রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

২০১৩ সালের ৯ ফেব্রয়ারী,সকাল ৮ টা!ভারতের তিহার কারাগারের ফাঁসির মঞ্চে পৌঁছে গেছেন আফজাল গুরু!


ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে,আফজাল গুরু জল্লাদকে উদ্দেশ্য করে বলেন,“প্রচন্ড ব্যথা পেতে পারি এমন কিছু নিশ্চয়ই তুমি করবে না।জল্লাদ চোখের পানি সামলে নিয়ে বলেন,না এমন কোন কাজ-ই করা হবে না।তখন আফজাল গুরু জল্লাদকে উদ্দেশ্য করে বলেন,‘আলবিদা’জল্লাদও আফজাল গুরুকে ‘আলবিদা’ বলে জীবনের শেষ বারের মত বিদায় জানান”।
মূলত আফজাল গুরু ভারতে দূর্নীতি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলে ছিলেন।২০০১ সালে ভারতের সংসদে একটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।আর সেই হামলার ঘটনায় আফজাল গুরুকে প্রধান আসামী করা হয়!
তিহার কারাগারের এক কর্মকর্তা(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান,আফজাল গুরু সব সময় উৎফুল্ল ও শান্ত স্বভাবের ছিলেন।তিহার কারাগারের প্রতিটা কারারক্ষীর নাম,আফজাল গুরুর মুখস্ত ছিল!তিনি ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে যাবার সময়,প্রতিটা কারারক্ষীর নাম ডেকে ডেকে কুশল জিজ্ঞেস করেন এবং আলবিদা জানান।সেই কর্মকর্তা জানান,সেই দিন অধিকাংশ কারারক্ষীরাই নিজেদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি!
তিহার কারাগারের সেই কর্মকর্তা জানান,আফজাল গুরুর ফাঁসিসহ এই কারাগারে সর্বমোট ২৫টি ফাঁসি কার্যকর করা হয়।তার মধ্যে ১০ টি ফাঁসিতে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল।“ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনলেই মানুষ ভয়ে কাঁপতে শুরু করে।কিন্তু হাসি মুখে ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার যে রূপকথা প্রচলিত রয়েছে,আফজাল গুরুর বেলায় ঠিক তাই-ই ঘটেছে”।
তিহার জেলের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কোনো দুষ্ট শক্তির বিনাশ ঘটলে সবাই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেন কিন্তু কোনো নিষ্পাপ ও ভাল হৃদয়ের মানুষ চলে গেলেই নেমে আসে বিষাদ।
আফজাল গুরুকে তিহার কারাগারের অভ্যন্তরে,কাশ্মীর মুজাহিদীন বাহিনীর নেতা শহীদ মকবুল বাটের পাশে কবর দেয়া হয়।
ফাঁসির আগে,আফজাল গুরু গোটা মুসলিম উম্মাহ এবং তাঁর পরিবারের উদ্দেশ্য ছোট্ট একটি চিঠি লিখে গিয়েছেন।
তিনি লিখেছিলেন,“আমাকে এই অবস্থানে উঠানোর জন্য আল্লাহপাককে শতকোটি কৃতজ্ঞতা জানাই।সকল বিশ্বাসীকেও আমার অভিনন্দন জানাই।কারন,আমরা সবাই একসঙ্গে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং আমাদের শেষটাও হতে হবে সত্য ও ন্যায়ের পথে।আমার পরিবারের প্রতি অনুরোধ,আমার মৃত্যুতে শোকার্ত না হয়ে,তাদের উচিত হবে আমি যে অবস্থান তৈরী অর্জন করেছি,তাকে শ্রদ্ধা করা।আল্লাহপাক তোমাদের সবচেয়ে বড় রক্ষাকর্তা ও সাহায্যদাতা।আল্লাহ হাফেজ”।(আফজাল গুরু)
প্রিয় ভাই,আফজাল গুরুকে আল্লাহপাক শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন