বুধবার, ৮ জুন, ২০১৬

আত্মার খোরাক- ৯০

Fahim Muhammad Ataullah

জনৈক বাদশাহ একটি মেয়েকে বিয়ে করে খুব আদর যত্নের সাথে রাজমহলে নিয়ে এলেন। হিরা-জহরতে সারা অঙ্গ রাঙিয়ে দিলেন। কিন্তু মেয়েটি ধীরে ধীরে নীরব হয়ে যেতে লাগলো। দিনে দিনে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে লাগলো। তার চেহারাতে ফুটে উঠতে লাগলো অসুখীর চিহ্ন। একান্তে উদাস হয়ে বসে থাকতো সারাক্ষণ। রাজা কতো ডাক্তার বৈদ্য দেখালেন। কোনো লাভ হলো না।
:
সেকালে নামকরা একজন চিকিৎসক ছিলেন। রাজা তাঁকেও দরবারে ডেকে পাঠালেন। যিনি শরীরের সাথে সাথে মনোরোগ বিশেষজ্ঞও ছিলেন। ডাক্তার রাণীকে দেখলেন।বললেন, বাদশাহ সালামাত!!! আপনার অনুমতি হলে আমি রাণীর চিকিৎসার ভার গ্রহণ করতে চাই। বাদশাহ অনুমতি দিলেন।
:
চিকিৎসক রাণীর সব বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তার জন্য ইতোপূর্বে যতো বিয়ের প্রস্তাব এসেছিলো সব একে একে নোট করলেন। যারা তার প্রত্যাশিত ছিলো তাদের নামও জেনে নিলেন।
:
এরপর রাণীকে পর্যবেক্ষণ শুরু করলেন তিনি। বুঝতে পেলেন শারীরিক কোনো ত্রুটি নেই তাঁর। তিনি আঁচ করতে লাগলেন, এটা হৃদয়ঘটিত সমস্যা।
:
একদিন ডাক্তার রাণীর শিরায় হাত রেখে তার সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। যাদের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছিলো একে একে সবার নাম নিতে লাগলেন। পর্যায়ক্রমে তিনি এক স্বর্ণকারের নাম নিলেন। সে ছিলো রাণীর খালাতো ভাই। স্বর্ণকারের সাথে তার ভাব ছিলো।
:
ডাক্তার অনুভব করলেন, স্বর্ণকারের নাম নেয়ার সাথে সাথে তার পাল্স বেড়ে গেছে। রাণী প্রকৃতপক্ষে তাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু বাবা-মা জোর করে বাদশার সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এখন এই মেয়ে সংসার করছে বাদশার কিন্তু অন্তরে স্বর্ণকার।
:
চিকিৎসক যখন দেখলেন তার শিরার গতি বেড়ে গেছে তখন তিনি তাকে বললেন, দেখো মা!!! সত্যি করে বলতো, তুমি কি স্বর্ণকারকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে?
:
রাণী স্বীকার করলো। সব খুলে বললো ডাক্তারকে। ডাক্তার পরবর্তীতে বাদশাহকে বুঝিয়ে একটা বিহিত করলেন।
:
বন্ধুরা!!! আমরা মুসলমান। আল্লাহ আমাদের মাহবুবে হাকীকি। দুনিয়ার সাথে বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের। ধীরে ধীরে দুনিয়াতেই মগ্ন হয়ে গেছি আমরা। হৃদয়ের সেই প্রেমের উপর পর্দা পড়ে গেছে। আমাদের হারানো প্রেমকে জাগিয়ে তোলার জন্য আমাদের প্রেমাস্পদ বিভিন্ন উপলক্ষ এনে দেন সামনে। কাছে টানার বন্দোবস্ত করেন। কিন্তু আমাদের প্রেম জাগে না। 
:
নামাযে দাঁড়িয়ে কুরআন পড়ে তাঁর সাথে কথা বলার সুযোগ দেন, তাও আমাদের অন্তরে নিভু নিভু প্রেমাগ্নি জ্বলে উঠে না।
:
বন্ধু!! কেমন প্রেমিক আমরা? এ কেমন প্রেমের দাবী আমাদের?? তিনি ডাকছেন। কাছে এসো। আজ সব তোমাদের। আমি তোমাদের। আমাকে জিতে নাও। জয় করে নাও আমাকে। আমার ভাণ্ডার তোমাদের জন্য মুক্ত করে দিলাম।
:
আমার জান্নাত তোমাদের। সব তোমাদের। তবু আমরা বেখবর। 
:
বন্ধু!!! জাগো। প্রভুর প্রেমে জাগো। ভালোবাসার তড়প জাগাও অন্তরে। মুক্ত ভাণ্ডার থেকে গ্রহণ করো সব। মিটিয় নাও সব চাওয়া। সুযোগ সবসময় মিলে না।
:
আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করে নাও। তোমার রহমতের ভাগী বানাও। আমীন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন