লিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানের মৃত্যুর পর তদীয় পুত্র হাকাম ৯৬১ খৃস্টাব্দে ৪৬ বছর বয়সে স্পেনের উমাইয়া সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি ছিলেন যোগ্য,ন্যায়পরায়ণ ও জ্ঞানতাপস খলিফা।
(তিনি দ্বিতীয় হাকাম নামে ইতিহাসে পরিচিত)
# জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃস্টপোষক হিসেবে হাকামের অবদানও কৃতিত্বঃ
অধ্যপক হিট্রির মতে, তৃতীয় আব্দুর রহমান মসজিদ-ই-জামিতে যে কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিস্টা করেছিলেন দ্বিতীয় হাকাম তাকে বিশ্বের শ্রেস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এ রুপান্তরিত করেন। দরিদ্র জণগণের কল্যাণের জন্য আমির রাজধানীতে ৭টি অবৈতনিক শিক্ষা প্রতিস্টান গড়ে তুলেন। ঐতিহাসিক ম্যাকভ উল্লেখ করেন হাকাম একমাত্র রাজধানী কর্ডোভাতেই ৮০০ টি স্কুল প্রতিস্টা করেছেন।কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল জগদ্বিখ্যাত। এখানে জ্ঞানার্জনের জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীগণ আসত। এছাড়া প্রাদেশিক গভর্ণর এবং স্বাধীন রাজ্যের সুলতানগণ স্পেনের বিভিন্ন স্থানে গ্রন্থাগার তৈরী করেন। কেবল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার ছিল না, আধুনিককালের গণপাঠাগার তথা Public Library ও স্থাপিত হয়।
# হাকামের গ্রন্থগারের বিবরণঃ
পুস্তক সংগ্রহ ও গ্রন্থাগার প্রতিস্টায় খলিফা হাকামের নিস্টা ছিল অপরিসীম। পিতার জীবদ্দশায় তাহার ও তাহার ভ্রাতার জন্য পৃথক পৃথক গ্রন্থাগার ছিল। জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ ও পুস্তক সংগ্রহের প্রতি তাহার দুর্বার আগ্রহ ছিল প্রবল। খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহনের পর আর্থিক সচ্ছলতা ও স্বাধীনতা সেই আগ্রহ দুর্বার প্রবাহ সৃস্টি করে। দেশ-বিদেশ হইতে বহু অর্থব্যয়ে দুষ্প্রাপ্য পান্ডুলিপি সংগ্রহের জন্য বেতনভূক্ত অভিজ্ঞ সংগ্রাহক নিযুক্ত করেন।তাহার একনিস্ট পুস্তক সংগ্রাহক ফাতিমা সুদূর জায়গা হতে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল্যবান পুস্তকাদি সংগ্রহ করেন। খলিফার বই কেনা নেশা এতদূরে পৌছায় যে দুষ্প্রাপ্য পান্ডুলিপি তাহার জন্য পছন্দসই রাজকীয় উপঢৌকন ছিল। তাহার গ্রন্থগারে যত পুস্তকের সমাবেশ ছিল অত আর কোথাও ছিল কিনা সন্দেহ। তাহার গ্রন্থগারে ৪০০০০০ লক্ষ পান্ডুলিপি ছিল। হাকামের গ্রন্থের ক্রমিক সংখ্যা নিরুপণের জন্য ৪৪ খানা তালিকা গ্রন্থ ছিল। তাহার গ্রন্থগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক ছিলেন খোজা তা'লিদ। আধুনিক গ্রন্থাগার,বিজ্ঞানে গ্রন্থসংরক্ষন ও বাধাইয়ে নির্দেশিকা তখনও ছিল। কর্ডোভার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ছাড়াও আরও ৭০টি গ্রন্থাগার ছিল। বস্তুত তিনি কর্ডোভাকে বইয়ের বাজারে পরিণত করেন। মৌলিক গ্রন্থের প্রথম সংখ্যা সংগ্রহের জন্য তাহার চেস্টা ছিল অপরিসীম।
বাগদাদের খলিফা আল মামুনের ন্যায় খলিফা হাকামও ছিল একজন চিন্তাবিদ ও পন্ডিত ছিলেন। গ্রন্থাগারের কলোরব বৃদ্ধি করাতেই তিনি সন্তুস্ট ছিলেন না। অধ্যাবসায়ের সংগে মূল্যবান গ্রন্থাগুলি অধ্যায়ন করিতেন এবং তিনি এত বেশী মেধাবী ও অধ্যায়নশীল ছিলেন যে তাহার গ্রন্থাগারের প্রায় সমস্ত বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন। ইতিহাস, জীবনপঞ্জী ও বংশতালিকা তাহার পান্ডিত্য সে যুগে বিরল ছিল। তিনি এক লেখকও ছিলেন। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিদ্বান ব্যাক্তিদিগকে সমাদর করিতেন। এই কথা ঐতিহাসিক সত্য যে তাহার সময়ে সমকক্ষ বিদ্বান নরপতি আর কোথাও ছিল কিনা সন্দেহ।
তখন কর্ডোভা ছিল গ্রন্থগারের স্বর্গরাজ্য
গ্রন্থকার ও অনুবাদকের পৃস্টপোষকতাঃ
হাকাম গ্রন্থকার ও অনুবাদকের আকর্ষণীয় পারিশ্রমিক প্রদান করতেন। আবুল ফারহাজ ইস্পাহানীর বিখ্যাত গ্রন্থ' কিতাবুল আগানী' তিনি এক হাজার স্বর্ণমুদ্রায় ক্রয় করেন। এ সময় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্তের লেখক ও অনুবাদকগণ হাকামের পৃস্টপোষকতা ও গ্রন্থপ্রীতিতে সন্তুষ্ট হয়ে তাদের রচনাবলী খলিফার নামে উৎসর্গ করতেন। এবং গ্রীক মনিষীদের গ্রন্থ অনুবাদিত হত।
# বইয়ের বাজার সৃস্টিঃ
আল-হাকাম পুস্তক প্রণয়ের পাশাপাশি বিপণনের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে বইয়ের বাজার সৃস্টি করেন। বস্তুতপক্ষে তার শাসনামলে হীরা, জহরত ও রেশমের পণ্যের মতো বইয়ের দোকান একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবসা হিসেবে পরিগণিত হয়। এসময় কর্ডোভাতেই ২০.০০০ বইয়ের দোকান ছিল।
# সেখানে মুসলিমদের অনেক অবদানের দুইটা অবদান বলিঃ
১. ইউরোপীয় দৈনন্দিন জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতায় আরবদের অসামান্য অবদান রয়েছে। উল্লেখ্য যে, আরবগণ ব্যাতীত কোন জাতি সাবানের ব্যাবহার জানত না। এস.পি.স্কটের ভাষায়, " The ancients with all their civilization were unacquainted with shop, which is an invention of the Arabs." অর্থাৎ প্রাচীনকালের কোন জাতি তাদের সভ্যতার উপদান থাকা সত্তেও সাবানের সাথে সুপরিচিত ছিল না, যা আরবদের আবিস্কার।
২. রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের ব্যাবস্থা: কর্ডোভার মুসলিম শাসকগণ রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের ব্যাবস্থা করে সভ্যতার চরম উৎকর্ষ ঘটান। অথচ এর ৭০০ বছর পরও লন্ডনের রাস্তায় কোন সরকারী বাতি ছিল না।
আর আমরা আজ
frown emoticon
ক্ষমতা আজ অন্যদের হাতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন