আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা, যিনি মহত্তম, মহান, সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান, যিনি সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ, যিনি গোপন-প্রকাশ্য স¤পর্কে পরিজ্ঞাতা, যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাত, যিনি মহাপরাক্রমশালী, যিনি অতি সংগোপন বিষয়েও সবিশেষ জ্ঞাত। সকল কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে
পরিমিত করেছেন। প্রত্যেক ব্যক্তি সে যা নিজের জন্য অগ্রিম প্রেরন করেছে তাই পাবে।
তাঁর অসীম অনুগ্রহ ও অফুরন্ত কল্যাণের জন্য তাঁর প্রশংসা আদায় করছি এবং স্বাক্ষ
দিচ্ছি যে, তিনি ব্যতীত সত্যিকারের আর কোন মা‘বুদ
নেই। তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন অংশিদার নেই। আরো
স্বাক্ষ দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সা. তাঁর বান্দা ও
রাসূল। তিনি হচ্ছেন আল্লাহর নিদর্শন ও মু‘জিজার প্রতিক। তিনি (কিয়ামত পর্যন্ত)
তাঁর সকল উম্মতকে প্রতিটি নেক আমলে প্রতিটি মুহুর্তে অতিরিক্ত নফল ইবাদতের দিকে
উৎসাহিত করেছেন। তাঁর উপর আল্লাহর দরূদ ও সালাম। শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক তাঁর
সাহাবাদের উপর, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীন ও কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর সকল অনুসারীদের উপর।
মুসলিমগণ! সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর এবং তাঁর নিকট তাওবা কর। নামায এবং ধৈর্যের মাধ্যমে তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ “ হে ঈমান্দারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তা বড়ই কঠিন, কিন্তু তাদের জন্য নয় যারা (আল্লাহর জন্য) বিনীত ও ভীত। তারাই (আল্লাহর জন্য) বিনীত ও ভীত, যারা বিশ্বাস করে যে, তাদের প্রতিপালকের সাথে নিশ্চিতভাবে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে এবং তারা তাঁরই দিকে ফিরে যাবে। (বাকারা-৪৫-৪৬)
অতএব, তোমরা নেক ও কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগী হয়ে যাও, আল্লাহর আনুগত্যেও দিকে দ্রুত অগ্রসর হও এবং তোমাদের রবের সন্তুষ্টি ও তোমার পরকালীন জীবনের পাথেয় স্বরূপ দ্রুত নেক আমল করে তৈরী কর। কেননা তুমি যে আমলই করনা কেন অচিরেই তুমি তা দেখতে পাবে এবং তা আল্লাহর নিকট এর চেয়েও উত্তম বিনিময় পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ কেউ অনু পরিমান ভাল কাজ করলে তা সে দেখতে পাবে। অপর পক্ষে কেউ অনু পরিমান মন্দ কাজ করলে তাও সে দেখতে পাবে। (যিলযাল)
তিনি আরো বলেনঃ তোমরা নিজেদের জন্য যে ভাল কাজই অগ্রিম পাঠাও না কেন, তা আল্লাহর নিকট এর চেয়েও উত্তম প্রতিদান হিসাবে পাবে।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনঃ তোমরা আল্লাহর ক্ষমা ও এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন সমান। তা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাক্বীনদের জন্য।
হে মুসলিমগণ! যে সকল সৎ কাজ, খোদাভীতি, জ্ঞান ইত্যাদি তোমার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণকর তা পাওয়ার জন্য অধিক লোভ কর। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য কামনা কর, নিজেকে অক্ষম মনে করো না। নিজ প্রবৃত্তির তাড়না থেকে সতর্ক থাক, কেননা জাহান্নামকে প্রবৃত্তি দ্বারা ডেকে রাখা হয়েছে। অপর দিকে জান্নাত পাওয়ার জন্য চেষ্টা কর, কেননা জান্নাতকে জাগতিক দুঃখ-কষ্টের অন্তরালে রাখা হয়েছে। আল্লাহ যে সকল ইবাদত তোমার উপর ফরয বা আবশ্যক করে দিয়েছেন, তা আদায়ের মাধ্যমে তুমি তাঁর নৈকট্য লাভ কর। এর পর তাঁর আরো নৈকট্যতা অর্জন কর বেশি বেশি নফল ইবাদত করার মাধ্যমে। যেন তিনি তোমাকে ভালবাসেন এবং তোমাকে তাঁর বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে নেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ “যে আমার বন্ধুর সাথে শত্রুতা পোষন করে আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষনা দিলাম। (যে আল্লাহর সাথে তাঁর আনুগত্য ও তাঁকে ভয় করার মাধ্যমে বন্ধুত্ব করবে, আল্লাহ তার সাথে তাকে হিফাযত ও সাহায্য করার মাধ্যমে তার সাথে বন্ধুত্ব করেন)
বান্দা ফরযকৃত ইবাদত ব্যতীত অন্য কোন ইবাদত দ্বারা আমার এত নৈকট্য লাভ করতে পারে না। এর বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার আরো নৈকট্য লাভ করে এবং আমি তাকে ভাল বেসে ফেলি। অতঃপর আমি যখন তাকে ভালই বেসে ফেলি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যে কান দিয়ে সে শুনে, তার চোখ হয়ে যাই যে চোখ দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যে হাত দিয়ে সে ধরে, তার পাঁ হয়ে যাই যে পাঁ দিয়ে সে চলে, সে আমার নিকট কিছু চাইলে তা তাকে দান করি এবং কোন বিষয়ে আশ্রয় প্রর্থনা করলে তাকে আমি অবশ্যই আশ্রয় দান করি”। (বুখারী)
সাথীয় বন্ধুগণ! রাসূল সা. এর আমলের দিকে লক্ষ করুন (যার পূর্বপর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে) তিনি ইবাদাতে কতটুকু জুহুদ করেছেন। নফল নামায, রোযা, দান-সাদাকা ও কুরআন তিলাওয়াতসহ সকল নেক কাজে কি পরিমাণ মুজাহাদা করেছেন। তিনি রাতে এত বেশি রাতে (আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হতেন যে, তাঁর পাঁ যুগল ফেটে যেত। উম্মুল মু‘মেনীন আয়েশা (রা) বলতেন ঃ হে আল্লাহর রাসূল আপনি এমন করেন কেন আপনার তো পূর্বপর সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে? উত্তরে রাসূল সা. বলতেনঃ “আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পছন্দ করব না”। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য অতিরিক্ত নেক আমল করবে আল্লাহ তার সে আমল বিফল করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “ আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কল্যাণ করবে, তবে নিশ্চয় আল¬াহ ভালো কাজের পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ”।
নফল ইবাদাতের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে শেষ রাতের নামাযে দন্ডায়মান হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ঐসব বান্দা-বান্দীদের প্রশংসা করেছেন পবিত্র কুরআনে, যারা শেষ রাতে তাঁর জন্য নামাযে দাঁড়ায়। তিনি বলেনঃ
“ রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটায়। আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকে”। তিনি আরো বলেনঃ তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে”। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেনঃ “তোমাদের রাতের নামাযে দন্ডায়মান হওয়া উচিত। কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সালফে সালেহীনগণের অভ্যাস, আল্লাহর নৈকট্যতা লাভের অন্যতম মাধ্যম এবং গুনাহ বা পাপের কাফ্ফারা স্বরূপ”। (তিরমিযী) আমর ইবনে আবাসা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল আরো বলেনঃ “প্রত্যেক রাতের শেষভাবে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার একেবারে নিকটতম হয়ে যায়। ঐ সময়ে যদি তোমাদের কেহ পারে আল্লাহ তা‘আলার স্বরণে নিজেকে নিয়োজিত রাখুক”।(তিরমিযী)
আবু মালেক আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. আরো বলেনঃ “ জান্নাতে এমন কিছু কামরা রয়েছে যা এত স্বচ্ছ যে, তার ভিতর থেকে বাহিরের এবং বাহির থেকে বিতরের অংশ দেখা যায়। আল্লাহ তা‘আলা ঐ কামরাগুলো তৈরী করে রেখেছেন তাদের জন্য, যারা ন¤্রভাসী, দুঃস্থদের খাবারের ব্যবস্থ করে অধিক রোযা রাখে এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ে”।(তিরমিযী)
মু‘মিনগণ ! কিয়ামতের দিন আল্লাহ হিসাব নেয়ার পূর্বে নিজের হিসাবটা নিজে নিয়ে নাও এবং নিজের আমলকে সুন্দর কর। জেনে রেখো ! কিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দার কাছ থেকে সর্ব প্রথম যে আমলের হিসাব নিবেন তা হচ্ছে ‘নামায’। যদি বান্দার ফরয নামাযে কমতি হয়ে যায় তাহলে বান্দার নফল নামায দিয়ে ফরয নামাযের ঘাটতি পূরণ করবেন। অতএব আমাদের উচিত অধিক পরিমাণে নফল নামাযসহ সকল প্রকারের নফল ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করা। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেনঃ
“ কিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দা থেকে সর্ব প্রথম নামাযের হিসাব নিবেন। যদি এ হিসাব সফলভাবে দিতে পারে তাহলে সে সফলকাম ও কামিয়াব হয়ে যাবে। আর যদি এ হিসাব ঠিকমত দিতে না পারে তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। যদি বান্দার ফরযে কমতি হয়ে যায় তখন আল্লাহ বলবেন দেখ আমার বান্দার নফল নামায আছে কিনা তাহলে তা দিয়ে ঘাটতি পূরণ করে নাও। অনুরূপভাবে সকল আমল এ হিসেবে হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, অতঃপর যাকাতসহ সকল আমলের হিসাব এভাবে নেয়া হবে”।(আহমদ)
আয়েশা (রা) বলেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেনঃ কোন মুসলিম যদি দৈনিক ফরয নামায ব্যতীত ১২ (বার) রাকাত নফল নামায় আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটা ঘর নির্মাণ করবেন”। (মুসলিম)
বার রাকাত হচ্ছে- ফযরের পূর্বে দুই রাকাত, জোহরের পূর্বে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত এবং এশারের পরে দুই রাকাত।
অনুরূপভাবে ফরয রোযা ব্যতীত নফল রোযা রয়েছে।
যেমন শাওয়ালের ৬ টি রোযাঃ রাসূল সা. বলেনঃ
“যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোযা রাখবে অতঃপর শাওয়ালে ছয়টি রোযা রাখবে তাহলে সে যেন সারা বছর রোযা রাখল”।(মুসলিম)
মুর্হারম মাসের রোযাঃ রাসূল সা. বলেনঃ ফরয রোযা ব্যতীত সর্বোত্তম রোযা হচ্ছে - মুর্হারম মাসের দশ তারিখের রোযা আর ফর নামায ব্যতীত সর্বোত্তম নামায হচ্ছে শেষ রাতের (তাহাজ্জদের) নামায।(মুসলিম)
আরাফার দিনের রোযাঃ রাসূল সা. বলেনঃ “আরাফার দিনের রোযা আমি আশা করি আল্লাহ এর দ্বারা আগামী এক বছর ও অতীত এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন”। (মুসলিম)
এ ছাড়া রয়েছে প্রতি সমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা এবং প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখের রোযা।
নফল দান-সাদাকাঃ দান-সাদাকা দ্বারা দাতার বালা-মুসিবত এমনভাবে দূর হয়ে যায় যেমন পানি দ্বারা আগুন নিভে যায়।
উপস্থিত ভাইসব! সর্বশেষ বলতে চাই, আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যতা লাভ করার জন্য আমাদের উচিত আমরা যেন অধিক পরিমাণে নফল ইবাদাতে মনযোগী হই সেই দিনের প্রস্তুতি স্বরূপ, যে দিন বান্দার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি কোন উপকারে আসবে না। পরিশেষে আমি সহ সকলের জন্য মোহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিন, নিশ্চয়ই তিনি অধিক ক্ষমাশীল ও করুনাময়।
মুসলিমগণ! সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর এবং তাঁর নিকট তাওবা কর। নামায এবং ধৈর্যের মাধ্যমে তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ “ হে ঈমান্দারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তা বড়ই কঠিন, কিন্তু তাদের জন্য নয় যারা (আল্লাহর জন্য) বিনীত ও ভীত। তারাই (আল্লাহর জন্য) বিনীত ও ভীত, যারা বিশ্বাস করে যে, তাদের প্রতিপালকের সাথে নিশ্চিতভাবে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে এবং তারা তাঁরই দিকে ফিরে যাবে। (বাকারা-৪৫-৪৬)
অতএব, তোমরা নেক ও কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগী হয়ে যাও, আল্লাহর আনুগত্যেও দিকে দ্রুত অগ্রসর হও এবং তোমাদের রবের সন্তুষ্টি ও তোমার পরকালীন জীবনের পাথেয় স্বরূপ দ্রুত নেক আমল করে তৈরী কর। কেননা তুমি যে আমলই করনা কেন অচিরেই তুমি তা দেখতে পাবে এবং তা আল্লাহর নিকট এর চেয়েও উত্তম বিনিময় পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ কেউ অনু পরিমান ভাল কাজ করলে তা সে দেখতে পাবে। অপর পক্ষে কেউ অনু পরিমান মন্দ কাজ করলে তাও সে দেখতে পাবে। (যিলযাল)
তিনি আরো বলেনঃ তোমরা নিজেদের জন্য যে ভাল কাজই অগ্রিম পাঠাও না কেন, তা আল্লাহর নিকট এর চেয়েও উত্তম প্রতিদান হিসাবে পাবে।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনঃ তোমরা আল্লাহর ক্ষমা ও এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন সমান। তা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাক্বীনদের জন্য।
হে মুসলিমগণ! যে সকল সৎ কাজ, খোদাভীতি, জ্ঞান ইত্যাদি তোমার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণকর তা পাওয়ার জন্য অধিক লোভ কর। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য কামনা কর, নিজেকে অক্ষম মনে করো না। নিজ প্রবৃত্তির তাড়না থেকে সতর্ক থাক, কেননা জাহান্নামকে প্রবৃত্তি দ্বারা ডেকে রাখা হয়েছে। অপর দিকে জান্নাত পাওয়ার জন্য চেষ্টা কর, কেননা জান্নাতকে জাগতিক দুঃখ-কষ্টের অন্তরালে রাখা হয়েছে। আল্লাহ যে সকল ইবাদত তোমার উপর ফরয বা আবশ্যক করে দিয়েছেন, তা আদায়ের মাধ্যমে তুমি তাঁর নৈকট্য লাভ কর। এর পর তাঁর আরো নৈকট্যতা অর্জন কর বেশি বেশি নফল ইবাদত করার মাধ্যমে। যেন তিনি তোমাকে ভালবাসেন এবং তোমাকে তাঁর বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে নেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ “যে আমার বন্ধুর সাথে শত্রুতা পোষন করে আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষনা দিলাম। (যে আল্লাহর সাথে তাঁর আনুগত্য ও তাঁকে ভয় করার মাধ্যমে বন্ধুত্ব করবে, আল্লাহ তার সাথে তাকে হিফাযত ও সাহায্য করার মাধ্যমে তার সাথে বন্ধুত্ব করেন)
বান্দা ফরযকৃত ইবাদত ব্যতীত অন্য কোন ইবাদত দ্বারা আমার এত নৈকট্য লাভ করতে পারে না। এর বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার আরো নৈকট্য লাভ করে এবং আমি তাকে ভাল বেসে ফেলি। অতঃপর আমি যখন তাকে ভালই বেসে ফেলি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যে কান দিয়ে সে শুনে, তার চোখ হয়ে যাই যে চোখ দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যে হাত দিয়ে সে ধরে, তার পাঁ হয়ে যাই যে পাঁ দিয়ে সে চলে, সে আমার নিকট কিছু চাইলে তা তাকে দান করি এবং কোন বিষয়ে আশ্রয় প্রর্থনা করলে তাকে আমি অবশ্যই আশ্রয় দান করি”। (বুখারী)
সাথীয় বন্ধুগণ! রাসূল সা. এর আমলের দিকে লক্ষ করুন (যার পূর্বপর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে) তিনি ইবাদাতে কতটুকু জুহুদ করেছেন। নফল নামায, রোযা, দান-সাদাকা ও কুরআন তিলাওয়াতসহ সকল নেক কাজে কি পরিমাণ মুজাহাদা করেছেন। তিনি রাতে এত বেশি রাতে (আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হতেন যে, তাঁর পাঁ যুগল ফেটে যেত। উম্মুল মু‘মেনীন আয়েশা (রা) বলতেন ঃ হে আল্লাহর রাসূল আপনি এমন করেন কেন আপনার তো পূর্বপর সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে? উত্তরে রাসূল সা. বলতেনঃ “আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পছন্দ করব না”। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য অতিরিক্ত নেক আমল করবে আল্লাহ তার সে আমল বিফল করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “ আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কল্যাণ করবে, তবে নিশ্চয় আল¬াহ ভালো কাজের পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ”।
নফল ইবাদাতের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে শেষ রাতের নামাযে দন্ডায়মান হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ঐসব বান্দা-বান্দীদের প্রশংসা করেছেন পবিত্র কুরআনে, যারা শেষ রাতে তাঁর জন্য নামাযে দাঁড়ায়। তিনি বলেনঃ
“ রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটায়। আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকে”। তিনি আরো বলেনঃ তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে”। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেনঃ “তোমাদের রাতের নামাযে দন্ডায়মান হওয়া উচিত। কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সালফে সালেহীনগণের অভ্যাস, আল্লাহর নৈকট্যতা লাভের অন্যতম মাধ্যম এবং গুনাহ বা পাপের কাফ্ফারা স্বরূপ”। (তিরমিযী) আমর ইবনে আবাসা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল আরো বলেনঃ “প্রত্যেক রাতের শেষভাবে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার একেবারে নিকটতম হয়ে যায়। ঐ সময়ে যদি তোমাদের কেহ পারে আল্লাহ তা‘আলার স্বরণে নিজেকে নিয়োজিত রাখুক”।(তিরমিযী)
আবু মালেক আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. আরো বলেনঃ “ জান্নাতে এমন কিছু কামরা রয়েছে যা এত স্বচ্ছ যে, তার ভিতর থেকে বাহিরের এবং বাহির থেকে বিতরের অংশ দেখা যায়। আল্লাহ তা‘আলা ঐ কামরাগুলো তৈরী করে রেখেছেন তাদের জন্য, যারা ন¤্রভাসী, দুঃস্থদের খাবারের ব্যবস্থ করে অধিক রোযা রাখে এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ে”।(তিরমিযী)
মু‘মিনগণ ! কিয়ামতের দিন আল্লাহ হিসাব নেয়ার পূর্বে নিজের হিসাবটা নিজে নিয়ে নাও এবং নিজের আমলকে সুন্দর কর। জেনে রেখো ! কিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দার কাছ থেকে সর্ব প্রথম যে আমলের হিসাব নিবেন তা হচ্ছে ‘নামায’। যদি বান্দার ফরয নামাযে কমতি হয়ে যায় তাহলে বান্দার নফল নামায দিয়ে ফরয নামাযের ঘাটতি পূরণ করবেন। অতএব আমাদের উচিত অধিক পরিমাণে নফল নামাযসহ সকল প্রকারের নফল ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করা। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেনঃ
“ কিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দা থেকে সর্ব প্রথম নামাযের হিসাব নিবেন। যদি এ হিসাব সফলভাবে দিতে পারে তাহলে সে সফলকাম ও কামিয়াব হয়ে যাবে। আর যদি এ হিসাব ঠিকমত দিতে না পারে তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। যদি বান্দার ফরযে কমতি হয়ে যায় তখন আল্লাহ বলবেন দেখ আমার বান্দার নফল নামায আছে কিনা তাহলে তা দিয়ে ঘাটতি পূরণ করে নাও। অনুরূপভাবে সকল আমল এ হিসেবে হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, অতঃপর যাকাতসহ সকল আমলের হিসাব এভাবে নেয়া হবে”।(আহমদ)
আয়েশা (রা) বলেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেনঃ কোন মুসলিম যদি দৈনিক ফরয নামায ব্যতীত ১২ (বার) রাকাত নফল নামায় আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটা ঘর নির্মাণ করবেন”। (মুসলিম)
বার রাকাত হচ্ছে- ফযরের পূর্বে দুই রাকাত, জোহরের পূর্বে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত এবং এশারের পরে দুই রাকাত।
অনুরূপভাবে ফরয রোযা ব্যতীত নফল রোযা রয়েছে।
যেমন শাওয়ালের ৬ টি রোযাঃ রাসূল সা. বলেনঃ
“যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোযা রাখবে অতঃপর শাওয়ালে ছয়টি রোযা রাখবে তাহলে সে যেন সারা বছর রোযা রাখল”।(মুসলিম)
মুর্হারম মাসের রোযাঃ রাসূল সা. বলেনঃ ফরয রোযা ব্যতীত সর্বোত্তম রোযা হচ্ছে - মুর্হারম মাসের দশ তারিখের রোযা আর ফর নামায ব্যতীত সর্বোত্তম নামায হচ্ছে শেষ রাতের (তাহাজ্জদের) নামায।(মুসলিম)
আরাফার দিনের রোযাঃ রাসূল সা. বলেনঃ “আরাফার দিনের রোযা আমি আশা করি আল্লাহ এর দ্বারা আগামী এক বছর ও অতীত এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন”। (মুসলিম)
এ ছাড়া রয়েছে প্রতি সমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা এবং প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখের রোযা।
নফল দান-সাদাকাঃ দান-সাদাকা দ্বারা দাতার বালা-মুসিবত এমনভাবে দূর হয়ে যায় যেমন পানি দ্বারা আগুন নিভে যায়।
উপস্থিত ভাইসব! সর্বশেষ বলতে চাই, আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যতা লাভ করার জন্য আমাদের উচিত আমরা যেন অধিক পরিমাণে নফল ইবাদাতে মনযোগী হই সেই দিনের প্রস্তুতি স্বরূপ, যে দিন বান্দার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি কোন উপকারে আসবে না। পরিশেষে আমি সহ সকলের জন্য মোহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিন, নিশ্চয়ই তিনি অধিক ক্ষমাশীল ও করুনাময়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন