বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

ফরায়েজী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ দুদু মিয়া (ইসলামি কলাম)


ঐতিহাসিক ফরায়েজী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি ও তাদের দোসর বশংবদ জমিদার-নীলকরদের আতঙ্ক পীর মুহসীন উদ্দীন আহমদ দুদু মিয়ার ১৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গত ২৪ সেপ্টেম্বর। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পথনির্দেশনা দানকারী ঐতিহাসিক ফরায়েজী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তুল্লাহর সুযোগ্য পুত্র পীর মুহসীন উদ্দীন দুদু মিয়া ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর জেলার বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশ তথা তত্কালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের নিপীড়িত জনগণের আত্মশক্তির বিকাশ এবং ঔপনিবেশিক শক্তি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাসে দুদু মিয়া ছিলেন এক অন্যতম মহানায়ক। দুদু মিয়া প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার যোগ্য পিতা হাজী শরীয়তুল্লাহর কাছে। মাত্র ১২ বছর বয়সে তাকে মক্কায় পাঠানো হয় জ্ঞানার্জনের জন্য। কলকাতা হয়ে মক্কা যাওয়ার সময় তিনি বারাসাতে বাংলার আরেক মহান বীর তিতুমীরের সঙ্গে দেখা করেন বলেও ঐতিহাসিক সূত্রগুলোতে উল্লেখ রয়েছে। মক্কায় তিনি পাঁচ বছর গভীর অধ্যয়নে ব্যয় করেন। মক্কা থেকে বাড়ি ফিরে আসেন ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে পিতা হাজী শরীয়তুল্লাহর ইন্তেকালের পর ফরায়েজী আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে কোনোরকম বিদ্রোহ ঘোষণা ছাড়াই দুদু মিয়া বাংলা ও আসামের নিপীড়িত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সম্পূর্ণ বিকল্প এক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। তখনকার জমিদাররা তাদের প্রভু ইংরেজদের তুষ্ট করে প্রজাদের ওপর নানা নিপীড়নমূলক কর আরোপ করে। দুদু মিয়ার নেতৃত্বে জনগণ এসব নিপীড়নমূলক কর দিতে অস্বীকার করে। শরীয়তুল্লাহর ইন্তেকালের পর দুদু মিয়ার নেতৃত্বে জনগণ আরও ব্যাপকভাবে সংগঠিত হয় এই অত্যাচার-উত্পীড়নের বিরুদ্ধে। জমিদার ও নীলকরদের ষড়যন্ত্রে দুদু মিয়াকে বারবার কারারুদ্ধ করে ইংরেজ সরকার। সিপাহি বিদ্রোহের সময়ও গ্রেফতার করা হয় দুদু মিয়াকে। পরে ১৮৫৯ সালে মুক্তি পেলেও অসত্ জমিদারদের উস্কানিতে আবারও বন্দী হন তিনি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও ১৮৬০ সাল পর্যন্ত বন্দী রাখা হয় তাকে। তিনি যখন কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন তখন তার স্বাস্থ্য ভগ্নপ্রায়। মুক্তির অল্পকাল পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এখানেই ইন্তেকাল করেন তিনি। পুরান ঢাকার ১৩৭ নং বংশাল রোডে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন