বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

নারীকে নারী! ( মুফতি আতিকুল্লাহ আতিক )


ইবনে আবি লায়লা। বিখ্যাত কাযি। দরবারে দুই মহিলা এল। বিচার নিয়ে:
-তোমাদের অভিযোগ বলো!
-হুযুর! আমার বাবা মারা গেছেন ছোট বেলায়। আমার পাশে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি আমার ফুফু। আমাকে লালন-পালন করেছেন। বড় করেছেন। বিয়ের বয়েস হলে, চাচাত ভাইয়ের সাথে বিয়েও দিয়েছেন। 
-তারপর?
-আমার এক ফুফাত বোন ছিলো। তিন বছর পর সেও বিয়ের উপযুক্ত হয়ে উঠলো। আমার স্বামীর আচার আচরণ দেখে, ফুফী তাকে বেশ পছন্দ করে ফেলেছিলেন। নিজের মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দেয়ার ফন্দি আঁটলেন। মেয়েকে সাজিয়ে-গুছিয়ে আমার স্বামীর সামনে উপস্থিত করলেন। সে মুগ্ধ হয়ে গেলো। ফুফি বিয়ের প্রস্তাব পাড়লেন। 
-আমি রাযি
-একটা শর্ত আছে! তোমার আগের বউ মানে আমার ভাতিজির তালাকের ভার আমার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। মানে আমাকে তার তালাকের উকিল বানাতে হবে!
-ঠিক আছে। 
.
বিয়ে হয়ে গেলো। বাসর রাতের আগে ফুফি কাছে এসে বললেন:
-তোর স্বামী আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে। তোকে তালাকের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে। এখন তুই তালাক! 
আমি স্বামীহারা হয়ে পড়লাম। 
.
আমার ফুফা তখন বাড়িতে ছিলেন না। কয়েকদিন পর তিনি ফিরলেন। আমি গোপনে তাকে ফুসলিয়ে আমাকে বিয়ে করতে রাজি করালাম। শর্ত দিলাম: তার আগের বউকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা আমাকে দিতে হবে। তিনি এক কথায় রাজি। বিয়ে হয়ে গেলো। তার আগে আমি এক ফাঁকে গিয়ে ফুফিকে উচিত ভঙ্গিতে প্রতিশোধ নিয়ে তালাক দিয়ে এলাম। 
.
কাযি সাহেব উশখুশ করে বললেন:
-এখন আমার কাছে কেন এসেছো?
-হুযুর! আগে পুরো ঘটনা বলে নিই। 
-ইয়া আল্লাহ! এখনো শেষ হয়নি!
-মূল ঘটনা তো শুরুই হয়নি!
-আচ্ছা বলো!
-বিয়ের কয়েক বছর পর আমার স্বামী মানে আগের ফুফা মারা গেলেন। তখন ফুফী এসে আমার কাছে মীরাস দাবী করলেন। আমি বললাম:
-আমার স্বামীর সম্পদে তোমার কিসের মীরাস!
.
কয়েক পর ফুফী আবার এলেন। সাথে মেয়ে আর মেয়েজামাই (আমার আগের স্বামী)-কেও নিয়ে এলেন। সুযোগ বুঝে আমি আগের স্বামীকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলাম। তারও আমাদের আগের সুন্দর দিনগুলোর কথা মনে পড়লো। এক পর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। দ্বিতীয় স্বামী (আগের ফুফা) থেকে পাওয়া সহায়-সম্পদের লোভ দেখালাম! লোভ সামলাতে পারলো না। তার আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। শর্ত দিলাম: তোমার বউকে তালাকের ভার আমাকে দিতে হবে। রাজি হলো। বিয়ে হয়ে গেলো। এক ফাঁকে গিয়ে তার আগের বউ মানে আমার ফুফাত বোনকে তালাক দিয়ে এলাম। 
.
কাযি সাহেব মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। বললন:
-এখন আমি কী করবো?
ফুফি বললো:
-হুযুর! আমি আর আমার মেয়ে তালাকপ্রাপ্তা হওয়াটা কি অবৈধ নয়? আর এই মেয়েটা সমস্ত মীরাস দখল করে বসাটাও কি বৈধ?
-কেন বৈধ হবে না? একজন পুরুষ দুইবার বিয়ে করতেই পারে। তালাকের জন্যে আরেকজনকে উকীলও বানাতে পারে। নারী বা পুরুষ যে কাউকে। তুমি নিজেই তো প্রথমে উকিলগিরি শুরু করেছ! মামলা ডিসমিস!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন