শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫

যারা বলে চার মাযহাব হারাম।

যারা বলে চার মাযহাব হারাম। এ চার মাযহাব মুসলমানদেরকে বিভক্ত করছে। সুতরাং চার মাযহাব ছেড়ে দিয়ে কোরাআন হাদিস মানতে হবে।তাদের জন্য এ আলোচনা। দেখুন-
আপনারা বলছেন, চার মাযহাব মুসলমানদেরকে চারভাগে বিভক্ত করছে। কিন্তু আপনার জানা প্রয়োজন নামধারী আহলে হাদিসরা যারা একথা বলে বেড়াচ্ছে, তারাই শত শত ভাগে বিভক্ত।
মজার বিভিওটি দেখুন,
https://www.youtube.com/watch?v=YBTryvPmVYk
আপনারা বলছেন, মাযহাব মুসলমানদেরকে বিভক্ত করছে তাদের বিভিন্ন ভিন্নধর্মী পরস্পর বিরোধী ফতোয়ার কারণে।
অথচ দেখুন, আপনারা সউদী আরবের যাদেরকে সহীহ আকীদার আলেম বলে মানেন, আপনারা যাদের ব্যাপারে বলেন যে, তারা সহীহ হাদীস ছাড়া কথা বলেন না। তাদের মধ্যে ও কিন্তু রয়েছে একই রকম পরস্পর বিরোধী ফতোয়া। এখন প্রশ্ন হলো, মাযহাব মানলে যদি বিভক্তি আসে, তবে এই সকল সউদী আলেমদের পরস্পর বিরোধী ফতোয়া দ্বারা কেন বিভক্তি আসবেনা?
এখানে সেরকম কিছু মাস’আলা উল্লেখ করবো-
মাস’আলাঃ১
_____________________
স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্র ব্যবহার
বিন বাযের মাযহাবঃ
খাবার হোক অথবা পান ক রা হোক, বা অন্য কোন কিছুর জন্য হোক, কোন কিছুর জন্যই স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্র ব্যবহার হারাম।
মাজমু উ ফাতাওয়া- ২৯/১০-৯
আলবানীর মাযহাবঃ
স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার হারাম, তবে রৌপ্যের পাত্র খাবার এবং পান ক রা ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার জায়েয।
আছা ছামারুল মুসতাতাব-১/৭
বিন উছাইমিনের মাযহাবঃ
খাবার এবং পান ক রা ছাড়া অন্য যে কোন কাজের জন্য স্বর্ণ এবং রৌপ্যের পাত্র ব্যবহার ক রা জায়েয।
আশ শারহুল মুমাত্তা- ১/৮৬-৮৭
_____________________
ওরে বাপ্পুসরে!
একজন বলে হারাম, আরেকজন বলে জায়েয!!!!!
এমন পরস্পরবিরোধী ফতোয়ায় বিভক্তি নির্মূল হয়ে সুন্দর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তাই না ভাইয়া?
মাস’আলাঃ২
______________________
মোজার উপর মাসেহ করে খোলে ফেললে অযু থাকবে কী না?
বিন বাযের মাযহাবঃ
মোজার উপর মাসেহ করে পরে যদি কেউ তা খুলে ফেলে তবে অযু বাতিল হয়ে যাবে।
মাজমু উ ফাতাওয়া- ২৯/৬৯
আলবানীর মাযহাবঃ
মোজার উপর মাসেহ করে পরে তা খোলে ফেললে অযু বাতিল হবেনা। বিশুদ্ধ থাকবে।
তামামুল মান্নাহ-১১৪-১১৫
_____________________
তাহলে কী বুঝা গেল?
এ অবস্থায় কেউ নামাজে দাড়ালে---
একজনের ফতোয়ায় তার নামাজ হচ্ছেনা। আবার অন্যজনের ফতোয়ায় নামাজ হবে।
ভাবুন, কী অবস্থা!!!
এমন পরস্পরবিরোধী ফতোয়ায় বিভক্তি নির্মূল হয়ে সুন্দর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তাই না ভাইয়া?
মাস’আলাঃ৩
_____________________
জুতার উপর মাসেহ করা
আলবানীর মাযহাবঃ
জুতার উপর মাসেহ ক রা জায়েয। সহীহ হাদীসে আছে।
তামামুল মান্নাহ-১১৩-১১৪
বিন উসাইমিনের মাযহাবঃ
জুতার উপর মাসেহ করা জায়েয নেই।
লিকা আতুল বাবিল মাফতুহ-১/১৮৪
_______________________
বিষয়টি নামাজের সাথে সম্পর্কিত। তো এ অবস্থায় একজনের ফতোয়া নামাজ হবে, আবার অন্যজনের ফতোয়ায় নামাজই হচ্ছে না!!!!
সহীহ আকীদার হুজুরদের এ কেমন পরস্পর বিরোধী ফতোয়া!!!!!
এমন পরস্পরবিরোধী ফতোয়ায় বিভক্তি নির্মূল হয়ে সুন্দর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তাই না ভাইয়া?
মাস’আলাঃ৪
_________________
গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে কী না?
বিন বাযের মাযহাবঃ
সামনের অথবা পেছনের গুপ্তাঙ্গ হাত দিয়ে স্পর্শ করলে অযু ভেঙ্গে যাবে। সেটা উত্তেজনায় হোক অথবা এমনিই হোক।
আদ দুরূসুল মুহিম্মাহ-৩/২৯৪
আলবানীর মাযহাবঃ
উত্তেজনা বশতঃ স্পর্শ করলে অযু ভেঙ্গে যাবে। অন্যথায় অযু থাকবে।
তামামুল মান্নাহ-১০৩
_____________________
তাহলে কী দাঁড়ালো?
বিন বাযের ফতোয়ায়- অযু করে কেউ যদি এমনিতেই গুপ্তাঙ্গ হাত দিয়ে স্পর্শ করে নামাজে দাড়ালে নামাজ হবে না। আবার আলবানীর ফতোয়া মতে নামাজ হবে।
এ কেমন ঝগড়া? সহীহ আকীদার হুজুরদের?
এমন পরস্পরবিরোধী ফতোয়ায় বিভক্তি নির্মূল হয়ে সুন্দর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তাই না ভাইয়া?
মাস’আলাঃ৫
জুম’আর গোসল করলে কি ফরয গোসল আদায় হয়ে যাবে?
বিন বাযের মাযহাবঃ
জুম’আর দিন গোসল ফরয হলে জুম’আর জন্য দিনে গোসল ক রা হলে ফরয গোসল আদায় হয়ে যাবে। উভয়টির নিয়্যত ক রা হোক কিংবা না হোক। তবে উভয়টির নিয়্যাত ক রা উত্তম।
মাজমু উ ফাতাওয়া- ১২/৪০৬
আলবানী মাযহাবঃ
উভয়টির নিয়ত করলে ও কাজ হবেনা। ফরয গোসল আলাদা করে করতে হবে।
আল হাওয়ী মিন ফাতাওয়াল আলবানী-৪১৪
_________________
তো, আলবানী বলছেন, বিন বাযের ফতোয়া মানলে লোকটার জুম’আর নামাজই আদায় হবে না। কারণ সে এখনো নাপাক রয়ে গেছে। ফরজ গোসল আদায় হয়নি।
কী বলবেন এখন?
এমন পরস্পরবিরোধী ফতোয়ায় বিভক্তি নির্মূল হয়ে সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তাই না ভাইয়া?
মাস’আলাঃ৫
____________________
মসজিদে মেহরাব বানানোঃ
বিন বাযের মাযহাবঃ
মসজিদে মেহরাব বানানো বেদ’আত নয়, বরং এটা সালাফে সালিহীনের আমল। তাছাড়া এর মধ্যে অনেক ফায়েদা ও রয়েছে।
ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব- ২/৭১৬
বিন উসাইমীনের মাযহাবঃ
মসজিদে মেহরাব বানানো সরাসরি সুন্নাহ নয়, তবে মুসতাহাব বলা যাবে। যেহেতু এর পক্ষে শরয়ী দলীল রয়েছে।
তবে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, এটা মুবাহ। আদেশ নিষেধ কিছুই করা যাবে না।
আশ শারহুল মুমাত্তা’-২/৩৩২-৩৩৩
আমি অবাক হলাম, বিন উসাইমীনের কিয়াস দেখে। তারা তো বলেন, সহীহ হাদীসের আমল করবেন। কিন্তু এই মাস’আলায় তিনি করলেন কিয়াস।
কীভাবে?
তিনি বললেন,
হাদীসে নিষেধ এসেছে খ্রীস্টানদের মেহরাবের মত মেহরাব না বানাতে। তবে মেহরাব বানাতে গিয়ে তাদের অনুকুরন না করে অন্য পন্থায় বানালে তা মাকরূহ হবেনা।
কেননা মুল কথা হচ্ছে খ্রীস্টানদের সাথে সাদৃশ্য না রাখা। এখন যদি কোনভাবে সাদৃশ্য না হয়, তবে তা মাকরূহ হবে না।
আশ শারহুল মুমাত্তা’-২/৩৩২-৩৩৩
আলবানীর মাযহাবঃ
আলবানী ফতোয়া দিলেন, মসজিদে মাযহাব বানান বিদ’আহ। কিন্তু অবাক, তিনি ঐ দলীল দিলেন, যে দলিল থেকে কিয়াস করে বিন উসাইমীন মুসতাহাব ফতোয়া দিলেন!
এটা ছাড়াও আলবানী অন্য হাদীস দিয়ে দলীল দিয়েছেন,
১/তোমরা মসজিদে মেহরাব বানিওনা। (আলবানীর মতে , সনদ সহীহ)
২/ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদের মেহরাবে নামাজ পড়া পছন্দ করতেন না।
সিলসিলাতুল আহাদীসিদ দায়ীফাহ- ১/৬৪১-৬৪৭
আছ ছামারুল মুসতাতাব-১/৪৭২-৪৭৮
(উল্লেখ্য, এ মাস'আলা নিয়ে আমাদের কোন দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করছিনা)
প্রশ্নঃ
______________________
(কথা বলছি তাদের কথার স্টাইলে)
কেন ভাই?
হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়ছে খ্রীস্টানদের মত মেহরাব না বানাতে। আলবানী এ স্পষ্ট হাদীস দিয়েই তো বেদ’আত ফতোয়া দিলেন। তো অন্যান্যরা এ বিষয়ে একমত না হয়ে কিয়াস ক রা শুরু করলেন কেন?
সহীহ হাদীস পাওয়া গেছে, তো ব্যাস। মামলা খালাস। এখানে কিয়াস এর কী প্রয়োজ ছিল?
প্রবলেমটা কী?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন