটি হলো (لا إله) (নেই কোন মা’বুদ)। এই বাক্যের মাধ্যমে আল্লাহ ব্যতীত যত বস্তুর উপাসনা করা হয় তার সব কিছুই অস্বীকার করা হয়েছে।
ইতিবাচক দিকটি হলো (إلا الله) আল্লাহ ছাড়া- এর মাধ্যমে শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদতকেই সুদৃঢ়ভাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
(২) অন্তর দিয়ে উক্ত অর্থের উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা।
(৩) এর অর্থের প্রতি প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্যভাবে মস্তক অবনত করা ও অনুগত থাকা।
(৪) পরিপূর্ণভাবে তা গ্রহণ করে নেয়া। এর চাহিদা ও দাবীর কোন অংশকেই প্রত্যাখ্যান না করা।
(৫) একনিষ্ঠভাবে তা পাঠ করা।
(৬) অন্তরের গভীর থেকে তা সত্য বলে মেনে নেয়া। শুধু জবানের মাধ্যমে নয়।
(৭) এই পবিত্র কালেমাকে এবং তার অনুসারীদেরকে অন্তর দিয়ে ভালবাসা। এই কালেমার কারণেই কাউকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা আবার কাউকে শত্রু মনে করা।
প্রশ্নঃ (২০) ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ)এর সাক্ষ্য দেয়ার পূর্বে তার অর্থ সম্পর্কে অবগত হওয়া যে শর্ত, কুরআন ও সুন্নাহ্ হতে তার দলীল কী?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ
إِلاَّ مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُم يَعْلَمُوْنَ
“তবে যারা সত্য স্বীকার করে এবং তারা অবগতও বটে”। (সূরা যখরুফঃ ৮৬) অর্থাৎ তারা জবানের মাধ্যমে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ উচ্চারণ করার পূর্বে অন্তর দিয়ে তার অর্থ উপলব্ধি করে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ)
“যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমন অবস্থায় যে, সে অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করত যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আরও পড়ুন:

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন