বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫

‘‘আখেরী চাহার শোম্বাহ’’ উদযাপনের অস্তিত্ব শরীআতে নেই।

—সামীউর রহমান শামীম
.
আজ সফর মাসের শেষ বুধবার। আজকের দিনকে ঘিরে আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে একটি দিবস, ‘আখেরী চাহার শোম্বাহ’’। অনেক স্কুলেও এই দিনটিতে ছুটি দেয়া হয়। ছোট বেলায় আমার স্কুলও এ দিন ছুটি দিতো। আসলে কি এই আখেরী চাহার শোম্বাহ?
.
আখেরী চাহার শোম্বাহ ﺁﺧﺮﯼ ﭼﮩﺎﺭ ﺷﻨﺒﮧ ফার্সী শব্দ।
.
‘‘আখেরী’’ অর্থাৎ শেষ। ফার্সীতে ‘‘চাহার’’ মানে ‘‘চার’’। ‘‘শোম্বাহ’’ মানে ‘দিন’। ‘‘চাহার শোম্বাহ’’ অর্থাৎ ‘‘বুধবার’’। সুতরাং ‘‘আখেরী চাহার শোম্বাহ’’ অর্থ ‘‘শেষ বুধবার’’। সফর মাসের শেষ বুধবার আখেরী চাহার শোম্বাহ হিসেবে পরিচিত।
.
আরবীতে অনুবাদ করলে, এটির নাম হয়, ﺍﻷﺧﻴﺮ يوم ﺍﻷﺭﺑﻌﺎﺀ ﻣﻦ ﺷﻬﺮ صف
.
এরকম কোনো দিবস ইসলামে নেই। ‘মোকসদুল মোমেনীন’, ‘বার চান্দের ফজীলত’, জাতীয় কিছু অনির্ভরযোগ্য বইয়ে এই দিবসের কথা উল্লেখ আছে।
.
এসব ফালতু বইগুলোতে উল্লেখ আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের শেষ দিকে একবার এক ইহুদীর যাদুর কারণে ভীষণ অসুস্থ হন এবং এই দিনে একটু সুস্থতা বোধ করেন এবং গোসল করেন ও মসজিদে জামাতে শরিক হন। খুশি হয়ে হযরত ওসমান রা. তাঁর নিজ খামারের ৭০টি উট জবাই করে গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। খুশিতে আত্মহারা সাহাবীগণ আনন্দ প্রকাশ ও শুকরিয়া আদায় করেছিলেন রোযা রেখে, নফল নামায পড়ে এবং হামদ-নাত গেয়ে। সুতরাং এটা মুসলমানদের খুশির দিন এবং তা উদযাপনের একটি দিবস।
.
আসল কথা হলোঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইহূদীরা যাদু করেছিল। সূরায়ে ফালাকের তাফসীরে উল্লেখ আছে,
قال أبو عبيدة: النفاثت: هن بنات لبيد بن أعصم اليهودي سحرن النبي صلى الله عليه وسلم
.
অর্থাৎ ‘‘আবূ উবায়দা বলেন, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যাদু করেছিল, তারা ছিল ইহূদী লুবাইদের কন্যা।’'
.
[তাফসীরে কাবীর লিইমাম রাযী, ৩২/১৭৯; বৈরূত থেকে প্রকাশিত]
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যুরাইক্ব গোত্রের ইহূদী লুবাইদ বিন আ’সম যাদু করেছিল। এ ব্যাপারে আলোচনা আছে, সহীহ বুখারীতে, কিতাবুত তিব (চিকিৎসা অধ্যায়)।
.
আর হাদীস বিশারদ ও ইতিহাসবিদ কারো মতেই সুস্থতার তারিখ সফরের আখেরী চাহার শোম্বা ছিল না। [দ্র. ফাতহুল বারী ১০/২৩৭ : আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া ২/১৫৪; শরহুয যুরকানী ৯/৪৪৬-৪৪৭]
.
জাদুর ঘটনা হাদীস ও সীরাত-গ্রন্থসমূহে বিস্তারিতভাবে এসেছে। কিন্তু কোথাও জামাআতে শরীক হতে না পারা ও জাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার পর গোসলের কথা নেই।
.
আর এ উপলক্ষ্যে রোযর কথা তো কোথাও নেই।
.
সুতরাং বুঝা গেল, ‘আখেরী চাহার শোম্বাহ’ নামক কোনো দিবস ইসলামে নেই। আর এদিনকে উদযাপনের দিন বানানো বিদআত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন