বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০১৬

জটিল প্রশ্নের উত্তর . ইমাম কখন নামায শুরু করবে? ইমাম ও মুসুল্লি কখন দাঁড়াবে? মাসবুক কখন দাঁড়াবে? ( মুফতি মুহিউদ্দিন কাসেমি )

২০০৩ সনে আমি শরহেবেকায়া পড়ি।
বনানীর একটি মাদরাসায়।
খুব যে ভালো ছাত্র ছিলাম তা না। মোটামুটি পড়ালেখা করতাম। পত্রিকা পড়তাম নিয়মিত। নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও। কয়েকবার খানাও বন্ধ হয়েছে। পিটুনি তো স্বাভাবিক ব্যাপার।
শরহেবেকায়া কিতাবে আছে, মুয়াজ্জিন قد قَامَتْ الصَّلَاةُ বলার সময় ইমাম নামায শুরু করবে; নামায শুরু করার তাকবির বলবে। তাকবিরে তাহরিমা। 
হুজুরকে আদবের সঙ্গে প্রশ্ন করলাম, আমরা সবাই তো ইকামত শেষ হওয়ার পর নামায শুরু করি; আমরা কি ভুল করছি? 
হুজুর অনেক ভালো পড়াতেন কিন্তু এ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর মনে হয় পাইনি। প্রশ্নটি আমার মনে ঘুরপাক খেতে লাগল। কোনো সদুত্তর কারো কাছে পাইনি। 
প্রশ্নটি আমি ভুলিনি। কিছু বিষয় ইচ্ছে করলেই ভুলা যায় না। 
.
২০০৫ খ্রিস্টাব্দ।
মেশকাত পড়ে দারুল উলুম দেওবন্দে গেলাম। দাওরায় ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিলাম। আল্লাহর রহমতে দাখেলা হল। নিয়মিত ক্লাস করতে লাগলাম। দেওবন্দের অনেক উস্তাদের নামই আগে শুনেছি। তবে যাঁর নাম বারবারই শুনেছি, না দেখেই শ্রদ্ধা করতে শিখেছি, তিনি মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরি হাফিজাহুল্লাহ। পৃথিবীর সেরা মুহাদ্দিসদের একজন। ফাহমে হাদিস বা হাদিস বোঝা ও বোঝানোর ক্ষেত্রে বর্তমান দুনিয়ায় তাঁর সমকক্ষ আর কেউ আছেন কিনা আমার জানা নেই। জটিল বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপন করার অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। 
তিরমিযি প্রথম খণ্ডের ক্লাসে একদিন বললেন, 
আমাদের ফিকহের কিতাবের একটি ইবারতের মর্মার্থ সাধারণ ছাত্ররা বুঝে না। কিতাবে আছে, قد قَامَتْ الصَّلَاةُ বলার সময় ইমাম নামায শুরু করবে।
এর সঠিক মতলব হল : 
অনেক ইবাদতের দুটি সময় রয়েছে। একটি হল জায়েয [حد جواز], আরেকটি মুস্তাহাব [حد استحباب]। যেমন পাঁচওয়াক্ত নামাযের জায়েয ওয়াক্ত আছে; আবার মুস্তাহাব ওয়াক্তও আছে। 
তদ্রূপ মাসবুক ব্যক্তির দাঁড়ানোরও দুটো সময় রয়েছে। 
মাসবুকের ধারণামতে ইমামের তাশাহহুদ পড়া শেষ হলে তার জন্যে দাঁড়ানো জায়েয। এটা হচ্ছে হদ্দে জাওয়ায। আর ইমামের উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর মাসবুকের জন্যে দাঁড়ানো হচ্ছে মুস্তাহাব। হদ্দে ইসতিহবাব। 
তবে মাসবুক তাশাহহুদের পর দাঁড়িয়ে গেলেও ইমামের আগে সালাম ফিরাতে পারবে না। ইমামের সঙ্গে বা পরে সালাম ফিরাবে। ফাতাওয়া আলমগিরিতে মাসআলাটি স্পষ্ট বিধৃত হয়েছে।
আরেকটি দৃষ্টান্ত :
ফিকহের কিতাবে রয়েছে, حَيَّ على الْفَلَاحِ বলার সময় জামাতের জন্যে ইমাম ও মুক্তাদিগণ দাঁড়াবে। 
এটা হচ্ছে দাঁড়ানোর সর্বশেষ সময়। কারণ, ইকামতের অর্থ দাঁড় করানো। তাই ইকামতের শুরুতেই সবাই দাঁড়িয়ে যাবে। কিন্তু حَيَّ على الْفَلَاحِ বলার পর আর কেউ বসে থাকতে পারবে না। এর মানে এই না যে, হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলার পর সবাই দাঁড়াবে। যেমনটি কতিপয় জাহেলরা বুঝেছে। 
সুতরাং ইমামের জন্যে নামায শুরু করার মুস্তাহাব ওয়াক্ত হচ্ছে ইকামত শেষ হওয়া। ইকামত সমাপ্ত হলে তার জন্যে নামায শুরু করা মুস্তাহাব। আর قد قَامَتْ الصَّلَاةُ বলার সময় থেকে নামায শুরু করার ইমামের জন্যে জায়েয। মুস্তাহাব নয়। কিতাবে জায়েয ওয়াক্তের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। মুস্তাহাবের কথা বলা হয়নি।
আর আমরা তো সাধারণত মুস্তাহাবের ওপর আমল করি। 
.
সারসংক্ষেপ :
প্রশ্ন : ইমাম কখন নামায শুরু করবে?
উত্তর : ইকামত শেষ হওয়ার পর ইমামের জন্যে নামায শুরু করা মুস্তাহাব। তবে মুয়াজ্জিন قد قَامَتْ الصَّلَاةُ বলার সময়ই ইমামের জন্যে নামায শুরু করা জায়েয।

প্রশ্ন : ইমাম ও মুসুল্লি কখন দাঁড়াবে?
উত্তর : ইমাম ও মুসুল্লি সবাই ইকামতের শুরু থেকেই দাঁড়াবে। এটাই মুস্তাহাব ও আদব। তবে حَيَّ على الْفَلَاحِ বলার পর আর বসে থাকতে পারবে না। এটা দাঁড়ানোর শেষ সময়।

প্রশ্ন : মাসবুক কখন দাঁড়াবে?
উত্তর : মাসবুক ইমামের উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর দাঁড়াবে। এটা মুস্তাহাব। তবে মাসবুকের তাশাহহুদ পড়া এবং তার ধারণামতে ইমামের তাশাহহুদ পড়া শেষ হলে তখন মাসবুক দাঁড়াতে পারে। এ সময় থেকে দাঁড়ানো তার জন্যে জায়েয়।
.
হুজুরের এ উত্তর শুনে আমার সমস্ত প্রশ্ন দূরীভূত হয়ে গেল। যা শুনেছিলাম বাস্তবে তিনি আরও উঁচু মাপের আলেম। 
বিষয়টি হয় তো আমি গুছিয়ে বলতে পারিনি। সুন্দর ও ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছি। ফলে বিষয়টির মর্ম উদঘাটনে বিরক্ত হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন