উসমানী খিলাফাত মুসলিম উম্মার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বানুল আব্বাস খিলাফাতের পতনের পর এই খিলাফাত প্রতিষ্ঠিত হয়। যেই বছর তাতার সমর নায়ক হালাকু খান বানুল আব্বাস খিলাফাতের রাজধানী বাগদাদ নগরী ধ্বংস করেন, সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন উসমানী খিলাফাতের প্রতিষ্ঠাতা উসমান। ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মসনদে বসেন। তখন থেকে শুরু করে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৩৭ জন খালীফা ৬৩৬ বছর উসমানী খিলাফাত পরিচালনা করেন।
উসমান ছিলেন ইসলামী নৈতিকতার বিমূর্ত রূপ। তাঁর জীবন ছিলো খুবই অনাড়ম্বর। তিনি ছিলেন উঁচু দরের শাসক। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তিন ইসকলের সুখ-শান্তির কথা ভাবতেন। তিনি তাঁর দীনদার শ্বশুরকে প্রথমে কাযী ও পরে উযীর নিযুক্ত করেছিলেন। উসমান রাজ্যময় মসজিদ নির্মাণ করে সালাত কায়েম এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চার সুব্যবস্থা করেন।
তাঁর জীবনে বিলাসিতা ছিলোনা। তিনি দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ছিলেন না। তিনি তাঁর উত্তরাধিকারীর জন্যও কোন ধন-রত্ন জমা করে যাননি। ইন্তিকালের পূর্বে তিনি তাঁর পুত্র ওরখানকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমার প্রতি আমার নির্দেশ এই যে কখনো যুলুম ও নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করবোনা। বিজিত অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের উদ্যোগ নেবে। জ্ঞানী ব্যাক্তিদের সম্মান করবে। শারীয়ার বিধি বিধান মেনে চলবে। ঐশী আইনই আমাদের বড় শক্তি। পরম করুনাময়ের পথেই আমাদের সমৃদ্ধি। প্রজাদের রক্ষনাবেক্ষণ তোমার বড় কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন করতে পারলে তুমি পরম করুনাময়ের অনুগ্রহ ও আশ্রয় লাভ করতে পারবে”
১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সেনাপতত্বে তাঁর সৈন্যগণ ইয়েনি দখল করে। এই ইয়েনি শহরই হয় উসমানী খিলাফতের প্রথম রাজধানী।১৩০১ খ্রিষ্টাব্দে পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান দেশ গ্রীসের সাথে উসমানের যুদ্ধ বাধে। গ্রীসই তখন পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র। কুয়ুন হিসার যুদ্ধে গ্রীক সেনাপতি মুজালোনকে পরাজিত করে তিনি গ্রীস সাম্রাজ্যের কিছু অংশ দখল করেন।
১৩০২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা এক বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে আমীর উসমানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। যুদ্ধে গ্রীসের রাজা পরাজিত হন। তাঁর রাজ্যের এশীয় অঞ্চল উসমানের পদানত হয়।এই যুদ্ধের এক পর্যায়ে অন্যতম গ্রীক সেনাপতি এভারনোজ আল ইসলামের শ্রেষ্টত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। মুসলিমদের আচরণ, চারিত্রিক পবিত্রতা এবং শৃংখলা দেখে তিনি মুগ্ধ হন। তিনি তাঁর অনুগত সৈন্যদেরকে নিয়ে খৃষ্টানধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহন করেন। পরবর্তীকালে এভারনোজ এবং তাঁর সাথীদের তলোয়ার ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে।
উসমান ৩৮ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ৭০ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।
--- 'উসমানী খিলাফতের ইতিকথা' গ্রন্থ হতে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন