মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

খেলাধুলার মূল্যবোধ

এক বলদ ছিয়াশি সালে প্রতিজ্ঞা করেছে, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতলে তবেই বিয়ে করবে, এর আগে নয়। তার কপালে বিয়ে এইবারও জোটে নি। গুড নিউজ। বলদের বংশবৃদ্ধি না হওয়াই ভালো।
এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পরাজয়ের শোক সইতে না পেরে এক নির্বোধ আত্মহত্যা করেছে। দুঃসংবাদ! দুঃসংবাদ এ নয় যে, এক নির্বোধ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। দুঃসংবাদ হলো, এমন নির্বোধ বাংলাদেশে আরো অনেক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
এছাড়া কোথাকার কোন দুই দেশের বিশ্বকাপ খেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের স্ত্রীর হাতে স্বামীর খুনের ঘটনাও ঘটেছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও কম নয়। তাছাড়া বন্ধুতে বন্ধুতে মারামারি-হাতাহাতি তো নিত্য-নৈমত্তিক ব্যাপার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে অশ্লীলতার চর্চা চলে, উগ্র জাতীয়তাবাদের যে মহড়া দেখা যায়, জাতিতে-জাতিতে যে বিভেদ উস্কে দেয়া হয়— সেসব না-হয় ধর্তব্যের বাইরে রাখলাম।
নিঃসন্দেহে এসব ভয়াবহ ব্যাপার। এর চেয়ে আরো ভয়াবহ বিষয় হলো আমাদের মূল্যবোধ এত নিচে নেমে গেছে যে, খেলাকে কেন্দ্র করে ঘটা এসব মারাত্মক দুর্ঘটনাকে আমাদের কাছে এখন অস্বাভাবিক মনে হয় না। মনে হয় খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বোঝা যাচ্ছে, পচন শুধু এই জাতির দেহে নয়, মস্তিষ্কে।
এসব কি খেলাধুলা? না, এসবকে আমি খেলাধুলা বলে স্বীকার করি না। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ খরচ করে রাষ্ট্র রাষ্ট্রের সঙ্গে খেলাধুলা করে, এ আমি মানতে পারি না। খেলা তো তা-ই, যা স্কুলবালকেরা খেলে। খেলা সেটাও, যদ্বারা পূর্ণ বয়স্ক মানুষ শরীরচর্চা করে। আমার ৮ বছর বয়স্ক ভাগ্নে যখন রাবারের বল আর ছোট্ট ব্যাট হাতে ঘোরাঘোরি করে, আমি জিজ্ঞেস করি, 'আমাকে নেবে?' সে সম্মতিবোধক মাথা নাড়লে আমি তার প্রতিপক্ষের অভাব দূর করি। নিঃসন্দেহে এটাও খেলা। ছোটকালে জাম্বুরার বল দিয়ে যে ফুটবল খেলেছিলাম, সেটাও ছিল খেলা। সেসব খেলা এইজন্যই যে, এসব মানুষের জীবনের অনিবার্য অংশ হয়ে ওঠে না। এসব ক্ষেত্রে জয়-পরাজয়ের আনন্দ-বেদনা খেলার মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকে। খেলোয়াড়ের সঙ্গে তার বাড়িতে যায় না।
খেলাকে খেলাই থাকতে দেয়া উচিত। খেলা যখন হয়ে যায় খেলার চেয়ে বেশি কিছু, হয়ে যায় জীবনের অনিবার্য অংশ, এ নিয়ে মারামারি হয়, হয় খুনখারাবি, ঘটে আত্মহত্যা এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার মতো ঘটনা—তখন একে বর্জন করা জরুরি।
-কপি ফ্রম আবুল কাসেম আদিল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন