শনিবার, ২৭ জুন, ২০১৫

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস : প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও ইসলাম


বাংলাদেশে অটিজম শিশু দেড় লাখ : ব্যাপ্তি বাড়ছে বিশ্বজুড়ে 
শিশুদের অটিজমে আক্রান্তের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। বিশ্বজুড়ে বাড়ছে এ সমস্যার ব্যাপ্তি। আন্তর্জাতিক তথ্য-উপাত্তে বলা হচ্ছে, মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে অটিজম আক্রান্ত শিশুর হার ৩০ শতাংশ বেড়েছে। ছেলেশিশুদের মধ্যে অটিজমের আক্রমণ সাড়ে ৪ গুণ বেশি। জনস্বাস্থ্যের সংকট নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) বলছে, শিশুস্বাস্থ্যের এ সমস্যাকে রুখতে হবে। স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে অটিজম পরিস্থিতি খুব বেশি ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। বিস্তৃত পরিসরে অনুসন্ধান কার্যক্রম (সার্চিং) চালালে এদেশে অটিজমের শিকার অনেক বেশি শিশু শনাক্ত হবে। এমন পরিস্থিতিতে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘অটিজম সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা সবাই।’ ২০১১ সালে ঢাকায় অটিজম সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশে এ বিষয়ে সচেতনতা ও জাগরণ তৈরি হয়। মানুষ অটিজম সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারে। সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন (সিনাক), সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রয়াস স্কুলসহ সেবাদানকারী অন্যান্য সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, ওই সম্মেলনের পর থেকে অভিভাবকরা অস্বাভাবিক আচরণের শিশুদের সেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসতে শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকন্যা ও যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত মনস্তত্ববিদ অটিজম এক্সপার্ট সায়মা হোসেন পুতুল ওই সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশে অটিজম আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি বৈশ্বিক অটিজম কর্মসূচিতে নেতৃত্বদানকারী মার্কিন সংস্থা ‘অটিজম স্পিকসে’র সদস্য। মূলত তার প্রচেষ্টায় দেশে অটিজম সচেতনতা গড়ে উঠে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধী। শ্রীলংকার ফার্স্টলেডি অটিজম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কাতারে আমীরের অতীব নিকটজন এ অটিজম সচেতনতা গড়তে কাজ করেন। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারও অটিজম মোকাবেলায় পরিচালিত আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিত্বরা এ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।অটিজম শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা দেখা দেয়। মাতৃগর্ভ থেকে শিশুর জন্ম পর্যন্ত কোনো পর্যায়ে শিশুর মস্তিষ্ক ঠিকমতো বিকশিত না হলে অটিজম দেখা দেয়। এসব শিশু নিজের কাজ নিজে করতে পারে না। ঠিক সময়ে কথা বলতে পারে না। আচার-আচরণে অপরিপক্ব হয়। আলোর সংস্পর্শ পেলে পালানোর চেষ্টা করে। ডাক দিলে সাড়া দেয় না। কারও চোখে চোখ রাখে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো অটিজমের লক্ষণ। অটিজম আক্রান্ত শিশু তুর্য, সুনেহরা, আনা, জাহিনের অবস্থা এখন অনেকটা স্বাভাবিক। চিকিৎসক, থেরাপিস্ট, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিবিড় পরিচর্যায় তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সহজে চোখে পড়ে। ২ বছর আগে যখন এই শিশুদের অটিজম সন্দেহে সিনাকে আনা হয়েছিল, তখনকার চিত্র ছিল একেবারে ভিন্ন। কেউ অতিরিক্ত আগ্রাসী, কেউবা অস্বাভাবিক চুপচাপ, কেউ ডাকলে সাড়া দিত না, কারও মুখে ছিল না হাসি।
শিশুর অস্বাভাবিকতা বাবা-মাকে ঠেলে দিয়েছিল গভীর হতাশায়। সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ায় এখন এই শিশুরা টুকটাক নিজেদের কাজগুলো করতে শিখেছে। শিশু নিউরোলজিস্ট ও অটিজম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে নিবিড় পরিচর্যায় অস্বাভাবিক আচরণের শিশুরাও সমাজের মূলধারায় ফিরতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, ‘ওরাও পেতে পারে পরম যত্ন’, ‘ওদেরও রয়েছে সুন্দর ভবিষ্যৎ।’ সর্বশেষ আদমশুমারিমতে, দেশে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। আন্তর্জাতিকভাবে কোনো দেশের মোট প্রতিবন্ধীর ১ শতাংশকে অটিজমের শিকার বলে ধরে নেয়া হয়। এই উপাত্তের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, দেশে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা হতে পারে আনুমানিক দেড় লাখ। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৬৮ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজমের শিকার বলে শনাক্ত হচ্ছে। দুই বছর আগেও প্রতি ৮৮ জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু আক্রান্ত হতো। অর্থাৎ, দু’বছরের ব্যবধানে অটিজমের ব্যাপ্তি বেড়ে গেছে ৩০ শতাংশ। সিডিসি আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ২০০৮ ও ২০১০ সালের তথ্যের তুলনা করা হয়েছে। সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি অঙ্গরাজ্যে ৮ বছরের কম বয়সী ৫ হাজার ৩০০ শিশুর ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছেলেশিশুদের অটিজমে আক্রান্তের প্রবণতা অনেক বেশি। ছেলেরা মেয়েশিশুর তুলনায় সাড়ে ৪ গুণ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ছেলেদের মধ্যে প্রতি ৪২ জনে একজন পজেটিভ হচ্ছে, আর মেয়েদের মধ্যে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতি ১৮৯ জনে একজন। সিডিসির তথ্য নিয়ে ইতিমধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএনসহ বিভিন্ন বার্তা সংস্থা। সিডিসি জানিয়েছে, বিস্তৃত কর্মোদ্যোগ সত্ত্বেও এখনও অটিজম আক্রান্ত শিশুদের শনাক্ত করার গড় বয়স ৪ বছর। যদিও দুই বছরের মধ্যে এই শিশুদের শনাক্ত করা সম্ভব। অভিভাবকদের সচেতন হওয়া ও অটিজম সন্দেহ হলে দ্রুত সেবা কেন্দ্রে আনার পরামর্শ দিয়ে সিডিসি বলেছে, যত কম বয়সে শনাক্ত হবে, ততোই শিশুকে স্বাভাবিক আচরণে ফিরিয়ে আনার সুযোগ বেশি থাকবে। সূত্র : দৈনিক যুগান্তর।
প্রতিবন্ধী কাকে বলে 
আভিধানিক অর্থে প্রতিবন্ধী হচ্ছে, দৈহিক শক্তির একান্ত অভাব বা অঙ্গহানি হেতু যাহারা আশৈশব বাধাপ্রাপ্ত, মূক-বধির, অন্ধ, খঞ্জ ইত্যাদি। [ সংসদ বাংলা অভিধান/৩৮২]
পারিভাষিক অর্থে প্রতিবন্ধীতা হচ্ছে, দেহের কোন অংশ বা তন্ত্র আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে, ক্ষনস্থায়ী বা চিরস্থায়ীভাবে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলা। [উইকিপিডিয়া, বাংলা]
অস্বাভাবিক সৃষ্টির রহস্য
মহান আল্লাহ সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি ভাল-মন্দেরও সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে কিছু সৃষ্টিকে আমরা অনেক সময় অস্বাভাবিক ও বিকৃত দেখতে পাই। অনেকে এর দোষটা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকে দেয়; অথচ তিনি পুত-পবিত্র দোষমুক্ত, আবার অনেকে সেই সৃষ্টিকেই দোষারোপ করে। এর পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য ও রহস্য মহান । সেটা এক মাত্র তিনিই জানেন। তবে কোরান ও হাদিসের আলোকে এই সৃষ্টি রহস্যর কিছু কারণ অনুমান করা যেতে পারে যেমন,
[১]- যেন বান্দা তাঁর একচ্ছত্র ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে যে, তিনি সব বিষয়ে ক্ষমতাবান। তিনি যেমন স্বাভাবিক সুন্দর সৃষ্টি করতে সক্ষম, তেমন তিনি এর ব্যতিক্রমও করতে সক্ষম।
[২]- আল্লাহ যাকে এই আপদ থেকে নিরাপদে রেখেছেন; সে যেন নিজের প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুকম্পাকে স্মরণ করে, অতঃপর তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কারণ আল্লাহ চাইলে তার ক্ষেত্রেও সেই রকম করতে পারতেন।
[৩]- প্রতিবন্ধীকে আল্লাহ তাআলা এই বিপদের বিনিময়ে তাঁর সন্তুষ্টি, দয়া, ক্ষমা এবং জান্নাত দিতে চান। নবি (সা.) বলেন, ‘‘আমি যার দুই প্রিয়কে (দুই চোখকে) নিয়ে নিই, অতঃপর সে ধৈর্য ধরে ও নেকির আশা করে, তাহলে আমি তার জন্য এর বিনিময়ে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুতে সন্তুষ্ট হই না’’ [ তিরমিযি, হাদিস নং ১৯৫৯]
প্রতিবন্ধীর দায়িত্ব ও কর্তব্য
[১]- যেন সে ধৈর্যধারণ করে এবং সন্তুষ্ট থাকে কারণ এটি ভাগ্যর লেখা, যা ঈমানের অঙ্গ। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরানে বলেন, পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগৎ সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। এটা এ জন্যে, যাতে তোমরা যা হারাও তাতে দুঃক্ষিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে উল্লসিত না হও। আল্লাহ উদ্ধত ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। [ সুরা হাদিদ/২২-২৩]
[২]- যেন সে বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ যখন কোন মুমিনকে পরীক্ষায় ফেলেন, তখন তিনি তাকে ভালবাসেন এবং অন্যান্যদের থেকে তাকে বেশি অগ্রাধিকার দেন। তাই তিনি নবিগণকে সবচেয়ে বেশি বিপদাপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছিলেন। নবি (সা.) বলেন, “নবিগণ সব চেয়ে বেশি পরীক্ষিত হন, অতঃপর তাদের থেকে যারা নিম্ম স্তরের। মানুষকে তার দ্বীন অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হয়, যদি তার দ্বীনী অবস্থা প্রবল হয়, তাহলে তার বিপদও কঠিন হয়। আর যদি তার দ্বীন দুর্বল হয়, তাহলে তার পরীক্ষা সে অনুপাতে হয়। বিপদ বান্দার পিছু ছাড়েনা পরিশেষে তার অবস্থা এমন হয় যে, সে পাপ মুক্ত হয়ে জমিনে চলা-ফেরা করে। [তিরমিযি, হাদিস নং১৪৩, ইবন মাজাহ]
[৩]- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেন মনে রাখে যে, দয়াবান আল্লাহ মুমিনকে তার প্রত্যেক বিপদের বদলা দেন, যদিও সেই বিপদ নগণ্য হয়, এমনকি কাঁটা বিধলেও। নবি (সা.) বলেন, ‘‘মুসলিম ব্যক্তিকে কষ্ট, ক্লান্তি, দুঃখ, চিন্তা, আঘাত, দুশ্চিন্তা গ্রাস করলে এমন কি কাঁটা বিধলেও আল্লাহ তাআলা সেটা তার পাপের কাফ্ফারা করে দেন’’। [ বুখারি, মুসলিম]
[৪]- মুমিন প্রতিবন্ধী যেন তার নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধীতাকে ভুলে গিয়ে শরীরের বাকি অঙ্গগুলোকে কাজে লাগায়। কারণ কোন এক অঙ্গের অচলতা জীবনের শেষ নয়। তাছাড়া দেখা গেছে, যার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কোন একটি অচল তার বাকি ইন্দ্রিয় বা অঙ্গগুলো বেশি কিংবা দ্বীগুণ সচল।
প্রতিবন্ধীদের জন্য আমাদের করণীয়
[১]- নিজের সুস্থতা ও আরোগ্যতার কারণে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং প্রতিবন্ধী ভাইদের জন্য দুআ করা।
[২]- যথাসম্ভব প্রতিবন্ধীদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। সেটা অন্ধ ব্যক্তিকে রাস্তা চলায় সাহায্য করা হোক কিংবা তাদের জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে সাহায্য করা হোক কিংবা তাদের শিক্ষাদানে সহযোগিতা হোক। সুস্থদের সামান্য সাহায্যে তাদের জীবন-যাপন সহজ হতে পারে, তাদের মুখে ফুটতে পারে হাসি এবং তারা দাঁড়াতে পারে সমাজের সবার সাথে এক লাইনে।
মনে রাখা দরকার, প্রতিবন্ধীর দেখাশোনা করা তার উপর জরূরী, যে তার অভিভাবক। আর সমষ্টিগত ভাবে সকল মুসলিমের জন্য ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ সমাজের কিছু লোক তাদের দেখা-শোনা করলে বাকি লোকেরা গুনাহগার হবে না।
[৩]- বিশেষ করে তাদের এমন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যার ফলে তারা নিজের প্রয়োজনীয় কাজ নিজে করতে পারে এবং নিজে রোজগার করে স্বয়ং সম্পন্ন হতে পারে।
ইসলামে প্রতিবন্ধীর গুরুত্ব ও মর্যাদা
[১]- সবাই সমান, আর তাক্বওয়াই হচ্ছে মানুষ মর্যাদার মান-দন্ড : ইসলামে মানব মর্যাদার মাপ-কাঠি রং, বর্ণ, ভাষা, সৌন্দর্য্যতা, সুস্থতা, ইত্যদি নয়। বরং মান-দন্ড হচ্ছে তাক্বওয়া তথা আল্লাহ ভিরুতা। যে যত বেশি মুত্তাকী আল্লাহ তাকে তত বেশি ভাল বাসেন। এই মাপ-কাঠির মাধ্যমে ইসলাম প্রতিবন্ধী ও অপ্রতিবন্ধীর মাঝে ভেদাভেদ দূরীভূত করেছে এবং উভয়কে সমমর্যাদা দান করেছে। আল্লাহ পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেন, হে মানুষ ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। [সুরা হুজুরাত/১৩]
এই মর্মে নবি (সা.) বলেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের শরীর ও আকৃতির দিকে দেখেন না বরং তোমাদের অন্তরের দিকে দেখেন।’’ [মুসলিম]
[২]- নর-নারী যেন এক অপরের উপহাস না করে : প্রতিবন্ধীর সমস্যা প্রতিবন্ধীই বেশি জানে কিন্তু যখন কোন সুস্থ ব্যক্তি তাকে উপহাস করে তখন সে দারুণ ভাবে মর্মাহত হয়। তাই ইসলাম সুস্থ হলেও এক অপরের উপহাস করা নিষেধ করেছে। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা, যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর কোন নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। [সুরা হুজুরাত/১১]
[৩]- সামাজিক স্বীকৃতি : প্রাচীন যুগে অনেকে প্রতিবন্ধীদের উপেক্ষা করতো, তাদের সামাজিক মান-মর্যাদা দেওয়া হত না। এমনকি এখনও কিছু সমাজে তা দেখা যায়। যার ফলে বর্তমানে আন্তর্জাতিক আইন তৈরি করে তাদের অধিকার দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রিয় নবি মুহাম্মদ (সা.) ১৪শত বছর পূর্বে বারংবার তাঁর অনুপস্থিতির সময় মদীনার মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব এক প্রতিবন্ধী সাহাবীকে অর্পন করে তাদের সমাজের সর্ব্বোচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত করার নজীর তৈরি করেন। তিনি সেই প্রতিবন্ধী সাহাবীকে আযান দেওয়ার কাজেওে নিযুক্ত করেছিলেন। সেই সম্মানীয় প্রতিবন্ধী সাহাবী হচ্ছেন আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম। [দেখুন, বুখারি, অধ্যায়ঃ মাগাযী, অনুচ্ছেদ, বদরের যুদ্ধ এবং অহুদের যুদ্ধ]
[৪]- শরিয়তের বিধান বাস্তবায়নে ছাড় প্রদান : ফিকাহ মূলনীতির একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি হচ্ছে, ‘‘লা তাকলীফা ইল্লা বিমাক্বদূরিন্ আলাইহ্ ’’। অর্থাৎ শারয়ি আদেশ জরূরী নয় কিন্তু ক্ষমতাবানের প্রতি। এই ফিক্হী মূলনীতিটির ব্যখ্যা হচ্ছে, প্রত্যেক ফরয বিধান যা মহান আল্লাহ মানুষের প্রতি ধার্য করেছেন, যদি মানুষ তা পালনে সক্ষম হয়, তাহলে তার প্রতি তা পালন করা আবশ্যিক হবে, সে প্রতিবন্ধী হোক বা অপ্রতিবন্ধী। আর যদি সম্পূর্ণরূপে সে তা বাস্তবায়ন করতে অক্ষম হয়, তাহলে তা থেকে সে মুক্তি পাবে। আর যদি কিছুটা করতে সক্ষম হয় এবং কিছুটা করতে অক্ষম হয়, তাহলে যেই পরিমাণ করতে সক্ষম হবে, সেই পরিমাণ তাকে পালন করতে হবে এবং যেই পরিমাণ করতে অক্ষম হবে, সেই পরিমাণ থেকে সে ছাড় পেয়ে যাবে। এর প্রমাণে আল্লাহর বাণী, তিনি বলেনঃ (আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না ) [ বাক্বারাহ/২৮৬]
এবং নবি (সা.) বলেন, ‘‘যখন আমি তোমাদেরকে কোন আদেশ করি, তখন তা বাস্তবায়ন কর যতখানি সাধ্য রাখ’’। [বুখারি, মুসলিম]
ইসলামের এই মনোরম বিধানে প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে সহজতা ও সহনশীলতা। তাই এমন প্রতিবন্ধী, যে ইসলামের বিধান পালনে একে বারে অক্ষম যেমন পাগল ও জ্ঞানশূন্য ব্যক্তি, তার উপর ইসলাম কোন বিধান জরূরী করে না। আর আংশিক প্রতিবন্ধী যে কিছুটা করতে সক্ষম তার প্রতি অতটুকুই পালনের আদেশ দেয়। যেমন যদি কারো অর্ধ হাত কাটা থাকে তাহলে যতটুকু অংশ বাকি আছে অযুর সময় ততটুকু ধৌত করতে আদেশ দেয়। অনুরূপ প্রতিবন্ধকতার কারণে নামাযে দাঁড়াতে না পারলে বসে আদায় করার আদেশ দেয়। এইভাবে অন্যান্য অবস্থা।
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধীদের অধিকার
সমাজ ও পরিবারে অন্য সদস্যদের মতো প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও তাদের ন্যায্য পাওনা সম্পর্কে ইসলাম গুরুত্ব প্রদান করেছে। সাধারণত প্রতিবন্ধী বলতে স্বাভাবিক কর্ম সম্পাদনে অক্ষম ব্যক্তিকে বোঝায়। প্রতিবন্ধী মূলত শারীরিক, মানসিক, দৃষ্টি, শ্রবণেন্দ্রিয়র ক্ষতির কারণে হয়ে থাকে। তাদেরও মৌলিক চাহিদা পূরণ, স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। ইসলাম প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইসলাম প্রতিবন্ধীদের মানবিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে মানুষকে কর্তব্য-সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছে। প্রতিবন্ধীরা শারীরিক, মানসিক কিংবা আর্থ-সামাজিক অক্ষমতা বা অসুবিধার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। প্রতিবন্ধীর প্রতি দয়া-মায়া, সেবা-যত্ন, সুযোগ-সুবিধা ও সাহায্য-সহদয়তার হাত সম্প্রসারণ করা ইসলাম অনুসারীদের একান্ত কর্তব্য। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো তাদেরও ন্যায্য প্রাপ্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও এবং বন্দিকে মুক্ত করে দাও।’ (বুখারি)
শারীরিক, শ্রবণ, বাক, বুদ্ধি ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের একটি অংশ জš§গতভাবে প্রতিবন্ধী। অপর অংশ দুর্ঘটনার কারণে প্রতিবন্ধিত্বের শিকার হয়। জš§প্রতিবন্ধীই হোক আর দুর্ঘটনাজনিত প্রতিবন্ধীই হোক, ইসলামের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা, সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং তাদের অগ্রাধিকার দেয়া অবশ্য কর্তব্য। বিপদ-আপদে সব সময় প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানো মানবতার দাবি ও ইমানি দায়িত্ব। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে অসদাচরণ বা তাদের উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ বা ঠাট্টা-তামাশা করা সৃষ্টিকে তথা আল্লাহকে উপহাস করার শামিল।
প্রতিবন্ধীদের সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা উপলব্ধি করতে পারেন সেসব ধর্মপ্রাণ সংবেদনশীল মানুষ, যারা অন্যের দুঃখ-বেদনাকে সহমর্মিতার দৃষ্টিতে দেখেন। নবি করিম (সা.) প্রতিবন্ধীদের সর্বদাই অত্যন্ত ভালোবাসতেন ও বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাক্তুম (রা.) কে নবিজি তার অপার স্নেহ ধন্য করেছেন। ইসলাম শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে দুর্বল-অসহায় প্রতিবন্ধীদের অধিকারের ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবন্ধীরাও তাদের পিতা-মাতার প্রিয় সন্তান। তাদের মধ্যেও সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, স্নেহ-ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের অনুভূতি আছে। ইসলামের আলোকে প্রতিবন্ধীদের পরমুখাপ্রেক্ষিতার পথ থেকে স্বাবলম্বিতার পথে আনার সব রকম প্রচেষ্টা জোরদার করার তাগিদও আছে। নবি করিম (সা.) বলেছেন, বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন। (মুসলিম)
প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও ইসলাম
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ জন্মগতভাবে সামাজিক জীব। সমাজবিচ্ছিন্ন মানবজীবন কল্পনা করাও অসম্ভব। বস্তুত সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করা মানুষের স্বভাবগত ও প্রকৃতিগত ব্যাপার। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে জান্নাতে একা থাকতে দেওয়া হয়নি। বরং মা হাওয়াকেও (আ.) সৃষ্টি করে তাঁর সঙ্গে একত্রে বসবাস করতে দেওয়া হয়েছিল। মানব ইতিহাসের গোড়াতেই সমাজের মূলভিত্তি পরিবার প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যখন তাহযীব ও তামাদ্দুনের ভিত্তি স্থাপিত হয়নি, তখনো মানুষ পরিবারবদ্ধ হয়ে মিলেমিশে বাস করত। পরে এই পারিবারিক ইউনিটগুলো গোত্রে এবং গোত্রগুলো সমাজে বিস্তার লাভ করে। আমাদের এই সমাজে নানা শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। তাদের কেউবা ক্ষমতাবান বা বিত্তশালী, কেউবা দুর্বল অসহায় প্রতিবন্ধী শ্রেণী। সামাজিক সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেরই রয়েছে সমান অধিকার। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় দুর্বল ও অসহায় এই প্রতিবন্ধী শ্রেণী নানা নিগৃহের শিকার। কিন্তু ইসলাম প্রতিবন্ধী শ্রেণীকেও সমাজের সদস্য হিসেবে গণ্য করে তাদের অধিকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাধারণ অর্থে প্রতিবন্ধী বলতে আমরা বুঝি কর্মসম্পাদনে অক্ষম ব্যক্তি। প্রতিবন্ধী মূলত শারীরিক, মানসিক, বাক, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তির ক্ষতির কারণে হয়ে থাকে। আমরা যারা নিজেদের সুস্থ-সবল বলে মনে করে সমাজের এই প্রতিবন্ধী শ্রেণীকে অবহেলার পাত্র হিসেবে গণ্য করি, তাদেরও মনে রাখা উচিত, একজন সুস্থ-সবল মানুষও যেকোনো সময় আল্লাহ প্রদত্ত শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে প্রতিবন্ধী শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আর এ অবস্থা প্রতিনিয়ত হচ্ছে বিভিন্ন দুর্ঘটনার মাধ্যমে।
আমরা প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা উল্টালে এসব বীভৎস চিত্রের মুখোমুখি হই এবং একজন সুস্থ ও সবল মানুষের প্রতিবন্ধিত্বের অবস্থা দেখে শিহরিত হই। তাই সমাজের এ প্রতিবন্ধী শ্রেণীকে তাদের অধিকার আদায়ের সুযোগ দেওয়া উচিত। তাদেরও মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং স্বাভাবিক সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। পবিত্র ধর্ম ইসলাম প্রতিবন্ধীদের মানবিক অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত কার্যকরভাবে মানুষকে তাদের প্রতি কর্তব্য-সচেতন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা এসেছে, 'আর তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক বা অধিকার রয়েছে।' (৫১:১৯) অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা পেলে একজন প্রতিবন্ধীও সুন্দর ও সুস্থভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। অনুকূল পরিবেশ, আর্থিক সহযোগিতা, পারস্পরিক সহমর্মিতা ও উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে তারাও সমাজ, দেশ ও জাতি গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে পারে। প্রতিবন্ধীদের শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক অক্ষমতার জন্য দূরে ঠেলে না দিয়ে তাদের প্রতি অন্যদের মতো সুন্দর আচরণ করা ইসলাম অনুসারীদের মানবিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে মহানবি (সা.) বলেছেন, 'সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন। আল্লাহর কাছে প্রিয় সৃষ্টি হলো, যে তাঁর সৃষ্টির প্রতি সদয় আচরণ করে।' প্রিয় নবি (সা.) আরো বলেছেন, 'যে ব্যক্তি ক্ষুধার্তকে অন্ন দান করে, আল্লাহপাক তাকে জান্নাতে ফল খাওয়াবেন। যে তৃষ্ণার্তকে পানি পান করায়, আল্লাহ জান্নাতে তাকে শরবত পান করাবেন। যে কোনো দরিদ্রকে বস্ত্র দান করে, আল্লাহপাক তাকে জান্নাতে পোশাক দান করবেন।' (তিরমিজি)
প্রতিবন্ধীরা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। কেউ জন্মগত প্রতিবন্ধী, কেউবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতিবন্ধিত্বের শিকার। তাই জন্মগত প্রতিবন্ধী হোক কিংবা দুর্ঘটনাজনিত প্রতিবন্ধীই হোক_ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের বিভেদ ভুলে তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা আমাদের কর্তব্য। প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর কাছে কোনো সামাজিক শ্রেণীভেদ ছিল না। তিনি সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে সমান চোখে দেখতেন। বরং নবি কারীম (সা.) সমাজের অবহেলিত লোকদের ব্যাপারে একটু বেশিই খোঁজখবর নিতেন। তিনি প্রতিবন্ধীদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং তাদের অধিকারের প্রতি সজাগ থাকতে সাহাবিদের নির্দেশ দিতেন। তাই দেখা যায়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুমকে (রা.) নবিজি তাঁর অপার ভালোবাসায় ধন্য করেছেন। আর রাসুল (সা.) যখনই তাঁকে দেখতেন, তখনই বলতেন, 'স্বাগতম জানাই' তাকে, যার সম্পর্কে আমার প্রতিপালক আমাকে ভর্ৎসনা করেছেন। পরে মহানবি (সা.) এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবিকে দুবার মদিনায় অস্থায়ী শানকর্তা নিযুক্ত করেন। এ জন্য প্রতিবন্ধীদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন নবি করীম (সা.)-এর অনুসরণীয় সুন্নত বটে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ কোনো না কোনো ধরনের প্রতিবন্ধিত্বের শিকার। জাতীয় পর্যায়ে জরিপ না থাকায় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা কত তা জানা নেই। তবে এই প্রতিবন্ধিত্বের হার দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই সমাজে যেসব প্রতিবন্ধী আছে তাদের সমাজ, দেশ বা জাতির বোঝা মনে না করে উন্নত প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও কাজের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে তাদের মানবসম্পদে রূপান্তর করার সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। এতে একদিকে যেমন এরা স্বাবলম্বী হতে পারবে, অন্যদিকে দেশীয় অর্থনীতিতেও অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারবে। আর ইসলাম মানবকল্যাণের ধর্ম হিসেবে সবাইকে প্রতিবন্ধীদের যথার্থ অধিকারের প্রতি সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছে। নবি করীম (সা.) বলেছেন, 'বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন।' (মুসলিম শরিফ)
গ্রন্থনা : মাওলানা মিরাজ রহমান
সিনিয়ার সহ-সম্পাদক, প্রিয় ইসলাম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন