মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

হযরত অাবু উমামা (রাঃ) ব‌লেন,

হযরত অাবু উমামা (রাঃ) ব‌লেন, এক ব্যা‌ক্তি অারজ ক‌রিল, ইয়া রসূলুল্লাহ , অামা‌কে ভ্রমন করার অনুম‌তি দান করুন। রসূল (সাঃ) এরশাদ ক‌রি‌লেন, অামার উম্ম‌তের ভ্রমন হইল অাল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। (অাবু দাউদ )
হযরত অানাস ইব‌নে মা‌লেক (রাঃ) বর্ননা ক‌রেন, রসূল (সাঃ) এরশ‌াদ ক‌রিয়া‌ছেন, প্র‌ত্যেক নবীর কোন বৈরাগ্য থা‌কে। অামার উম্ম‌তের বৈরাগ্যতা হ‌লো অাল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। (মুসনা‌দে অাহমদ)
( দু‌নিয়া উহার ভোগ‌বিলাস হই‌তে নিঃসম্পর্কতা‌কে বৈরাগ্যতা ব‌লে। যারা অা‌খিরাত ছে‌ড়ে শুধু দু‌নিয়া নি‌য়ে প‌ড়ে অা‌ছে তারাও বৈরাগ্য। কোন এক জি‌নিষ‌কে নি‌য়ে প‌ড়ে অা‌ছে । )
অ‌নেকেই ব‌লে থা‌কেন,
দ্বীন ইসলা‌মে বৈরাগ্য হওয়ার কোন শিক্ষা নেই। বরং ইহা‌তে দ্বীন ও দু‌নিয়ার উভয়‌টি‌কে সমান পর্যা‌য়ে রাখা হ‌য়ে‌ছে।
যেমন ‌কোরঅা‌নে পা‌কের অায়াত
"‌হে পরওয়ার‌দিগার! তু‌মি অামা‌দিগ‌কে দু‌নিয়া‌তেও কল্যাণ দান কর এবং অা‌খেরা‌তেও কল্যাণ দান কর এবং অামা‌দিগ‌কে দোয‌খের শা‌স্তি হই‌তে রক্ষা কর।"
অার এই অায়া‌তের উপর জোর দি‌য়াই সবাই এই কথাগুলো ব‌লে থা‌কেন।
যেন পুরা‌ে কোরঅান শরী‌ফে অাম‌লের জন্য শুধুমাত্র এই এক‌টি অায়াতই না‌যিল হ‌য়ে‌ছে।
অথচ
সর্বপ্রথম তো অায়াত‌টির ব্যাখ্যা অ‌ভিজ্ঞ অা‌লে‌মের নিকট হই‌তে জা‌নিয়া লওয়া উ‌চিত ছিল ।
এই জন্য ওলামা‌য়ে কেরাম ব‌লেন, শুধু শা‌ব্দিক তরজমা দে‌খিয়াই নি‌জে‌কে কোরঅা‌নের অা‌লেম ম‌নে করা মূর্খতার শা‌মিল।
সাহাবা‌য়ে কেরাম (রাঃ) ও তা‌বেয়ীন হই‌তে উক্ত অায়া‌তের ব্যাখ্যাগু‌লো নি‌ন্মে পেশ করা হ‌লোঃ
হযরত কাতাদাহ (রাঃ) ব‌লেন, দু‌নিয়ার কল্যা‌নের অর্থ হ‌লো সু স্বাস্থ ও প্র‌য়োজন প‌রিমান রি‌যিক।
হযরত অালী (রাঃ) ব‌লেন, ইহার অর্থ নেক বি‌বি।
হযরত ইব‌নে ওমর (রাঃ) ব‌লেন, ইহার অর্থ নেক সন্তান ও মখলু‌কের প্রশংসা।
হযরত জাফর (রাঃ) ব‌লেন, ইহার অর্থ স্বাস্থ্য ও য‌থেষ্ট প‌রিমান রি‌যিক, অাল্লাহর কালাম বুঝ‌তে পারা, শত্রুর উপর জয়লাভ করা এবং নেক লোক‌দের সঙ্গলাভ করা।
হযরত হাসান বসরী (রঃ) ব‌লেন, ইহার অর্থ এ‌লেম ও ইবাদত।
সুদ্দী (রঃ) ব‌লেন, ইহার অর্থ প‌বিত্র মাল ।
দ্বিতীয়তঃ উক্ত অায়াত দ্বারা য‌দি দু‌নিয়ার সর্বপ্রকার উন্ন‌তি উ‌দ্দেশ্য হয়, যেমন অামারও মন ইহা চায়।
তবু লক্ষ্য করার বিষয় হই‌লো এই অায়া‌তে উহার জন্য অাল্লাহ তায়ালার কা‌ছে দোয়া কর‌তে বলা হ‌য়ে‌ছে। দু‌নিয়ার ম‌ধ্যে লিপ্ত হই‌তে বা উহার ম‌ধ্যে প‌রিপূর্ন মত্ত হই‌তে বলা হয়‌নি ।
অার অাল্লাহর দরবা‌রে চাওয়া , চাই ছেঁড়া জুতা সেলাই‌য়ের ব্যাপা‌রে হউক না কেন , ইহা‌ তো সরাস‌রি দ্বী‌নেরই অন্তর্ভুক্ত।
তৃতীয়তঃ দু‌নিয়া হা‌সিল ক‌রি‌তে এবং দু‌নিয়া কামাই ক‌রি‌তে কে নি‌ষেধ ক‌রে ?
অবশ্যই হা‌সিল করুন এবং খুব অাগ্রহ সহকা‌রে হা‌সিল করুন।
অামা‌দের কখ‌নো এই উদ্দেশ্য নয় যে, দু‌নিয়ার ম‌তো উপকারী ও লাভজনক বস্তু‌কে অাপ‌নি ছা‌ড়িয়া দিন।
বরং অামা‌দের উ‌দ্দেশ্য হ‌ই‌লো, যতটুকু চেষ্টা ও মেহনত দু‌নিয়ার জন্য ক‌রেন উহার হই‌তে বেশী না হই‌লেও কমপ‌ক্ষে উহার সমপ‌রিমান চেষ্টা ও মেহনত দ্বী‌নের জন্য করুন।
‌ কেননা অাপনারই কথা অনুসা‌রে উক্ত অায়া‌তে দ্বীন ও দু‌নিয়া উভয়‌কে সমান পর্যা‌য়ে রাখা হইয়া‌ছে। নতুবা অামার প্রশ্ন হই‌লো, যে কোরঅা‌নে উক্ত অায়াত র‌হিয়া‌ছে , সেই কোরঅা‌নেই এই অায়াতও র‌হিয়া‌ছে যাহা,
যে ব্যা‌ক্তি অা‌খেরা‌তের ফসল চায় অা‌মি তাহার ফসলে উন্ন‌তি দান ক‌রিব। অার যে ব্যা‌ক্তি দু‌নিয়ার ফসল চায় অা‌মি তাহা‌কে দু‌নিয়া হই‌তে সামান্য কিছু দিব কিন্তু অা‌খেরা‌তে তাহার কোন অংশ নাই ।(সূরাঃ শূরাঃ২০)
অাপ‌নি ব‌লিয়া দিন, দু‌নিয়ার চীজ, অাসবাব অ‌তি তুচ্ছ। অার যাহারা অাল্লাহ‌কে ভয় ক‌রে তাহা‌দের জন্য অা‌খেরাতই উত্তম। (সূরা ঃ নিসাঃ৭৭)
(এছাড়াও অ‌নেক অায়াত র‌হিয়া‌ছে, যা লিখ‌তে গে‌লে একটা‌ কিতাব বানা‌নো যা‌বে। )
য‌দি দু‌নিয়া ও অা‌খেরাত উভয়‌টি‌কে অাপ‌নি সামলা‌তে না পা‌রেন, ত‌বে শুধু অা‌খেরাতই প্রাধান্য পাওয়ার উপযুক্ত।
দু‌নিয়ার জীব‌নে মানুষ পা‌র্থিব প্র‌য়োজন ও জরুর‌তের খুবই মুখা‌পেক্ষী , এই কথা অা‌মি অস্বীকার কর‌ছিনা। কিন্তু এই কার‌নে যে,
মানু‌ষের পায়খানায় যাওয়া খুবই জরুরী , ইহা ছাড়া উপায় নাই, সেই জন্য ‌দিনভর সেখা‌নে ব‌সিয়া থা‌কি‌বে ইহা কোন সুস্থ বি‌বেক সম্পন্ন ব্যা‌ক্তি মা‌নিয়া লই‌বেনা।
শেষ কথা হই‌লো , নি‌জে কোন কাজ না ক‌রিয়া যাহারা দ্বী‌নের মেহনত ক‌রে তাহা‌দের বিরু‌দ্ধে নানা প্রশ্ন ও অ‌ভি‌যোগ উঠা‌নো দ্বী‌নের মেহনত হই‌তে তাহা‌দিগ‌কে ফিরাইয়া রাখার নামান্তর।
কুরআন কারীমের অায়াত
لَّا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۚ فَضَّلَ اللَّـهُ الْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً ۚ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّـهُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَفَضَّلَ اللَّـهُ الْمُجَاهِدِينَ عَلَى الْقَاعِدِينَ أَجْرًا عَظِيمًا ﴿٩٥﴾ دَرَجَاتٍ مِّنْهُ وَمَغْفِرَةً وَرَحْمَةً ۚ وَكَانَ اللَّـهُ غَفُورًا رَّحِيمًا ﴿﴾٩٦
অর্থঃ যে সকল মুসলমান কোনরকম অসুবিধা ছাড়া ঘরে বসিয়া রহিয়াছে, আর যাহারা নিজেরদের জানমাল দিয়া আল্লহ তায়া’লার রাস্তায় জিহাদ করিতেছে– এই উভয় দল কখনও সমান হইতে পারে না। যাহারা ঘরে বসিয়া থাকে তাহাদের তুলনায় আল্লহ তায়া’লা ঐ সমস্ত লোককে অনেক বেশি মর্যাদাশালী করিয়াছেন যাহারা জান-মাল দিয়া জিহাদ করে এবং সকলের জন্যই আল্লহ তায়া’লা অতি উত্তম বাসস্থানের ওয়াদা করিয়াছেন। জিহাদকারীদেরকে ঘরে অবস্থানকারীদের তুলনায় অনেক বড় পুরষ্কার দান করিয়াছেন। অর্থাৎ, আল্লহ তায়া’লার পক্ষ হইতে তাহারা উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও রহমত হাসিল করিবে। কেননা আল্লহ তায়া’লা বড়ই দয়াবান ও ক্ষমাশীল। (সূরা নিসাঃ৯৫,৯৬)
যদিও উপরোক্ত আয়াতে জিহাদ দ্বারা কাফেরদের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়ানো বুঝানো হইয়াছে, যদ্দ্বারা ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি হয় এবং কুফর ও শিরক পরাজিত হয়; কিন্তু যদিও দুর্ভাগ্যবশতঃ আজ আমরা সেই মহান সৌভাগ্য হইতে বঞ্চিত, তথাপি এই উদ্দেশ্যকে সামনে রাখিয়া আমাদের পক্ষে যতটুকু চেষ্টা ও মেহনত সম্ভব উহাতে কখনই কমি করা চাই না। আমাদের এই মামুলী চেষ্টা ও মেহনত আমাদেরকে ধীরে ধীরে আগে বাড়াইয়া দিবে।
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا
অর্থঃ যাহারা আমার দ্বীনের জন্য চেষ্টা ও মেহনত করে আমি তাহাদের জন্য আমার পথসমূহ খুলিয়া দেই। (সূরা আনকাবুতঃ ৬৯)
অাল্লাহ তায়ালা অামা‌দের সবাই‌কে দ্বী‌নের জন্য মেহনত করার তৌ‌ফিক দান করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন