এরাই হলেন আমাদের পূর্ববর্তী : রিবঈ ইবনে আমের (রা) ও পারস্য
সেনাপতি রুস্তমের মধ্যে কথাপোকথন –
রিবঈ ইবনে আমের (র) যখন
জীর্ণ-শীর্ণ মোটা পোশাক পরে অস্ত্র নিয়ে তার ছোট ঘোড়াটির উপর অারোহন করে
রুস্তমের দরবারে প্রবেশ করলেন এবং ঘোড়ার পদাঘাতে ঘরে বিছানো গালিছা ফেটে গেল। তখন
তারা ( রুস্তমের বাহিনী) বলল, অস্ত্র রেখে প্রবেশ কর। রিবঈ ইবনে আমের (রা) বললেন, আমি স্বেচ্ছায় এখানে আসিনি।
আপনারা ডেকে পাঠিয়েছিলেন বলেই এসেছি। যদি আপনারা আমাকে এ অবস্থায় ভিতরে প্রবেশ করতে দেন,
তাহলে প্রবেশ করব,
অনথ্যায় ফিরে যাব। তখন সৈনরা রুস্তমকে তার কথা বললে তিনি
প্রবেশের অনুমিত দিলেন। রিবঈ ইবনে আমের (রা) তার বর্মের উপর ভর দিয়ে প্রবেশ করার
কারনে অধিকাংশ গালিছা ছিঁড়ে গেল। অতপর তারা (রুস্তম ও তার বাহিনী) বলল,
তোমরা এখানে কী উদ্দেশ্য এসেছ?
তিনি বললেন, আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে এখানে আসার ব্যবস্থা করেছেন। যাতে আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় লোকদের
মানুষের দাসত্ব থেকে বের করে আল্লাহর দাসত্বে,
সংকীর্ণ পৃথিবীর মোহ হতে প্রশস্ত জান্নাতের দিকে,
খ্রিষ্টান ধর্মের অত্যাচার থেকে বের করে ন্যায় ও ইনসাফের
ধর্ম ইসলামের দিকে নিয়ে যেতে পারি। তিনি (আল্লাহ) আমাদেরকে তার সত্য দ্বীন সহ
প্রেরণ করেছেন মানবজাতীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার জন্য। যারা এ ধর্ম গ্রহন
করবে, অামরা তাদেরকে ভাই হিসেবে
গ্রহন করব এবং তাদেরকে নিরাপদে রেখে ফিরে যাব। অার যারা এ ধর্ম গ্রহনে অস্বীকৃতি
জানাবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ
করতে থাকব, যতক্ষণ না আল্লাহ তার কৃত
ওয়াদা পূর্ণ করেন।
তারা ( রুস্তম ও তার বাহিনী)
বলল, আল্লাহকৃত ওয়াদা কি?
তিনি বললেন, ইসলাম অস্বীকারকারীদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যারা মারা যাবে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত এবং যারা বেঁচে থাকবে তাদের জন্য
বিজয়।
রুস্তম বললেন, আমি তো তোমাদের বক্তব্য শুনলাম, আমরা কি এ
বিষয়টিকে(যুদ্ধ)বিলম্বিত করতে পারি না? যাতে আমরা উভয় পক্ষ ভেবে- চিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে
পারি।
তিনি বললেন হ্যাঁ করা যায়।
তবে কয়দিন চান,
একদিন না দুইদিন।
তিনি (রুস্তম) বললেন, না। বরং অামাদের বিজ্ঞ ও
জ্ঞানীদের নিকট বিষয়টা অবহিকত না করা পর্যন্ত।
রিবঈ (রা) বললেন, রাসুল্লাহ (স) আমাদের জন্য এই
সুন্নাত চালু করেননি যে,
আমরা শত্রুদের তিনদিনের
বেশী অবকাশ দিব। বরং অাপনার এবং তাদের বিষয় ভেবে দেখুন ও তিনটির যেকোন একটি বেছে
নিন। ইসলাম গ্রহণ,
জিযিয়া প্রদান অথবা
যুদ্ধ।
রুস্তম রিবঈ ইবনে আমের (রা) কে
বললেন, আপনি কি তাদের সরদার?
রিবঈ (রা) বললেন, না। তবে মুসলমানদের একটি দেহের
মত। তাদের সব থেকে নিম্নস্তরের ব্যক্তি উচ্চপর্যায়ের ব্যাক্তিদের রক্ষা করে (
নেতৃত্ব দিতে পারে)
অতপর পারসিক সেনাপতি
রুস্তম গোত্রপতিদের সমবেত করে বললেন, তোমরা কি কখন ও এ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম ও বাগ্মিতাপূর্ণ কথা
শুনেছ ? তারা বলল, আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আপনি
কি এ লোকটির প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন এবং নিজের ধর্ম ত্যাগ করে এ কুকুকের (
নাউঝুবিল্লাহ) ধর্মের দিকে ধাবিত হচ্ছেন? আপনি কি তার পোশাকের প্রতি লক্ষ্য করেছেন?
রুস্তম বললেন, তোমাদের জন্য ধ্বংস হোক, তোমরা তার পোশাকের প্রতি
লক্ষ্য করো না ;
বরং তার সুচিন্তিত মতামত, প্রজ্ঞাপূর্ণ বক্তব্য এবং
নীতির প্রতি লক্ষ্য কর। আরবরা অনাড়ম্বর কাপড় পড়ে, কম ভক্ষণ করে। কিন্তু বংশমর্যাদা রক্ষা করে।
(আল বিদিয়াহ, ত্বাবারী)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন