রবিবার, ২৮ জুন, ২০১৫

রোযা ভাঙ্গার কারণসমূহঃ

১। স্ত্রী- সঙ্গমঃ স্ত্রী সঙ্গমের ফলে বীর্যপাত হোক, আর নাই হোক রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। বলা বাহুল্য রোযা অবস্থায় যখনই রোজাদার স্ত্রী-মিলন করবে অর্থাৎ এ মিলন যদি রমাযানের দিনে সংঘটিত হয়; তাহলে তখনই তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং তার এই কঠিন অপরাধের কারনে তার উপর ৫টি জিনিষ সংঘটিত হবেঃ- 
(ক) এটা কবীরাহ গুনাহ হিসাবে গণ্য হবে; এর জন্য অবশ্যই তাকে তওবা করতে হবে। (খ) তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
(গ) তাকে ঐ দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
(ঘ) তাকে ঐ দিনের রোযা (রমাযানের পরে) ক্বাযা করতে হবে।
(ঙ) তাকে বৃহৎ কাফফারা আদায় করতে হবে। আর তা হল, একটি ক্রীতদাসকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে হবে। তাতে সক্ষম না হলে, লাগাতার বা একটানা দুই মাস রোযা রাখতে হবে। তার তাতে সক্ষম না হলে, ৬০ জন মিসকিনকে খাদ্যদান করতে হবে।
বিঃদ্রঃ- যে মহিলার উপর রোযা ফরয, সেই মহিলা যদি সম্মত হয়ে রমাযানের দিনে স্বামী-সঙ্গম করে, তবে তার উপরও কাফফারা ওয়াজিব হবে। অবশ্য তার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও স্বামী যদি তার সাথে জোরপূর্বক সহবাস করতে চায়, তাহলে তার জন্য যথাসাধ্য তা প্রতিহত করা জরুরী। আর রুখতে না পারলে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না, কিন্তু স্বামীর কঠিন গুনাহ হবে এবং তার উপর অবশ্যই কাফফারা ওয়াজিব হবে।
(২) বীর্যপাতঃ জাগ্রত অবস্থায় ইচ্ছা করে হস্তমৈথুন, স্ত্রী স্পর্শ, চুম্বন, কোলাকুলি বা যে কোন উপায়েই হোক, বীর্যপাত ঘটালে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে; এবং তার উপর ক্বাযা ওয়াজিব হবে। পরন্ত সকলেরই জেনে রাখা উচিৎ, হস্তমৈথুন রোযার মাসে যেমন হারাম, তেমনি অন্য মাসেও তা হারাম। কিন্তু রমাযানে তা আরও অধিকরূপে হারাম; যার ফলে হস্তমৈথুনকারী কঠিন গুনাহগার হবে।
(৩) ইচ্ছাকৃত পানাহার করাঃ পানাহার বলতে পেটের মধ্যে যে কোন প্রকার কোন খাদ্য অথবা পানীয় পৌঁছানোকে বুঝানো হয়েছে। হোক তা মুখ দিয়ে অথবা নাক দিয়ে। পানাহারের বস্তু যেমনই হোক; উপকারী হোক অথবা অপকারী; হালাল হোক অথবা হারাম; অল্প হোক অথবা বেশী।
(৪) যা এক অর্থে পানাহারঃ স্বাভাবিক পানাহারের পথ ছাড়া অন্য ভাবে পানাহারের কাজ নিলে তাতেও রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন খাবারের কাজ দেয় এমন (স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন) নিলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা, তাতে পানাহারের অর্থ বিদ্যমান। তদনুরূপ দেহের রক্ত পরিবর্তন করলেও রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ, তাতে দেহের মধ্যে নতুন ও নির্মল রক্ত প্রদান করা হয়।
(৫) ইচ্ছাকৃত বমি করাঃ অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে (মুখে আঙুল দিয়ে, পেট নিঙরে ইত্যাদির মাধ্যমে) পেট থেকে খানা অথবা পানীয় জাতীয় কিছু বের করা। যার মাধ্যমে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং ঐ রোযার ক্বাযা করতে হবে। পক্ষান্তরে সামলাতে না পেরে অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হয়ে গেলে রোযা নষ্ট হবে না।
(৬) নারীদের মাসিক ঋতু ও সন্তান প্রসব জনিত কারণে রক্তস্রাবঃ মহিলাদের মাসিক অথবা নিফাসের রক্ত বের হতে শুরু হলে তার রোযা নষ্ট হয়ে যায়। যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার সামান্য ক্ষণ আগে রক্ত দেখা দেয়, তাহলেও তার ঐ দিনের রোযা নষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু সূর্য অস্ত যাওয়ার সামান্য ক্ষণ পরে রক্ত দেখে দিলে তার ঐ দিনের রোযা নষ্ট হবে না। এসমস্ত কারনে রোযা নষ্ট হয়ে গিলে, রমাদানের পর ঐ রোযার ক্বাযা আদায় করতে হবে।
(৭) দূষিত রক্ত বের করাঃ দেহ থেকে দূষিত রক্ত বের করলে রোযা নষ্ট হবে কি না- সেটা নিয়ে যদিও মতভেদ রয়েছে কিন্তু পূর্বসতর্কতামূলক আমল হল, রোজাদার রোযা অবস্থায় দিনের বেলায় ঐ কাজ করবে না।
(৮) নিয়ত বাতিল করাঃ নিয়ত প্রত্যেক ইবাদত তথা রোযার অন্যতম রুকন। আর সারা দিন সে নিয়ত নিরবচ্ছিন্নভাবে মনে জাগ্রত রাখতে হবে; যাতে রোজাদার রোযা না রাখার বা রোযা বাতিল করার কোন প্রকার দৃঢ় সংকল্প করে না বসে। বলা বাহুল্য, রোযা না রাখার নিয়ত করলে এবং তার নিয়ত বাতিল করে দিলে সারাদিন পানাহার আদি না করে উপবাস করলেও রোযা বাতিল বলে গণ্য হবে।
(৯) মুরতাদ্দ বা কাফের হওয়াঃ কোন সন্দেহ, কথা বা কাজের ফলে যদি কোন রোজাদার মুরতাদ্দ (কাফের) হয়ে যায় (নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক), তাহলে তার রোযা বাতিল হয়ে যাবে। অতঃপর যদি সে তওবা করে পুনরায় মুসলিম হয়, তাহলে ঐ রোযা তাকে ক্বাযা করতে হবে।
(১০) বেহুশ হওয়াঃ রোজাদার যদি ফজর থেকে নিয়ে মাগরিব পর্যন্ত বেহুশ থাকে, তাহলে তার রোযা শুদ্ধ হবে না এবং তাকে ঐ দিনের রোযা ক্বাযা করতে হবে।
আল্লাহ, আমাদের সকলকে সঠিক শুদ্ধভাবে রোযা রাখার তৌফিক দান করুক এবং যেভাবে রোযা রাখলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও “রাইয়ান” নামাক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে, ঠিক সেভাবে রোযা রাখার তৌফিক দান করুক। আমীন...।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন