মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৫

হযরত মুফতি লুৎফুল্লাহ সাহারানপুরী র

হযরত মুফতি লুৎফুল্লাহ সাহারানপুরী র.। দারুল উলূম দেওবন্দের একজন বড় বুযূর্গ ব্যক্তিত্বের নাম। একদিন তিনি নিজ পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোন এক বিবাহের অলিমায় যাচ্ছিলেন। সাথে পুরুষ ছিলেন তিনি একা। বাকিরা সবাই নারী ও শিশু। পথিমধ্যে জনমানবশূন্য একটি স্থানে তাদের বাহন ডাকাতের কবলে পড়লো। ডাকাতদল তাদের ঘিরে ধরে বলতে লাগলো, আজ আমরা তোমাদের সম্পদ ও সম্ভ্রম সব কিছুই লুট করবো। 
:
হযরত মুফতি সাহেব বললেন, ভাই ! তোমরা আমাদের সমস্ত সম্পদ নিয়ে নাও, কিন্তু আমাদের কোন নারীর মাথার হিজাবে তোমরা হাত দিও না। এ নারীদের শরীরের অলংকারগুলো তোমাদের হাত দিয়ে ছেঁড়ার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা নিজেরাই তা খুলে দিচ্ছি। তিনি পরিবারের সকল নারীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ অলংকার খুলে দিয়ে দাও। সকলেই নেককার ছিলেন।
:
নির্দেশ পাওয়া মাত্র সকলে হাতের চুড়ি, আংটি ও অন্যান্য অলংকার খুলে দিয়ে দিলেন। মুফতি সাহেব সবগুলো একটি রুমালে জমা করে ডাকাত সর্দারের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, আমাদের নিকট যা ছিলো আপনাদের দিয়ে দিলাম। দয়া করে আমাদের মেয়েদের সম্ভ্রমহানি করবেন না। আমাদের ক্ষমা করুন। ডাকাতদল যখন দেখলো এরা সহস্তে সব দিয়ে দিয়েছে তখন সহজেই তাঁদের পথ ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো।
:
কিছুদূর যাওয়ার পর পরিবারের একজন মেয়ে বলে উঠলো, হায় হায়! আমার হাতের আঙ্গুলে স্বর্ণের একটি রিং রয়ে গেছে। আমি দিতে ভুলেগেছি। মুফতি সাহেব একথা শোনামাত্রই গাড়ি থামাতে বললেন। বললেন, এটাও খুলে দাও। কারণ আমরা বলেছিলাম, আমাদের সমস্ত অলংকার দিয়ে দেবো। সুতরাং এ রিংটা নিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অনুচিত হবে। অতঃপর তিনি রিংটি নিয়ে ডাকাতদের পিছনে ছুটলেন। ডাকাতদল পিছন থেকে কাউকে আসতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। কিন্তু পরক্ষণে মুফতি সাহেবকে দেখে তাদের সঙ্কা কেটে গেলো। কেননা যিনি নিজ হাতে সব অলংকার দিয়ে দিলেন তিনি কোনো আঘাত করবেন না এটুকু নিশ্চিত।
:
মুফতি সাহেব যখন তাদের কাছে পৌঁছলেন তখন তাঁর চোখে অশ্রু ঝরছিলো। তিনি তাদের অনুগ্রহ স্বীকার করে বললেন, আপনাদের সাথে আমাদের সকল অলংকার প্রদানের ওয়াদা ছিলো, কিন্তু এই ছোট্ট রিংটি বেখেয়ালে আমাদের এক মেয়ের হাতে রয়ে গিয়েছিলো। তাই এটি আপনাদের বুঝিয়ে দিতে এসেছি।
:
এমন কথা শুনে দলনেতার শরীর কেঁপে উঠলো। ঘর্মাক্ত হয়ে উঠলো তার শরীর। মনে মনে বললো, হায় হায় ! একি করেছি আমি? তিনি এতো নেক ও সৎ মানুষ ! একটি ছোট বিষয়ে এতো গুরুত্ব দিলেন। আর আমি ? আমিও তো আমার রবের কালিমা পড়েছি, অথচ আমার রবের কালিমার হাকীকত বুঝতে পারিনি। সাথে সাথে সে বলে উঠলো, হযরত ! আমার জীবন তো মানুষের সম্পদ ও সম্ভ্রম লুটতে লুটতেই গেলো। আমি নিতান্তই পাপী মানুষ। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন এবং তওবাও পড়িয়ে দিন। আজ থেকে আমি অসৎ পথ পূর্ণ রূপে পরিত্যাগ করলাম। দোয়া করুন আল্লাহ যেনো আমাকে ক্ষমা করে দেন।
:
বন্ধুরা ! আমরা প্রতি পদে পদে আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত। আমাদের গুনাহের প্রভাব ছড়িয়ে যাচ্ছে সবখানে। ধর্ষণ, শিশুহত্যা, খুন, রাহাজানি, নাস্তিক্যবাদের প্রসার, লাইসেন্সধারী দেহ ব্যাবসায়ির আমদানি সব আমাদের গুনাহের ফসল। আমাদের নাফরমানীর ফল।
তাই বন্ধু ! অন্যকে দোষ না চাপিয়ে আসুন আমরা প্রত্যেকে নিজেকে শোধরে নেই। তবেই সমাজে ফিরে আসবে অনাবিল শান্তি। সমাজ ফিরে পাবে সোনালি যুগের সেই মনোহরি পরিবেশ।
:
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর মনোতুষ্টি মোতাবেক জীবনের প্রতিটি কাজকে পরিচালনা করার তৌফিক দান । আমীন।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন