প্রাচীন রোমানদের ধর্ম ছিল প্যাগান ধর্ম এবং তারা বিভিন্ন দেবতাদের পুজা করতো। লুপারকাস ছিল তাদের বন্য পশু দেবতা। এই দেবতার প্রতি ভালবাসা জানিয়ে তারা ‘লুপারক্যালিয়া’ (Lupercalia) নামক পুজা উৎসব করতো।
এই ‘লুপারক্যালিয়া’ উৎসব আগে ফেব্রুয়া (Februa) নামে পরিচিত ছিল, যেখান থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের উৎপত্তি। রোমানরা এই ‘লুপারক্যালিয়া’ পুজার উৎসব ১৩, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারিতে পালন করতো যার মূল দিন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারী।
এই পুজার প্রধান আকর্ষণ ছিল লটারি। বিনোদন ও আনন্দের জন্য যুবকদের মাঝে যুবতীদের বণ্টন করে দেয়াই ছিল এ লটারির লক্ষ্য। পরবর্তী বছর আবার লটারি না হওয়া পর্যন্ত যুবকেরা তাদের জন্য বরাদ্দ মেয়েদের ভোগ করার এ সুযোগ পেত।
এই ‘লুপারক্যালিয়া’র দিনে আরেকটি প্রথা ছিল। উৎসর্গিত ছাগল ও কুকুরের রক্ত গায়ে মেখে চামড়ার পোশাক পরে দুই যুবক ঐ চামড়ারই চাবুক দিয়ে যুবতীদের আঘাত করতো। বিশ্বাস করা হতো এতে যুবতীদের গর্ভধারণ ক্ষমতা বাড়বে।
রোমান শাসকেরা একসময় তাদের প্যাগান ধর্ম পরিবর্তন করে খ্রিষ্টানধর্ম গ্রহন করে। কিন্তু তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য জনগনের প্যাগান সংস্কৃতি ঠিক রেখে তা খ্রিস্টধর্মের ব্যানারে নিয়ে যায়। যেমন Sunday তে রোমান প্যাগানরা তাদের Sun God এর পুজা করতো। খ্রিষ্টান হওয়ার পর তারা Sunday কেই তাদের খ্রিষ্টান ধর্মের উপসনার দিন বানিয়ে নেয়।
যাই হোক, জনগনের মাঝ থেকে প্যাগান ধর্মের চিহ্ন মুছে ফেলতে গেলাসিয়াস নামের খ্রিষ্টান পোপ এবার রোমান গড লুপারকাস এর বদলে খ্রিষ্টান পাদ্রী সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন এর নামে ১৪ ফেব্রুয়ারীকে ভ্যালেন্টাইন ডে ঘোষণা করে। তখন প্যাগানদের লুপারক্যালিয়াই রূপান্তর হয় খ্রিস্টানদের ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ তে ।
তবে লটারি পদ্ধতি সেসময়েও চালু ছিল। মধ্যযুগে এসে লটারি নিয়ে ঝামেলা ও গণ্ডগোল তৈরি হওয়ায় ফরাসি সরকার ভ্যালেন্টাইন দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ করে দেয়। পরে ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতেও এটা নিষিদ্ধ হয়। এমনকি ইংল্যান্ডেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় চার্লস আবার এটি পালনের প্রথা চালু করেন। পরবর্তীতে ব্যবসায়িক স্বার্থে বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কারণ একেকটি দিবস মানেই মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিদের বড় রকমের ব্যবসা।
'৯৩ সালের আগে এদেশের লোক বুঝতই না ভ্যালেন্টাইন ডে কি জিনিস... ১৯৯৩ সালে লন্ডন ফেরত সাংবাদিক শফিক রেহমান বাংলাদেশে প্রথম ভ্যালেন্টাইন ডে আমদানি করেন... মূলত ব্যবসায়িক স্বার্থেই... নতুন কিছুর মাধ্যমে তার "যায়যায়দিন" পত্রিকার প্রচার বৃদ্ধি করার জন্য... এরপর সারা দেশে ছড়িয়ে যায়।
মুলত এই ভালবাসা দিবস হল একটি পুজার দিন যেদিন যুবকদের মাঝে লটারি করে ভোগের জন্য যুবতীদের দেওয়া হত। আর আমরা এমন এক জাতি, পশ্চিমারা আমাদের যা খাওয়া শেখায়, আমরা তাই খাই...
সকল ইসলামিক স্কলার একমত এই দিনটা মুসলমানদের জন্য পালন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ... ফুল, গিফট, উইশ করা তো দূরে থাক। কারণ ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা মানেই প্যাগানদের পূজায় অংশগ্রহন করা, সেটা যেভাবেই হোক না কেন। এমনকি খ্রিষ্টান ধর্মমতেও এটা পালন করা নিষেধ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন