বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫

জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত “বিয়ের” সুন্নাতি পদ্ধতি জেনে নিন-

১. মাসনূন বিবাহ সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি, গান-বাদ্য, ভিডিও-অডিও মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবে না। (তাবরানী আউসাত, হাঃ নং ৩৬১২)
২. সত ও আল্লাহভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিবাহের পয়গাম পাঠানো। কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা সুন্নাতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪ : ২০০/ বুখারী হাঃ নং ৫০৯০)
৩. বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বণ্টন করা। (বুখারী-৫১৪৭)
৪. বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দু‘আ পড়া :
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ،
(আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি)
“হে আল্লাহ, আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।”(সহীহ ইবন মাজাহ, ১/৩২৪।)
৫. স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তারপর যখনই সহবাস-এর ইচ্ছা হয়, তখন এই দু‘আ পড়ে নেবে
بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا».
(বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্-শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা রযাকতানা)।
“আল্লাহ্‌র নামে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে আপনি যে সন্তান দান করবেন তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখুন। (মুসলিম, হাঃ নং ১৪৩৪)
বি.দ্র. উপরোক্ত দু‘আ না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। সুতরাং এটা পড়া জরুরী।
৬. বাসর রাতের পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং গরীব-মিসকীনদের তাওফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা।(মুসলিম-১৪২৭)
বি.দ্র.= (ক) কোন পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং যৌতুক চাওয়া হারাম। (আহসানুর ফাতাওয়া, ৫ : ১৩)
(খ) কনের ইযন-এর জন্য সাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই। সুতরাং ছেলের পক্ষের লোক ইযন শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ। মেয়ের কোন মাহরাম বিবাহের ওকীল হওয়ার অনুমতি নিবে। (মুসলিম-১৪২১)
(গ) শর্ত আরোপ করে বরযাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা এক জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক।
(ঘ) ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত করা হয়, দীনদার ও গরীব-মিসকীনদের দাওয়াত করা হয় না, সেটা নিকৃষ্টতম ওলীমা।(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭৫৪)
(ঙ) ওলীমার মজলিসে হাদিয়া লেন-দেন ঠিক নয়। কেউ হাদিয়া দিতে চাইলে নিজের সুযোগ মত পাঠিয়ে দিবে, প্রচার করবে না। গোপনে দিবে, এটাই হাদিয়ার সুন্নাত।
রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাতের অনুসরণ করুণ, রাসুল (সাঃ) এর অনুসরণেই দুনিয়া এবং আখিওরাতে কামিয়াবি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন