১০৯৫ খৃস্টাব্দ থেকে ১২৯১ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত ফিলিস্তিন ভূখণ্ড, বিশেষ করে বায়তুল মুকাদ্দাস খৃস্টানদের কর্তৃত্ব বহাল করার জন্য ইউরোপের খৃস্টানরা অনেক যুদ্ধ করে। ইতিহাসে এগুলোকে ক্রুসেড যুদ্ধ নামে আখ্যায়িত করা হয়। ক্রুসেড যুদ্ধের এই ধারা দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে। এ সময় নয়টি বড় যুদ্ধ হয় এবং তাতে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
এসব যুদ্ধে ইউরোপীয়রা সঙ্কীর্ণ দৃষ্টি, পক্ষপাতিত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, অনৈতিকতা ও বর্বরতার যে প্রকাশ ঘটায় তা তাদের কপালে অনপনীয় কলঙ্ক হিসেবে চিরকাল থেকে যায়।
১) প্রথম ক্রুসেড যুদ্ধ ১০৯৭-১১৪৫ খৃঃ-
পোপের যুদ্ধ ঘোষণার পর একে একে চারটি বিশাল সেনাবাহিনী বায়তুল মাকদিস জয়ের সঙ্কল্প নিয়ে রওয়ানা হয়। পাদ্রী পিটারের অধীনে তের লাখ খৃস্টানের এক বিশাল বাহিনী কনস্টান্টিনোপলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথে তারা নিজেদের ধর্মের লোকদের ওপরেই হত্যা, রাহাজানি ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে। তারা যখন ইসলামী এলাকায় প্রবেশ করে, তখন সালজুকী শাসক কালাজ আরসালান এ বাহিনীটিকে নাস্তানাবুদ করে দেন। তাদের প্রচুর সৈন্য নিহত হয়। ক্রুসেডারদের এ অভিযান একেবারেই ব্যর্থ হয়ে যায়।
২) দ্বিতীয় ক্রুসেড যুদ্ধ ১১৪৪-১১৮৭ খৃ.
ক্রুসেডারদের পরাজয়ের খবর সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়লে আবারো পোপ তৃতীয় কনরাড এবং ফ্রান্সের শসক সপ্তম লুইয়ের নেতৃত্বে নয় লাখ সৈন্যের বিশাল বাহিনী মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইউরোপ থেকে রওয়ানা হয়। এই বাহিনীতে নারীরাও ছিল। প্রথম ক্রুসেডের মতো এ বাহিনীর সৈন্যরাও অত্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। সপ্তম লুইয়ের বাহিনীর একটি বড় অংশ সালজুকীদের হাতে ধ্বংস হয়। তারা যখন ইন্তাকিয়ায় পৌছে তখন তাদের তিন চতুর্থাংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অবশিষ্ট সৈন্যরা অগ্রসর হয়ে দামেশ্ক অবরোধ করে। কিন্তু সাইফুদ্দীন জঙ্গী ও নূরুদ্দীন জঙ্গীর সম্মিলিত বাহিনীর প্রচেষ্টায় ক্রুসেডারদের পরিকল্পনা ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। সপ্তম লুই ও কনরাডকে আবার ইউরোপের সীমান্তের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এভাবে দ্বিতীয় ক্রুসেড যুদ্ধ ব্যর্থ হয়ে যায়
৩) তৃতীয় ক্রুসেড
বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের হাতে চলে যাওয়া ক্রুসেডারদের জন্য মৃত্যুর পয়গামের চেয়ে কম ছিল না। মুসলমানদের এ বিজয়ের খবরে সারা ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফলে তৃতীয় ক্রুসেডের আয়োজন শুরো হয়। পুরো ইউরোপ এতে যোগ দেয়। জার্মান সম্রাট ফ্রেডারিক বারব্রোসা, ফ্রান্সের সম্রাট ফিলিপ অগাস্টাস ও ইংল্যাণ্ডর রাজা রিচার্ডশেরদিল নিজেরাই এ যুদ্ধে অংশ নেন। পাদ্রী ও ধর্মযাজকরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে খৃস্টানদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে।
এ ক্রুসেডে খৃস্টানরা আক্কা বন্দর ছাড়া আর কিছুই লাভ করতে পারেনি। তারা বিফল হয়ে ফিরে যায়।জার্মান সম্রাট পালিয়ে যাওয়ার সময় নদীতে ডুবে মারা যান এবং এসব যুদ্ধে প্রায় ছয় লাখ খৃস্টান সৈন্য প্রাণ হারায়।
৪) চতুর্থ ক্রুসেড (১১৯৫ খৃ.)
আইয়ূবী সুলতান আল মালিকুল আদেলের হাতে খৃস্টানরা দৃষ্টান্তমূলক পরাজয় বরণ করে এবং ইয়াফা শহর মুসলমানদের আয়ত্তে চলে আসে।
৫) পঞ্চম ক্রুসেড (১২০৩ খৃ.)
ক্রুসেডাররা কনস্টান্টিনোপলে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংস সাধন করে।
৬) ষষ্ঠ ক্রুসেড (১২২৭ খৃ.)
পোপ এনভিসেন্টের নেতৃত্বে আড়াই লাখ জার্মান সৈন্যের বিশাল বাহিনী সিরিয়ার উপকূলে আক্রমন করে। আইয়ূবী শাষক আল আদল নীলনদের মোহনায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। খৃস্টান বাহিনী নিরাশ হয়ে ফিরে যায়।
৭) সপ্তম ক্রুসেড
আল মালিকুল কামেল ও তার ভাইদের মধ্যে বিরোধের কারণে বায়তুল মুকাদ্দাস শহর ক্রুসেডারদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু কামেলের উত্তরসূরী সালেহ তা আবার ক্রুসেডারদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেন। বায়তুল মুকাদ্দাস যথারীতি মুসলমানদের আয়ত্তে থেকে যায়।
৮) অষ্টম ক্রুসেড
ফ্রান্সের সম্রাট নবম লুই মিসরে হামলা চালান। কিন্তু সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর কাছে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান।
৯) নবম ক্রুসেড
ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম এডওয়ার্ড ও ফ্রান্সের রাজা যৌথভাবে সিরিয়ায় হামলা চালায়। মুসলমানরা ইংরেজ ফরাসী যৌথবাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে দেয়। এ যুদ্ধের ফলে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন থেকে ক্রুসেডারদের অস্তিত্ব নিশ্চিন্ন হয়ে যায়। ক্রুসেডারদের মধ্যে আর যুদ্ধের সাহস রইল না। ।
দু’শতাব্দী ধরে চলতে থাকা যে ক্রুসেড যুদ্ধ মুসলমানদের উপর অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, তাতে ধ্বংস ও নাশকতা ছাড়া কিছুই অর্জন করতে পারেনি ইউরোপীয়রা।
এরপরেও কিন্তু তারা থেমে থাকেনি । মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড তারা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে আজ মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমুসলিমেরা একজোট হচ্ছে।
আফসোস হলেও সত্য যে মুসলমান তা উপলব্ধি করতে পারছেনা। এত নির্যাতিত হবার পরেও মুসলমান অমুসলিমদের শত্রু নয়, বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছে !!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন