মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০১৫

প্রিয় নবীর জন্মদিবস উদযাপন : কিছু কথা কিছু জিজ্ঞাসা

মুফতী আবূ সাঈদ

এখন আরবী রবিউল আওয়াল মাস। এ মাসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে জন্ম লাভ করেন এবং এ মাসেই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তাঁর জন্ম ও ওফাত উভয়টিই রবিউল আউয়াল মাসেই হয়েছিল। একথাও প্রমাণিত, তাঁর জন্ম ও ওফাত উভয়টি রবিউল আউয়াল মাসের সোমবারে হয়েছিল। প্রসিদ্ধ একটি বর্ণনা মতে, তাঁর জন্ম ও ওফাতের তারিখও ছিল একই অর্থাৎ ১২ই রবিউল আউয়াল। রাসূলের জন্ম তারিখ ১২ই রবিউল আউয়াল প্রসিদ্ধ হলেও এর বিশুদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছেন বিধায় এ দিনে তিনি রোযা রাখতেন। হিসেব করে দেখা গেছে, রাসূলের জন্মদিন ১২ই রবিউল আউয়াল কোনভাবেই সোমবার ছিল না।
এটা আল্লাহর তাআলার কুদরতী ব্যবস্থপনা বলেই মনে হয়। আল্লাহ তাআলা হয়তো এজন্যেই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একই মাসের একই বারে জন্ম ও ওফাত দিয়েছেন যেন রাসূলের জন্মের আনন্দে উম্মত আত্মহারা না হয়ে পড়ে আবার মৃত্যুর শোকে মুষড়ে না পড়ে। অন্যান্য জাতির মতো মুসলিম জাতিও যেন কেবল অনুষ্ঠান ও দিবস উদযাপনেই সীমাবদ্ধ না হয়ে পড়ে। এই তো গত ২৫ই ডিসেম্বর খ্রিস্টানদের বড়দিন গেল। তারা যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনকে বড়দিন হিসেবে উদযাপন করে। এদিনে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠে। সারা বছর যিশুখ্রিস্টের আদর্শ পালন করার কোন খবর না থাকলেও এদিনে মাতামাতি ও উৎসবে সকলেই অংশগ্রহণ করে। ইসলামে নিছক দিবস পালনের কোন অবকাশ নেই। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা আমাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন- এক কথায় মানবজীবনের যতগুলো দিক ও শাখা হতে পারে সবকিছুর জন্যই উসওয়া ও আদর্শ হিসেবে পাঠিয়েছেন। বছরের শুধু একটি দিন নয়, জীবনের প্রতিটি বছরের প্রতিটি মাসের প্রতিটি দিনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের রাসূলে পাকের আদর্শ ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হতে হবে।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ঘোষণা করেন-
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ
(হে নবী) আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক তাহলে আমার অনুসরণ কর। তবে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। সূরা আলে ইমরান : ৩১
যারা আজ রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মদিবস উদযাপন করছে রাসূলের প্রতি তাদের মহব্বত ও ভালোবাসা বেশি নাকি সাহাবায়ে কেরামের মহব্বত ও ভালোবাসা বেশি। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে ভালোবেসেছেন সেভাবে ভালোবাসা ও মহব্বত করা আর কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। আমি তো মনে করি, আল্লাহর নামে কসম করে একথা বলা যেতে পারে, রাসূলের প্রতি পৃথিবীর সকল মানুষের যে ভক্তি, ভালোবাসা ও অনুরাগ রয়েছে তা একত্র করা হলে কিছুতেই একজন সাহাবীর নবীভক্তি ও নবীর প্রতি মহব্বতের বরাবর হবে না। রাসূলের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের ভালোবাসা ও মহব্বতের বহু ঘটনা রয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আবদে রাব্বিহি রাযি. একজন সাহাবী। তিনিই স্বপ্নযোগে আযানের বাক্যগুলো শুনতে পান। তার স্বপ্ন অনুযায়ী প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযান প্রচলনের ফরমান জারী করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলেন। কিন্তু প্রিয় নবীর ওফাতের সংবাদ তাঁর কানে পৌঁছেনি। সেদিন তিনি তাঁর বাগানে কর্মরত ছিলেন। এমন সময় তাঁর ছেলে এসে রাসূলের ওফাতের সংবাদ শোনাল। সংবাদ শুনে আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ রাযি. আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন- ‘হে আল্লাহ! আমি আমার এ চোখ দু’টো দিয়ে প্রিয় রাসূলকে দেখতাম। আমার এ চোখ তো আমার রাসূলকে দেখার জন্যই লালন করছি। হে আল্লাহ! রাসূল যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন তখন আমি আর এ চোখ দিয়ে কী করব? হে আল্লাহ! আমি এ চোখ দিয়ে দুনিয়ার আর কিছু দেখতে চাই না।’ আল্লাহ দুআ কবুল করলেন, তিনি অন্ধ হয়ে গেলেন। ভালোবাসা ও মহব্বতের এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে কে স্থাপন করতে পারবে? এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন তো দূরের কথা সাহাবীগণের রাসূলের প্রতি যে কী পরিমাণ ভালোবাসা ছিল তা কেউ ভাষায়ও ব্যক্ত করতে পারবে না।
যে সাহাবীগণ রাসূলকে এত গভীরভাবে ভালোবাসতেন তাদের একজনও প্রিয় নবীর জন্মদিবস পালন করেছেন তার কোন প্রমাণ নেই। প্রিয় নবী তাঁর ৬৩ বছরের হায়াতে ৬৩ বার রবিউল আউয়াল পেয়েছেন কিন্তু তিনি তো কিছু করেননি বা কাউকে কিছু করতেও বলেননি। প্রিয় নবীর সমগ্র জীবন হাদীস ও সীরাতের পাতায় রেকর্ড হয়ে আছে। একেবার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়েরও রেকর্ড রয়েছে। এমনকি রাসূলের কয়টি চুল পেকেছিল তাও লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু কোথাও তো প্রিয় নবীর জন্মদিন পালনের কোন কথা লিপিবদ্ধ নেই! রাসূলের পর প্রায় শতাব্দীকাল পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরাম জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাঁদের একজনও তো জন্মদিন উদযাপন করেননি, করতে বলেননি! সাহাবাযুগের পর তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এর যুগেও এর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
রাসূলের একজন সাহাবীও উদযাপন করলেন না। তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীগণের কেউ করলেন না। চার মাযহাবের ইমামগণ ইমাম আবূ হানীফা রহ. ইমাম মালেক রহ. ইমাম শাফেয়ী রহ. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. কেউই তো উদযাপন করলেন না। হাদীসের প্রসিদ্ধ ছয় কিতাবের সংকলকগণের যুগেও হল না। ইমাম বুখারী রহ., ইমাম মুসলিম রহ., ইমাম তিরমিযী রহ., ইমাম আবূ দাউদ রহ., ইমাম নাসাঈ রহ., ইমাম ইবনে মাজাহ রহ. কেউই তা উদযাপন করলেন না। এ কেমন মহব্বত ও অনুরাগ এবং ভক্তি ও ভালোবাসা?
হ্যাঁ, এ দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করেছেন বলে যা পাওয়া যায় তা হল- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সপ্তাহের সোমবারে রোযা রাখতেন। এবং বলতেন- এদিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। এ হাদীসের আলোকে রাসূলের জন্মদিনে পালনীয় হল রোযা রাখা। তাও প্রতি সোমবারে। আজ যারা রাসূলের ইশক ও মহব্বতের দাবীতে জন্মদিন উদযাপন করছে তারা আসলে কী করছে? তারা রাসূলের জন্মদিনে ঈদ উদযাপন করে, তারা এটাকে বলে ঈদে মীলাদুন্নবী, কেউ বলে, সকল ঈদের সেরা ঈদ। রাসূলের আমল ছিল রোযা আর তাদের আমল হল ঈদ। আমরা সকলেই জানি, রোযা ও ঈদ একত্র হতে পারে না। রোযার শেষে ঈদ আসে আর ঈদের দিনে রোযা রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রিয় নবীর প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বতের অবস্থা এমনই, রাসূলের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে তারা নবীপ্রেমের দাবী করে যাচ্ছে।
ইসলামে দু’টি ঈদ উৎসব। আর এ দুটি ঈদও আমার পেয়েছি প্রিয় নবীর মাধ্যমেই। তাঁর শুভাগমন না হলে আমরা এ ঈদও পেতাম না। তো প্রিয় নবীর শুভ জন্ম না হলে তো কোন উৎসবই হত না। তাঁর শুভ জন্ম না হলে আমরা কুরআন পেতাম না। আল্লাহকে চিনতাম না। তো রাসূলের শুভজন্মের যে দিন ও তারিখ তা অবশ্যই মহা সম্মানিত ও আনন্দের দিন। প্রিয় নবীর জন্মদিনটি সকল ঈদের বড় ঈদ হতে পারে। কিন্তু সে দিনটি কোনটি? সে দিনটি কি প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে? যেমন আমরা শবে কদরে ইবাদত করি। প্রতি বছর রমযান মাসে শবে কদরে আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে শুভাগমন করেন। কিন্তু প্রতি বছরের রবিউল আওয়াল মাসে কি রাসূলের জন্ম হয়? রাসূল তো একদিনই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পৃথিবীতে এমন দিন একটিই যা মাত্র একবার এসেছিল। সেদিন প্রিয় নবীর জন্ম হয়েছিল। ঐদিনটি অবশ্যই মহা আনন্দের ছিল। ঐদিনে যদি আমরা জীবিত থাকতাম আর বুঝতে পারতাম যে, আজ প্রিয় নবীর শুভ জন্ম হয়েছে তাহলে তো আমাদের চেয়ে আনন্দিত আর খুশি কেউ হত না এবং ঐদিনটি আমাদের চেয়ে জাঁকজমকের সঙ্গে কেউ পালন করতে পারত না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের সেই আনন্দঘন ও তাৎপর্যপূর্ণ মহান দিবস তো পালিত হয়েছে স্বয়ং আল্লাহ তাআলার কুদরতে। সীরাতগ্রন্থের ভাষ্য অনুযায়ী সেদিনটিতে আল্লাহ তাআলা কিছু অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত করেছেন। সেদিন পারস্য সাম্রাজ্যের হাজার বছরের প্রাচীন অগ্নিকুণ্ড হঠাৎ নিভে যায়। রোমান সাম্রাজ্যের রাজপ্রাসাদের স্তম্ভ ভূকম্পনে ধসে পড়ে।
নিছক ভক্তি-শ্রদ্ধা এবং আবেগ ও ভালোবাসা থেকে কোনকিছু করলেই তা ইসলামে স্বীকৃত হয় না। ভালোবাসা, মহব্বত ও আবেগ এমন একটি বিষয় যদি তা কুরআন ও সুন্নাহর ইলম দ্বারা নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তাহলে এর থেকে বহু অনর্থের জন্ম হয়। মহব্বত ও ভালোবাসায় কোন কিছু করতে হলেও তা কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনার ভেতরে থেকেই করতে হবে। তাই পৃথিবীর ইতিহাসে যত ওলী, বুযুর্গ ও আল্লাহওয়ালা গত হয়েছেন তাদের মধ্যে যাদের খানকা ও ইবাদতগাহের পাশে কোন মাদরাসা ও দ্বীনী ইলম চর্চার ব্যবস্থা ছিল তাদের কবরকে কেন্দ্র করে কোন বেশরা মাজার সৃষ্টি হয়নি। আর যাদের খানকাসংলগ্ন কোন মাদরাসা ও দ্বীনী প্রতিষ্ঠান নেই তাদের কবরকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ভক্ত ও মুরীদরা বেশরা মাজারের জন্ম দিয়েছে।
কুরআন-সুন্নাহর বিধানকে উপেক্ষা করে শুধু মহব্বত ও আবেগ থেকে কোন কিছু করলে তা ইসলামে গ্রহণযোগ্য হয় না। যদি সে এটাকে ভালো মনে করে নেক নিয়তেই করুক না কেন। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِیْنَ اَعْمَالًا اَلَّذِیْنَ ضَلَّ سَعْیُهُمْ فِی الْحَیٰوۃِ الدُّنْیَا وَ هُمْ یَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ یُحْسِنُوْنَ صُنْعًا
(হে নবী) বলুন, আমি কি তোমাদেরকে ঐ সকল লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। তারাই ঐ সকল লোক যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে লক্ষভ্রষ্ট হয়েছে, অথচ তারা মনে করে, তারা বিরাট কিছু করছে। সূরা কাহাফ : ১০৩-৪
মুসলমানদের হিজরী সন নির্ধারিত হয় হযরত উমর রাযি. এর খেলাফতকালে। উমর রাযি. এর নেতৃত্বে সকল বড় বড় সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিতে সেদিন রাসূলের হিজরতের তারিখ থেকেই মুসলমানদের সনের গণনা শুরু হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলের জন্মদিন অথবা মৃত্যুদিবস থেকে সনের গণনা শুরু করেননি। কারণ, ইসলামে কারো জন্ম ও মৃত্যুদিবসের কোন তাৎপর্য নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মদিবস স্মরণ করে মুসলমানরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়বে আর মৃত্যুদিবস স্মরণ করে বেদনায় ভেঙ্গে পড়বে- এজন্য সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরতকেই বেছে নিয়েছিলেন সন গণনার জন্য। কারণ, হিজরত হল ইসলামের জন্য স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখ-কষ্ট সহ্য করা ও চরম কুরবানী ও ত্যাগ স্বীকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুসলমান যেন হিজরী সনের মাধ্যমে তাদের মনে ইসলামের মূল দাবীটি চিরজাগ্রত রাখতে পারে এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। দ্বীনে ইসলামের উদ্দেশ্য, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের উদ্দেশ্য তো এটাই যে, সকলে তাদের সর্বস্ব ত্যাগ করে হলেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত ও আদর্শের উপর অটল থাকবে। উম্মতকে সদাসর্বদা প্রতিটি কাজে রাসূলের অনুসরণ অনুকরণ করবে। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ ও অনুকরণ তো হবে ঐ ক্ষেত্রেই যা পালন করা সম্ভব আর যা অসম্ভব তা পালন করতে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে বলেননি। রাসূলের জন্ম হয়েছিল রবিউল আউয়াল মাসের সোমবারে তাই বলে কি আমাদেরও রাসূলের অনুকরণে ঐ রবিউল আউয়াল মাসের সোমবারে জন্ম গ্রহণ করতে হবে? এটা কি সম্ভব?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পালনীয় ও প্রয়োজনীয় যত দিক রয়েছে সবগুলোই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لقد تركتكم على مثل البيضاء ليلها ونهارها سواء
আমি তোমাদেরকে এমন এক সুস্পষ্ট সমুজ্জ্বল পথে পরিচালিত করে যাচ্ছি, যার রাতদিন সমান। সুনানে ইবনে মাজাহ
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে একটি স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট পথের কথা বলেছেন, ঐ পথ দেখিয়েছেন এবং সে পথে পরিচালিত করে গেছেন। এ পথের রাতদিন সমান। দিনের আলোতে তো পথিক পথ দেখে কিন্তু রাতের আঁধারে দেখে না- এ পথ এমন নয়। এ পথে সর্বমুহূর্তের দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।
এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা মনে পড়ল। হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুভী রহ. দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা। যার গোটা যিন্দেগীটাই ছিল রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শে গড়া। বৃটিশরা যখন এদেশকে তাদের উপনিবেশ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল তখন ওলামায়ে কেরাম তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. থেকে এ সংগ্রাম শুরু হয়ে দীর্ঘকাল পর্যন্ত চলতে থাকে। হযরত কাসেম নানুতুভী রহ. এর সময়ে এ সংগ্রামের নেতৃত্বে তিনি ছাড়াও হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. ও হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. ছিলেন। শামেলীর ময়দানে মুসলমানদের পরাজয়ের পর ইংরেজরা কাসেম নানুতুভীসহ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে। তখন হযরত নানুতুভী রহ. এর ভক্তবৃন্দ তাঁকে আত্মগোপন করে থাকতে পীড়াপীড়ি শুরু করে। তাদের অনুরোধ ও পীড়াপীড়ির কারণে তিনি আত্মগোপন করেন। তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি জনসম্মুখে বেরিয়ে আসেন। ভক্তবৃন্দ পেরেশান হয়ে উঠলে তিনি বলেন, আমি তো আমার প্রিয় রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণের জন্য তিনদিন আত্মগোপনে ছিলাম। কারণ, তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকালে তিনদিন গারে ছওরে আত্মগোপন করেছিলেন, তিনদিনের বেশি আত্মগোপন করে থাকেননি। যে কাজ রাসূল করেননি তা আমি কিভাবে করব। আমার জীবন গেলেও আমি আর আত্মগোপন করে থাকব না, রাসূলের সুন্নত ছাড়ব না। এরপর থেকে তিনি প্রকাশ্যে চলাফেরা করেছিলেন। আল্লাহ তাআলাও তাকে ইংরেজদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন।
আমাদেরকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রিয় নবীর সুন্নত ও আদর্শকেই অনুসরণ করতে হবে। নিছক আবেগ আর ভালোবাসার 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন