শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫

শায়খুল হাদীস যাকারিয়া র. লিখেন,

ফাহিম মাহমুদ আতাউল্লাহ্‌ 

শায়খুল হাদীস যাকারিয়া র. লিখেন, যমুনা নদীর তীরে একজন বুযূর্গ বাস করতেন। একবার এক আগন্তুক তাঁর কাছে এসে বলো, আমার দরিয়ার ওপারে যাওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু দরিয়া প্রচণ্ড উত্তাল। তাই নৌকা দিয়ে পার হওয়া বেশ জটিল ব্যাপার। এই অবস্থায় আমি কী করতে পারি? 
.
তিনি বললেন, যাও। দরিয়ার কিনারে দাঁড়িয়ে বলবে, তোমাকে এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে পয়গাম দিচ্ছি, যে কখনো স্ত্রী সহবাস করেনি। খানাপিনা করেনি। তুমি আমাকে রাস্তা বলে দাও। লোকটি দরিয়ার তীরে গিয়ে তাঁর বার্তা শোনালো। আল্লাহর ফজল ও করমে সাথে সাথে দরিয়ার উত্তাল তরঙ্গ থেমে গেলো। শান্ত হয়ে গেলো স্রোতের প্রাবল্য। লোকটি খুব সহজেই দরিয়া পার হয়ে গেলো।
:
এদিকে বিবি সাহেবা বুযূর্গের কথা শুনে রাগে-গোস্বায় ফেটে পড়ার উপক্রম হলেন। স্বামী তাঁর ইজ্জত সম্ভ্রম সব মিটিয়ে দিয়েছে ! আমাদের সাত সাতটি সন্তান রয়েছে। তাহলে স্ত্রী সহবাস করেনি , তিনি এমন নির্জলা মিথ্যে কী করে বলতে পারলেন?
:
বুযূর্গ ঘরে আসতেই স্ত্রী রাগে গজ গজ করতে করতে বললেন, আপনি যে খেয়ে মোটা তাজা হচ্ছেন, একথা আপনি ও আপনার আল্লাহ ভালো করেই জানেন। আপনি আমাকে বলুন, আপনি আমার সাথে কখনো সহবাস করেন নি? তাহলে এ সাতটি সন্তান কোত্থেকে আসলো?
:
বুযূর্গ তার স্ত্রীকে বিষয়টি স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিলেন। বললেন, দেখো! আমি যখনই খেয়েছি তখনই আমার নিয়ত ছিলো জীবনের হক আদায় করা। স্বাদ কিংবা বিলাসিতা নয়। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, তোমার উপর তোমার জীবনের হক রয়েছে। অনুরূপভাবে যদিও আমি সাত সন্তানের জনক তথাপি যখনই তোমার সাথে সহবাস করেছি আমার নিয়ত ছিলো তোমার হক আদায় করা। নিছক যৌনক্ষুধা নিবারণ কিংবা লালসা চরিতার্থ করার জন্য নয়। কারণ, শরীয়ত আমার ওপর স্ত্রীর হক নির্ধারণ করেছে। আর সে হক আদায়ের মানসেই আমার সহবাস করা।
:
বন্ধুরা !! শুধুমাত্র নিয়তের কারণেই অর্জন করা যায় প্রভূর সন্তুষ্টি। আমাদের বুযূর্গরা যা কিছুই করতেন সব কিছুর ক্ষেত্রেই তাদের মাকসাদ হতো তাঁর রেযা। ফলে কাজও হতো আর সওয়াব হতো মোফত। তাঁদের সারা জীবনের সব বৈধ কাজগুলোই তখন ইবাদাতের রূপ নিতো।
:
আমরাও চাইলেই পারি নিজেদের নিয়তকে শোধরে নিতে। সম্পদ উপার্জন করার সময় যদি নিয়ত করি, এর দ্বারা সবার হক আদায় করবো। দ্বীনের সেবা করবো। তাহলে আমার আপনার উপার্জনও ইবাদত হবে। পোষাক পরিধান করার সময় যদি সুন্নত তরিকায় করি তাহলে আমার পোষাক পরিধান করাটাও ইবাদত হবে। যদি ফেবু চালানোর সময় আমি নিয়ত করি আমি দ্বীনের কথা শিখবো ও প্রচার করবো তাহলে টাকা খরচ করে ফেবু চালানোটা তখন আর অনর্থক হবে না। হবে ইবাদাত।
:
সাথে সাথে লেখা শিখাও হয়ে যাবে। যা আমার নিয়ত ছাড়া করলেও হবে। তবে নিয়তের দ্বারা প্রাপ্তির ঝুলিটা আরো সমৃদ্ধ হবে। আর এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমলগুলোই হয়তো পরকালের পাথেয় হয়ে যেতে পারে।
:
তাই আসুন!! আমরা সকল কাজের শুরুতে আমাদের নিয়তকে খালেস করে নেই। আল্লাহ আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন। আমীন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন