সুলতান মাহমূদ বিন সুবক্তগীন (রহ.), যিনি ১৭ বার ভারত বিজয় করেন। তাঁর উপাধী ছিল ‘‘ইয়ামীনুদ দাওলা’’ (অর্থাৎ সাম্রাজ্যের ডান হাত)।
.
যাহোক, রাজশাহী থেকে প্রকাশিত কথিত আহলে হাদীসদের পত্রিকা ‘‘মাসিক আত-তাহরীক’’ এর আগস্ট-২০১৫ সংখ্যায় ‘মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম’ নামক জনৈক ব্যক্তি সংকলনে একটি লেখা ‘‘সুলতান মাহমূদের আহলেহাদীছ হওয়ার বিস্ময়কর কাহিনী’’ নামক একটি লেখা পড়েছি অনেক আগে। ব্যস্ততার কারণে যাচাই করতে পারি নি। আজ একটু ফুরসত পেলাম, তাই লিখতে বসলাম।
.
ইতিহাসের ছাত্র হলেও ইতিহাসে প্রতি আমার দখল কম। কিন্তু এতটুকু বলতে পারি যে, কেউ একটা কথা বললো, আর তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই মানতে শুরু করলাম, সেরকম পাত্র নই আমি।
.
যাহোক। সুলতান মাহমূদ গজনভী (রহ.)'র নিকট মনে হয়েছে বা তাঁর তাহক্বীক অনুযায়ী মনে হয়েছে যে, ফিকহে হানাফী থেকে ফিকহে শাফেয়ী’র নামাযের পদ্ধতি অধিক হাদীসের নিকটবর্তী। তাই তিনি শাফেয়ী মাযহাব গ্রহণ করেছিলেন।
.
এরকম একটা ঘটনা, ইমাম যাহাবী (রহ.) তাঁর ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ কিতাবের ১৭ নং খণ্ডের ৪৮৭—৪৮৮ পৃ. তে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও তাঁর তারীখুল ইসলামেও ঘটনাটি আছে। ইবনে খাল্লিকান (রহ.)ও ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। তার আরবী পাঠ হলোঃ
.
ﻭﺫﻛﺮ ﺇﻣﺎﻡ ﺍﻟﺤﺮﻣﻴﻦ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﺑﻦ ﺳﺒﻜﺘﻜﻴﻦ ﻛﺎﻥ ﺣﻨﻔﻴﺎ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ، ﻓﻮﺟﺪ ﻛﺜﻴﺮﺍ ﻣﻨﻪ ﻳﺨﺎﻟﻒ ﻣﺬﻫﺒﻪ ، ﻓﺠﻤﻊ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﺑﻤﺮﻭ ، ﻭﺃﻣﺮ ﺑﺎﻟﺒﺤﺚ ﻓﻲ ﺃﻳﻤﺎ ﺃﻗﻮﻯ ﻣﺬﻫﺐ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺃﻭ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ . ﻗﺎﻝ : ﻓﻮﻗﻊ ﺍﻻﺗﻔﺎﻕ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﻮﺍ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺬﻫﺒﻴﻦ . ﻓﺼﻠﻰ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﺍﻟﻘﻔﺎﻝ ﺑﻮﺿﻮﺀ ﻣﺴﺒﻎ ﻭﺳﺘﺮﺓ ﻭﻃﻬﺎﺭﺓ ﻭﻗﺒﻠﺔ ﻭﺗﻤﺎﻡ ﺃﺭﻛﺎﻥ ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﺩﻭﻧﻬﺎ ، ﺛﻢ ﺻﻠﻰ ﺻﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﻳﺠﻮﺯﻩ ﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ، ﻓﻠﺒﺲ ﺟﻠﺪ ﻛﻠﺐ ﻣﺪﺑﻮﻏﺎ ﻗﺪ ﻟﻄﺦ ﺭﺑﻌﻪ ﺑﻨﺠﺎﺳﺔ ، ﻭﺗﻮﺿﺄ ﺑﻨﺒﻴﺬ ، ﻓﺎﺟﺘﻤﻊ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺬﺑﺎﻥ ، ﻭﻛﺎﻥ ﻭﺿﻮﺀﺍ ﻣﻨﻜﺴﺎ ، ﺛﻢ ﻛﺒﺮ ﺑﺎﻟﻔﺎﺭﺳﻴﺔ ، ﻭﻗﺮﺃ ﺑﺎﻟﻔﺎﺭﺳﻴﺔ : ﺩﻭﺑﺮﻛﻚ ﺳﺒﺰ . ﻭﻧﻘﺮ ﻭﻟﻢ ﻳﻄﻤﺌﻦ ﻭﻻ ﺭﻓﻊ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ، ﻭﺗﺸﻬﺪ ، ﻭﺿﺮﻁ ﺑﻼ ﺳﻼﻡ . ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ : ﺇﻥ ﻟﻢ ﺗﻜﻦ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻳﺠﻴﺰﻫﺎ ﺍﻹﻣﺎﻡ ، ﻗﺘﻠﺘﻚ . ﻓﺄﻧﻜﺮﺕ ﺍﻟﺤﻨﻔﻴﺔ ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﻓﺄﻣﺮ ﺍﻟﻘﻔﺎﻝ ﺑﺈﺣﻀﺎﺭ ﻛﺘﺒﻬﻢ ، ﻓﻮﺟﺪ ﻛﺬﻟﻚ ، ﻓﺘﺤﻮﻝ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﺷﺎﻓﻌﻴﺎ
.
সারসংক্ষেপ হলোঃ সুলতান মাহমূদ ঠিক করলেন, ফিকহে হানাফী ও ফিকহে শাফেয়ীর নামায আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে একটি বাহাছ করতে। সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হলো যে, প্রথমে শাফেয়ী মাযহাব অনুযায়ী দুই রাকাআত নামায আদায় করা হবে অতঃপর হানাফী মাযহাব অনুযায়ী। নামায আদায় করলেন শাফেয়ী মাযহাবের আলেম আবূ বকর আল কাফফাল আল মারওয়াযী আশ শাফেয়ী (রহ.)।… (লম্বা ঘটনা) এরপর সবশেষে সুলতান মাহমূদ হানাফী মাযহাব থেকে শাফেয়ী মাযহাবের নামায হাদীস অনুযায়ী মনে হয়, তাই তিনি শাফেয়ী মাযহাব গ্রহণ করলেন।
.
এটা সারসংক্ষেপ উল্লেখ করলাম। এখন কথা হলো, উক্ত ঘটনায়- শাফেয়ী মাযহাবের একজন আলেম নামায আদায় করেন, হানাফী মাযহাবের কেউ ছিলেন না। যার ফলে ফিকহে হানাফীর আসল উসূল অনুযায়ী তিনি নামায আদায় করেন নি। উক্ত ঘটনায় নামাযের পদ্ধতিই তার প্রমাণ।
.
দ্বিতীয় কথা, সেখানে শাফেয়ী মাযহাবের তরজুমান থাকলেও হানাফী মাযহাবের কোনো তরজুমান ছিলেন না।
.
সে যাই হোক। উপরের ঘটনা অনুযায়ী সুলতান মাহমূদ (রহ.) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ হন। তিনি কিন্তু লা-মাযহাবী, গাইরে মুকাল্লিদ হন নি।
.
আশ্চর্য কোথাও বলা হয় নি, তিনি লা-মাযহাবী হয়েছেন। মাযহাব ত্যাগ করে গাইরে মুকাল্লিদ হয়েছেন। অথচ উক্ত লেখক তাকে কথিত আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবী বানিয়ে ফেললেন। আফসোস।
.
আর কথিত আহলে হাদীস ভাইদের নিকট #মাযহাব শব্দটিই বিদআতী শব্দ। তাকলীদ হারাম। অথচ সুলতান মাহমূদ (রহ.) মাযহাবী ছিলেন।
.
আর শাফেয়ী মাযহাবের সাথে কথিত আহলে হাদীসদের নামাযের পার্থক্য অনেক।
.
যেমনঃ শাফেয়ী মাযহাবের মতে হাত বাঁধবে বুকের নিচে। কিন্তু কথিত আহলে হাদীসরা বাঁধে বুকে। শাফেয়ী মাযহাব অনুযায়ী ফজরের নামাযে প্রতিদিন কুনূত পড়বে। কথিত আহলে হাদীসরা তা পড়ে না। শাফেয়ী মাযহাব মতে বিসমিল্লাহ… উচ্চস্বরে পড়বে, কথিত আহলে হাদীসরা আস্তে পড়ে। ইত্যাদি ইত্যাদি। আরো অনেক পার্থক্য। তাহলে কিভাবে সুলতান মাহমূদ (রহ.) কথিত আহলে হাদীস হলেন??
.
আর মাযহাব পরিবর্তন?? ইমাম ত্বাহাবী (রহ.) কত বড় ইমাম ও মুহাদ্দিস তা সকলেই জানেন। তাঁর ইলমে হাদীসের উঁচু মাকামের ব্যাপারে পৃথিবীর কারোও কোনো আপত্তি নেই। সেই ইমাম ত্বাহাবী (রহ.) শাফেয়ী মাযহাব থেকে হানাফী হয়েছেন।
.
মাযহাব পরিবর্তন করে লা-মাযহাবী, গাইরে মুকাল্লিদ কোনো বড় ইমাম হন নাই। এক মাযহাব থেকে অন্য মাযহাবে যেতে পারেন, কিন্তু গাইরে মুকাল্লিদ, লা-মাযহাবী হন নাই।
.
তাই লা-মাযহাবী বানানোর অপচেষ্টা এখানেও ব্যর্থ……! সুলতান মাহমূদ মাযহাবী থেকে মাযহাবীই ছিলেন; কশ্মিনকালেও লা-মাযহাবী, গাইরে মুকাল্লিদ হয়ে গোমরাহ হন নাই। তিনি মাযহাবী হয়েছেন, এটা কিতাবের মধ্যে স্পষ্ট লিখা রয়েছে। তিনি মাযহাব বিদ্বেষী ছিলেন, তা কেউ কোনো ইতিহাসের কিতাব থেকে প্রমাণ করতে পারবে না। আর ইতিহাসের প্রতি যাদের গভীর দখল মুহাক্কিক আলেমে দ্বীনগণ এই ঘটনার পরবর্তী বিষয়াবলী ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
.
যাহোক, রাজশাহী থেকে প্রকাশিত কথিত আহলে হাদীসদের পত্রিকা ‘‘মাসিক আত-তাহরীক’’ এর আগস্ট-২০১৫ সংখ্যায় ‘মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম’ নামক জনৈক ব্যক্তি সংকলনে একটি লেখা ‘‘সুলতান মাহমূদের আহলেহাদীছ হওয়ার বিস্ময়কর কাহিনী’’ নামক একটি লেখা পড়েছি অনেক আগে। ব্যস্ততার কারণে যাচাই করতে পারি নি। আজ একটু ফুরসত পেলাম, তাই লিখতে বসলাম।
.
ইতিহাসের ছাত্র হলেও ইতিহাসে প্রতি আমার দখল কম। কিন্তু এতটুকু বলতে পারি যে, কেউ একটা কথা বললো, আর তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই মানতে শুরু করলাম, সেরকম পাত্র নই আমি।
.
যাহোক। সুলতান মাহমূদ গজনভী (রহ.)'র নিকট মনে হয়েছে বা তাঁর তাহক্বীক অনুযায়ী মনে হয়েছে যে, ফিকহে হানাফী থেকে ফিকহে শাফেয়ী’র নামাযের পদ্ধতি অধিক হাদীসের নিকটবর্তী। তাই তিনি শাফেয়ী মাযহাব গ্রহণ করেছিলেন।
.
এরকম একটা ঘটনা, ইমাম যাহাবী (রহ.) তাঁর ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ কিতাবের ১৭ নং খণ্ডের ৪৮৭—৪৮৮ পৃ. তে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও তাঁর তারীখুল ইসলামেও ঘটনাটি আছে। ইবনে খাল্লিকান (রহ.)ও ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। তার আরবী পাঠ হলোঃ
.
ﻭﺫﻛﺮ ﺇﻣﺎﻡ ﺍﻟﺤﺮﻣﻴﻦ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﺑﻦ ﺳﺒﻜﺘﻜﻴﻦ ﻛﺎﻥ ﺣﻨﻔﻴﺎ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ، ﻓﻮﺟﺪ ﻛﺜﻴﺮﺍ ﻣﻨﻪ ﻳﺨﺎﻟﻒ ﻣﺬﻫﺒﻪ ، ﻓﺠﻤﻊ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﺑﻤﺮﻭ ، ﻭﺃﻣﺮ ﺑﺎﻟﺒﺤﺚ ﻓﻲ ﺃﻳﻤﺎ ﺃﻗﻮﻯ ﻣﺬﻫﺐ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺃﻭ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ . ﻗﺎﻝ : ﻓﻮﻗﻊ ﺍﻻﺗﻔﺎﻕ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﻮﺍ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺬﻫﺒﻴﻦ . ﻓﺼﻠﻰ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﺍﻟﻘﻔﺎﻝ ﺑﻮﺿﻮﺀ ﻣﺴﺒﻎ ﻭﺳﺘﺮﺓ ﻭﻃﻬﺎﺭﺓ ﻭﻗﺒﻠﺔ ﻭﺗﻤﺎﻡ ﺃﺭﻛﺎﻥ ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﺩﻭﻧﻬﺎ ، ﺛﻢ ﺻﻠﻰ ﺻﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﻳﺠﻮﺯﻩ ﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ، ﻓﻠﺒﺲ ﺟﻠﺪ ﻛﻠﺐ ﻣﺪﺑﻮﻏﺎ ﻗﺪ ﻟﻄﺦ ﺭﺑﻌﻪ ﺑﻨﺠﺎﺳﺔ ، ﻭﺗﻮﺿﺄ ﺑﻨﺒﻴﺬ ، ﻓﺎﺟﺘﻤﻊ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺬﺑﺎﻥ ، ﻭﻛﺎﻥ ﻭﺿﻮﺀﺍ ﻣﻨﻜﺴﺎ ، ﺛﻢ ﻛﺒﺮ ﺑﺎﻟﻔﺎﺭﺳﻴﺔ ، ﻭﻗﺮﺃ ﺑﺎﻟﻔﺎﺭﺳﻴﺔ : ﺩﻭﺑﺮﻛﻚ ﺳﺒﺰ . ﻭﻧﻘﺮ ﻭﻟﻢ ﻳﻄﻤﺌﻦ ﻭﻻ ﺭﻓﻊ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ، ﻭﺗﺸﻬﺪ ، ﻭﺿﺮﻁ ﺑﻼ ﺳﻼﻡ . ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ : ﺇﻥ ﻟﻢ ﺗﻜﻦ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻳﺠﻴﺰﻫﺎ ﺍﻹﻣﺎﻡ ، ﻗﺘﻠﺘﻚ . ﻓﺄﻧﻜﺮﺕ ﺍﻟﺤﻨﻔﻴﺔ ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﻓﺄﻣﺮ ﺍﻟﻘﻔﺎﻝ ﺑﺈﺣﻀﺎﺭ ﻛﺘﺒﻬﻢ ، ﻓﻮﺟﺪ ﻛﺬﻟﻚ ، ﻓﺘﺤﻮﻝ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﺷﺎﻓﻌﻴﺎ
.
সারসংক্ষেপ হলোঃ সুলতান মাহমূদ ঠিক করলেন, ফিকহে হানাফী ও ফিকহে শাফেয়ীর নামায আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে একটি বাহাছ করতে। সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হলো যে, প্রথমে শাফেয়ী মাযহাব অনুযায়ী দুই রাকাআত নামায আদায় করা হবে অতঃপর হানাফী মাযহাব অনুযায়ী। নামায আদায় করলেন শাফেয়ী মাযহাবের আলেম আবূ বকর আল কাফফাল আল মারওয়াযী আশ শাফেয়ী (রহ.)।… (লম্বা ঘটনা) এরপর সবশেষে সুলতান মাহমূদ হানাফী মাযহাব থেকে শাফেয়ী মাযহাবের নামায হাদীস অনুযায়ী মনে হয়, তাই তিনি শাফেয়ী মাযহাব গ্রহণ করলেন।
.
এটা সারসংক্ষেপ উল্লেখ করলাম। এখন কথা হলো, উক্ত ঘটনায়- শাফেয়ী মাযহাবের একজন আলেম নামায আদায় করেন, হানাফী মাযহাবের কেউ ছিলেন না। যার ফলে ফিকহে হানাফীর আসল উসূল অনুযায়ী তিনি নামায আদায় করেন নি। উক্ত ঘটনায় নামাযের পদ্ধতিই তার প্রমাণ।
.
দ্বিতীয় কথা, সেখানে শাফেয়ী মাযহাবের তরজুমান থাকলেও হানাফী মাযহাবের কোনো তরজুমান ছিলেন না।
.
সে যাই হোক। উপরের ঘটনা অনুযায়ী সুলতান মাহমূদ (রহ.) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ হন। তিনি কিন্তু লা-মাযহাবী, গাইরে মুকাল্লিদ হন নি।
.
আশ্চর্য কোথাও বলা হয় নি, তিনি লা-মাযহাবী হয়েছেন। মাযহাব ত্যাগ করে গাইরে মুকাল্লিদ হয়েছেন। অথচ উক্ত লেখক তাকে কথিত আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবী বানিয়ে ফেললেন। আফসোস।
.
আর কথিত আহলে হাদীস ভাইদের নিকট #মাযহাব শব্দটিই বিদআতী শব্দ। তাকলীদ হারাম। অথচ সুলতান মাহমূদ (রহ.) মাযহাবী ছিলেন।
.
আর শাফেয়ী মাযহাবের সাথে কথিত আহলে হাদীসদের নামাযের পার্থক্য অনেক।
.
যেমনঃ শাফেয়ী মাযহাবের মতে হাত বাঁধবে বুকের নিচে। কিন্তু কথিত আহলে হাদীসরা বাঁধে বুকে। শাফেয়ী মাযহাব অনুযায়ী ফজরের নামাযে প্রতিদিন কুনূত পড়বে। কথিত আহলে হাদীসরা তা পড়ে না। শাফেয়ী মাযহাব মতে বিসমিল্লাহ… উচ্চস্বরে পড়বে, কথিত আহলে হাদীসরা আস্তে পড়ে। ইত্যাদি ইত্যাদি। আরো অনেক পার্থক্য। তাহলে কিভাবে সুলতান মাহমূদ (রহ.) কথিত আহলে হাদীস হলেন??
.
আর মাযহাব পরিবর্তন?? ইমাম ত্বাহাবী (রহ.) কত বড় ইমাম ও মুহাদ্দিস তা সকলেই জানেন। তাঁর ইলমে হাদীসের উঁচু মাকামের ব্যাপারে পৃথিবীর কারোও কোনো আপত্তি নেই। সেই ইমাম ত্বাহাবী (রহ.) শাফেয়ী মাযহাব থেকে হানাফী হয়েছেন।
.
মাযহাব পরিবর্তন করে লা-মাযহাবী, গাইরে মুকাল্লিদ কোনো বড় ইমাম হন নাই। এক মাযহাব থেকে অন্য মাযহাবে যেতে পারেন, কিন্তু গাইরে মুকাল্লিদ, লা-মাযহাবী হন নাই।
.
তাই লা-মাযহাবী বানানোর অপচেষ্টা এখানেও ব্যর্থ……! সুলতান মাহমূদ মাযহাবী থেকে মাযহাবীই ছিলেন; কশ্মিনকালেও লা-মাযহাবী, গাইরে মুকাল্লিদ হয়ে গোমরাহ হন নাই। তিনি মাযহাবী হয়েছেন, এটা কিতাবের মধ্যে স্পষ্ট লিখা রয়েছে। তিনি মাযহাব বিদ্বেষী ছিলেন, তা কেউ কোনো ইতিহাসের কিতাব থেকে প্রমাণ করতে পারবে না। আর ইতিহাসের প্রতি যাদের গভীর দখল মুহাক্কিক আলেমে দ্বীনগণ এই ঘটনার পরবর্তী বিষয়াবলী ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন