জাপানে
ইসলামের ইতিহাস খুব বেশী পুরনো নয়। ইসলামি ইতিহাসের প্রথম ও মধ্যযুগে এখানে কোন
মুসলমানের আগমন কিংবা কোন দাওয়াতী তৎপরতার কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। যতটুকু
জানা যায় সম্ভবতঃ উসমানী খেলাফতের সময় সুলতান আব্দুল হামিদ [Abdul Hamid II
(reigned 1876-1909) ] সর্বপ্রথম ১৮৯০ খৃস্টাব্দে
নৌপথে তাঁর জাহাজ ‘আর্তগর্ল'(Al Togrul )-এ এক সৌজন্যমূলক মিশন জাপানে পাঠিয়েছিলেন। বাহ্যত তার উদ্দেশ্য ছিল, এ অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াতের সম্ভাবনা সম্পর্কে সমীক্ষা
চালানো। প্রতিনিধি দলটি জাপানে খুব ভাল প্রভাব সৃষ্টি করে। মূলতঃ,তারা এ অঞ্চলে ইসলাম কবুলের বীজ বপন করে যান।
কিন্তু এটি একটি ট্রাজেডী যে, এ প্রতিনিধি দল যখন তুরস্কে ফিরে যাচ্ছিলেন,তখন জাপানেরই সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড়ের আঘাতে জাহাজটি ডুবে যায়। ছয়শ’ নয় জন
যাত্রীর মধ্যে মাত্র ৬৯ জন জীবিত ছিলেন। অবশিষ্ট সবাই শহীদ হন এদের মধ্যে সুলতানের
ভাইও ছিলো। দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল রাতের আঁধারে। নিকটবর্তী দ্বীপের জাপানী অধিবাসীরা
দুর্ঘটনা কবলিত লোকদের অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সাহায্য করেন। জাপানের বাদশাহ মেইজি
আহতদের চিকিৎসা ও জীবিতদের তুরস্কে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। শহীদেরকে
দুর্ঘটনাস্থলের নিকটেই দাফন করা হয় এবং সেখানে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে
সময় থেকে প্রতিবছর এ দুর্ঘটনার স্মৃতি হিসেবে একটি অনুষ্ঠান করা হয়।
সৌজন্যমূলক মিশনের অধিকাংশ সদস্য যদিও শহীদ হন, কিন্তু তাঁদের কোরবানী কার্যকর ভূমিকা পালন করে। জাপানের
লোকদের উপর এ দুর্ঘটনার গভীর প্রভাব পড়ে। চব্বিশ বছর বয়সী এক তরুণ যুবক তুরজিরু
ইয়ামাডা(Torajiro Yamada )-যিনি একজন উচ্চ
শিক্ষিত সাংবাদিক ছিলেন- এ দুর্ঘটনায় এত বেশী প্রভাবিত হন যে, তিনি দুর্ঘটনা কবলিত শহীদদের পরিবারের লোকদের জন্য সারাদেশে
চাঁদা সংগ্রহের অভিযান চালান। ৫৪০ জন শহীদের পরিবারের জন্য বিরাট একটি অংক সংগ্রহ
করে তিনি জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দরখাস্ত করে এ অর্থ তুরস্ক পাঠানোর
ব্যবস্থা করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁর আবেগের মূল্যায়ন করে তাঁকেই সে অর্থ
সহকারে তুরস্কে পাঠিয়ে দেয়। তুরাজিরু ইস্তাম্বুল পৌঁছে তুরস্কের পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিশাল ও জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে এ অর্থ
তুরস্কের নৌ মন্ত্রণালয়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়,যাতে করে মন্ত্রণালয় এ অর্থ দুর্ঘটনাকবলিত লোকদের মধ্যে বণ্টন করতে পারে।
এ সময় সুলতান আদুল হামিদ স্বয়ং তুরাজিরুকে ডেকে নিয়ে দু’ বছর তুরস্কে অবস্থান করে এখানের সেনা অফিসারদের জাপানী ভাষা শিখানোর প্রস্তাব দেন। তুরাজিরু তাঁর এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন। তুর্কি অফিসারদের জাপানী ভাষা শিখানোর পাশাপাশি তিনি নিজেও তুর্কী ভাষা শিখেন । ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন শুরু করেন। কিছুদিন পরে তিনি মুসলমান হয়ে নিজের নামের সাথে ‘সিঙ্গিতুস'(shingtsu) শব্দ যোগ করেন। জাপানী ভাষায় এর অর্থ ‘চাঁদ’। অন্য কিছু সূত্রে জানা যায় যে, তিনি তাঁর ইসলামী নাম রেখেছিলেন ‘আব্দুল খলীল’। তুরস্কে অবস্থানকালে তিনি যখন বাড়ীর লোকদের কাছে পত্র লিখতেন,তখন তার ইসলামী নামও সাথে লিখে দিতেন। যদিও জাপানে ইসলামের অনুপ্রবেশের ইতিহাসের উপর অনেক রিসার্চ করা বাকী রয়েছে,তবে এখন পর্যন্ত জানা তথ্যানুসারে তুরাজিরু ছিলেন জাপান ভূখণ্ডের প্রথম ব্যক্তি, যিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন। তিনি ৯১ বছর বয়স হায়াত পান। ১৯৫৭ খৃস্টাব্দে তাঁর ইন্তেকাল হয়।
তবে অপর এক সূত্র থেকে জানা যায় জাপানী প্রথম মুসলিম ছিলেন অসোতারো নোডা(Shotaro Noda) নামের একজন সাংবাদিক।তিনি ৬৯ জন বেঁচে যাওয়া যাত্রীর সাথে তুরস্কে গিয়েছিলেন এবং সুলতানের অনুরোধে সেখানে থাকেন।সেখানে অবস্থান কালে একজন ব্রিটিস মুসলিমের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়।তাদের দুজনের মাঝে এক দীর্ঘ আলোচনা হওয়ার পর অসোতারো মুসলিম হয়ে যান এবং তার নাম রাখেন আব্দুল হালিম(Abdul Haleem Noda) । তবে k.Olgun এর মতে তুরজিরু এবং অসোতারো একসাথে গিয়েছিলেন এবং মুসলমান হয়েছিলেন।
বলা হয় যে, এই ঘটনার পর অপর আরেক জাপানী ব্যক্তি ইয়ামাওকা ১৯০৯ খৃস্টাব্দে ইসলাম কবুল করে নিজের নাম রাখেন ‘ওমর ইয়ামাওকা’। তিনি হজ্জ করার সৌভাগ্যও লাভ করেছিলেন।
এ সময় সুলতান আদুল হামিদ স্বয়ং তুরাজিরুকে ডেকে নিয়ে দু’ বছর তুরস্কে অবস্থান করে এখানের সেনা অফিসারদের জাপানী ভাষা শিখানোর প্রস্তাব দেন। তুরাজিরু তাঁর এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন। তুর্কি অফিসারদের জাপানী ভাষা শিখানোর পাশাপাশি তিনি নিজেও তুর্কী ভাষা শিখেন । ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন শুরু করেন। কিছুদিন পরে তিনি মুসলমান হয়ে নিজের নামের সাথে ‘সিঙ্গিতুস'(shingtsu) শব্দ যোগ করেন। জাপানী ভাষায় এর অর্থ ‘চাঁদ’। অন্য কিছু সূত্রে জানা যায় যে, তিনি তাঁর ইসলামী নাম রেখেছিলেন ‘আব্দুল খলীল’। তুরস্কে অবস্থানকালে তিনি যখন বাড়ীর লোকদের কাছে পত্র লিখতেন,তখন তার ইসলামী নামও সাথে লিখে দিতেন। যদিও জাপানে ইসলামের অনুপ্রবেশের ইতিহাসের উপর অনেক রিসার্চ করা বাকী রয়েছে,তবে এখন পর্যন্ত জানা তথ্যানুসারে তুরাজিরু ছিলেন জাপান ভূখণ্ডের প্রথম ব্যক্তি, যিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন। তিনি ৯১ বছর বয়স হায়াত পান। ১৯৫৭ খৃস্টাব্দে তাঁর ইন্তেকাল হয়।
তবে অপর এক সূত্র থেকে জানা যায় জাপানী প্রথম মুসলিম ছিলেন অসোতারো নোডা(Shotaro Noda) নামের একজন সাংবাদিক।তিনি ৬৯ জন বেঁচে যাওয়া যাত্রীর সাথে তুরস্কে গিয়েছিলেন এবং সুলতানের অনুরোধে সেখানে থাকেন।সেখানে অবস্থান কালে একজন ব্রিটিস মুসলিমের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়।তাদের দুজনের মাঝে এক দীর্ঘ আলোচনা হওয়ার পর অসোতারো মুসলিম হয়ে যান এবং তার নাম রাখেন আব্দুল হালিম(Abdul Haleem Noda) । তবে k.Olgun এর মতে তুরজিরু এবং অসোতারো একসাথে গিয়েছিলেন এবং মুসলমান হয়েছিলেন।
বলা হয় যে, এই ঘটনার পর অপর আরেক জাপানী ব্যক্তি ইয়ামাওকা ১৯০৯ খৃস্টাব্দে ইসলাম কবুল করে নিজের নাম রাখেন ‘ওমর ইয়ামাওকা’। তিনি হজ্জ করার সৌভাগ্যও লাভ করেছিলেন।
প্রায় এসময়েই অপর এক জাপানী ব্যক্তি নাম বামপাচিরু আরিগা(Bunpachiro
Ariga) বোম্বে সফর করেন। স্থানীয় মুসলমানদের তাবলীগে
প্রভাবিত হয়ে তিনিও ইসলাম কবুল করেন। নিজের নাম রাখেন ‘আহমাদ আরিগা'(Ahmad Ariga)। তাঁরা দু’জন জাপান
ফিরে এসে ইসলামের তাবলীগ আরম্ভ করেন। তারপর আরো অনেক জাপানী লোক মুসলমান হন।
অপর দিকে তুর্কিস্তানে বলসেভিক বিপ্লবের সময় রাশিয়ানদের
নির্যাতনে অসহ্য হয়ে উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান ও কিরগিজীস্তান থেকে বহু সংখ্যক
মুসলমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোক জাপানেও
পৌঁছে। তাদের এখানে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করে। তাদের জাপানে বসবাস গ্রহণ করায়
মুসলমানদের সম্মিলিত তৎপরতা শুরু হয়। তাদের প্রচেষ্টার ফলেও বহু জাপানী অধিবাসী
ইসলাম গ্রহণ করে। সাথে সাথে ভারত,চীন ও দক্ষিণ
এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকেও অনেক মুসলমান জাপানে এসে বসবাস শুরু করেন। তাদের
প্রচেষ্টায় প্রথমবার ১৯৩৫ খৃস্টাব্দে কোবেতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর
১৯৩৮ খৃস্টাব্দে টোকিওতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
Kobe Mosque in Kobe, Japan
A mosque was
built in Tokyo in May 1938 through
the active efforts of the Kurban Ali, with support mainly
from Japanese political and business circles, as well as
government leaders all of whom were non-Muslims..
the active efforts of the Kurban Ali, with support mainly
from Japanese political and business circles, as well as
government leaders all of whom were non-Muslims..
সেই মসজিদ প্রতিষ্ঠায় জাপানের প্রভাবশালী কিছু অমুসলিম ব্যক্তিও আর্থিক
সহযোগিতা করেন। তারপর ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দেই জাপানের অপর একটি শহর নাগোয়াতে একটি মসজিদ
নির্মিত হয়। ১৯৭৭ খৃস্টাব্দে ওসাকাতেও একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
Tokyo Jama Masjid
Tokyo Jama Masjid
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানকে অনেক মুসলিম দেশের
সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। যুদ্ধ শেষে শিল্পের উন্নতির জন্য তেল উৎপাদনকারী
মুসলিম দেশের সাথে তার সম্পর্ক আরো স্বাভাবিক হয়। এর ফলে জাপানে মুসলমানদের
যাতায়াত বৃদ্ধি পায়। জাপানী অধিবাসীরাও মুসলিম দেশসমূহে আসে। এমনি করে দু’
তরফাভাবে জাপানে ইসলামের প্রসার দ্রুত হয়। এ সময় জাপানী মুসলমানগণ কিছু সংগঠনও
প্রতিষ্ঠা করেন। জাপানী ভাষায় পবিত্র কুরআনের কয়েকটি অনুবাদ প্রকাশ করা হয়।
ইসলামী তথ্য সমন্বিত কিতাব প্রকাশ করা হয়।
ISLAMIC CENTER-JAPAN
১৯৬৬ খৃস্টাব্দে একটি ইন্টারন্যাশানাল ইসলামিক সেন্টার
প্রতিষ্ঠিত হয়। যা ১৯৭৪ সালে ‘ইসলামিক সেন্টার জাপানের’ সঙ্গে সংযুক্ত
হয়।সেন্টারটি একটি বোর্ড অব ডিরেক্টর এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।তার
সদস্যদের মধ্যে আরবী,পাকিস্তানি,তুর্কী ও
খোদ জাপানী মুসলমানগণ অন্তর্ভুক্ত আছে।সেন্টারটির পক্ষ থেকে অনেক বই জাপানী ভাষায়
প্রকাশ করা হয়েছে,এর মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্র কুরআনুল কারীমের
তরজমা। ‘আসসালাম’ নামে কটি ত্রৈমাসিক পত্রিকাও প্রকাশিত হয়। এর পক্ষ থেকে জাপানী
শিশুদের প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা ও হজ্জ ইচ্ছুকদের হজ্জে পাঠানোর
ব্যবস্থা করা হয়।
এই সেন্টারটি ছাড়া তাবলীগ জামাতও ১৯৫৬ খৃস্টাব্দ থেকে
জাপানে তাদের দাওয়াতী কাজ আরম্ভ করেছে,যা আল্লাহর
মেহেরবানীতে খুবই সফল হয়েছে। তাবলীগ জামাতের লোকেরা টোকিওর শহরতলী এলাকা সাইতামার
(saitama)
একটি ভবন ক্রয় করে সেখানে একটি মসজিদ
প্রতিষ্ঠা করেছে,যা এখন তাবলীগের মারকাযের কাজও করছে। তাদের
তৎপরতা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই সমস্ত তৎপরতার ফল এই হয়েছে যে,১৯৭৩ সাল পর্যন্ত জাপানে মুসলমানদের সংখ্যা ৩ হাজার বলা হতো,এখন সরকারী হিসাব মতে সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা ৫০ হাজার।
তাছাড়া যে সমস্ত মুসলমান অন্যান্য দেশ থেকে এসে এখানে অধিবাস গ্রহণ করেছেন,তাদের সংখ্যা দু’লাখে পৌঁছেছে। এর অর্থ এই যে, জাপানে সর্বমোট আড়াই লাখ মুসলমান রয়েছে।
যদিও গত কয়েক বছরে জাপানে মুসলমানদের সংখ্যা বেশ দ্রুত
বৃদ্ধি পেয়েছে,কিন্তু তাদের ধর্মীয় প্রয়োজানাদি পুরো করার
কাজ চলছে তার তুলনার বেশ মন্থরগতিতে। এখনও এখানে ধর্মীয় তৎপরতার সেই পরিবেশ
সৃষ্টি হয়নি, যা ইউরোপ ও আমেরিকার কতক দেশে আল্লাহর
মেহেরবানীতে সৃষ্টি হয়েছে।
তারপরেও জাপানের বর্তমান মুসলমান প্রজন্ম জাপানে ইসলামের
প্রচার ও প্রসারের আন্তরিক ইচ্ছা পোষণ করে। হয়তবা একসময় অন্যান্য দেশের মতো
জাপানেও ইসলাম জনপ্রিয় ও প্রভাব বিস্তারকারী ধর্মে পরিণত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন