নামে মাত্র মুসলিম লোকটা ছিল এক দুর্ধর্ষ ডাকাত।সে এতটাই ভীতিকর ছিল যে লোকের মুখে তার বিভৎসতার কথা ছড়িয়ে পড়েছিল সবখানে ।তার পাশ দিয়ে যাওয়াকে সবাই সাক্ষাৎ বিপদকে ডেকে আনা ভাবত।তার আক্রমণ থেকে নিস্তার মিলত না হজ্জযাত্রীদের ও।
তবে লোকটার আরো একটা পরিচয় ছিল।একটা মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবাসত,হ্রদয় দিয়ে চাইত।প্রায় রাতেই সে যেত মেয়েটার সাথে মিলিত হতে।তেমনি এক রাতে লোকটা বের হলো মেয়েটার সাথে মিলিত হতে।মেয়ের বাড়ির দেয়াল দিয়ে উঠতে যাওয়ার সময় সে শুনতে পেল কেউ একজন তিলওয়াত করছে,
“ যারা বিশ্বাসী,তাদের জন্য কি আল্লাহর স্মরণে ও যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে
তার কারণে হ্রদয় বিগলিত হবার সময় এসেনি।” (কুরআন ৫৭:১৬)
এই আয়াতটি তার হৃদয়ে বজ্রাঘাত করল।প্রবলভাবে তার হৃদয়কে নাড়া দিল,নাড়িয়ে দিল তার জীবনের তরী। সে এই আয়াতটি নিয়ে ভাবতে লাগল এবং সে তার এই বাড়িতে আসার প্রধান উদ্দেশ্য-ই ভুলে গেল!।তার জিহবাতে কেবল একটি মাত্র বাক্যই উচ্চারিত হচ্ছিল ক্রমাগতভাবে “বালা ইয়া রাব্বি আল আন” – হে আমার রব, হ্যা, সেই সময় সত্যিই এসে গেছে। "
হ্যাঁ,সত্যিই এসে গিয়েছিল সে সময়।চরিত্রহীন সেই দুর্ধর্ষ ডাকাত নিজেকে স্রস্টার কাছে সঁপে দিলেন।পরিণত হলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষে।তার নাম ফুদাইল ইবন ইয়াদ(রহিমুল্লাহ)।যার বিভিন্ন ঘটনা ও শিক্ষা আজো লাখো মুসলিমের চলার পথের প্রেরণা।
তিনি সে বাড়ি থেকে ফিরে এলেন এবং একটা মুসাফির দলের মাঝে আশ্রয় নিলেন।দলের সবাই তখন খুবই গুরুতপূর্ণ আলোচনায় ব্যস্ত ছিল।তিনি শুনতে পেলেন দুইজন লোক কথা বলছেঃ
-“ চলুন আজ রাতেই রওনা দিয়ে দিই।”
-“না,সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করি।আমার ধারণা ফুদাইল কোথাও না কোথাও ঘাপটি মেরে আছে।আমাদের ডাকাতি করার জন্য।”
আল ফুদাইল সব শুনে ভাবলেন, “আমি প্রতিরাতেই খারাপ কাজ করি আর কিছু মুসলিম এখানে রয়ে যায়।কারণ,তারা আমাকে ভয় পায়।মনে হয়,আল্লাহ আমাকে এখানে এনেছেন যাতে আমি নিজেকে এদের দেখে শোধরাতে পারি।হে আল্লাহ সত্যিই আমি তোমার কাছে তওবা করছি।”
পরের গল্পটুকু রূপকথার মত।ইসলাম কিভাবে একজন মানুষকে রাতারাতি চেঞ্জ করে দিতে পারে সেটার গল্প। তিনি মক্কায় ফিরে এলেন এবং তার লেখনী দ্বারা শত শত মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দিলেন।ফুদাইল ইবন ইয়াদ এরপর থেকে যাদের তিনি ক্ষতি করেছিলেন তাদের বাড়ি-বাড়ি যেতেন এবং তাদের ক্ষতিপূরণ করে দিতেন।যখন তার কাছে দেয়ার কিছু থাকত না,তখন তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
তার ভৃত্য ইবরাহিম ইবন আল আস বলেন,“আমি ফুদাইল ইবন ইয়াদ ছাড়া আর কাউকে দেখিনি যার হ্রদয়ে আল্লাহতায়ালাই ছিলেন শ্রেষ্ঠ।যখন তার সামনে আল্লাহতায়ালার কথা উল্লেখ করা হতো কিংবা যখনই তিনি কোরআন শুনতেন-প্রচন্ড দুঃখ ও ভয় তাকে পেয়ে বসত।তার চোখ পানিতে ভরে যেত আর তিনি এতোটাই কাঁদতেন যে যারা তার নিকটে বসে থাকতেন তারাও তাকে দেখে কষ্ট পেতেন।”
একবার ইমাম আব্দুল্লাহ ইবন মুবারক তাকে একটা কবিতা চিঠি লিখে পাঠালেন-যাতে লিখা ছিল
“হে দুই হারামের অধিবাসী,
তুমি যদি আমাদের দেখতে তাহলে বুঝতে তুমি কেবল পরিহাসের ইবাদত করছ।
কেঁদে কেঁদে(ইবাদত করে) যে তার গাল ভিজিয়ে ফেলে,তার জানা উচিৎ
আমাদের ঘাড় রক্ত দিয়ে ভিজে যাচ্ছে।”
চিঠি পড়ে তার হ্রদয় এ ফোড়-ওফোড় হয়ে গেল,চোখ পানিতে ভরে গেল।তিনি প্রচুর কাঁদলেন এবং বললেন, “আবু আব্দুর রহমান(আব্দুল্লাহ ইবন মুবারক) আমাকে একটি আন্তরিক উপদেশ দিয়েছেন। ”
তার করা কিছু অসাধারণ উক্তিঃ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন