মক্কার কুরাইশরা প্রথম থেকেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা
(সা) কে ভীষণ কষ্ট দিতে লাগল। তিনি ইসলাম প্রচার শুরু করলে তাঁর উপর নেমে এল
সীমাহীন অত্যাচার। ক্রমেই বেড়ে চলল এ নিপীড়ন। নবীর (সা) অনুসারীরাও বাদ গেলেন না।
তারাও কাফেরদের নির্যাতনের শিকার হলেন। সেই অত্যাচার ছিল নানা ধরনের। অনেকটা কঠিন, পাশবিক। এসব নির্যাতন সহ্য করা
এক সময় কঠিন হয়ে পড়ল। এমন কঠিন সময় নবী (সা) তাঁর অনুসারীদের ডেকে বললেন, ‘তোমরা হাবশায় চলে যাও। কেননা, সেখানে এমন একজন ভাল বাদশাহ
আছেন। তার রাজত্বে কারো উপর জুলুম হয় না। যতদিন না বিপদ কাটে ততদিন সেখানে কাটাও।
নিশ্চয়ই কঠিন সময় একদিন শেষ হবে।’ মহানবীর (সা) নির্দেশে ১১ জন পুরুষ এবং ৪ জন
মহিলার একটি ছোট্ট দল গোপনে আবিসিনিয়ায় গমন করল।
এ খবর কুরাইশদের মধ্যে জানাজানি
হয়ে গেল। হাবশায় গিয়ে যাতে মুসলমানগণ শান্তিতে থাকতে না পারে, সেজন্য কুরায়েশ নেতারা তাদেরকে
ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র করল। এ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তারা কুশাগ্রবুদ্ধি
কুটনীতিবিদ আমর ইবনুল ‘আছ এবং আবদুল্লাহ ইবনে আবী রাবী‘আহকে দায়িত্ব দিল। এ দু’জন
পরে মুসলমান হন। ১ম জন ৭ম হিজরীর প্রথম দিকে এবং ২য় জন ৮ম হিজরীর মক্কা বিজয়ের পর।
আব্দুল্লাহ ছিলেন আবু জাহলের বৈপিত্রেয় সহোদর ভাই। নাম ছিল বুহায়রা (بحيرى)। ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ) তার নাম রাখেন ‘আব্দুল্লাহ’ (ইবনু হিশাম)। তারা মহামূল্য উপঢৌকনাদি
নিয়ে হাবশা যাত্রা করেন এবং সেখানে গিয়ে প্রথমে খৃষ্টানদের নেতৃস্থানীয় পাদ্রী ও
পোপদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের ক্ষুরধার যুক্তি এবং মূল্যবান উপঢৌকনাদিতে ভুলে
দরবারের পাদ্রী নেতারা একমত হয়ে গেল। পরের দিন আমর ইবনুল ‘আছ উপঢৌকনাদি নিয়ে
বাদশাহ নাজ্জাশীর দরবারে উপস্থিত হলেন। অতঃপর তারা বললেন, ‘হে বাদশাহ! আপনার দেশে আমাদের
কিছু অজ্ঞ-মূর্খ ছেলে-ছোকরা পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। যারা তাদের কওমের দ্বীন
পরিত্যাগ করেছে এবং তারা আপনাদের ধর্মেও প্রবেশ করেনি। তারা এমন এক নতুন দ্বীন
নিয়ে এসেছে,
যা আমরা কখনো শুনিনি বা
আপনিও জানেন না। আমাদের কওমের নেতৃবৃন্দ আমাদেরকে আপনার নিকটে পাঠিয়েছেন, যাতে আপনি তাদেরকে তাদের কওমের
কাছে ফেরৎ পাঠান’।
তাদের কথা শেষ হ’লে উপস্থিত
পাদ্রীনেতাগণ কুরায়েশ দূতদ্বয়ের সমর্থনে মুহাজিরগণকে তাদের হাতে সোপর্দ করে দেওয়ার
জন্য বাদশাহকে অনুরোধ করল। তখন বাদশাহ রাগতঃ স্বরে বললেন, আল্লাহর কসম! এটা কখনোই হ’তে
পারে না। তারা আমার দেশে এসেছে এবং অন্যদের চাইতে আমাকে পছন্দ করেছে। অতএব তাদের
বক্তব্য না শুনে কোনরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। ফলে তাঁর নির্দেশক্রমে জা‘ফর বিন
আবু তালিবের নেতৃত্বে মুসলিম প্রতিনিধি দল বাদশাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালাম
দিলেন। কিন্তু সিজদা করলেন না। বাদশাহ তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা প্রথানুযায়ী আমাকে সিজদা
করলে না কেন?
যেমন ইতিপূর্বে তোমাদের
কওমের প্রতিনিধিদ্বয় এসে করেছে? বাদশাহ আরও বললেন,
বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ
করে এমনকি আমাদের ধর্ম গ্রহণ না করে নতুন যে ধর্মে তোমরা দীক্ষা নিয়েছে, সেটা কী আমাকে শোনাও!’ জা‘ফর
বিন আবু তালিব বললেন,
হে বাদশাহ! আমাদের
ধর্মের নাম ‘ইসলাম’। আমরা স্রেফ আল্লাহর ইবাদত করি এবং তার সাথে কাউকে শরীক করি
না। বাদশাহ বললেন,
কে তোমাদের এসব কথা
শিখিয়েছেন?
জাফর বললেন, আমাদের মধ্যকারই একজন ব্যক্তি।
ইতিপূর্বে আমরা মূর্তিপূজা ও অশ্লীলতা এবং অন্যায় ও অত্যাচারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত
ছিলাম এবং আমরা শক্তিশালীরা দুর্বলদের শোষণ করতাম। এমতাবস্থায় আল্লাহ মেহেরবানী
করে আমাদের মধ্যে তাঁর শেষনবীকে প্রেরণ করেছেন। তাঁর নাম ‘মুহাম্মাদ’। তিনি আমাদের
চোখের সামনে বড় হয়েছেন। তাঁর বংশ মর্যাদা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা,
আমানতদারী, সংযমশীলতা, পরোপকারিতা প্রভৃতি গুণাবলী
আমরা জানি। নবুঅত লাভের পর তিনি আমাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন এবং মূর্তিপূজা
পরিত্যাগ করে সর্বাবস্থায় এক আল্লাহর ইবাদত করার আহবান জানিয়েছেন। সাথে সাথে
যাবতীয় অন্যায়-অপকর্ম হ’তে তওবা করে সৎকর্মশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তাঁর
উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং এক আল্লাহর ইবাদত করছি ও হালাল-হারাম মেনে চলছি। এতে
আমাদের কওমের নেতারা আমাদের উপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন এবং আমাদের উপর প্রচন্ড নির্যাতন
চালিয়েছেন। সেকারণ বাধ্য হয়ে আমরা সবকিছু ফেলে আপনার রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছি আপনার
সুশাসনের খবর শুনে। আমরা অন্যস্থান বাদ দিয়ে আপনাকে পছন্দ করেছি এবং আপনার এখানেই
আমরা থাকতে চাই। আশা করি আমরা আপনার নিকটে অত্যাচারিত হব না’। সীরাতে ইবনে হিশাম
১/৩৩৬।
অতঃপর জাফর বললেন, হে বাদশাহ! অভিবাদন সম্পর্কে
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাদের জানিয়েছেন যে, জান্নাতবাসীদের পরস্পরে অভিবাদন হ’ল ‘সালাম’ এবং
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে পরস্পরে ‘সালাম’ করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ বাদশাহ বললেন, ঈসা ও তাঁর দ্বীন সম্পর্কে
তোমরা কি বলতে চাও?
উত্তরে জা‘ফর বিন আবু
ত্বালিব সূরা মারিয়ামের শুরু থেকে ৩৬ আয়াত পর্যন্ত হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া
(আঃ)-এর বিবরণ,
মারিয়ামের প্রতিপালন, ঈসার জন্মগ্রহণ ও লালন-পালন, দোলনায় কথোপকথন প্রভৃতি
আয়াতগুলি পাঠ করে শুনিয়ে দিলেনঃ কাফ-হা-ইয়া-আইন- সাদ। এটা আপনার পালনকর্তার
অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি। যখন সে তাঁর পালনকর্তাকে আহবান
করেছিল নিভৃতে। সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা আমার অস্থি বয়স-ভারাবনত হয়েছে; বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়েছে; হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে
ডেকে আমি কখনও বিফলমনোরথ হইনি। আমি ভয় করি আমার পর আমার স্বগোত্রকে এবং আমার
স্ত্রী বন্ধ্যা;
কাজেই আপনি নিজের পক্ষ
থেকে আমাকে এক জন কর্তব্য পালনকারী দান করুন। সে আমার স্থলাভিষিক্ত হবে ইয়াকুব
বংশের এবং হে আমার পালনকর্তা, তাকে করুন সন্তোষজনক। হে যাকারিয়া, আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম হবে ইয়াহইয়া।
ইতিপূর্বে এই নামে আমি কারও নাম করণ করিনি। সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা কেমন করে
আমার পুত্র হবে অথচ আমার স্ত্রী যে বন্ধ্যা, আর আমিও যে বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত। তিনি বললেনঃ
এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলে দিয়েছেনঃ এটা আমার পক্ষে সহজ। আমি তো পুর্বে
তোমাকে সৃষ্টি করেছি এবং তুমি কিছুই ছিলে না। সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে একটি নির্দশন দিন। তিনি
বললেন তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ অবস্থায় তিন দিন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলবে না। অতঃপর সে কক্ষ
থেকে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে এল এবং ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহকে
স্মরণ করতে বললঃ হে ইয়াহইয়া দৃঢ়তার সাথে এই গ্রন্থ ধারণ কর। আমি তাকে শৈশবেই
বিচারবুদ্ধি দান করেছিলাম। এবং নিজের পক্ষ থেকে আগ্রহ ও পবিত্রতা দিয়েছি। সে ছিল
পরহেযগার। পিতা-মাতার অনুগত এবং সে উদ্ধত, নাফরমান ছিল না। তার প্রতি শান্তি-যেদিন সে জন্মগ্রহণ করে
এবং যেদিন মৃত্যূবরণ করবে এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে। এই কিতাবে
মারইয়ামের কথা বর্ণনা করুন,
যখন সে তার পরিবারের
লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল। অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে
আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে
আত্নপ্রকাশ করল। মারইয়াম বললঃ আমি তোমা থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি
তুমি আল্লাহ্ভীরু হও। সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র
দান করে যাব। মারইয়াম বললঃ কিরূপে আমার পুত্র হবে, যখন কোন মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি
ব্যভিচারিণীও কখনও ছিলাম না ? সে বললঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজ সাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে
একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত
ব্যাপার। অতঃপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন এবং তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলে
গেলেন। তিনি বললেনঃ হায়,
আমি যদি কোনরূপে এর
পূর্বে
মরে যেতাম এবং মানুষের
স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে,
যেতাম! প্রসব বেদনা
তাঁকে এক খেজুর বৃক্ষ-মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। অতঃপর ফেরেশতা তাকে নিম্নদিক
থেকে আওয়ায দিলেন যে,
তুমি দুঃখ করো না।
তোমার পালনকর্তা তোমার পায়ের তলায় একটি নহর জারি করেছেন। আর তুমি নিজের দিকে
খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক খেজুর পতিত হবে। আহার কর, পান কর এবং চক্ষু শীতল কর। যদি
মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ, তবে বলে দিওঃ আমি আল্লাহ্র উদ্দেশে রোযা মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই
কোন মানুষের সাথে কথা বলব না। অতঃপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে
উপস্থিত হলেন। তারা বললঃ হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ। হে হারূণ-ভাগিনী, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন
না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী। অতঃপর তিনি হাতে সন্তানের দিকে ইঙ্গিত
করলেন। তারা বললঃ যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব? সন্তান বললঃ আমি তো আল্লাহ্র
দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন।
তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি,
ততদিন নামায ও যাকাত
আদায় করতে এবং জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি। আমার
প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যূবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।
এই মারইয়ামের পুত্র ঈসা। সত্যকথা, যে সম্পর্কে লোকেরা বিতর্ক করে। আল্লাহ্ এমন নন যে, সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা, তিনি যখন কোন কাজ করা
সিদ্ধান্ত করেন,
তখন একথাই বলেনঃ হও এবং
তা হয়ে যায়। তিনি আরও বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ আমার পালনকর্তা ও তোমাদের
পালনকর্তা। অতএব,
তোমরা তার এবাদত কর।
এটা সরল পথ।
বাদশাহ ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক
এবং তাওরাত-ইঞ্জীলে পন্ডিত ব্যক্তি। কুরআনের অপূর্ব বাকভঙ্গি, শব্দশৈলী ও ভাষালংকার এবং
ঘটনার সারবত্তা উপলব্ধি করে বাদশাহ অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকলেন। সাথে উপস্থিত
পাদ্রীগণও কাঁদতে লাগলো। তাদের চোখের পানিতে তাদের হাতে ধরা ধর্মগ্রন্থগুলি ভিজে
গেল। অতঃপর নাজ্জাশী বলে উঠলেন, إن هذا والذى جاء به عيسى ليخرج
من مشكاة واحدة- ‘নিশ্চয়ই এই কালাম এবং ঈসার নিকটে যা নাযিল হয়েছিল দু’টিই একই আলোর উৎস হ’তে
নির্গত’। বলেই তিনি কুরায়েশ দূতদ্বয়ের দিকে ফিরে বললেন, انطلقا فلا والله لا أسلمهم- ‘তোমরা চলে যাও! আল্লাহর কসম! আমি কখনোই এদেরকে
তোমাদের হাতে তুলে দেব না’। আমর ইবনুল ‘আছ এবং আব্দুল্লাহ বিন আবী রাবী‘আহ দরবার
থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমর বললেন, কালকে এসে এমন কিছু কথা বাদশাহকে শুনাবো, যাতে এদের মূলোৎপাটন হয়ে যাবে এবং এরা ধ্বংস হয়ে যাবে। একথা
শুনে আব্দুল্লাহ বললেন,
না, না এমন নিষ্ঠুর কিছু করবেন না।
ওরা আমাদের স্বগোত্রীয় এবং নিকটাত্মীয় তো বটেই। কিন্তু আমর ওসব কথায় কর্ণপাত করলেন
না। পরের দিন বাদশাহর দরবারে এসে তিনি বললেন, أيها الملك إنهم
يقولون فى عيسى بن مريم قولا عظيما- ‘হে সম্রাট! এরা ঈসা ইবনে মারিয়াম সম্পর্কে ভয়ংকর সব
কথা বলে থাকে’। একথা শুনে বাদশাহ মুসলমানদের ডাকালেন। মুসলমানেরা একটু
চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। কেননা নাছারারা ঈসাকে উপাস্য মানে। কিন্তু মুসলমানরা তাকে
আল্লাহর বান্দা বলে থাকে। যাই হোক কোনরূপ দ্বৈততার আশ্রয় না নিয়ে সত্য বলার
ব্যাপারে তারা মনস্থির করলেন এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে সত্য
প্রকাশ করে দিয়ে জাফর বিন আবু তালিব বললেন, هو عبد الله ورسوله و
روحه وكلمته ألقاها إلى مريمَ العَذْراءِ الْبَتُولِ ولم يَمَسُّها بَشَرٌ-
‘তিনি ছিলেন আল্লাহর
বান্দা ও তাঁর রাসূল। তিনি ছিলেন আল্লাহ প্রেরিত রূহ এবং তাঁর নির্দেশ। যা তিনি
মহীয়সী কুমারী মাতা মারিয়ামের উপরে ফুঁকে দিয়েছিলেন। কোন পুরুষ লোক তাকে স্পর্শ
করেনি’। তখন নাজ্জাশী মাটি থেকে একটা কাঠের টুকরা উঠিয়ে বললেন, والله ماعدا عيسى بن مريمَ ما قلتَ هذا العودَ ‘আল্লাহর কসম! তুমি যা বলেছ, ঈসা ইবনে মারিয়াম তার চাইতে এই
কাষ্ঠখন্ড পরিমাণও বেশী ছিলেন না’। তিনি একথাও বলেন যে, أشكر الله بأنى وجدتُ زَمَنَ هذا الرسولِ ‘আল্লাহর শোকর যে, আমি এই রাসূলের যামানা
পেয়েছি’। রাহমাতুল লিল আলামীন ১/৫৯। তিনি জাফর ও তার সাথীদের উদ্দেশ্যে বললেন, إذهبوا فأنتم شيُّومٌ بأرضى، من سبَّكم غَرِمٌ، من سبَّكم غَرِمٌ، من
سبَّكم غَرِمٌ، ما أُحِبُّ أَنَّ لى دَبْرًا من ذهب وأنى آذيتُ رجلا منكم-
‘যাও! তোমরা আমার দেশে
সম্পূর্ণ নিরাপদ। যে ব্যক্তি তোমাদের গালি দেবে, তার জরিমানা হবে। যে ব্যক্তি তোমাদের গালি দেবে, তার জরিমানা হবে। যে ব্যক্তি
তোমাদের গালি দেবে,
তার জরিমানা হবে।
তোমাদের কাউকে কষ্ট দেওয়ার বিনিময়ে যদি কেউ আমাকে স্বর্ণের পাহাড় এনে দেয়, আমি তা পছন্দ করব না’। অতঃপর
তিনি কুরায়েশ দূতদ্বয়ের প্রদত্ত উপঢৌকনাদি ফেরৎ দানের নির্দেশ দিলেন।ঘটনার
বর্ণনাদানকারিণী হযরত উম্মে সালামাহ (রাঃ) (পরবর্তীকালে উম্মুল মুমেনীন) বলেন, فخرجا من عنده مقبوحَين… وأقمنا عنده بخير دار مع خيرجار
‘ঐ দু’জন চরম বেইযযতির
সাথে দরবার থেকে বেরিয়ে গেল… এবং আমরা উত্তম প্রতিবেশীর সাথে উত্তম গৃহবাসীরূপে
বসবাস করতে থাকলাম’। ফালিল্লাহিল হাম্দ। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, তাঁরা শেষনবীর আবির্ভাবের খবর
শুনে ৫০-এর অধিক লোক নিয়ে ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে ইয়ামন থেকে নৌকায় মদীনা রওয়ানা
হন। কিন্তু ঝড়ে তাদের নৌকা হাবশায় গিয়ে নোঙর করে। ফলে তারা সেখানে অবতরণ করেন এবং
জাফর ও তার সাথীদের সঙ্গে সাক্ষাত হলে তারা সেখানেই থেকে যান। পরে জাফরের সাথে
তারা ৭ম হিজরীতে খায়বরে এসে রাসূলের নিকট হাযির হন। ফলে জাফর ও নাজ্জাশীর মধ্যকার
আলোচনার সময় আবু মূসা আশ‘আরী উপস্থিত ছিলেন। বুখারী, মুসলিম, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৩/৬৪-৭২।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন