প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি বিরোধী জোট বিদ্যমান ছিল। যাদের একপক্ষ ছিল ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স। অপর পক্ষ ছিল জার্মান এবং ওসমানিয়া খেলাফাত (অপর নাম অট্যোমান সাম্রাজ্য)। ওসমানিয়া খেলাফাতের তৎকালীন সুলতান পঞ্চম মাহমুদ মুসলমানদের কে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে আহ্বান জানান এবং জিহাদের ডাক দেন। মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসেবে এই ডাক ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও তখন অর্ধেক মুসলিম বিশ্ব, বৃটেন রাশিয়া, ফ্রান্স দ্বারা শাসিত ছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ভারতীয় উপমহাদেশ যা বৃটিশরা মুসলমানদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। বৃটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশকে ওসমানিয়া খেলাফাত থেকে বিচ্ছন্ন করতে পারলেও মুসলমানদের হৃদয় রাজ্য থেকে বিচ্ছন্ন করতে পারেনি। এর প্রমান প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয় মুসলমানদের বৃটিশ বিরোধী অবস্থান গ্রহণ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতীয় রেজিম্যান্ট সিংগাপুর পৌছার পর হংকং পাঠানোর ঘোষনা দেওয়া হয়। অসমর্থিত সূত্র থেকে খবর ছড়িয়ে যে, এই রেজিম্যান্ট খেলাফতের (অট্যোমান সাম্রাজ্য) বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাচ্ছে। ১৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯১৫ সালে ৮০০ ভারতীয় মসলমানের একটি সেচ্ছাসেবক মুজাহিদ বাহিনী বৃটিশ অস্ত্রাগার লুট করে এবং ৪০ জন বৃটিশ অফিসারকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন। নিরাপত্তা বাহিনী কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছিল এবং সিংগাপুর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তখন বিদ্রোহী বাহিনীটি রেজিম্যান্টের কমান্ডিং অফিসারের বাংলো অভিমুখে মার্চ করে এবং বাংলো ঘেরাও করে।
দুই দিন পর, স্থনীয় বৃটিশরা মুসলমানদের সাথে পেরে উঠতে না পেরে মিত্র বাহীনির কাছে সাহায্যের আবেদন করে। বৃটিশদের সাহায্যার্থে যুদ্ধজাহজ এসে পৌছলে মুসলমানরা পরাজিত হয়। এই যুদ্ধে অনেক মুসলমান শাহাদাত বরণ করেন, অনেকে জঙ্গলে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন আর বাকিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।
বিদ্রোহের অপরাধে ৪৭ জন মুসলমানকে আউটরাম জেলখানার প্রাঙ্গনে public firing squad অর্থাৎ হাজার হাজার মানুষের সামনে নৃশংসভাবে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ৭৩ জনেরও অধিক বিদ্রোহীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য ২২ ফেব্রুয়ারীতে সমাপ্ত হওয়া বৃটিশ বিরোধী এই যুদ্ধ ইতিহাসে "সিংগাপুর বিদ্রোহ" নামে পরিচিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন