সোমবার, ২৯ জুন, ২০১৫

আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদের বললেন

"আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদের বললেন, আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুদ্ধ ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব। অতঃপর যখন তাকে ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে রূহ থেকে ফুঁক দেব.........." [সূরা হিজরঃ ১৫- ১৬]
ইবনু জারীর (রহ) বলেন, আদম (আঃ) এর মধ্যে রূহ ফুঁকে দেবার পূর্বে অর্থাৎ উনার মধ্যে প্রাণের সঞ্চারন হবার পূর্বে উনি দীর্ঘ দিন (বছরের পর বছর) মাটির ছাঁচ আকারে (পূর্ণবয়স্ক দেহাবয়ব) ছিলেন...
এখানে উল্লেখ্য যে, আদম (আঃ) এর সৃষ্টির সূচনা মাটি দ্বারা, অতঃপর তার সাথে পানি মিশানোর ফলে কাদামাটিতে রূপান্তরিত হয়, অতঃপর কাদামাটি কালো বর্ণ ধারণ করে, অতঃপর আগুনের স্পর্শ ব্যতীত শুকিয়ে তা ঠনঠনে হয়। অতঃপর আল্লাহ তাতে রূহ সঞ্চার করেন, ফলে তা মানুষের আকৃতি লাভ করে। এটি হচ্ছে, অন্যান্য সৃষ্টি থেকে আদম (আঃ) এর 'ইউনিক' বৈশিষ্ট্য... [এসব কুর'আনেই বর্ণিত রয়েছে]
তো, আদম (আঃ) যখন এসকল ধাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং উনার মধ্যে রূহ ফঁকে দেবার পূর্বের অবস্থায় ছিলেন, তখন ইবলিশের মনোভাব কিরূপ ছিল?
একথা তো সকলেরই জানা যে, ইবলিশ ছিল জ্বিনদের একজন। পথভ্রষ্ট হবার পূর্বে সে ছিলো সর্বনিম্ন আসমানের ফেরেশতাদের সর্দার এবং জ্ঞান ও অধ্যবসায়ের দিক থেকে সে ছিল ফেরেশতাদের চেয়েও সেরা। সে সকল ফেরেশতা অপেক্ষা অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত ছিল। তার মর্যাদাস্বরূপ উপাধি ছিল 'আযাযীল'। ইবলিশ ও তার অধিনস্ত ফেরেশতাগণ জান্নাতের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করত।
এভাবে চলাবস্থায় এক পর্যায়ে ইবলিশের মনে এরূপ ভাবের উদয় হলো যে, ফেরেশতাদের উপর তার শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে, আর সেজন্যই আল্লাহ তা'আলা তাকে এমন ক্ষমতা দান করেছেন।এরূপ চিন্তাভাবনা তার মধ্যে আত্ম-অহংকার বোধ জাগ্রত করল। [ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসউদ রাঃ]
যা হোক, আদম (আঃ) এর সৃষ্টি প্রক্রিয়া যখন চলছিল তখন ইবলিশ অবাক দৃষ্টিতে আদম আঃ এর দেহাবয়ব দিকে তাকিয়ে থাকত, কখনোও কখনোও আদম আঃ এর সেই দেহাবয়বের চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখত আর আশ্চর্যান্বিত হত। সে বলত,
'নিশ্চয়ই তোমাকে কোন বড় উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে'
এভাবে একদিন সে আদম (আঃ) উক্ত দেহাবয়ব (রূহবিহীন) পরীক্ষা করল [কোন বর্ণনায় 'দেহাবয়বের সম্মুখ ভাগ দিয়ে প্রবেশ করে পশ্চাৎ ভাগ দিয়ে বের হল' বলা হয়েছে] এবং উপলব্ধি করলো যে, এই স্ট্রাকচার ঠনঠনে এবং ভেতরে শূণ্য। সে বুঝলো, এই সৃষ্টির আত্মসংযম কম থাকবে। তখন সে বলল,
'যদি তোমার উপর আমাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে ধ্বংস করব আর যদি আমার উপর তোমাকে ক্ষমতা দেয়া হয়, তাহলে আমি অবশ্যই তোমার অবাধ্যতা করবো!' [ইবনু জারীর]
কিন্তু, আল্লাহ তা'আলা এই বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন, এজন্য আল্লাহ বলেন,
"..........আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত আছি? আর সে বিষয়ও জানি, যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর।" [সূরা আল-বাকারাহঃ ৩৩]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন