কুরআনের ছোঁয়ায় রমজান ধন্য। এ মাসেই নাযীল হয়েছে মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ ‘কুরআনুল কারীম’। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,‘রমজান হলো এমন একটি মাস, যে মাসে কুরআন কারীম অবতীর্ণ করা হয়েছে লোকদের হিদায়াতের জন্য এবং সত্যপথযাত্রীদের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও সত্যমিথ্যার মাঝে পার্থক্য নিরূপণকারী হিসেবে’। (-সূরা বাকারা ১৮৫)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি কালামুল্লাহকে পৃথক পৃথক পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং ওহি যথার্থভাবে অবতীর্ণ করেছি’।
-)সূরা বনি ইসরাইল: ১০৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ’। (সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহীহ)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন রমজান ব্যতীত কোন মাসে এত বেশি তিলাওয়াত করতেন না। আয়েশা রাদিয়ালাল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, َ রমজান ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুলল্লা সা. কে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোযা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি’। (সহীহ মুসলিম : ১৭৭৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কুরআন নিজেই পরকালিন মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট বলিষ্ঠ সুপারিশ করবে’। (-মুসলিম শরিফ)
রমজান মাস হলো কুরআনচর্চার মাস। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাসজুড়ে বিশুদ্ধ তেলাওয়াতে কোরআনের প্রশিণ কোর্স চালু হয়েছে। ব্যস্ততা থেকে ফারিগ হয়ে সুযোগ করে সেই কোর্সে ভর্তি হয়ে প্রশিণ গ্রহণ করার চেষ্টা করা। অথবা নুরানী পদ্ধতিসহ বেশ কিছু কার্যকরী মেথড আবিষ্কৃত হয়েছে যা স্বল্প সময়ে কুরআন কারীম সহিহশুদ্ধভাবে পড়তে শেখায়। সেখানে বয়স্কদের জন্যও বয়স্ক কোরআন শিা কোর্স রয়েছে। কেউ ইচ্ছে করলে সেই কোর্সে ভর্তি হয়ে বিশুদ্ধ কোরআন শিখতে পারেন। এছাড়াও বিশুদ্ধ কোরআন শিাদানের জন্য দেশে বিভিন্ন কুরআন শিক্ষা বোর্ড পবিত্র রমজানুল মোবারকে দারুল ক্বিরাত নামে কুরআন প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে। সিলেটের আঞ্জুমানে তা’লীমুল কোরআন বাংলাদেশ,‘দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট, মাদানিয়া কোরআন শিক্ষা বোর্ড, ‘আল খলীল কোরআন শিা বোর্ডসহ আরো অনেক শিক্ষা বোর্ড সারাদেশে বিশুদ্ধ কুরআনের খেদমত অব্যাহত রেখেছে। কাজেই রমজানকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে কুরআন চর্চা ও শিক্ষায় আত্মনিয়োগ জরুরি। কুরআন শিার গুরুত্ব অপরিসীম। হযরত ওসমান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন মাজিদ শিা করে এবং অন্যকে শিা দেয়। (-বুখারীশরিফ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, (কেয়ামতের দিন) কোরআনের বাহককে বলা হবে,‘পড় এবং আরোহণ করো! তেলাওয়াত করো যেভাবে দুনিয়াতে তেলাওয়াত করতে! নিশ্চয় তোমার পড়া যেখানে শেষ হবে সেটাই তোমার স্থান’।-) তিরমিজি)
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যার মাঝে কোরআনের কোনো অংশ নেই সে পতিত (বিরান) ঘরের মতো’। (-আবু দাউদ ও তিরমিজি)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল বলেন, যখন কেউ কোরআন তেলাওয়াত করে তখন তার একটি একটি হরফ তেলাওয়াতের বদলে তার জন্য দশটি নেকি লেখা হয়। আমি একথা বলছি না,আলিফ লাম মীম একটি হরফ বরং অলিফ একটি,লাম একটি ,মীম একটি হরফ। সুতরাং কেউ আলিফ পড়বে তখন তার জন্য ত্রিশটি নেকি লেখা হবে। পুরো বাক্যটি পড়লে ত্রিশটি নেকী অর্জন হবে’। (-তিরমযি শরিফ)
হযরত আবু উমামা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলে কারীম সা. কে বলতে শুনেছি তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকো কেননা কোরআন কিয়ামত দিবসে তার সাথীদের সুপারিশ করবে’। (-মুসলিম শরিফ)
হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে সংরণ করে এবং যে কোরআনে সুদ, কিয়ামতের দিন সে মহান ফেরেশতা লেখকগণের তুল্য মর্যাদা লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি তার পে কঠিন হওয়া সত্তেও কুরআন বারবার আওড়াতে থাকে সে দ্বিগুণ সওয়াব অর্জন করবে’। (- বুখারী শরিফ)
এ মাসে প্রত্যেক মুসলমানের প্রচুর পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াতে মনোযোগী হওয়া অতি জররি। রমযান মাসে হযরত জিবরাঈল (আ নবী করীম (সা.) এর সঙ্গে ‘দাওর’ করতেন, পূর্ণ কুরআন একে অপরকে শুনাতেন। হযরত ওসমান (রা) প্রতি রাত্রে কোরআন এক খতম করতেন। ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) রমজানে ৬১ বার কোরআন খতম করতেন। ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ). রমজানের ত্রিশ দিনে ত্রিশ খতম, ত্রিশ রাত্রে ত্রিশ খতম ও তারাবিতে এক খতম মোট ৬১ খতম করতেন। ইমাম শাফেয়ী (রাহ.) নামাজের বাইরে ৬০ বার কোরআন খতম করেছেন। আসুন কুরআন নাযীলের এই মহিমান্বিত মাসকে কুরআন পাঠ ও চর্চার মাধ্যমে কাটানোর চেষ্টা করি। - See more at: http://lighthouse24.org/blog/post/viewPost/?postid=2583#sthash.CHdQ5Ack.dpuf
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন