শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০১৫

হাফেজ্জি হুজুর, তওবার রাজনীতি ও লালবাগ মাদরাসা ইফতেখার জামিল


                                             হাফেজ্জি হুজুর, তওবার রাজনীতি ও লালবাগ মাদরাসা
ইসলামি রাজনীতি চিন্তায় দার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন_ দারুল ইসলাম,দারুল হারব না দারুল আহদ । তবে আধুনিক রাষ্ট্রে যেভাবে জাতীয়তা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্কট দাড়িয়ে যায়, আইন, নৈতিকতা ও বিশ্বাসের মামলা মীমাংসা করা হয়, সে প্রেক্ষিতে ইসলামের দার, ক্ষমতার নৈতিকতা ও আইনের ধারণা প্রথাগত সিস্টেমে দাড়িয়ে সক্রিয় হতে পারেনা।
উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, জমিদারি ক্ষমতা ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ থেকে মুক্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে দেওবন্দ মাদ্রাসা। কিন্তু মুশকিল হল, জিহাদ ও আধুনিক দেশীয় রাজনীতি এক বিষয় নয়_। এর ফলে স্বাধীনতার পর পাকিস্তানে ইসলাম প্রশ্ন সঙ্কটের মুখে পড়ে_ সঙ্কটে পড়ে উলামা-রাজনীতিও। এর দায় কমবেশি সেকুলার ও ইসলামপন্থী , সকলেরই আছে। রাষ্ট্র ধীরে ধীরে আধুনিকতার দিকে হাটতে থাকে।
পূর্ব-পাকিস্তানে পতাকা উড়ানো দেওবন্দের প্রতিনিধি জুফার আহমাদ উসমানি প্রথমে ঢাবি ইসলামিক স্টাডিজ ও ঢাকা আলিয়ার যোগদান করেন, পরবর্তীতে যখন তিনি দেখলেন, রাষ্ট্র যেভাবে শিক্ষা পরিচালনা করছে, এর মধ্য দিয়ে নতুন সম্ভবনা নেই, তখন তিনি লালবাগ কেল্লার পাশে একটা হেফজখানার শিক্ষা ও শিক্ষকের সাথে শরিক হলেন, এবং গড়ে তোলেন লালবাগ জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া। এবং সাথের হাফেজ শিক্ষকটি ছিলেন, সেই ব্যক্তি আমরা যাকে আজকে হাফেজ্জি হুজুর নামে চিনি।
ঢাকায় এই মাদরাসার মাধ্যমেই মূলত ট্র্যাডিশনাল অর্থের ইসলামি-সিয়াসাত পরিচালিত হত, জাতীয়তাবাদীদের সাথেও তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল_ শেখ মুজিব একটা দীর্ঘ সময় এই মাদরাসায় পালিয়ে ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলামপন্থীদের একপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের জেরে মুক্তিযুদ্ধ উত্তরসময়ে ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ মুখামুখি অবস্থানে দাড়িয়ে যায়। উলামারা বিশেষত আশরাফ আলি থানবি এই বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন_ তবুও, মুক্তিযুদ্ধ উত্তর সময়ের প্রায় আট-দশ বছর দেওবন্দিদের সক্রিয়তা সীমাবদ্ধ ছিল।
আশির দশকে সেই হাফেজ সাহেব, হাফেজ্জি হুজুরের মাধ্যমে নতুন তওবার রাজনীতির ধারণার শুরু হয়_ গুরুত্বপূর্ণ হল, জামায়াত ইসলামি সমর্থন দিবো বলেও সে সময় সমর্থন দেয়নি,মুক্তিযুদ্ধের একাধিক সেক্টর কামাণ্ডার যোগ দেন এবং এর মাধ্যমে মূলত উলামারাও ইসলামপন্থায় যোগ দেন। মজার বিষয়, দেশের অন্যতম শীর্ষ আলেম মাওলানা আব্দুর রহিম ততোদিনে ইসলামপন্থাকে নাকচ করেন এবং জামায়াতে ইসলামীর একটা অংশ _ যুব শিবির থেকে জামায়াতের রাজনীতি থেকে বের হয়ে যায়।
এবং এর দশ বছরের হাফেজ্জি হুজুর ইন্তেকাল করেন_ লালবাগ মাদরাসা থেকে ঢাকায় অনেকগুলো মাদরাসা গড়ে উঠে। এবং ইসলামপন্থা ও ইসলামি সিয়াসাত অন্য যুগে প্রবেশ করে_ অনেকগুলো অমীমাংসিত প্রশ্ন রেখেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন