বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৬

কাবাঘর সম্পর্কিত ৯ টি তথ্য যা সম্ভবত আপনার অজানাঃ


৯- কাবাঘরের ভেতর পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে আপনি যে কোন দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে পারেন।

৮- আমাদের পৃথিবীর কাবাঘরের ঠিক উপরে আসমানে ফেরেশতাদের জন্য আরেকটি কাবা রয়েছে যার নাম বাইতুল মামুর। সেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা তাওয়াফ করার সুযোগ পান। আর যারা একবার তাওয়াফ করেছেন তারা আর দ্বিতীয়বার এর সুযোগ পাননা। মিরাজের রাত্রিতে রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে এ বাইতুল মামুর দেখানো হয়।

[ অনেকে কাবা বলতে সম্পূর্ণ মাসজিদুল হারামকে মনে করেন। প্রকৃতপক্ষে মাসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে কাবাঘর আবস্থিত যা কালো গিলাফে ঢাকা। দুটো সমান নয়। ]

৭- অনেকেই হয়তো অবাক হোন যে ‘হাজরে আসওয়াদ’ (যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘কালো প্রস্তর’) যাতে হাজীরা চুমু খান, কেন রুপালী এক কেসে ঢাকা। 

হাজরে আসওয়াদের ইতিহাসের ক্ষেত্রে আমরা জানি যে হাজরে আসওয়াদকে কে কাবায় সংযুক্ত করবে এ নিয়ে রাসুলুল্লাহর (সঃ) নবুয়তপূর্ব মক্কায় গৃহযুদ্ধের আশংকা দেখা দিয়েছিল। রাসুলুল্লাহর (সঃ) হস্তক্ষেপে এই বিতর্কের সুষ্ঠু সমাধান হয় ও রাসুলুল্লাহ (সঃ) নিজে এই পাথর কাবায় সংযুক্ত করেন। 

কারো কারো মতে ফিতনাহর সময়,আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইরের(রাঃ) খিলাফতকালে মক্কায় উমাইয়াদের অবরোধকালে একটি পাথরের আঘাতে হাজরে আসওয়াদ ভেঙ্গে যায়।

যদিও অধিকাংশ ঐতিহাসিক একমত, এটা ঘটেছিল কারামতীদের হাত ধরে। কারামতীরা শিয়াদের এক গ্রুপ ছিল যারা বাহরাইনে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। এদের হাজারো ভ্রষ্ট চিন্তাধারার একটি ছিল যে তারা হজকে বিদআত ও কুসংস্কার মনে করতো। তাদের এ দাবীর সাপেক্ষে তারা ৯৩০ সালে হজের মৌসুমে মক্কা আক্রমণ করে। এসময় আব্বাসীয় খিলাফত এতই দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে হাজীদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালনেও অক্ষম ছিল তারা। কারামতী শিয়ারা হাজার হাজার হাজীকে হত্যা করে তাদের লাশ জমজম কূপে ফেলে দেয়। এরপর হাজরে আসওয়াদকে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যায়। ৯৫১ সাল পর্যন্ত হাজরে আসওয়াদ তাদের নিকট বন্দী ছিল। ২২ বছর পর আব্বাসীয় খলীফা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এটি তাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেন। তারা হাজরে আসওয়াদকে এক বস্তায় ভরে কুফা জামে মসজিদে ছুড়ে ফেলে দেয়। মুসলিমেরা যখন তা উদ্ধার করে তখন হাজরে আসওয়াদ টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। পরে এ টুকরোগুলোকে একত্রিত করে একটি রুপালী কেসে করে কাবায় প্রতিস্থাপিত করা হয়।

একাদশ শতাব্দীতে আবারো মিসরের ফাতেমী শিয়া শাসক আল হাকিম বি আমরিল্লাহর পাঠানো এক ব্যক্তি কাবায় গিয়ে হাজরে আসওয়াদ ভাঙ্গতে যায়। কিন্তু বড় কোন ক্ষতি করতে পারার পূর্বেই মুসলিমরা তাকে হত্যা করতে সক্ষম হন।

৬- রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সময় হজের বিভিন্ন দায়িত্ব বিভিন্নজনের উপর ছিল। কেউ হাজীদের পানির দায়িত্বে ছিল, কেউ খাবারের; কাবার চাবির দায়িত্ব ছিল বানু শাইবার উপর। অন্য সবাই তাদের দায়িত্ব হারালেও কাবার চাবি রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সময় থেকে এখন পর্যন্ত সেই পরিবারের হাতেই আছে। কারণ রাসুলুল্লাহ (সঃ) মক্কা বিজয়ের পর এই চাবি বানু শাইবার উসমান বিন তালহা (রাঃ) কে দিয়ে বলেন, “এটা রাখো, বানু তালহা, কিয়ামত পর্যন্ত; এবং অন্যায্য জালিম ব্যতীত কেউ এটা তোমাদের কাছে থেকে নিবেনা”।

আজও যেই কাবায় ঢুকতে চায়, হোক সে খলিফা-রাজা-সুলতান, তাকে সবার প্রথমে বানু তালহাকে অনুরোধ করতে হয়।

৫- কাবা মক্কা উপত্যকার একদম মাঝে নীচু স্থানে অবস্থিত হওয়ায় প্রায় বৃষ্টির পানি গড়িয়ে মাসজিদুল হারামে জলাবদ্ধতা ও বন্যার সৃষ্টি হতো, পূর্বে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ পানি সরতেও সময় নিত। তাহলে সে সময় কি মানুষেরা তাওয়াফ করতোনা? না, সে সময়ও তাওয়াফ বন্ধ থাকেনি। মুসলিমেরা তখন সাঁতার কেটে তাওয়াফ করতেন। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে পানির আগমন রোধ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় আর হাজীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়না।

৪- সাম্প্রতিক সময় পর্যন্তও কাবা ঘর সপ্তাহে দুইবার খোলা হত এবং যে কেউ কাবা ঘরের ভেতরে ঢুকে সালাত আদায় করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে হাজীদের সংখ্যার বৃদ্ধি ও বিভিন্ন কারণবশত দুঃখজনকভাবে বছরে মাত্র দুই বার এখন কাবাঘর খোলা হয় এবং শুধু বিশেষ অতিথিরাই ভেতরে ঢোকার সুযোগ পান। 

৩- আগের কাবায় দুইটি দরজা ছিল। একটি প্রবেশের জন্য ও অপরটি নির্গমনের। বেশ কিছু সময়ের জন্য কাবায় একটি জানালাও বিদ্যমান ছিল। যদিও বর্তমানে কাবায় প্রবেশের শুধু একটি দরজা রয়েছে। 

২- আমরা কাবাকে এখন যে আকৃতিতে দেখি ইব্রাহীম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) কিন্তু 
এই আকৃতিতে কাবা বানাননি। প্রকৃতপক্ষে যুগে যুগে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবরচিত কারণবশত কাবাঘরের পুনর্নির্মাণ হয়েছে। সর্বশেষ এর সংস্কার করা হয়েছে ১৯৯৬ সালে যাতে অনেক দুর্বল পাথর পরিবর্তন করা হয়েছে এবং নতুন ছাদ বানানো হয়েছে। 

ধনুকাকৃতির দরজাকে মাটিতে স্থাপন করলে যে আউটলাইন পাওয়া যায়, প্রকৃত কাবার আকৃতি ছিল এমন। রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নবুওয়ত লাভের কিছু বছর পূর্বে কুরাইশ সিদ্ধান্ত নেয় তারা কাবার পুনর্নির্মাণ করবে। সিদ্ধান্ত হয় শুধু পবিত্র উৎস থেকে আসা টাকাই এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। ডাকাতি, পতিতাবৃত্তি বা জুয়া, এমন ক্ষেত্র থেকে আসা টাকাগুলো তারা ব্যবহার করবেনা। [ কুরাইশরা এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেকের চেয়ে এগিয়ে ছিল বলা যায়। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় দুর্নীতিবাজেরা ঘুষ, আর দুর্নীতির টাকা ‘হালালাইজ’ করার জন্য সেই টাকার একাংশ মসজিদের ঝাড়বাতি কিনতে এখন দান করেন।] কিন্তু টাকা তুলতে গিয়ে দেখা গেলো তাদের ‘পবিত্র’ টাকা এতই কম যে তা দিয়ে পুরো নির্মাণ কাজ আঞ্জাম দেয়া সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত তারা কাবার ছোট সংস্করণ নির্মাণ করে ও অর্ধবৃত্তাকার জায়গাটি যা ‘হিজর ইসমাইল’ নামে পরিচিত, সেটাকে ইটের ছোট দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেয় যাতে পুরাতন কাবার আকৃতিটা বোঝা যায়। 

তার জীবনের শেষ দিকে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন কাবাকে আবার আসল আকৃতিতে ফিরিয়ে নেবার। আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইরের (রাঃ) খিলাফতকালে স্বল্প সময়ের জন্য কাবা তার আসল আকৃতিতে ফিরে যায়; তবে শেষ পর্যন্ত আবার পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান কিউবিক আকার ধারণ করে।

[ কাবার সংস্কারের ইতিহাস নিয়ে ইনশাআল্লহ আরেকদিন বিস্তারিত পোস্ট দেয়া যাবে।]

১- আমরা ছোটবেলা থেকেই সোনালী হরফে কুরআনের আয়াত লেখা কাবার সুন্দর কালো গিলাফ দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু কাবার গিলাফ কিন্তু সব সময়ই এমন কালো ছিলোনা। ধারনা করা হয় আব্বাসীয়রা কালো গিলাফের সূচনা করেন।
যাই হোক, বিভিন্ন সময়ে কাবার গিলাফ ছিল বিভিন্ন রঙয়ের। কখনো সাদা, কখনো লাল বা সবুজ। ছবির এই লাল গিলাফটি প্রায় দুইশ বছর আগে কাবায় ব্যবহার করা যা ১৮০০ সালে খলীফা তৃতীয় সেলিম মক্কায় প্রেরণ করেছিলেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন