৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বসরায় জন্ম গ্রহনকারী আবু আলি আল হাসান ইবনে আল হাসান ইবনে আল হাইসাম এর সুদীর্ঘ এই নামটি বিজ্ঞান জগৎ থেকে অনেকটা হারিয়ে গেলেও তার অবদান গুলো কখনই হারাবার নয়। তিনি ছিলেন সর্বকালের সকল বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী এক ব্যক্তিত্ব।যাকে প্রথম সার্থক বিজ্ঞানী বলা হয়।
আল হাইসামের নামটি সংস্করণের মাধ্যমে পশ্চিমারা ‘আলহাজেন’ এ পরিনত করেন।অবশ্য আমার কাছে তো আল হাসান ইবনে আল হাইসাম ই বেশ লাগে।
বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্র ই ছিল যেন আল হাইথামের বিচরন পথ ।৭৫ বছরের জীবনে বিজ্ঞানকে তিনি যা দিয়ে গেছেন তা আমরা এখন পাচ্ছি তবে হয়ত অধিকাংশ ই অন্যের সৌজন্যে।
পদার্থবিদ্যা, আলোকবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, চিকিৎসাবিদ্যা, বলবিদ্যা, দর্শন সর্ব ক্ষেত্রেই তার শ্রমের চিহ্ন রয়েছে। আল হাইসাম তার জীবনে ২০০ এর অধিক বই লিখে গিয়েছেন তবে দুঃখ জনক ভাবে তার শুধুমাত্র গুটিকতক বই এর অস্তিত্ব ই বিদ্যমান । বাকিরা হয়ত চাপা পরে হারিয়ে গেছে অবহেলার ভারে । তবে যে গুটিকতক রয়েছে তা ই সবাইকে ভরকে দিতে যথেষ্ট এবং তার অন্যতম উদাহরণ হল Kitab al-Manazir (Book of Optics ) যা ছিল তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার।
এতে তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তন করে বস্তু দেখার ক্ষেত্রে আলোর চোখের ভেতর প্রবেশের প্রমাণ দেন যা একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে ধরা হয়। ব্রেডলি স্টেফেনস ইবনে আল হাইসামকে তার এ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিকাশ ঘটানোর জন্য “প্রথম বিজ্ঞানী” হিসেবে অবিহিত করেন।
আবু আলি আল হাসানের অবদান ছিল আরো আরো অনেক সুদূর প্রসারি। নিচে তার কিছু সংখ্যক তুলে ধরা হলঃ
>>বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ পদ্ধতি প্রনয়ন।
>> বর্ননা দেন ক্যামেরা অবস্ক্যুরা’র -একটা ছোট ছিদ্র যুক্ত বাক্স, যা সুক্ষভাবে কোন চিত্র আকার জন্য যে কোন প্রতিচ্ছবি পর্দায় প্রক্ষেপন করতে পারতো – এবং যা আধুনিক ক্যামেরার পুর্বসুরী।
>> আলোর বিভ্রম (Optical illusion) এবং মানুষের দেখার পদ্ধতি আর এর পেছনে চিন্তার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বিস্তারিত গবেষনা করেন।
>>প্রমান করেন যে আলো সরল পথে চলে।
>> বায়ুমন্ডলে আলোর প্রতিসরন যে উষা আর গোধুলী’র কারন তার প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
>>বস্তুসমূহের পারস্পরিক আকর্ষণ, অভিকর্ষের প্রভাবে ত্বরণ, ভারকেন্দ্র, বস্তুর ওজনের পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্বের উপর প্রভাব। (এতে তার কোনো আপেলের সাহায্যের দরকার হয় নি )
>> সূর্যালোক যে চাদের আলোর উৎস তার ব্যখ্যা দিয়েছিলেন।
>> জড়তার সূত্র—হাইপোথিসিস আকারে, যা নিউটনের প্রথম সূত্র হিসেবে বিকাশ লাভ করে
>> ভরবেগের ধারণা—তাঁর সমসাময়িক ইবনে সীনার সাথে, এটি বর্তমানে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের অন্তর্গত
>>. বিশ্লেষণধর্মী জ্যামিতির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন—রেনে ডেকার্তের জ্যামিতিক বিশ্লেষণ এবং নিউটনের ক্যালকুলাসে এর প্রভাব রয়েছে
>> ল্যাম্বার্ট চতুর্ভুজ, যা এখন ইবনে-হাইসাম-ল্যাম্বার্ট চতুর্ভুজ নামে পরিচিত।
>> উপবৃত্তীয় ও অধিবৃত্তীয় জ্যামিতির প্রথম থিওরেমসমূহ।
>> অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সূচনা
করেন।
>> প্রত্যেক জোড় নিখুঁত সংখ্যা 2(ⁿ-¹)×(2ⁿ-¹) আকারের, যেখানে (2ⁿ-¹) একটি মৌলিক সংখ্যা। আল-হাইসাম এটি সফলভাবে প্রমাণ করতে পারেননি, লিউনার্দো অয়লার পরে এটি প্রমাণ করেন।
>>গানিতিক ভাবে কিবলার দিক নির্নয়।
>>সদৃশতা সংক্রান্ত সূত্র—বর্তমানে উইলসনের সূত্র নামে পরিচিত
>>প্রাণীর গতি, আচরণ, মনস্তত্ত্বের উপর সঙ্গীতের প্রভাব। ১৯ শতক পর্যন্তও অনেক পণ্ডিতের অভিমত ছিল, সঙ্গীত কেবল মানবিক ব্যাপার।
>>জ্যোতিষীশাস্ত্র থেকে জ্যোতির্বিদ্যাকে পৃথক করন করেন।
ইত্যাদি… ইত্যাদি … ইত্যাদি…
এখানে সামান্যই দেখানো হল তার হারিয়ে যাওয়া লেখনিতে না জানি ছিল কত না জানা অসামান্য তত্ত্ব
এরপর ও বিজ্ঞানীদের কথা মনে আসলে যদি সর্বপ্রথম আইন্সটাইন কিংবা নিউটনের নাম মনে আসে তবে সত্যি ই আমাদের মনের পরিবর্তন ঘটানো উচিত।
-- লিখেছেন তানজিলা রহমান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন