হে মুমিনা! উত্তম চরিত্র হলো আপনার জীবনের ভিত্তি স্বরূপ। এর উপরই
নির্ভর করছে আপনার সুখ ও সমৃদ্ধি। যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাকে উত্তম চরিত্রে
ভূষিত করেন, তাহলে সমস্ত রকম কল্যাণ পেয়ে যাবেন। আর যদি উহা হতে
বঞ্চিতা হোন, তাহলে যেন সমস্ত কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয়ে গেলেন। কোন এক সাহাবা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলেন উত্তম আমল কি? তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন
البر حسن الخلق . رواه مسلم
অর্থ : উত্তম চরিত্রই হচ্ছে উত্তম কাজ।
আবার যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রশ্ন
করা হয়েছিল কোন গুণের কারণে মানুষ বেশী বেশী জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি উত্তরে বললেন:
تَقْوَى اللهِ تَعَالَى، وَحُسْنُ
الْخُلُقِ . الترمذي
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার ভয় এবং উত্তম চরিত্র।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন:
إنَّ مِنْ أحَبِّكُمْ إلَيَّ
وَأقْرَبُكُمْ مِنِّيْ مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أحْسَنُكُمْ أخْلَاقًا.
رَوَاه البخاري
তেমাদের মধ্যে যারা চারিত্রিক গুণে উত্তম, তারাই আমার কাছে প্রিয়তর এবং
কিয়ামত দিবসে তারাই সবচেয়ে আমার নিকটবর্তী হবে। (বুখারী)
إنَّ الْعَبْدَ لَيَيْلُغُ بِحُسُنِ
خًلًقِهِ عَظِيْمً دَرَجَاتِ الأخِرَةِ وَشَرْفُ الْمَنَازِلِ، وَإنهُ لَضَعِيْفُ
الْعِبَادَةِ . رواه الطبراني
নিশ্চয় কোন কোন বান্দা তার উত্তম চরিত্রের কারণে আখিরাতে
উচু মাকাম লাভ করবে, যদিও সে ইবাদতে দুর্বল। (তাবারানী, উত্তম সনদে বর্ণিত)
আর উত্তম চরিত্র গঠন করতে হলে মুজাহাদা বা প্রচেষ্টা চালাতে
হবে। কষ্ট ও মেহনত করে নিজের মধ্যে ঐ সকল চারিত্রিক গুণাবলীর সমাবেশ ঘটাতে এবং
সবসময় সেভাবে চলার চেষ্টা করবেন। ইনশা আল্লাহ এই উত্তম চরিত্রের কারণেই আপনি জয়
যুক্ত হবেন। মনে রাখবেন সম্মান রয়েছে উত্তম চরিত্রের মধ্যেই। এখানে কয়টি উত্তম চরিত্রের
দিক আলোচনা করা হলো:
১. সবর বা ধৈর্য:
উহা হচ্ছে সর্বদা নিজকে আনুগত্যের মধ্যে আবদ্ধ রাখা। কোন
রকম অলসতা ও ক্লান্তি ব্যতীতই ভাল কাজগুলি করতে থাকুন এবং নিজেকে গুনাহের কাজ হতে
বিরত রাখুন। আর সব ধরণের চারিত্রিক ত্রুটি
যেমন মিথ্যা কথা বলা, আমানতের খিয়ানত, প্রতারণা, অহংকার, কৃপণতা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। আল্লাহর শরীয়তের প্রতি
অসন্তুষ্টি প্রদর্শন, আল্লাহ কতৃর্ক নির্দিষ্ট তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট না থাকা, ইত্যাদি হতে নিজকে বিরত রাখুন।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا
اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
﴿200﴾
হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধর ও ধৈর্যে অটল থাক এবং পাহারায় নিয়োজিত
থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اسْتَعِينُوا
بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য
প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা, ১৫৩)
২. উত্তম ব্যবহার:
যে সমস্ত আজেবাজে কথা শুনেন কিংবা কাজ দেখেন তা থেকে
আত্মরক্ষা করুন এবং নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। খারাপ কথার দ্বারা খারাপ কাজের
প্রতিবাদ করবেন না। বরং খারাপ কাজকে সংশোধন করবেন ভাল দ্বারা, উত্তম কথার মাধ্যমে। যদি
বাড়ীর লোকেরা আপনার সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং আপনাকে অপছন্দ করে তাহলে তাদের
প্রতি আপনি দয়া ও মমতা দেখান এবং নম্র করে তাদের উত্তর দিন। যদি তারা আজে বাজে
গালিগালাজ করে তাহলে তাদের উত্তর দিন সুন্দর কথার দ্বারা । আর নিজের কথা বর্তাকে
মার্জিত করতে সচেষ্ট হউন। এ রকম ব্যবহারের দ্বারাই আপনি তাদের অন্তর জয় করতে
পারবেন। ফলে, অতি সহজেই তাদের ভালবাসার পাত্রী হয়ে যাবেন। তাদের নৈকট্য
হাসিল করতে পারবেন এবং তারাও আপনার সাথে উত্তম ব্যবহার করবে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন:
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ
وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ ﴿199﴾
তুমি ক্ষমা প্রদর্শন কর এবং ভালো কাজের আদেশ দাও। আর
মূর্খদের থেকে বিমুখ থাক। (আরাফ, ১৯৯)
ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ ﴿34﴾
وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا ذُو حَظٍّ
عَظِيمٍ ﴿35﴾
আর ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত কর তা
দ্বারা যা উৎকৃষ্টতর, ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে সে যেন হয়ে যাবে
তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। আর এটি তারাই প্রাপ্ত হবে যারা ধৈর্যধারণ করবে, আর এর অধিকারী কেবল তারাই হয়
যারা মহাভাগ্যবান।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা
বলেন:
فَاصْفَحْ عَنْهُمْ وَقُلْ سَلَامٌ
فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ ﴿89﴾
অতএব তুমি তাদেরকে এড়িয়ে চল এবং বল, সালাম; তবে তারা শীঘ্রই জানতে পারবে।
(যুখরুফ, ৮৯)
৩. লজ্জা :
নিজকে এই বিশেষগুণে ভূষিত করুন। কারণ, উহা ঈমানের অঙ্গ। উহার মধ্যে
রয়েছে সকল প্রকার ভাল আমল ও উত্তম কথার সমাহার। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে
সত্যিকারভাবেই লজ্জা করুন। তিনি যেন আপনাকে ঐ কাজ করতে না দেখেন যা তিনি অপছন্দ
করেন। আর মালাইকাদেরকেও লজ্জা করুন। আর একাকী অবস্থায় কিংবা বাথরুমে যতটা না হলে
নয় তার থেকে বেশী কাপড় খুলবেন না। নিজের স্বামীকে এবং পরিবারের লোকদেরকে এবং
সমস্ত মানুষদের থেকে লজ্জা করতে চেষ্টা করুন। আজে বাজে কথা বলবেন না। অশ্লীল কথা
যেন মুখ দিয়ে বের না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখবেন। এমন কোন কাজ করবেন না অথবা এমন
কোন কথা বলবেন না যা আপনার সম্ভ্রমকে ধূলিসাৎ করে দেয়। কারণ লজ্জার সবটুকু উত্তম
উহা মঙ্গল বয়ে আনে। নিজের কথা বর্তাকে সুন্দর করুন। দৃষ্টিকে হিফাযত করুন। কোন
অবস্থাতেই চুল খোলা রাখবেন না। ওড়না দিয়ে সর্বদা মাথা ঢেকে রাখুন।
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ
مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ
إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ
আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের
হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে
না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। (সূরা নূর, ৩১)
হে মুমিনা!
জেনে রাখুন, আপনার অবশ্যই পালনীয় কতিপয় কাজ রয়েছে। যা পালনে আপনার জীবনকে সুসংগঠিত করবে
এবং এগুলি আপনাকে পূর্ণতা দান করবে। এর উপরই ভিত্তি করে গড়ে উঠবে আপনার জীবনের
সুখ স্বাচ্ছন্দ। এর দ্বারাই আপনার মধ্যে আসবে ইখলাস, আপনি হবেন সত্যবাদিনী।
নিম্নে উহাদের বিবরণ দেয়া হল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের
নিকট দুআ করি, তিনি যেন আপনাদের সঠিক জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার তাওফীক দান
করেন এবং আমল করার তাওফীক দেন। পালনীয় কাজগুলো খুবই সহজ যদি আল্লাহ তাআলা আপনার
জন্য উহা সহজ করে দেন। তাই এ কাজগুলি পালন করার জন্য আল্লাহর তাওফিক কামনা করুন।
১. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সর্বদা সঠিক সময়ে আদায় করতে চেষ্টা
করুন। রুকু, ক্বিয়াম, সিজদা, জালসা বা বৈঠক সঠিকভাবে
আদায় করবেন। প্রতিটি অঙ্গের মধ্যে খুশু আনতে চেষ্টা করবেন।
সালাতে দাঁড়িয়ে চোখকে সিজদার স্থানে রাখবেন। সালাতের পর যে সমস্ত যিকর রয়েছে তা
পাঠ করুন। উহার মধ্যে আছে তিনবারاسْتَغْفِرُاللهً
আসতাগফিরুল্লাহ পাঠ করা। তারপর
বলুন:
اَللَّهُمَّ أنْتَ السَّلَامُ
وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْإكْرَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু
তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ তুমি শান্তি দাতা, তোমার থেকেই শান্তি। হে
মহাপরাক্রম ও সম্মানের অধিকারী! তুমি বরকতময়।
তার পর তিনবার নীচের দুআটি পাঠ করুন।
اَللَّهُمَّ أعِنِّيْ عَلَى ذِكْرِكَ
وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ: আহুম্মা আ ইন্নী আলা যিকরিকা ও শুকরিকা ওয়া হুসনি
ইবাদাতিকা।
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার জিকির, শোকর ও সুন্দর পদ্ধতিতে
ইবাদতের ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করো।
এর পর বলুন
لآ إلَهَ إلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا
شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَئيٍ
قَدِيْرٌ.
উচ্চারণ: লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালা হুল হামদু
ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই
রাজত্ব আর প্রশংসা তাঁরই।
এর পর পাঠ করুন
الَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِماَ
أعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لَماَ مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الُجَدِّ مِنْكَ
الُجَدُّ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা মানিয়া লিমা আতাইতা ওয়ালা মুতিয়া
লিমা মানাতা ওয়ালা ইয়ান ফাউ যাল জাদ্দে মিনকাল জাদ্দু
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও,
তা কেউ ঠেকাতে পারবে না। আর কেউ কোন জিনিস দিতে পারে না যদি
তুমি না চাও। সৌভাগ্যর অধিকারীরা তোমা হতে ভিন্ন কিছু থেকে কিছুই লাভ করতে পারে
না।
তারপর পাঠ করুন:
لآإلَهَ إلَّا الله وَلَا نَعْبُدُ
إلَّا إيَّاه لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاء الُحَسَنُ
الُجَمِيْلُ وُهُوَعَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া লা না বুদু ইল্লা ইয়াহু, লাহুন নিয়িমাতু ওয়া লাহুল
ফাদলূ ওয়া লাহুস সানা উল হাসানুল জামিল ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মাবুদ নেই, আমরা একমাত্র তারই ইবাদত করি।
সমস্ত নিয়ামতের ও প্রতিদানের মালিক তিনিই। তারই জন্য উত্তম ও সুন্দর প্রশংসাসমূহ
এবং তিনি সমস্ত বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।
তারপর ৩৩বার সুবহান্নাল্লাহ,
৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩বার আল্লাহু আকবার পাঠ করুন।
সর্বশেষ পাঠ করুন:
لآإلَهَ إلَّا الله وَحْدَهُ لَا
شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيئٍ
قَدِيْرٌ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু
ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। এই দুআটি একবার পাঠ করতে হবে।
সর্বদা সুন্নাতে মুআক্কাদাহসমূহ আদায় করুন। ফজরের পূর্বে ২ রাকাত, জোহরের পূর্বে ৪রাকাত এবং পরে
২ রাকাত, মাগরিবের পরে ২ রাকআত এবং এশার পর ২ রাকাআত সুন্নত এবং ৩
রাকাআত বিতর।
২. যদি বিবাহিত হন, তাহলে স্বামীর অনুগত থাকবেন এবং অবিবাহিত হলে মাতা পিতার
অনুগত থাকবেন। এর মধ্যে রয়েছে: তাদের কথা শ্রবণ করা এবং তাদের হুকুম প্রতিপালন
করা এবং তাদের সাথে সুন্দরভাবে এবং নীচু স্বরে আদবের সাথে কথা বলা, তাদের সাথে অনর্থক ঝগড়া ফাসাদ
কিংবা রাগারাগি না করা। যদি কোন ভুল হয়, তাহলে তাদের নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং ওযর পেশ করা। সর্বদা
তাদের সাথে হাসি খুশী দেখা সাক্ষাত ও কথা বর্তা বলা।
৩. আপনি যদি সন্তানের মা হন,
তাহলে সন্তানের উত্তমরূপে প্রতিপালন করবেন। এর মধ্যে রয়েছে, তাদের উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করা, তাদের চরিত্র গঠন ও সংশোধন
করা। তাদেরকে ধীরে ধীরে
উত্তম কথা ও কাজে অভ্যস্ত করে তোলা। যেমন প্রতিজ্ঞা পালন, সত্য কথা বলা, আজে বাজে কাজ ও কথা হতে বিরত
থাকা। সাথে সাথে তাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সচেষ্ট থাকবেন এবং
তাদের পোশাক পরিচ্ছদ পরিস্কার রাখবেন।
৪. আপনার উপর দায়িত্ব হচ্ছে,
বাড়ীকে সুন্দরভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। জিনিসপত্রসমূহ
সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা, খাদ্য দ্রব্য ইত্যাদি তৈরী করা। পোশাক রিপু করা, বসার জায়গাসমূহ ধৌত ও পাক
পবিত্র রাখা। আর অন্যান্য কাজগুলি করবেন ধীরস্থিরভাবে, কোন রকম চেচামেচি কিংবা
তাড়াহুড়ো করবেন না, যাতে অন্যের শান্তিতে কোন বিঘ্ন অথবা কারো কোন দু:খ কষ্টের
কারণ না হয়ে দাড়ান।
৫. মাতা পিতার হক্ক আদায় করা এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথে
সদ্ব্যবহার করা। এগুলি খুব গুরুত্ববহ ওয়াজিব। কারণ,
এদের সন্বন্ধে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার পবিত্র কিতাবে
হুকুম করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসেও বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ বলেন-
وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
….. এবং তোমরা মাতা পিতার সাথে
সদ্ব্যবহার কর।
أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ
إِلَيَّ الْمَصِيرُ. ﴿14﴾لقمان
….. সুতরাং তুমি আমার প্রতি এবং
তোমার মাতা পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي
تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ. النساء
…… এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের
কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে।
সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ সম্বন্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
الشِّرْكُ باللهِ وَعُقُوْقُ
الْوَالدَيْنِ
আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং মাতা পিতার অবাধ্য হওয়া।
(বুখারী ও মুসলিম)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন-
لا يَدْخُلُ الْجنَّةَ قَاطِعُ رَحْمٍ
আত্মীয়তা চ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
মাতা পিতার সাথে ভাল ব্যবহারের মধ্যে আছে, ভাল কাজে তাদের কথা মান্য করা, তাদেরকে কোন কষ্ট না দেয়া, তাদের প্রতি উত্তম ব্যবহার
করা।
আত্মীয়তার সম্পর্কের মধ্যে আছে, তাদের খোজ খবর নেয়া, তাদের বাড়ীতে যাওয়া, তাদের সাহায্য করা, তাদের আনন্দ উৎসবে যোগদান করা, আর দু:খ কষ্টে সমবেদনা জানান, কথা ও কাজে তাদের কোন রকম কষ্ট
না দেয়া।
৬. আপনি নিজের লজ্জা সম্ভ্রমের হিফাযত করবেন, কণ্ঠস্বরকে সংযত করবেন, চোখের দৃস্টি হিফাযত করবেন।
বিশেষ প্রয়োজন দেখা না দিলে
ঘর হতে বের হবেন না। দরজা,
বারান্দা কিংবা জানালার সম্মুখে দাড়াবেন না। ব্যালকনি
কিংবা ছাদে ঘুরাফিরা না করা। আপনার যে সকল গায়েব মাহরিম আত্মীয় রয়েছে, তাদেরকে আপনার সাথে দেখা
সাক্ষাতের কিংবা পর্দা লংঘনের জন্য অনুমতি দেবেন না। তাদের সাথে একাকী অবস্থান
করবেন না। তাদের সাথে হাতে হাত মিলাবেন না। কারণ,
তারা গায়েরে মাহরিম আত্মীয় স্বজন। আর আপনার বাড়ীতে যদি
কোন মেহমান থাকে, সে যেন আপনার কণ্ঠস্বর শুনতে না পায়।
মহিলাদের মধ্যে যারা দাইউস – লজ্জাহীনা তাদের কণ্ঠস্বরই মেহমানরা শুনতে পায় যদিও সে তার নিজের কক্ষে কথা বলে
অর্থাৎ লজ্জাহীন নারীরাই জোরে কথা বলে।
৭. প্রতিবেশিনী
মেয়েদের খোজ খবর নেয়া এবং তাদের প্রতি দরদ ও সহানুভূতি
দেখান। তাদেরকে কোন রকম কষ্ট না দেয়া।
যদি তাদের প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের সাহায্য সহায়তা করা। তাদেরকে হাদীয়া দেয়া, যদিও তা হাড্ডিযুক্ত এক টুকরা
গোস্ত হয়।
কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
কোন মহিলা যেন তার প্রতিবেশিনীকে কুদৃষ্টিতে না দেখে, আর প্রয়োজনে এক টুকরা
হাড্ডিযুক্ত গোস্ত দিয়ে হলেও তাকে যেন সাহায্য করে। (বুখারী, মুসলিম)
প্রতিবেশীদের প্রতি কতিপয় হক- আধিকার আল্লাহ ওয়াজিব করে
দিয়েছেন।
وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ
الْجُنُبِ.سورة النساء 36
এবং তোমরা সদ্ব্যবহার কর নিকট আত্মীয় প্রতিবেশী, এবং অনাত্মীয় প্রতিবেশীর
সাথে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে বলেছেন:
مَازَالَ جِبْريِلُ يُوْصِيْنِيْ
بِالْجَارِ حَتى ظَنَنْتُ أنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ
আমাকে জিব্রীল আ: প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে এতো বেশী
উপদেশ দিতেন যে, মতে হতো তিনি যেন তাদেরকেই ওয়ারিশ বানাবেন। (বুখারী, মুসলিম)
হে মুমিনা! আলোচিত বিষয়টি আপনার জন্য
মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। কাজেই এগুলো পালনে আল্লাহর সাহায্য
প্রার্থনা করুন এবং পালন করার জন্য সচেষ্ট হউন।
হে মুমিনা! জেনে রাখুন, আপনি ও আপনার ন্যায় মুমিনা নারীদের শরীয়ত সম্মত পালনীয়
কিছু আদব কায়দা রয়েছে। আপনার উপর দায়িত্ব হলো উহা মান্য করা। সারা জীবন ব্যাপী তার উপর
নিজেকে চালাতে চেষ্টা করা। এ আদব কায়দাগুলোর মধ্যে কয়েকটি আপনাদেরকে স্বরণ
করিয়ে দিচ্ছি। যা পালন আপনার জন্য উত্তম অলঙ্কার সদৃশ হবে।
১. আপনি যে কোন কাজ করবেন শুরুতেই বিসমিল্লাহ বলবেন। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
মুমিনদের জন্য জগতের সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। যখন তিনি কোন কাজ
করতেন সর্বাবস্থাতেই আল্লাহর নাম পাঠ করতেন। কাজেই আল্লাহ তাআলার নাম স্মরণ করুন
খাবার সময়, পান করার সময়, পোশাক পরিধান করার সময়, পবিত্রতা হাসিলের সময়, অজু করার সময় অর্থাৎ সর্বাবস্থাতেই বিসমিল্লাহ বলুন।
২. সর্বদা আপনার পোশাক পরিচ্ছদকে পরিস্কার রাখুন। আপনার শরীর, বাসস্থান, বিছানা, সমস্ত কিছুই পরিস্কার রাখতে
চেষ্টা করুন। কারণ, পবিত্রতা ঈমানের অংশ। (মুসলিম) আবর্জনা ও দুর্গন্ধযুক্ত
জিনিস পবিত্রতার প্রতিকূল। আপনার বাচ্চাদের পোশাক পরিচ্ছদ, তাদের শরীর, মুখ মন্ডল, দাত ইত্যাদি পাক পরিস্কার
রাখতে চেষ্টা করুন। কারণ, আপনার উপরই রয়েছে তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব। আর তারা
ভালভাবে গড়ে উঠবে আপনার মাধ্যমেই। তাদের জীবন হবে কল্যাণময় দু জাহানে।
৩. জামা কিংবা কামিজকে এতটা লম্বা রাখুন যেন উহা আপনার পায়ের
পাতাদ্বয়কে ঢেকে রাখে এবং মাথাকে এমনভাবে কাপড় দিয়ে আবৃত করুন যেন বাহির থেকে
চুল দেখা না যায়। আপনার নিজের বাড়ীতে পরিবারের লোকজনের মধ্যে মাত, পিতা, ভাই বোন ও সন্তানদের সম্মুখে
এভাবেই চলাফেরা করবেন। মনে রাখবেন আপনার দেহ হতে যেন সুগন্ধি বের না হয়। আর
অতিরিক্ত সাজগোছ করে বের হবেন না।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
أيُّمَا إمْرَأةٍ أَصَابَتْ بُخُوْراً
فَلَا تَشْهَدَ مَعَنَا الْعِشَاءَ الأخِرَةَ
অর্থ: যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করেছে সে যেন এশার সালাতে
অংশ গ্রহণ না করে। (মুসলিম)
৪. অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবেন না। কারণ ঘর হতে বেশী বেশী বের
হওয়া কখনো প্রশংসনীয় নয় বরং ধিকৃত। এভাবে বের হওয়ার ফলে আস্তে আস্তে লাজ-শরম ও নম্রতা দূর হয়ে
যায়। আর লজ্জা হলো ঈমানের অংশ। যখন লজ্জা চলে যাবে,
তখন ধীরে ধীরে ঈমানও চলে যাবে।
৫. প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে যাওয়া। যেমন আত্বীয় স্বজনদের বাড়ীতে
যাওয়া, উত্তম কাজ তথা ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদিতে যোগদান করা, সালাতের জন্য মসজিদে গমন করা।
তখন আপনি আপনার শরীরকে মাথা হতে পায়ের পাতা পর্যন্ত উত্তমরূপে ঢেকে বের হবেন। আপনার কোন অলংকার যেন বাহির হতে দেখা না যায়।
এমন কি বোরখার নীচের পোশাকও নয়। কারণ উহা মুমিনা মহিলাদের পর্দার খেলাফ। এবং
শরীয়তের ও খেলাফ যা হলো সমস্ত কল্যাণের মূল।
৬. দরজার সামনে এমনভাবে দাড়াবেন না যেন বাইরের লোক আপনাকে
দেখতে পায়, এমনকি ছাদে কিংবা বারান্দায় দাড়াবেন না। কারণ এর ফলে নানা
রকম অসুবিধার সৃষ্টি হয়, শান্তির বিঘ্ন ঘটে এবং বিপদেরও সম্মুখীন হতে হয়। কাজেই
আপনার রবকে খুশী করার জন্য আনন্দ চিত্তে ঘরে থাকতে অভ্যস্ত হউন। তিনি আপনাকে যা
দিচ্ছেন তাতেই যন্তুষ্ট থাকুন।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে যে সমস্ত আদেশ উল্লেখ করেছেন তা
পরিপূর্ণভাবে মেনে চলুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ হলেন, মুমিনদের মা এবং জগতের সবচেয়ে
উত্তম নারী। তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বলেন:
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا
تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآَتِينَ
الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
আর তোমরা নিজগৃহে অবস্থান করো, প্রাচীন জাহিলী যুগের মত
নিজদেরকে প্রদর্শন করো না। এবং তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তার
রাসূলের আনুগত্য থাক। (সূরা আহযাব, ৩৩)
৭. যদি কোন কারণে রাহিরে যেতে হয় তা হলে রাস্তার একপাশ দিয়ে
চলুন। আর চলার পথে রাস্তা ঘাটে বাজারে জনসম্মুখে খাবেন না। যাত্রা কালে প্রয়োজন
ছাড়া কথা বলবেন না। কারণ উহা আপনার সম্ভ্রমকে নীচু করে। আপনার দ্বীনের জন্য ও
ক্ষতিকর। পথে ঘাটে দেখবেন অনেক নারী খাবার খাচ্ছে,
গল্প করছে, আড্ডা দিচ্ছে তাদের দেখে ধোকায় পড়বেন না। কারণ তারা
অমুসলিম নারীদেরকে তাদের আদর্শ বানিয়েছে।
আপনি সর্বদা নিজের মুসলিম পরিচয়কে বুকে ধারণ করুন। এতে
আপনি সকল ফিৎনা হতে রাক্ষা পাবেন।
সমাপ্ত
লেখক : কামাল উদ্দিন মোল্লা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন