বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (ইফতেখার জামিল)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার দারউন নাকদি বাইনাল আকলি ও ওয়ান নাকলি বইটা পড়ছিলাম। ইবনে তাইমিয়া অসাধারণ মেধাবী একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ভাষা, যুক্তি-কাঠামো ও ফাহমে সালিমের ক্ষেত্রে সালাফের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন। মুশকিল হচ্ছে, শাইখুল ইসলামকে যারা তার যুগ ও চিন্তা ধারাবাহিকতা থেকে পৃথক করে পড়েন, তারা মনে করেন শাইখুল ইসলাম হয়তো চিন্তাগুলো নতুন চিন্তা ছিল। এর মধ্য দিয়ে তার পরিভাষা অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য হয়ে উঠে। নানানজনের কাছে তিনি নয়া নয়ারুপে হাজির হন। তবে মুশকিলটা সালাফি শায়খদের মধ্যে নেই। মোটাদাগে, জিহাদিদের মধ্যেও নেই। আছে বিশেষভাবে, মধ্যপ্রাচ্যের সেকুলার চিন্তকদের কাছে। সেকুলাররা গিরগিটিত মত, সময়ে সময়ে তাদের রঙ পাল্টায়।এবং সমস্যা আছে, তথাকথিত ইসলামি স্কলারদেরও। ইউটিউবে মাঝে মাঝে লেকচার দেখে মনে হয়_ কিসব বলছেন!
ইবনে তাইমিয়ার মধ্যে একটা প্রতিরোধী চরিত্র আছে। যে প্রতিরোধী চরিত্র অনেক কিছু ভেঙ্গে দিতে সক্ষম।আমি যখন তার লজিকের বিরোধিতা পড়ছিলাম, তখন যে কোন সংজ্ঞা ও যুক্তিকেই সন্দেহ হত। এক নৈরাজ্যকর অবস্থা। সব কিছু ভেঙ্গে পড়ছে। পরবর্তীতে এক বড় ভাইয়ের দারস্থ হলাম এবং শোকরান, তিনি আমাকে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন এবং শাইখ সাইদ ফুদা!
কিছুদিন আগে আশরাফ আলি থানবির মালফুজাত পড়ছিলাম_ নির্বাচিত অংশে, চারখণ্ডে। সেখানে তিনি নানা পরিভাষা ও তর্কের তুলনামূলক আলোচনা করেছেন এবং আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। আমার একটা বড় প্রশ্ন ছিল, আরবের সালাফি চিন্তা কীভাবে উপমহাদেশের ট্র্যাডিশনের তালিবান-ঘরানার সাথে যুক্ত হতে পেরেছে আবার জামাল আফগানি যখন মিসর যান, তখন তার ছাত্ররা কীভাবে ইলমে কালামকে ইতিবাচক অর্থে গ্রহণ করেন? প্রশ্নটা যত হালকা মনে হচ্ছে, তত হালকা নয়। তালেবান বা আফগানিরা নিছকই রাজনৈতিক-সক্রিয় নন, একই সাথে ইসলামি চিন্তার বুঝাবুঝিতে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। বিশেষত উপমহাদেশের ছেলে হিসেবে আমার কাছে তো বটেই। এবং থানবির বক্তব্যে মনে হয়েছে, যারা জামাআহকে গ্রহণ করেন এবং নুসুস থেকে দ্বীন শেখার চেষ্টা করেন, তাদের মধ্যে নানা রঙ্গে পার্থক্য থাকলেও তারা যে কোনভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন!
ইনবক্সে এক ভাই আমাকে নানা প্রশ্ন করছিলেন, আমি বুঝতে পারছিলাম, তিনি দারউন নাকদির সংক্ষিপ্তসার হয়তো কোথায় পড়েছেন অথবা কারো বক্তব্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। ফলে, তিনি অনেক কিছুই আগাম অনুমান করে বক্তব্য দিচ্ছেন। স্কুল হিসেবে, দেওবন্দকে বুঝতে তালেবান ও জামাল আফগানিদের চিন্তা-সক্রিয়তার( রাজনৈতিক সক্রিয়তা কারো অপছন্দ হতেই পারে) পাশাপাশি গতমাসের মাসিক আল কাউসারে প্রকাশিত তাহমিদুল মাওলার হায়াতুন নবি প্রবন্ধটা পড়তে পারেন এবং আরও সহজে, আমার ইবনে খালদুনের কালামি চিন্তা ( কমেন্টে দিলাম) লেখাটাও, মনে হয়, নানাকিছু বুঝতে সাহায্য করতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয়, সরাসরি তাইমিয়া পড়তে পারলে এবং তার সাথে মিলিয়ে থানবি পড়লে। আসলে উপমহাদেশের ওয়ালিউল্লাহি ঘরানাকে ঠিক সালাফি ট্র্যাডিশন বলা যায়না, আবার ঠিক, কালামি ট্র্যাডিশনও বলা কঠিন।
ভিন্নভাষায় বললে, যেমন হাদিসকে গ্রহণ জরুরি, বুঝাবুঝি জরুরি, তেমনি জামাআতুল মুসলিমিনের বোধ ও ভাষার মধ্য দিয়ে গ্রহণ জরুরি। নয়তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে বাধ্য

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন