সোমবার, ২৯ জুন, ২০১৫

বাদশাহ সুলতান মাহমুদ গজনবী ও একটি চমৎকার শিক্ষণীয় ঘটনা।

বাদশাহ সুলতান মাহমুদ গজনবী একদিন রাতে বাদশাহী পোষাক ছেড়ে সাধারণ পোষাক পরিধান করে বাইরে বের হন। হাটতে হাটতে এক স্থানে এসে কিছু মানুষের জটলা দেখতে পান। তিনি বুঝতে পারলেন এরা হল চোর। তিনি যখন তাদের কাছে আসলেন তারা জিজ্ঞেস করল: তুমি কে? তোমার পরিচয় কী? তিনি বললেন, আমি ও তোমাদের মত একজন। তারা ভাবল এ ব্যক্তিও আমাদের মত চোর। অত:পর চোরেরা তাদের পরবর্তী কার্যকলাপ নিয়ে কথাবার্তা শুরু করল:
প্রথম চোর: আমার কানে এমন শ্রবণশক্তি আছে যে আমি কুকুর ঘেউ ঘেউ করে কী বলছে তাও বুঝতে পারি।
দ্বিতীয় চোর: আমি রাতের অন্ধকারে কাউকে দেখলে দিনের বেলা তাকে চিনতে পারি।
তৃতীয় চোর: আমার হাত দিয়ে আমি মজবুত প্রাচীর ও ভেঙ্গে ফেলতে পারি।
চতুর্থ চোর: আমি মাটি শুঁকে বলতে পারি ধনভান্ডার কোথায় আছে।
পঞ্চম চোর: আমি খুব উচু প্রাচীর টপকাতে হলে দড়ি আটকাতে পারি ফলে প্রাচীরের ভিতরে প্রবেশ খুব সহজ হয়ে যায়।
বাদশাহ বললেন: আমি এমন মন্ত্র জানি যে তা বিড়বিড় করলে বাদশাহ ফাসীর আসামীকে মুক্তি দিয়ে দেন। বাদশাহর কথা শুনে সবাই খুব খুশী হল।

তাদের পরামর্শ মতে চোরেরা বাদশাহর মহলের দিকেই চুরি করার জন্য রওয়ানা দিল।
বাদশাহও তাদের সাথে চললেন। পথিমধ্যে এক কুকুরের ঘেউ ঘেউ শোনা গেল। তখন প্রথম চোর বলল কুকুর বলছে তোমাদের সাথে বাদশাহও আছেন। কিন্তু তারা তখন চুরির নেশায় মত্ত তাই এই কথাটিকে তেমন কোন গুরুত্ব দেয়নি। দ্বিতীয় জন মাটি শুঁকে বলল: বাদশাহর ধনভান্ডার এখানেই আছে। অত:পর সকলেই ধনভান্ডার লুট করে যার যার ভাগ নিয়ে গেল।বাদশাহ তাদের সকলের চেহারা ও পালাবার পথ মনে রাখলেন।

পরদিন সকালে বাদশাহ তাদের সিপাহী পাঠিয়ে তাদের সকলকে গ্রেফতার করে আনেন এবং তাদের মৃত্যুদন্ডের নির্দেশ দেন। সব চোর ভয়ে কাপছিল কিন্তু ঐ ব্যক্তি যে বলেছিল আমি রাতের বেলা কাউকে দেখলে দিনের বেলাও তাকে চিনতে পারি সে বাদশাহকে চিনতে পারল এবং ভয়ে ভয়ে বাদশাহকে কিছু বলার অনুমতি চাইল। বাদশাহর অনুমতি পেয়ে চোরটি বলল: বাদশাহ! আমরা সবাই তো আমাদের কৌশল প্রয়োগ করে সফল হয়েছি এখন আপনি আপনার মন্ত্র প্রয়োগ করে আমাদের ফাসী থেকে বাচান। এ কথা শুনে বাদশাহ হেসে ফেললেন এবং বললেন যে, তোমরা সবাই নিজ নিজ কৌশল প্রয়োগ করে ফাসীর কাষ্ঠে এসে পৌছেছো কিন্তু ঐ ব্যক্তি যে আমাকে রাতের বেলা দেখে দিনের বেলাতেও চিনতে পেরেছে তার খাতিরে আমি তোমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।

১। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আমরা যখন গুনাহ করি তখন আল্লাহ আমাদের দেখেন।
২। চুরি করার সময় বাদশাহ তাদের সাথে ছিলেন কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দেননি তেমনি আল্লাহ আমাদেরকে তাৎক্ষণিক শাস্তি না দিলেও তা পরকালের জন্য জমা থাকে।
৩। ক্বিয়ামতের ময়দানে কোন কৌশল কাজে আসবে না একমাত্র যদি আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক থাকে, আল্লাহর প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকে তবে এই সূত্রে মুক্তি পাওয়া সহজ হতে পারে।
(সূত্র: মছনভী শরীফ, আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী রহ.)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন