বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০১৬

বায়আত করা ও হওয়া উভয়টাই সুন্নত Mohiuddin Kasemi

বায়আত বিষয়ে আমাদের সমাজে দু ধরনের ধারণা রয়েছে।
কেউ মনে করছেন, কোনো পীরের হাতে বায়আত না হলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না।
আবার কেউ বলছেন, বায়আত হওয়া বিদআত। পীরগিরি না ছাড়লে কেউ হক্কানি হতে পারবে না। 
দুনো ধারণাই প্রান্তিকতার শিকার। 
বায়আত হওয়া ফরজ ও ওয়াজিব কোনো বিষয় নয়। তবে সুন্নত ও মুস্তাহাব। 
সহিহ বুখারি ও মুসলিম সহ বিভিন্ন কিতাবে বায়আতের হাদিস রয়েছে। 
বায়আত মানে কারো কাছে নিজেকে অর্পণ করা। চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া। সংগঠনের কোনো পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সময় শপথবাক্য পাঠ করানো হয়, সেটাও একপ্রকার বায়আত। ইনসাফের সাথে বিষয়টি ভাবা দরকার। এ বিষয়ে অনেক বই-পুস্তক রয়েছে। সংক্ষেপে নিচের আলোচনাটি পেশ করা হল।
.
পীর বা বুযুর্গের হাতে বায়আত হওয়ার প্রচলন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুরু হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় তাসাওউফের ক্ষেত্রে বায়আতরীতি অনুসরণ করা হয়। বায়আতের মাধ্যমে বায়আতকারী কোনো কাজে আল্লাহ তাআলার নাফরমানি করবে না বলে ওয়াদা করে এবং যার হাতে বায়আত হল তার কাছে থেকে প্রতিশ্রুত বিষয়ে সাহায্য কামনা করে। বায়আত করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবিগণ হতে বায়আত গ্রহণ করেছেন। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে অনেক জায়গায় বায়আত হওয়া ও বায়আত গ্রহণ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে : 
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ فَمَنْ نَكَثَ فَإِنَّمَا يَنْكُثُ عَلَى نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
-যারা আপনার কাছে আনুগত্যের বায়আত করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের বায়আত করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের ওপর রয়েছে। অতএব, যে বায়আত ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ অবশ্যই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন। [সূরা ফাতাহ- ১০]
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِىِّ قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً فَقَالَ « أَلاَ تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللَّهِ » وَكُنَّا حَدِيثَ عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ فَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. ثُمَّ قَالَ « أَلاَ تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللَّهِ ». فَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. ثُمَّ قَالَ « أَلاَ تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللَّهِ ».
قَالَ فَبَسَطْنَا أَيْدِيَنَا وَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَعَلاَمَ نُبَايِعُكَ قَالَ « عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ وَتُطِيعُوا - وَأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيَّةً - وَلاَ تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا ». فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوْطُ أَحَدِهِمْ فَمَا يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ.
-হযরত আওফ ইবনে মালেক রা. বলেন, আমরা নয়জন, আটজন অথবা সাতজন লোক রাসুলুল্ল¬াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এসময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আল্লাহর রাসুলের হাতে বায়আত হবে না? তখন আমরা আমাদের হাত প্রসারিত করলাম এবং বললাম হে আল্লাহর রাসুল! কোন্ বিষয়ে আমরা বায়আত করব? নবীজি বললেন, এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোনো কিছু শরিক করবে না, পাঁচওয়াক্ত নামায কায়েম করবে এবং [সব বিধি-নিষেধ] শুনবে ও মানবে। [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৪৫০; সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং- ১৬৪৪]
কিছু স্বল্পজ্ঞানের মানুষ অভিযোগের সুরে বলে, পীর-মাশায়েখদের হাতে প্রচলিত বায়আত হওয়া বিদআত। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু কাফেরদের থেকে ইসলামের আর সাহাবিদের হতে জিহাদের বায়আত নিয়েছেন। এছাড়া তৃতীয় কোনো বায়আত গ্রহণের কথা প্রমাণিত নয়। 
তাদের এই অসার দাবি ও ধারণা বক্ষ্যমাণ হাদিস দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে যায়। কারণ এই হাদিসে যাদের থেকে বায়আত গ্রহণ করা হয়েছিল তাঁরা পূর্ব থেকেই মুসলমান ছিলেন। সুতরাং নিশ্চিত যে, এ বায়আত ইসলাম গ্রহণের জন্য ছিল না। আর বায়আতের বিষয়বস্তু দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এটা জিহাদের বায়আত ছিল না। বরং এই বায়আত ছিল আমলের প্রতি গুরুত্ব প্রদান এবং আমলের ওপর সুদৃঢ় থাকার জন্য। সুতরাং পীর-মাশায়েখদের হাতে বায়আত হওয়া বিদআত নয়, সুন্নত। এ ধরনের বায়আত হওয়া সম্পর্কে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন