প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম
আমার একটা বিষই জানার আছে, বিষয়টিই হল, ধরুন আমি নির্দিষ্ট একজন ইমামকে অনুসরন করি, যেমন ইমাম মালেকের সমস্ত নিয়ম কানুন এবং ফতোয়াগুলো অনুসরন করে চলি। কিন্তু ইমাম মালেকের কোনো এক ফতোয়া বিচার বিশ্লেষণ করে কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদিস অনুসারে দেখা গেল যে ইমাম শাফেই এর ফতোয়া থেকে কম বিশুদ্ধ। আবার ইমাম শাফেই এর কোনো এক ফতোয়া বিশুদ্ধ হাদিসের বিরুদ্ধে যাই অথবা ইমাম আবু হানিফা এর ফতোয়া থেকে কম বিশুদ্ধ, র্কুআন এবং সুন্নাহর আলোকে। আবার দেখা যায় কোনো এক ইমামের বর্ণিত হাদিস দুর্বল আবার অন্য ইমামের বর্ণিত হাদিস বিশুদ্ধ। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ইমামের মধ্যে কম বেশি ভুল ত্রুটি আছে। আল্লাহ মাফ করুন। আমরা কেও ভুলের উর্ধে নই। সেক্ষেত্রে আমি কি নির্দিষ্ট করে একজন ইমামকে অনুসরন করে চলব, যেখানে তার কনো ফতোয়া যদিও ভুল হয় এবং অন্য জনের ফতোয়া ঠিক হয়। নাকি সবাইকে অনুসরন করে চলব, সঠিকটা গ্রহনের ম্যাধ্যমে। আশা করি আমার বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন। সাহিহ হাদিস ও র্কুআন আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
Md.shakil parvez
kumarkhali,kushtia
kumarkhali,kushtia
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার এ প্রশ্নটি মূলত ডাক্তার জাকির নায়েকের উর্বর মস্তিস্ক প্রসূত একটি তথ্য। তাই নয় কি? এখানে যে যুক্তি তুলে ধরা হল যে, চার ইমামের মত থেকে যার মতটিকে বিচার-বিশ্লেষণ করে অধিক দলীলযোগ্য বলে মনে হবে, তার মতকে গ্রহণ করা হবে, আর অন্য মতকে ছেড়ে দেয়া হবে।
এখন প্রশ্ন হল দু’টি। যথা-
১-বিচার বিশ্লেষণটা করবে কে?
২-কোন মূলনীতির আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করা হবে?
বিচার বিশ্লেষণ কে করবে?
এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। কে বিচার বিশ্লেষণ করবে? যে ব্যক্তি কুরআন ও হাদীসকে অনুবাদ ছাড়া মূল কিতাব থেকে বুঝতে সক্ষম নয়। জানেনা আরবী শুদ্ধ করে পড়তেও। কোন হাদীসই সনদসহ মুখস্ত নেই। সনদের প্রতিটি রাবীর জীবনী মুখস্ত নয়। রাবীদের বিরুদ্ধে বা পক্ষে বলা মুহাদ্দিসীনদের বক্তব্য মুখস্ত নেই। মুহাদ্দিসীনগণ কোন কারণে রাবীকে দুর্বল বা সহীহ বলেছেন তা জানা নেই। আরবী ব্যকরণ শাস্ত্র সম্পর্কে নেই পর্যাপ্ত জ্ঞান। কুরআনের অলংকারশাস্ত্র সম্পর্কে নেই কোন জ্ঞান। পূর্ণ কুরআনের নাসেখ-মানসূখ, হাদীসের নাসেখ মানসূখ, সকল আয়াতের শানে নুজুল, হাদীসের শানে ওরূদ সম্পর্কে নেই কোন ইলম।
এরকম অজ্ঞ ব্যক্তি কি করে বুঝবে যে, কোন ইমামের বক্তব্যটি সঠিক আর কোন ইমামের বক্তব্যটি বেঠিক?
এমন অজ্ঞ ব্যক্তি যদি শুধু অনুবাদ পড়ে, কিংবা রাসূল সাঃ এর বলা খাইরুল কুরুন তথা শ্রেষ্ঠ যুগের পরের কোন উম্মতীর ব্যাখ্যার আলোকে নিজের মনমত যেটাকে ইচ্ছে গ্রহণ-বর্জন করার অধিকার থাকা কতটা ইসলাম মানা হবে? একবার ভেবে দেখবেন কি?
কোন মূলনীতির আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে?
মুহাদ্দিসীনদের বক্তব্যের আলোকে? যদি বলেন যে, হ্যাঁ, তাই। মুহাদ্দিসীনরা যে হাদীসকে সহীহ বলেছেন, আমরা কেবল সেই হাদীস অনুপাতেই আমল করবো। আর ফুক্বাহায়ে কেরামের বক্তব্যটি যদি মুহাদ্দিসীনের নির্ধারিত করা সহীহ হাদীসের খেলাফ হয়, তাহলে মুহাদ্দিসীনের কথা মানবো। ফক্বীহের কথা ছেড়ে দিব।
যদি এমনটিই করে থাকেন, তাহলে প্রশ্ন হল, আপনি মুহাদ্দিসীদের কথা মেনে একটি হাদীসকে আমলযোগ্য সাব্যস্ত করছেন, মুহাদ্দিস ফক্বীহের কথা মেনে তিনি যে হাদীসকে আমলযোগ্য বলে ঘোষণা করছেন সেটি মানছেন না কেন?
এ কেমন বিচার? যিনি শুধু মুহাদ্দিস, তার কথা মেনে হাদীস সহীহ দুর্বল নির্ণয় করছেন, কিন্তু যিনি মুহাদ্দিস হওয়ার সাথে সাথে ফক্বীহ তার কথা মেনে তার বলা হাদীসকে কেন সহীহ মানছেন না?
এ বৈষম্য কেন? মুহাদ্দিসতো আর তার হাদীস সহীহ হওয়ার দলীল কুরআন থেকে বা হাদীস থেকে দিচ্ছে না, শুধুমাত্র নিজের ইজতিহাদ দ্বারা হাদীস সহীহ-জঈফ বলছেন, ঠিক একই কাজ করেছেন মুহাদ্দিস ফুক্বাহায়ে কেরাম। তারাও হাদীস যাচাই-বাছাই করে তার নিকট আমলযোগ্য সহীহ হাদীসের উপর নিজের মাযহাবকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানে আপনি শুধু মুহাদ্দিসের কথা মেনে তার সহীহ বলা হাদীসকেই সহীহ মানবেন, অথচ মুহাদ্দিস ফক্বীহের বলা হাদীসকে জঈফ বলবেন কোন যুক্তিতে?
মুহাদ্দিস ফক্বীহ তার বর্ণিত মাসায়েলের বিপক্ষ হাদীসকে দলীলযোগ্য নয়, বা জঈফ মনে করেছেন বলেই ছেড়ে দিয়েছেন। আর যে হাদীসকে সহীহ ও আমলযোগ্য মনে হয়েছে, সে হাদীসের উপর স্বীয় মাযহাব অন্তর্ভূুক্ত করেছেন। তাহলে আপনি একজন ইমামের মাযহাবের মাসআলাকে যা তিনি কুরআন বা হাদীসের আলোকে দাঁড় করিয়েছেন। তাকে আরেক মুহাদ্দিসের বক্তব্যের আলোকে বাদ দিবেন কি করে?
এর কি কোন যৌক্তিক কারণ আছে? যে যুক্তিতে আপনি মাযহাবকে বাদ দিতে চাচ্ছেন, সে যুক্তিতেতো মুহাদ্দিসের বলা সহীহ হাদীসও পরিত্যাজ্য হয়।
উদাহরণতঃ নামাযে আমীন জোরে আস্তে বলার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিস ফক্বীহ ইমাম আবু হানীফা রহঃ ওয়াইল বিন হুজুর থেকে বর্ণিত আস্তে বলার বর্ণনাকে সহীহ ও আমলযোগ্য সাব্যস্ত করে এর উপর স্বীয় মাযহাব বানিয়েছেন। আর আমীন জোরে বলার বর্ণনাকে দুর্বল বা কোন কারণে আমলযোগ্য নয়, বলে পরিত্যাজ্য করেছেন।
অপরদিকে কতিপয় মুহাদ্দিস আমীন জোরে বলার বর্ণনাকে সহীহ সাব্যস্ত করেছেন। সেই সাথে আমীন আস্তে বলার বর্ণনাকে জঈফ সাব্যস্ত করেছেন।
এখন কথা হল, আপনি কার বক্তব্য নিবেন? আপনার প্রশ্ন অনুপাতে আপনার ধারণা হল, এক্ষেত্রে মুহাদ্দিস ফক্বীহের বলা সহীহ হাদীসকে ছেড়ে দিয়ে শুধু মুহাদ্দিসের বলা সহীহ হাদীসকে গ্রহণ করবেন? সে হিসেবে বলবেন যে, মুহাদ্দিস যেহেতু আমীন আস্তে বলার বর্ণনাকে জঈফ বলেছেন, আর জোরে বলার বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন, তাই আমি মুহাদ্দিস ফক্বীহ ইমাম আবু হানীফার মাযহাব ছেড়ে দিয়ে আমীন জোরে বলার মাযহাব গ্রহণ করলাম।
এটা করবেন কেন? কিসের ভিত্তিতে করছেন? শুধু মুহাদ্দিস যে হাদীসকে সহীহ বললো, আপনার কাছে সেটি সহীহ। আর যে হাদীসকে মুহাদ্দিস ফক্বীহ সহীহ বললেন, সেটি সহীহ নয় কেন?
যিনি হাদীসের সনদ আর ইবারত সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ আপনি তার কথাই গ্রহণীয় সাব্যস্ত করছেন, অথচ যিনি হাদীসের সনদ ও ইবারতের সাথে সাথে হাদীসের অন্তর্নিহিত অর্থ ও আগে পরের সকল ঘটনাসহ জানেন উক্ত ব্যক্তির কথাকে ছেড়ে দেয়ার ধৃষ্টতা কেন দেখাবেন?
ইমাম আবু হানীফা রহঃ থেকে বর্ণিত সকল মাসআলার ভিত্তিই সহীহ হাদীস
ইমাম আবু হানীফা রহঃ স্বীয় মাযহাবের ভিত্তি রেখেছেন সহীহ হাদীসের উপর। কোন জঈফ হাদীসের উপর তার মাযহাবের ভিত্তি রাখেন নি। তাই হানাফী মাযহাবের সকল মাসআলা যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত তা সকলই সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। কোন জঈফ হাদীস দিয়ে হাদীসে বর্ণিত মাসআলা প্রমানিত করা হয়নি। এর সবচে’বড় দলীল হল, ইমাম আবু হানীফা রহঃ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেন যে,
“যখন হাদীস সহীহ হবে, সেটিই আমার মাযহাব”।
যিনি এ ঘোষণা দিচ্ছেন যে, সহীহ হাদীস তার মাযহাব, তিনি কি করে দুর্বল হাদীসের উপর নিজের মতাদর্শের ভিত্তি রাখবেন? সুতরাং একথা আমরা নির্ধিদ্ধায় বলতে পারি যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিক সকল মাসআলাই সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
একটি প্রশ্ন ও জবাব
হানাফী মাযহাবের ভিত্তি সহীহ হাদীসের উপর হলে, বিভিন্ন মাসআলায় কেন হানাফী মাযহাবের হাদীসকে জঈফ বলে মুহাদ্দিসীনে কেরাম মন্তব্য করেছেন?
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু উত্তরটি খুবই যৌক্তিক ও সহজ। আসলে ইতোপূর্বেই এর একটি জবাব অতিক্রান্ত হয়েছে। তথা- হাদীস সহীহ জঈফ হওয়ার প্রমাণ কুরআন ও হাদীস নয়। বরং ব্যক্তির মতামত। তথা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা যে হাদীসকে সহীহ বলেছেন, আমরা সে হাদীসকে সহীহ বলি। যে হাদীসকে দুর্বল বলেন, আমরা সে হাদীসকে দুর্বল বলি। এ সহীহ বা জঈফ বলার উপর আমাদের কাছে কুরআন বা হাদীসের কোন দলীল নেই। পুরোটাই মুহাদ্দিসীনদের ইজতিহাদ তথা গবেষণা নির্ভর।
এ কারণেই এক হাদীসের ক্ষেত্রে একাধিক বক্তব্য এসেছে। এক হাদীসকে একদল মুহাদ্দিস সহীহ বলেছেন, অপরদল তাকে হাসান বলেছেন, কেউবা জঈফ বলেছেন।
যেহেতু হাদীস সহীহ বা জঈফ হওয়ার কোন দলীল কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত নয়। এসবই গবেষকদের গবেষণার সৃষ্টি। যদি কুরআন বা হাদীসে কোন হাদীসকে সহীহ বা জঈফ বলা হতো, তাহলে আমরা কিছুতেই কারো গবেষণা মেনে হাদীসকে সহীহ বা জঈফ মানতাম না। বরং সরাসরি কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত সহীহ এবং জঈফকেই মেনে নিতাম। কিন্তু যেহেতু কুরআন ও হাদীসে সহীহ বা জঈফের কথা উল্লেখ নেই, তাই আমাদের মূলনীতি হল, যিনি কুরআন ও হাদীসের শব্দের সাথ তার অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে সম্মক অবগত, সেই সাথে যিনি আল্লাহর নবীর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ফক্বীহ তার কথার আলোকে হাদীসকে সহীহ ও জঈফ নির্ণিত করবো। তথা শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ফক্বীহ যে হাদীসকে গবেষণা করে সহীহ সাব্যস্ত করে আমলযোগ্য হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন, তার হাদীসকে সহীহ ধরে আমল করবো। আর তিনি যে হাদীসকে জঈফ বা কোন কারণ সংশ্লিষ্ট সাব্যস্ত করে বাদ দিয়েছেন, আমরা উক্ত হাদীসকে আমলহীন ধরে আমল করবো না।
শ্রেষ্ঠ যুগের পরের কোন মুহাদ্দিসের গবেষণা মেনে হাদীস সহীহ বা জঈফ বলার চেয়ে শ্রেষ্ঠ যুগের মুহাদ্দিস ফক্বীহের গবেষণা মেনে হাদীসকে সহীহ বা জঈফ বলা কি অধিক নিরাপদ নয়?
আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয়
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর জন্ম ৮০ হিজরী। মৃত্যু-১৫০ হিজরী।
ইমাম মালিক রহঃ এর জন্ম-৯৩ হিজরী। মৃত্যু-১৭৯।
ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর জন্ম-১৫০ হিজরী। মৃত্যু-২০৪ হিজরী।
ইমাম আহমাদ বিন বিন হাম্বল রহঃ এর জন্ম-১৬৪, মৃত্যু-২৪১ হিজরী।
ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর জন্ম-১১৩ হিজরী এবং মৃত্যু-১৮২ হিজরী।
ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর জন্ম ১৩১ হিজরী এবং মৃত্যু-১৮৯ হিজরী।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ইমাম মুহাম্মদ রহঃ নাবালেগ থেকে বালিগ হওয়ার সাথে সাথেই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
মুহাদ্দিসীনদের জন্ম ও মৃত্যু
মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রহঃ এর জন্ম-১৯৪ হিজরী এবং মৃত্যু ২৫৬ হিজরী।
মুসলিম বিন হাজ্জাজ ইমাম মুসলিম রহঃ এর জন্ম ২০৪ হিজরী এবং মৃত্যু ২৬১ হিজরী।
মুহাম্মদ বিন ঈসা বিন সাওরা ইমাম তিরমিজী জন্ম-২১০ হিজরী এবং মৃত্যু ২৭৯ হিজরী।
মুহাম্মদ বিন ইয়াজিদ ইমাম ইবনে মাজাহ এর জন্ম-২০৯ হিজরী এবং মৃত্যু-২৭৩ হিজরী।
সুলাইমান বিন আসআস ইমাম আবু দাউদ রহঃ এর জন্ম- ২০২ হিজরী এবং মৃত্যু-২৭৫ হিজরী।
আবু আব্দুর রহমান আহমদ ইমাম নাসায়ী রহঃ এর জন্ম ২১৫ হিজরী এবং মৃত্যু ৩০৩ হিজরী।
এই হল সিহাহ সিত্তার জন্ম ও মৃত্যুর সন। লক্ষ্য করুন যে,
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মৃত্যুর ৪৪ বছর পর জন্ম লাভ করেছে ইমাম বুখারী রহঃ।
ইমাম মুসলিম রহঃ এর জন্ম গ্রহণ করেছেন ৫৪ বছর পর।
ইমাম তিরমিজী রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৬০ বছর পর।
ইমাম আবু দাউদ রহঃ জন্ম লাভ করেছেন ৫২ বছর পর।
ইমাম ইবনে মাজাহ রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৫৯ বছর পর।
ইমাম নাসায়ী রহঃ জন্ম গ্রহণ করেছেন ৬৫ বছর পর।
ইলমে হাদীসের সাথে সম্পর্ক রাখেন এমন একজন সাধারণ শিক্ষার্থীও জানেন যে, হাদীস সহীহ বা জঈফ হয় মৌলিকভাবে সনদের দুর্বলতার কারণে। আরে অনেক কারণেও হয়, তবে মূল কারণ সনদের দুর্বলতা। অর্থাৎ সনদের মাঝে দুর্বল রাবী থাকার কারণে সহীহ হাদীসও জঈফ হয়ে যায়, এমনকি মুনকারও হয়ে যায়। আর সনদের মাঝে রাবীগণ শক্তিশালী থাকার কারণে হাদীস সহীহ হয়ে থাকে।
আমরা যদি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করি যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ যখন হাদীসের আলোকে মাযহাব সংকলিত করেন, তখন যে হাদীস সনদের শক্তিশালীত্বের কারণে সহীহ ছিল, উক্ত হাদীসটি ৪০/৫০ বছর পরেও সহীহ থাকা শর্ত কি না? অবশ্যই নয়। কারণ, একটি হাদীস যখন ইমাম আবু হানীফা রহঃ দেখলেন, সে হাদীসটি তার কাছে সহীহ, কারণ তার মাঝে এবং সাহাবীর মাঝে একজন বা সর্বোচ্চ দুইজনের মাধ্যম বিদ্যমান। সেই একজন বা দুইজনও শ্রেষ্ঠ যুগের লোক। তাদের মাঝে হাদীস জঈফ হওয়ার কোন কারণ বিদ্যমান হওয়া প্রায় অসম্ভব। যেখানে ইমাম আবু হানীফা রহঃ নিজেই একজন জাঁদরেল মুহাদ্দিস এবং জারাহ তাদীলের ইমাম। সেখানে তিনি কোন সহীহ হাদীস ছাড়া গ্রহণ করতেই পারেন না। যেমনটি আমাদের গায়রে মুকাল্লিদরাও অকপটে স্বীকার করে প্রচার করে বেড়ায় যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ বলেছেন“যখন হাদীস সহীহ হবে, তখন সেটাই আমার মাযহাব”।
তাই তিনি হাদীসের ভিত্তিতে যেসব মাসআলা বলেছেন, তার সব ক’টিই ছিল সহীহ হাদীস। যেহেতু তার এবং রাসূল সাঃ এর মাঝে মাধ্যম ছিল দুই বা একজন। তাই সনদের মাঝে দুর্বলতা আসা ছিল খুবই দূরের কথা। কিন্তু উক্ত হাদীসটি, যেটাকে ইমাম আবু হানীফা রহঃ সনদ শক্তিশালী হওয়ার কারণে সহীহ হিসেবে মত দিয়ে তার মাঝে নিহিত মাসআলাকে সহীহ সাব্যস্ত করেছেন, ঠিক সেই হাদীসটিই ৪০/৫০ বছর পর সনদের দুর্বলতার কারণে পরবর্তীদের কাছে যেতে পারে।
কারণ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কাছে যে হাদীস সহীহ হিসেবে এল সনদ শক্তিশালী হওয়ার দ্বারা উক্ত হাদীসটি যদি পরবর্তীতে কোন দুর্বল রাবী বর্ণনা করে, তাহলে উক্ত হাদীসটি উক্ত দুর্বল ব্যক্তির বর্ণনার কারণে যার কাছে বর্ণনা করল, তার কাছে উক্ত হয়ে যাচ্ছে দুর্বল তথা জঈফ। কিন্তু সে হাদীস কিন্তু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর জমানায় সহীহই ছিল। সেটি জঈফ হয়েছে পরবর্তীতে এসে। তাহলে সহীহ থাকা অবস্থায় উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে যেহেতু ইমাম আবু হানীফা রহঃ স্বীয় মাযহাব দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন, তাই ৪০/৫০ বছর পরের কোন মুহাক্কিকের কাছে জঈফ সুত্রে পৌঁছার কারণে জঈফ মনে হলেও আবু হানীফা রহঃ এর মাযহাব কিন্তু জঈফ হাদীস নির্ভর হয়ে যাচ্ছে না।
আরো সহজভাবে বুঝুন! ইমাম আবু হানীফা রহঃ তাবেয়ী হিসেবে চার জন সাহাবী থেকে সরাসরি হাদীস পেয়েছেন। যথা-
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উনাইস রাঃ থেকে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা রাঃ থেকে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন হারেস রাঃ থেকে।
হযরত মালেক বিন আনাস রাঃ থেকে।
এখন বলুন, এ চারজন থেকে পাওয়া হাদীস বা সুন্নতে নববীতে কোন জুউফ তথা দুর্বলতা পাওয়ার সুযোগ আছে?
তাহলে তাদের বক্তব্যের আলোকে তিনি যেসব মাসআলা তার ফিক্বহে হানাফীতে সংকলিত করেছেন, তা জঈফ হাদীস নির্ভর হয় কি করে?
তবে উক্ত হাদীসগুলোই পরবর্তীতে কোন দুর্বল হাদীস বর্ণনাকারী বলার কারণে দুর্বল হতেই পারে। বিশেষ করে যেখানে ৪০ থেকে ৬০/৭০ বছরের পর।
সুতরাং হানাফী মাযহাবের যেসকল মাসআলা হাদীস নির্ভর। কিন্তু সহীহ হাদীসের উপর নির্ভর করে মাসআলা সংকলিত হওয়ার পর পরবর্তী কোন হাদীস সংকলকের কাছে আসার পর পরবর্তী কোন রাবীর দুর্বলতার কারণে হাদীসটি জঈফ হয়ে গেলেও হানাফী মাযহাবকে দুর্বল হাদীস সম্বলিত বলে এড়িয়ে যাওয়াটা হবে অযৌক্তিক এবং বিবেকশূণ্য মতামত।
তবে কোন মুজতাহিদ এর বিরোধিতা করে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন তার ইজতিহাদী যোগ্যতার কারণে। যেমনটি ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ প্রমূখগণ করেছেন। কোন ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই এমন কোন সাধারণ মুসলমানের কোন অধিকার নেই, মনমত একটি মতকে পরবর্তী মুহাদ্দিসের বক্তব্যের আলোকে একটি প্রাধান্য দিয়ে দেয়া। আর মুহাদ্দিস ফক্বীহ ইমামের মতকে ভুল বলে আখ্যায়িত করা। এরকম আচরণ চরম ধৃষ্টতা বৈ কিছু নয়।
মুজতাহিদ ভুল করলেও একটি সওয়াব
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম বলতে গিয়ে ইজতিহাদ করে, আর তার ইজতিহাদ সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদে ভুল হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯১৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৮৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৭৬}
মুজতাহিদের অনুসারী মুকাল্লিদের কোন চিন্তার কারণ নেই। অতিরিক্ত পন্ডিতিরও কোন দরকার নেই। কারণ রাসূল সাঃ ঘোষণা অনুযায়ী মুজতাহিদের যদি মাসআলা বলতে ভুলও হয়, তাহলেও তিনি একটি নেকি পাচ্ছেন। আর সঠিক হলে দুইটি নেকি পাবেন।
তাই মুজতাহিদের ইজতিহাদকৃত মাসআলায় চলার দ্বারা সওয়াব পাওয়া নিশ্চিত। চাই একটি হোক বা দুইটি। সওয়াবহীন কখনোই হবে না। তাই ভুলের উর্ধে কেউ নয় একথা সত্য। কিন্তু সবার ভুলেই সওয়াব হবে একথা কিন্তু নেই। কিন্তু মুজতাহিদের ভুলেও সওয়াবের নিশ্চয়তা রয়েছে। তাই মোটা ব্রেইনে চিন্তা করে নিজের ধারণার মতে মুজতাহিদের ভুল সিদ্ধান্ত ধরে নিজের মনগড়া মত মানা, যে ভুলের উপর জাহান্নামী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে তার দিকে যাওয়াটা কতটুকু যৌক্তিক? সেই হিসেবে মুজতাহিদের সওয়াব নিশ্চিত মতামত মানাটা অধিক যৌক্তিক নয়?
তাই নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে কারো মতকে খেয়ালখুশি মত প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা ভ্রান্তিতা ছাড়া আর কিছু নয়।
যাকে ইচ্ছে তাকে মানা শরীয়তের অনুসরন নয় মন পূজা
যখন যে ইমামকে ইচ্ছে তাকে মানার প্রবণতা দ্বীনে শরীয়তের পাবন্দী হবে না, হবে কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ। মন যখন চাইবে ইমাম আবু হানীফার অনুসরণ করা, আবার মন যখন চাইবে ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মতকে অনুসরন করা, কিংবা অন্য কোন ইমামের অনুসরণ করা এটা দ্বীনে শরীয়তের আনগত্ব হবে? না মন আর খাহেশাতের আনুগত্ব হবে?
যখন মন চাইল ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মাযহাব অনুসরণ করে বলে দিলেন যে, মহিলাদের স্পর্শ করলে অজু ভাঙ্গবে না। আর ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর বক্তব্য যে, মহিলা স্পর্শ করলে অজু ভেঙ্গে যায়, মতটিকে ছেড়ে দিলেন সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য।
আবার কিছুক্ষণ পর হাত কেটে গেল, এবার যখন দেখা গেল যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মাযহাব অনুপাতে অজু ভেঙ্গে গেছে, আর ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মতে অজু ভাঙ্গেনি। তখন সাথে সাথেই মাযহাব পাল্টে বলতে শুরু করে দিলেন যে, না, না আমি হানাফী না, আমি শাফেয়ী। তাই আমার অজু ভাঙ্গেনি।
এভাবে প্রতিটি মাসআলায় স্বীয় খাহেশাত অনুযায়ী মত পাল্টাতেই থাকলে এর নাম দ্বীন মানা? না মনপূজা?
এ কারণেই শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ “লাগামহীনভাবে যে মাযহাব যখন মনে চায়, সেটাকে মানা সুষ্পষ্ট হারাম ও অবৈধ। {ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২/২৪১}
সাত কিরাতের এ কিরাতে কুরআন পড়ার বিধান যেমন চার মাযহাবের এক মাযহাব তেমনি
কুরআন নাজিল হয়েছিল সাত কিরাতে। যার এক কিরাত অন্য কিরাতের সাথে মতভেদ ছিল। হযরত উসমান রাঃ এর আমলে সাত কিরাতের মাঝে এক কিরাতকে আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে। বাকি ৬ কিরাতকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে কিরাতটি ছিল আসেম কুফী রহঃ এর কিরাত। মক্কা মদীনার কারীদের কিরাত রেখে হযরত উসমান রাঃ কুফার কারীর কিরাত হিসেবে কুরআন পড়ার সারা পৃথিবীর মুসলমানদের জন্য আবশ্যকীয় করে দিলেন।
এর একটাই কারণ ছিল, সেটি হল, বিশৃংখলা রোধ করা। আর মনের খাহেশাত পূজা বন্ধ করা। কারণ সাত কিরাত চালু থাকলে, কুরআন সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা কারণে আন্দাজে একটি কিরাতের বিকৃত অর্থ করে মানুষ আমল করতে থাকতো। এক স্থানে এক আয়াত একভাবে তিলাওয়াত করতো, অন্য স্থানে গিয়ে মন চাইলে কিরাতে স্টাইল পাল্টে মানুষকে বিভ্রান্ত করতো। এরকম বিভ্রান্তির পথকে রুদ্ধ করার জন্য বাকি ৬ কিরাতকে হযরত উসমান রাঃ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেন।
ঠিক তেমনিভাবে চার মাযহাবের অবস্থা। যদি সবাইকে বলা হয় যে, তোমাদের গবেষণা অনুযায়ী যে মাযহাবের যে বক্তব্য ভাল লাগে সে বক্তব্যকে গ্রহণ করবে, তাহলে অধিকাংশ মানুষ যেখানে কুরআন হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ, সেসব মানুষ বাংলা আর অনুবাদ পড়ে যখন যে ইমামের বক্তব্যকে সহজ আর নিজের মনের মত পাবে, তা গ্রহণ করতো, আর যেটাকে ইচ্ছে ছেড়ে দিতো। আবার যখন মনে চায় আরেকজনের গ্রহণ করতো। এভাবে দ্বীনে শরীয়তকে একটি ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলতো। তাই চতুর্থ শতাব্দির উলামায়ে কেরাম এ লাগামহীনতার পথকে রুদ্ধ করে দিলেন। উম্মতের ইজমা হয়ে গেছে যে, এ ৪র্থ শতাব্দির পর থেকে লাগামহীনভাবে যখন যে মাযহাব ইচ্ছে সে মাযহাব মানা যাবে না। সুনির্দিষ্টভাবে একটি মাযহাবকে মানতে হবে। {আলইনসাফ-৫২, ৫৭-৫৯, মাদারে হক-৩৪১, ইন্তিসারুল হক বজওয়াবে মিয়ারে হক-১৫৩, আলমুআফাকাত-৪/১৪৬, আলমাজমূহ শরহুল মুহাজ্জাব-১/৯১}
দলীলের ভিত্তিতে কারো মত প্রাধান্য দেয়ার যুক্তির জবাব ইতোপূর্বেই অতিক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ ঠিক কার দলীল সঠিক, কোনটি সহীহ হাদীসের উপর নির্ভরশীল, আর কোনটি জঈফ হাদীসের উপর নির্ভরশীল। তা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ থেকে বর্ণিত নয়। তাই উম্মতীর কথা শুনতে হয়। আর উম্মতীদের মাঝে সবচে’গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি তারাই হতে পারেন, যারা মুহাদ্দিস হওয়ার সাথে সাথে ফক্বীহ। যারা শুধু হাদীসের শব্দ জানেন, তারা কখনোই মুহাদ্দিস ফক্বহী মুজতাহিদের উপর প্রাধান্য পেতে পারে না।
তাই যে এলাকায় যে মাযহাব উসুল ও ফুরূ তথা মূলনীতি ও শাখাগত মাসায়েলসহ মুতাওয়াতিসূত্রে পৌঁছেছে সে সকল এলাকার মানুষের উপর উক্ত মাযহাব অনুযায়ী আমল করা উচিত। তাহলেই আর কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। হাদীসের ইবারত শুদ্ধ করে না পড়তে পারলেই নিজেই মুজতাহিদ দাবি করে বসাটা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু হবে না।
অন্ধ তাক্বলীদ কাকে বলে?
আজ কালের অতি পন্ডিত গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা বলে বেড়ান যে, মুজতাহিদদের অনুসরণে দ্বীনের অনুসরণ করা নাকি অন্ধ তাকলীদ।
আফসোস! এই বেচারারা অন্ধ তাকলীদের অর্থও জানেনা। অন্ধ তাকলীদ এটাকে বলে, যেখানে অন্ধ অন্ধের পিছনে চলে। তখন উভয়ে কোন গর্তে নিপতিত হয়। এটা অন্ধ তাকলীদ। আর যদি অন্ধ দৃষ্টিবান মানুষের পিছনে চলে, তো এই দৃষ্টিবান ব্যক্তি এই অন্ধকেও তার চোখের বরকতে সকল গর্ত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবে। আর মানজিলে মাকসাদে পৌঁছিয়ে দিবে।
আইয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন (নাউজুবিল্লাহ) অন্ধ নয়। তারা দৃষ্টিবান। তারা কুরআন সুন্নাহ ও সাহাবাদের ফাতওয়া ও জীবনাচার সম্পর্কে, সেই সাথে আরবী ভাষাসহ ইলমী সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ ও গভীর দৃষ্টির অধিকারী। তাদের ভুল হলেও একটি সওয়াব আর সঠিক হলে দুইটি সওয়াব হবে মর্মে হাদীসে স্পষ্ট ঘোষণা এসেছে।
তবে অন্ধ ব্যক্তি আছে। আছে অন্ধ মুকাল্লিদও। যারা নিজেরাও অন্ধ। তাদের পথিকৃত ও অন্ধ। অর্থাৎ তাদের ইজতিহাদের চোখ নাই। এই জন্যই নবীজী সাঃ বলেছেন যে, যে মুর্খকে দ্বীনের পথিকৃত বানায়, সেই মুর্খ নিজেও গোমড়া হয়, আর তার অনুসারীদেরও গোমড়া করে। এর নাম অন্ধ তাকলীদ।
আল্লাহ তায়ালা নিষ্পাপ নবী সাঃ আর পূণ্যবান মুজতাহিদীনদের গবেষণা-সম্পাদনার উপর আমলে করার তৌফিক দান করুন। আর নব্য নব্য ফেতনা থেকে হিফাযত করুন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের হককে বুঝার, এবং বাতিলকে বাতিল বুঝার তৌফিক দান করুন। সেই সাথে মুখরোচক স্লোগানের আড়ালে শয়তানের ঈমান বিধ্বংসী বক্তব্যের অনুসরণ থেকে পুরো মুসলিম জাতিকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন