ইতিহাসের দুটি পর্যায়ে নির্যাতিত হয়েছে নারীরা। একবার অন্ধকারাচ্ছন্ন অজ্ঞতার যুগে, আর একবার আমাদের এ আধুনিক যুগে।
অজ্ঞতার যুগে নারীদের সীমাহীন অত্যাচার করা হতো, তাদের সঙ্গে করা হতো পশুর মতো আচরণ। ইসলাম এসে তাদেরকে তা থেকে উদ্ধার করেছিল। পরে আবার এ আধুনিক যুগে এসে নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়। আধুনিক যুগে নারী স্বাধীনতা ও নারী মুক্তির ধুয়া তুলে নারীদেরকে তাদের স্বীয় সম্মান ও উচ্চ আসন থেকে টেনে নিচে নামিয়ে আনা হয়, তাদের মর্যাদাকে ভুলন্ঠিত করা হয়’। হ্যাঁ, সমাজদেহের অর্ধাংশ এ নারীরা যুগে যুগে হয়েছেন নির্যাতিত। নারীরা এ নির্যাতন সম্পর্কে কখনো সচেতন ছিলেন আবার কখনোবা তারা নিজেরাই সমাজপতিদের কুটকৌশলে অবচেতনভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। আধুনিক এ বিশ্বেও তারা অন্য এক রূপে নির্যাতনের শিকার হয়ে চলেছেন। আজকের যুগে নারীরা একদিকে প্রকৃত ধর্মের স্বরূপ বিকৃত করে উপস্থাপন করা কুসংস্কার, অপরদিকে আধুনিকতার আড়ালে লালসার শিকারে পরিণত হচ্ছেন। আর বিশ্বকে শোষণ করার জন্য এক সুযোগ নিচ্ছে বিশ্বের পুলিশি ভূমিকায় অবতীর্ণ বৃহৎ শক্তিবর্গ। পুরো ব্যপারটি দর্জির হাতে থাকা কাঁচির সঙ্গে তুলনা করলে দাঁড়ায়, কাঁচির এক ধারে কুসংস্কার আর অপর ধারে তথাকথিত আধুনিকতা, এর হাতল বৃহৎ শক্তিবর্গের হাতে। আর এ ব্যবস্থার মাঝে বলি হচ্ছে নারী সমাজ। আজকের যুগে নারী নির্যাতনের স্বরূপ বিশ্লেষণ করার আগে অন্ধকার যুগে নারী নির্যাতন সম্পর্কে কিছু কথা তুলে ধরলে আমাদের নিকট সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, এ সভ্য যুগে নারী নির্যাতনের সাথে অসভ্য যুগে নারী নির্যাতনের পার্থক্য কতটুকু! ইসলামের আবির্ভাবের আগে নারী নির্যাতনের ইতিহাসকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে।
পৌত্তলিকতা ও বর্বরতার যুগ : এ যুগে নারীরা ছিল পন্য সদৃশ ক্রয়-বিক্রয়ের সামগ্রী। নিজ স্ত্রীকে বিক্রি করা, স্ত্রীকে অন্যের ভোগের জন্য দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা, সামান্য অপরাধে গাছের সাথে বেঁধে প্রহার করা ইত্যাদি ছিল এ যুগে নারী নির্যাতনের কুখ্যাত দিক।
মিশরীয়, পারসিক, গ্রিক ও রোমান সভ্যতার যুগ ঃ এ যুগে মানব চিন্তার উৎকর্ষ সাধিত হয়ে একেশ্বরবাদী বিভিন্ন মানব সভ্যতা জন্মলাভ করেছিল। এ সময় নারীদের ব্যক্তি স্বার্থে মানুষরূপে স্বীকার করা হলেও প্রকৃত যে অধিকার ও মর্যাদা তাদের পাওয়া উচিত তা তাদের দেয়া হয়নি। তাদেরকে পুরুষের জীবন সঙ্গিনী হিসেবে মনে করা হলেও আধ্যাতিœক ও সামাজিকভাবে তাদের কোনো ভূমিকা স্বীকার করা হতো না। তারা ছিল নিছক পুরুষের প্রয়োজন মেটানোর সামগ্রী।
প্রাচীন গ্রিসে নারী নির্যাতনের ধরন:প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতার মতো অধিকাংশ প্রাচীন সভ্যতায় নারীদের কোন আইনগত ও সামাজিক অধিকার ছিল না। তাদের মনে করা হতো বাজারে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য ব্যবসায়িক পণ্য। বিশ্বাস করা হতো যে, নারীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল মানবীয় প্রতিভা নেই, তাই তার চেতনাও শাশ্বত নয়। অতএব, স্বামীর মৃত্যুর পর তার জীবনধারণের আর কোনো অধিকার নেই।
ইহুদি সমাজে নারী নির্যাতনের ধরন:ইহুদি পরিবারের একজন নারী হচ্ছে সম্পদ ও দাসীর মতো এবং তাকে পিতার উত্তরাধিকারের অংশ বিবেচনা করা হয়। ফলে নারীরা সেখানে সহায়-সম্পত্তি ও ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য দাসের মতো। ইহুদি পরিবারে যখন কোন পুত্রের জন্ম হয়, তখন সে উপলক্ষে আনন্দ উৎসব হয়। আর যখন কোন কন্যার জন্ম হয়, তখন সে পরিবারে দুঃখ ও উদ্বেগ পরিলক্ষিত হয় (জেনেসিস, অধ্যায়-৩৫, শ্লোক-১৭)।
খৃস্টান সমাজে নারী নির্যাতনের ধরন: ইটালি ও স্পেনের খৃস্টান সংগঠনগুলো ব্যাপক গবেষণা সমীক্ষার পর এই ধারণায় উপনীত হয় যে, বিশ্বের নারীদের মধ্যে কেবলমাত্র আশীর্বাদপ্রাপ্ত কুমারী মেরিই মানবিক মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। এছাড়া অন্য কোন মহিলার মধ্যে মানবিক গুণাবলি নেই। তারা মানুষ ও প্রাণীর মাঝামাঝি পর্যায়ের সৃষ্টি (হকুকে মাদানী জাওজাইন, পৃ-১১)।
ভারতবর্ষে নারী নির্যাতনের ধরন:প্রাচীন হিন্দু আইনে বলা হয়েছে রোগ, মহামারি, মৃত্যু, নরক, গরল ও অগ্নি নারী অপেক্ষা উত্তম। ভারতে কোন স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারা হতো।
আরবে নারী নির্যাতন:ইসলাম পুর্বকালে আরবে মহিলাদের অবস্থা এতই শোচনীয় ছিল যে, বিশ্বের অন্য যে কোন অঞ্চলের চেয়ে তা ছিল মারাতœক। সেখানে কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো।
ফ্রান্সে নারী নির্যাতনের ধরন:নারীরা আদৌ মানব প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত কি না তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য ৫৮৬ খৃস্টাব্দে ফ্রান্সে কতিপয় বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছিল যে, নারীরা মানুষ বটে, তবে পুরুষের সেবার জন্যই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে (Women rights in Islam & Europe)।
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর সম্মান :ইসলাম অধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোন পার্থক্য করে না। যেমনটি পবিত্র কোরআনে বলা হয়ঃ মুমিন নর-নারী একে অপরের বন্ধু। তারা সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকেই আল্লাহতায়ালা অনুগ্রহ করবেন, আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (সূরা তওবা, আয়াত-৭১)। অনুরূপ নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে যেমনি আছে তাদের ওপর পুরুষের (সূরা বাকারা, আয়াত-২২৮)। যখন পৃথিবীর কোন দেশেই নারীদের কোন সম্পত্তির অধিকার আছে বলে স্বীকার করা হতো না তখন শুধু ইসলামই দিয়েছে নারীদের সেই স্বাধীনতা। যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়, পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ (সূরা নিসা, আয়াত-৩২)।
মহানবী (সাঃ) হযরত ফাতেমা যাহ্রা তাঁর নিজের কন্যা হওয়া সত্বেও তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়াতেন। ‘পুরুষরা নারীর আঁচল থেকে মিরাজে (উচ্চতর স্তরে) গমন করে’। প্রকৃতপক্ষে মানুষ হিসেবে নারী-পুরুষে কোন পার্থক্য নেই। কারণ মানুষের যে অন্তর্নিহিত সত্তা মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করে তা আত্মা সংশ্লিষ্ট। আর আত্মা পুরুষও নয়, নারীও নয়। নারী-পুরুষের পার্থক্য শুধু তাদের দেহ সংশ্লিষ্ট বা শারীরবৃত্তীয় বিষয় যা মানুষের মর্যাদার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব রাখে না। যেসব মূল্যবোধ মানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত করে সেগুলোর উদাহরণ হিসেবে আমরা সততা, নিষ্কলুষতা, জ্ঞান, শিক্ষা, সদাচরণ ইত্যাদির কথা উল্লেখ করতে পারি যার কোনটিরই ধারক বা উৎস দেহ নয়, বরং আত্মা। তাই পবিত্র কোরআনে বলা হয়, ‘তোমাদের মধ্যে যে যত বেশি খোদাভীরু সে তত বেশি মর্যাদার অধিকারী’। অর্থাৎ মর্যাদার মাপকাঠি হলো খোদাভীরুতা যা দেহ সংশ্লিষ্ট নয়।
তাহলে নারীকে পর্দা করতে বলা হয় আর পুরুষকে বলা হয় না- এটা কি তাদের প্রতি অন্যায় নয়? মূলত এ কথা অনস্বীকার্য যে, দৈহিকভাবে নারী-পুরুষে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে যদিও রূহগত দিক থেকে এ দুয়ে কোনো পার্থক্য নেই। নারী তার দৈহিক গঠনের কারণে পুরুষকে আকর্ষণ করতে সক্ষম, যা কখনো কখনো তার বিপদের কারণ হয়। নারীকে এসব বিপদ থেকে রক্ষা করা ও তার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য ইসলাম তার জন্য পর্দা প্রথার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এর ফলে তার কোন প্রকার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়নি, বরং সমাজে তার কর্মতৎপরতার পথ উন্মোচন করছে ।
প্রশ্ন হতে পারে, সৃষ্টিকর্তা নারীকে নারী করার কারণেই তাদের ওপর এ বাধ্যবাধকতা আরোপিত হয়েছে। মূলত বাধ্যবাধকতা কোন একটি ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। আর সেখানে বাধ্যবাধকতার ধরনে পার্থক্য থাকলেও নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। যেমন কোন রাষ্ট্রের সঠিক পরিচালনার জন্য বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে। অপরদিকে পার্থক্য বা বৈচিত্র্য মানবিক মর্যাদার ক্ষেত্রে কোন বিরোধ সৃষ্টি করে না। বরং পৃথিবীর যে কোন ব্যবস্থায়ই পার্থক্য ও বৈচিত্র্য বিদ্যমান। আর এটাই কোন ব্যবস্থার পূর্ণতা লাভের শর্ত। যেমন একটি শব্দ ‘কলম’ লেখার জন্য ক,ল,ম যদি একই হতো তবে এ শব্দটি অস্তিত্ব লাভ করতে পারত না। আমরা এ ক্ষেত্রে ক,ল ও ম -এর অক্ষরগত মর্যাদা ক ক হওয়া, ল ল হওয়া এবং ম ম হওয়ার কারণে হানি হয়েছে বলে মনে করি না যদিও শব্দ গঠনে তাদের ভূমিকা বিভিন্ন। সেরূপ মানব সমাজ ব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদান হলো নারী ও পুরুষ। নারী নারী হওয়ার কারণে, পুরুষ পুরুষ হওয়ার কারণে তাদের মর্যাদায় পার্থক্য হয় না যদিও সমাজে অবদান রাখার ক্ষেত্রে তাদের কর্মপদ্ধতি ভিন্ন হয়। বরং তাদের মর্যাদা নির্ভর করে সমাজে তাদের ভূমিকার ওপর।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ইউরোপের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখতে পাই ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বৃটেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও ইটালির মতো ইউরোপীয় দেশের মেয়েদের কোন সম্পত্তির অধিকার স্বীকার করা হতো না। আলবার ম্যালে তার ইতিহাস গ্রন্থের ষষ্ট খন্ডের ৩২৮ নং পৃষ্টায় লিখেন, ‘কারখানার মালিকরা নারী ও শিশু শ্রমিকদের খুবই কম পারিশ্রমিকে কাজে নিয়োগ করত। আর যেহেতু তাদের শ্রম-ঘন্টার পরিমাণ ছিল বেশি, সেহেতু সাধারণত তারা বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতো এবং কম বয়সেই মারা যেত। আর এ অবস্থা থেকে ইউরোপের নারীদের মুক্তি দেয়ার জন্য যে অবস্থার উদ্ভব হয়েছে তার উদাহরণ হলো চেপে যাওয়া ¯িপ্রংয়ের মতো যা হঠাৎ মুক্ত হওয়ায় সমাজ নামক আয়নায় যত্রতত্র আঘাত হেনেছে। আর তা অসমভাবে খন্ড-বিখন্ড হয়েছে। ইউরোপ নারী মুক্তির নামে, নারী স্স্বাবাধীনতা বলতে সেক্সকে প্রাধান্য দিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে তার প্রতিফলন হলো আধুনিক যুগে, সভ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নারী নির্যাতনের নতুন পদ্ধতির উদ্ভব। আর এর ফল হলো এইডস, ধর্ষণ ও পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়া বা পরিবার একক ধ্বংস হওয়া। একটি পরিসংখ্যান অনুসারে আধুনিক পশ্চিমা বিশ্বে যৌন স্বধীনতার নামে নারী সমাজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তা আমরা অনুধাবন করতে পারিঃ আমেরিকায় প্রতিবছর দশ লাখ অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণী অবৈধভাবে গর্ভবতী হচ্ছে, যার অর্থ প্রতিদিন সেখানে তিন হাজার তরুণী গর্ভবতী হচ্ছে। প্রতি বছর পাঁচ লাখ অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণী অবৈধ গর্ভধারণ করে সন্তান প্রসবের দায়িত্বও নেয়, অবশিষ্টরা গর্ভপাত কর দায়মুক্ত হয়। যৌন শিক্ষার ফলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ তরুণী তাদের সহপাঠীদের যৌন আক্রমণের শিকার হচ্ছে। হেন এক জঘন্য পরিস্থিতিতে আধুনিকারা অ্যালকোহল, আফিম, গাঁজা, মদ ও হেরোইনে আসক্ত হলে মূল্যবান জীবনকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে সেখানকার স্কুলগুলো তাদের প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব হিসেবে ‘মাদকমুক্ত পরিবেশের’ কথা সানন্দে প্রচার করছে।
ডঃ মোস্তফা আল সাবাই তার ‘আল মিরাহ বাইন আল ফিকহ ওয়াল কানুন’ পুস্তকে লিখেছেন, নারী স্বাধীনতার নামে পাশ্চাত্য নারীদের ঘরছাড়া করেছে। নারীদেরকে তারা হোটেল রেস্তোরার পরিচালিকা, স্টোরের সেলস গার্ল, অফিস-আদালতের টাইপিস্ট, রিসেপশনিস্ট এবং রাস্তার মহিলা পুলিশ বানিয়েছে। পাশ্চাত্যে বিবাহ বিচ্ছেদ এত বেশি প্রকট যে, প্রতি বছর সেখানে লাখ লাখ স্বামী-স্ত্রী পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অনেক জায়গায় প্রতিটি বিবাহেই দু’বার করে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।
এভাবে পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে দিয়ে পাশ্চাত্যবাদীরা নারীদেরকে নিজেদের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলে। খদ্দেরদের আকর্ষণ করার জন্য নারীদের বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করার প্রয়াস পায়। তাদেরকে পুঁজিবাদীদের খেলার পুতুল বানিয়ে তোলে। নিজেদের অবৈধ যৌন ক্ষুধা মেটাবার জন্য নারীদেরকে কলগার্ল, সোসাইটি গার্ল প্রভৃতিতে রূপান্তরিত করে। বিভিন্ন অশ্লীল পত্রপত্রিকায় নারীদের নগ্ন ছবি ছেপে, নারী বিষয়ক অবৈধ গল্প-উপন্যাস প্রকাশ করে এবং সিনেমা-ভিডিও ইত্যাদি মারফত অশ্লীল ছবি বানিয়ে পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে দেয়। এভাবে গোটা সমাজ ব্যবস্থায় অশ্লীলতার নেশা প্রকট হয়ে মানুষের মানসিক বিকৃতি ঘটাচ্ছে।
বর্তমান মুসলিম সমাজে নারী নির্যাতন:ইসলামের আবির্ভাবের পর নারী যে মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছিল তা-ও ধর্ম সম্পর্কে অগভীর জ্ঞানের অধিকারী এক শ্রেণীর ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের অস্পষ্ট ও ভ্রান্ত ধারণার ফলে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে; নারীরা এ সমাজে পুনরায় নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। যেমন কারো কারো মতে, এ ফেতনার যুগে নারীদের গৃহবন্দি করে রাখা ধর্মীয় কাজ বলে পরিগণিত হয়। স্ত্রী শুধু স্বামীর খেদমত করে যাবে আর স্বামীর নিজ স্ত্রীর প্রতি কোন কর্তব্য নেই। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়, হিজাব বা পর্দা প্রথা এ জন্য যে নারীরা প্রয়োজনে এ ব্যবস্থা অবলম্বনের মাধ্যমে গৃহের বাইরে এসে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। ইসলামে মানবিক অধিকার যেমনঃ শিক্ষা, চিকিৎসা, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অধিকার থাকলেও নারীরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী মানুষের জন্য।
সে যা-ই হোক না কেন, একদিকে ধর্মের নামে ধর্মান্ধতা, অপরদিকে নারী স্বাধীনতার নামে কামুকতা- এ দুই অবস্থা যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে নারী। এ উভয় অবস্থায়ই নারী সমাজকে পিষ্ট করে লাভবান হচ্ছে পুঁজিবাদী ও উপনিবেশবাদীরা। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নারী সমাজকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে; জানতে হবে মানুষ হিসেবে তাদের মর্যাদা কোথায়, কিসে তাদের সম্মান- অর্থে না মূল্যবোধে?
এস এম সাখাওয়াত হুসাইন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন