হযরত উমারের ভৃত্য আসলাম বর্ণনা করেন যে, আমি একদিন রাত্রে হযরত উমারের সাথে বের হলাম। চলতে চলতে আমরা মদীনা থেকে অনেক দূরে চলে গেলাম। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিবাসীদের অবস্থা জানতে চেষ্টা করছিলাম। এক জায়গায় আমরা আগুন জুলতে দেখলাম। হযরত উমার বললেনঃ আমার মনে হয়, রাতের গভীরতা ও শীতের তীব্রতার কারণে কিছু লোক ওখানে রাত্র যাপন করছে। চল যাই, ওদেরকে দেখে আসি। আমরা দ্রুত পায়ে হেঁটে ওখানে পৌঁছলাম। আমরা দেখলাম, জনৈক মহিলার চারপাশে কয়েকটা শিশু বসে আছে। চুলোয় একটা হাড়ি চড়ানো। শিশুরাকান্নাকাটি করছে। হযরত উমার মহিলাকে সালাম করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমাদের কী অবস্থা এবং এখানে কী হচ্ছে? মহিলা বললো, রাত গভীর হয়ে গেছে এবং কনকনে শীত নেমেছে।
তাই আমরা এখানে থেকে গেলাম।
হযরত উমারঃ শিশুরা কাদছে কেন?
মহিলাঃ ওদের খিদে পেয়েছে।
হযরত উমারঃ ঐ হাড়িতে কী?
মহিলাঃ ওতে কেবল পানি। শিশুদেরকে প্রবোধ দেয়ার জন্য ওটা চড়িয়েছি, যাতে ওরা চুপ করে ও ঘুমিয়ে যায়। আমাদের ও খলীফা উমারের মধ্যে আল্লাহই ফায়সালা করবেন। মহিলা বুঝাতে চেয়েছিল যে উমার আমাদের প্রতি সুবিচার করছেন না।
হযরত উমারঃ উমার তোমাদের কথা জানবেন কি করে?
মহিলাঃ তা হলে সে খলীফা হয়েছে কেন? আমাদের অবস্থা সম্পর্কে সে যখন উদাসীন, তখন তার খলীফা হওয়ার মানে কী?
আসলাম বলেন, এই পর্যায়ে হযরত উমার আমাকে বললেন, “চল চাই।’ এরপর আমরা দ্রুত পদে সেখান থেকে রওনা হলাম। হযরত উমার আমাকে সাথে নিয়ে সোজা আটার গুদামে প্রবেশ করলেন। তিনি এক বস্তা আটা ও এক বোতল তেল নিলেন। তারপর আমাকে বললেন, এই জিনিসগুলো আমার ঘাড়ে তুলে দাও। আমি বললামঃ আমি ঘাড়ে তুলে নিচ্ছি। হযরত উমার ক্রুদ্ধ কণ্ঠে ধমক দিয়ে বললেন, ‘তুমি কি কিয়ামতের দিনও আমার বোঝা বহন করবে?’ অগত্যা আমি বস্তা ও তেলের বোতল তার ঘাড়ে তুলে দিলাম। তারপর আমরা দু’জন জোর কদমে রওনা হলাম। হযরত উমার তার বয়ে আনা খাদ্যদ্রব্য মহিলার সামনে নামিয়ে রাখলেন। খানিকটা আটা বের করে মহিলাকে দিয়ে বললেন, এটা দিয়ে রুটি বানাও। আমি চুলোর আগুনকে আরও একটু তীব্র করি। তিনি হাড়ির নীচে ফুঁক দিতে লাগলেন। তার ঘন দাড়ির ভেতর থেকে আমি শাঁ শাঁ করে ধুঁয়া বেরুতে দেখছিলাম। রুটি তৈরী হয়ে গেলে হযরত উমার নিজেই তা চুলো থেকে নামালেন এবং শিশুরা তৃপ্তি সহকারে খাওয়া দাওয়া না সারা পর্যন্ত তিনি ঠায় বসে রইলেন। এরপর হযরত উমার বিদায় হলেন। আমিও তার সাথে রওনা হলাম। মহিলা বলতে লাগলোঃ “আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। খিলাফতের পদের জন্য উমারের চেয়ে আপনিই বেশী যোগ্য।”
হযরত উমার বললেনঃ “তোমার প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ। কাল যখন তুমি আমীরুল মুমিনীনের দরবারে আসবে তখন সেখানে আমার সাথে দেখা হবে ইনশায়াল্লাহ।”
তারপর হযরত উমার সেখান থেকে এসে ওদের তাবুর পাশেই লুকিয়ে ভেতরে কী হচ্ছে দেখতে লাগলেন। আমি বললামঃ আপনার জন্য এটা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু তিনি কোন জবাব দিলেন না। আমরা দেখলাম ঐ মহিলার শিশুরা খেলছে। কিছুক্ষণ পর তারা ঘুমিয়ে গেল। হযরত উমার আলহামদুল্লিাহ বলে রওনা হলেন এবং আমাকে সম্বোধন করে বললেনঃ শোন আসলাম, ওরা খিদের চোটে ঘুমাতে পারছিলনা। ওদেরকে শান্ত হয়ে ঘুমাতে না দেখা পর্যন্ত আমি স্বস্তি পেতাম না। এ জন্যই ওদেরকে লুকিয়ে দেখলাম।
ইসলামী সভ্যতায় মানবপ্রেম
রচনায়: ডঃ মুসতাফা আস-সিবায়ী
অনুবাদঃ আকরাম ফারুক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন