বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০১৫

আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল : গুরুত্ব ও তাৎপর্য

                        ......................................................................................
তাওয়াক্কুল কি?
তাওয়াক্কুল আরবি শব্দ। এর অর্থ হল, ভরসা করা, নির্ভর করা। তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ অর্থ হল: আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করা। ইসলামে আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি একটি ইবাদত। তাই আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো উপর তাওয়াক্কুল করা যায় না। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য তাওয়াক্কুল নিবেদন করা যাবে না। মৃত বা জীবিত কোনো ওলীআল্লাহ, নবী-রাসূল, পীর- বুজুর্গের উপর ভরসা করা বা তাওয়াক্কুল রাখা শিরক।
একজন ঈমানদার মানুষ ভাল ও কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য সকল ব্যাপারে নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করবে, সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবে আর ফলাফলের জন্য আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করবে, তাঁর প্রতি আস্থা ও দৃঢ় একিন রাখবে। বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন ফলাফল তা-ই হবে। আর তাতেই রয়েছে কল্যাণ চূড়ান্ত বিচার ও শেষ পরিণামে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে যদি আমরা তা অনুধাবন না-ও করতে পারি। এটাই তাওয়াক্কুলের মূল কথা।
তাওয়াক্কুলের নীতি অবলম্বনকারী ব্যক্তি কখনো হতাশ হয় না। আশা ভঙ্গ হলে মুষড়ে পড়ে না। বিপদ-মুসীবত, যুদ্ধ-সংকটে ঘাবড়ে যায় না। যে কোনো দুর্বিপাক, দুর্যোগ, সঙ্কট, বিপদ-মুসীবতে আল্লাহ তাআলার উপর দৃঢ় আস্থা রাখে। ঘোর অন্ধকারে আশা করে উজ্জ্বল সুবহে সাদিকের। যত জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়নের ঝড়-তুফান আসুক, কোনো অবস্থাতেই সে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করে না।
তাই আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল হল তাওহীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 
আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“আর মুমিনগণ যখন সম্মিলিত বাহিনীকে দেখল তখন তারা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের যে ওয়াদা দিয়েছেন এটি তো তাই। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছেন’। এতে তাদের ঈমান ও ইসলামই বৃদ্ধি পেল।” (সূরা আহযাব: ২২)
“যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল যে, ‘নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে একত্র হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর’। কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’! অতঃপর তারা ফিরে এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিআমত ও অনুগ্রহসহ। কোনো মন্দ তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।” (সূরা আলে ইমরান : ১৭৩-১৭৪)
“আর তুমি ভরসা কর এমন চিরঞ্জীব সত্তার উপর যিনি মরবেন না।” (সূরা আল ফুরকান: ৫৮)
“আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।” (সূূরা ইবরাহীম : ১১)
“অতপর তুমি যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্যে যথেষ্ট।” (সূরা আত তালাক : ৩)
“মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা করে।” (সূরা আল আনফাল : ২)
এ আয়াতসমূহ থেকে আমরা নিম্নোক্ত শিক্ষাগুলো গ্রহণ করতে পারিঃ
এক. প্রথম আয়াতে খন্দকের যুদ্ধকালে মুসলমানদের ঈমানি অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। পঞ্চম হিজরী মোতাবেক ৬২৭ ইং সনে যখন মদিনার আশে পাশের ও মক্কার কাফেররা মদিনা ঘেরাও করে ফেলল মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নেতৃত্বে মুসলিমরা সাধ্যমত প্রতিরোধ গড়ে তুলল। তখন অস্তিত্বের এই সীমাহীন সংকটকালেও তারা সামান্যতম হীনমন্য হয়নি। বরং ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী শক্তির এই প্রবল ও সর্বব্যাপী আগ্রাসন দেখে তারা ভীত-বিহবল না হয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। কাফেরদের এ ব্যাপক আগ্রাসন দেখে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পেয়েছিল। হয়েছিল আরো দৃঢ়, আরো মজবুত । তারা মনে করেছিল, যখন আমরা ঈমান এনেছি তখন ঈমানের পরীক্ষা তো দিতেই হবে। এটা যেমনিভাবে মহান আল্লাহ বলেছেন তেমনি ওয়াদা করেছেন তাঁর রাসূলও। এ অবস্থায় যেমন তাদের ঈমান সুদৃঢ় হয়েছিল, তেমনি ইসলাম আরো সুন্দর, আরো মজবুত হয়েছিল।
আজ আমাদের অধিকাংশ মুসলমানের কাছে এ আয়াতের শিক্ষা অনুপস্থিত। আমরা যখন দেখি বিশ্বের অমুসলিমজাতি ও পরাশক্তিগুলো আমাদের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে, তখন আমরা ভীত-বিহ্বল হয়ে যাই, হীনমন্য হয়ে পড়ি। তাদের সন্তুষ্ট করতে নিজের দেশের লোকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরি। মুসলমানদের ধরে ধরে তাদের হাতে সোপর্দ করে দেই। ইসলাম ও ঈমানকে মুলতবী করার চেষ্টা করি। ভাবতে থাকি, এ মুহূর্তে ইসলামের এটা বলা যাবে না। ওটা করা যাবে না। আগ্রাসীদের প্রকাশ্যে সমর্থন করি। এগুলো সবই মুসলিম উম্মাহর মানসিক বিপর্যয়। মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত জাতি শক্তিশালী হলেও শত্র“কে পরাজিত করতে পারে না। অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ ছিল অন্য রকম। এমন সংকটকালে তারা দৃঢ় ঈমান ও মজবুত ইসলামের পরিচয় দেবে। তারা মনে করবে আমরা যখন ইসলামের অনুসারী তখন অমুসলিম শক্তি কখনো আমাদের অস্তিত্ব মেনে নেবে না। তাদের আগ্রাসনটাই স্বাভাবিক। তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। 
দুষ্ট বালকেরা রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় সব গাছের প্রতি ঢিল ছুড়ে না। যে সকল গাছে ফল আছে সে সকল গাছেই ছুড়ে। মুসলিম উম্মাহ হচ্ছে, ইসলাম নামক ধর্মের ফল-ফুল দিয়ে সমৃদ্ধ। দুষ্ট লোকেরা তাই তাদের নির্মূল করতে প্রয়াস চালায়। তাদের দেখা মাত্র ঢিল ছুড়ে।
ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলো ধেয়ে আসলে মুসলিম নেতারা যুদ্ধ করা ছাড়াই তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে। তখন আল্লাহ কী বলেছেন, তাঁর রাসূল কী করেছেন তার দিকে তাকানোর সময় তারা পায় না। আল্লাহ তাআলার প্রতি ভরসা রাখার বা তাওয়াক্কুল করার সাহস পায় না। ভাল কথা, কিন্তু বাস্তবতার প্রতি খেয়াল করার সুযোগ কি তাদের হয় না। তারা কি দেখতে পায় না, কত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মানুষের দল ভাঙ্গা-চোরা অস্ত্র দিয়ে কত বড় বড় শক্তিকে পরাজিত করে শূণ্য হাতে ফেরত পাঠিয়েছে?
কাফেরদের হুমকি, হামলা, অবরোধের মুখে যদি কারো ঈমান দৃঢ় না হয়, বৃদ্ধি না পায়, তাহলে সে যেন নিজেকে দুর্বল মুমিন হিসাবে ধরে নেয় এবং নিজের ঈমানের চিকিৎসা করাতে উদ্যোগী হয়। আলোচিত আয়াত তো আমাদের এমনটিই বলছে। 
দুই. দ্বিতীয় আয়াতটিও প্রায় একই বিষয় সম্পন্ন। অর্থাৎ কাফেরদের আক্রমণের মুখে মুমিনদের ঈমান এবং আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল ও আস্থা বৃদ্ধি পাওয়া সম্পর্কে। উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের বিপর্যয় ঘটেছিল মারাত্মকভাবে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ যুদ্ধে নিজে আহত হয়েছিলেন। তার অনেক প্রিয় সাহাবিকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছিল। এক হাজার মুজাহিদের মধ্যে সত্তর জন্য শহীদ হয়ে গেলেন। আহত হলেন আরো অনেক। যুদ্ধের পর মদিনার ঘরে ঘরে শোকের মাতম। আর আহত মুজাহিদদের কাতরানি। এমতাবস্থায় খবর এল, কাফের বাহিনী আবার মদীনাপানে ধেয়ে আসছে। অবশিষ্ট জীবিত মুসলমানদের সকলকে নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছে। এ খবর শুনে মুসলমানগন পলায়ন বা আত্মসমর্পণের চিন্তা না করে উঠে দাড়ালেন। ভীত বা শংকিত হওয়ার বদলে পুনরায় রওয়ানা দিলেন কাফের বাহিনীর মোকাবেলা করতে। আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান ও মজবুত তাওয়াক্কুল নিয়ে অভিযানে বের হলেন। আহত মুজাহিদদের অনেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে অভিযানে শরিক হলেন। পরিণতিতে তারা বিজয়ী হলেন। আর কাফেররা গেল পালিয়ে। ইসলামের ইতিহাসে এ অভিযানের নাম হামরাউল আসাদ অভিযান। এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বললেন, যখন তাদের ভয় দেখানো হল, কাফেররা আবার ফিরে আসছে তোমাদের শেষ করতে, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পেল। তারা বলল, আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট . . . ।
এ আয়াত থেকে শিক্ষা হল, কাফের শক্তির হামলা, অবরোধ, হুমকি-কে ভয় না করে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। 
তিন. কেউ যদি এ অবস্থায় আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল করতে পারে, তাহলে তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামত, প্রতিদান ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। 
যেমন লাভ করেছিলেন হামরাউল আসাদ অভিযানে অংশগ্রহণকারী সাহাবিবৃন্দ। এ ধরনের আগ্রাসন, সংকট ও বিপদে যাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তাআলার প্রতি আস্থা ও তাওয়াক্কুল বেড়ে যায়, তাদের প্রশংসা করেছেন আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে।
চার. তাওয়াক্কুল তো এমন সত্তার উপর করা উচিত যিনি চিরঞ্জীব। তিনি হলেন আল্লাহ। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপর তাওয়াক্কুল করা জায়েয নয়। তাওয়াক্কুল একটি ইবাদত। যেমন আল্লাহ এ আয়াতে তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করতে আদেশ করেছেন। এটা শুধু আল্লাহর জন্যই নিবেদন করতে হয়। যদি কেউ এমন কথা বলে, ‘চিন্তা নেই, আল্লাহর রাসূল শাফাআত করে আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।’ তাহলে সে আল্লাহর রাসূলের উপর তাওয়াক্কুল করে শিরক করল। এমনিভাবে যদি কেউ বলে আমি আব্দুল কাদের জিলানীর উপর ভরসা রাখি। তাহলে সে শিরক করল। তাওয়াক্কুল-ভরসা একমাত্র আল্লাহর উপরই করতে হবে। 
পাঁচ. আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রাখা মুমিনদের একটি বৈশিষ্ট্য।
ছয়. আল্লাহ তাঁর রাসূল-কেও তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সাত. আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলকারীকে আল্লাহ ভালবাসেন। সুতরাং আল্লাহর ভালবাসা লাভের একটি কার্যকর উপায় হল তাওয়াক্কুল।
আট. আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলকারীর সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
নয়. সূরা আনফালের উল্লেখিত আয়াতে ঈমানদারদের তিনটি গুণাগুণ আলোচিত হয়েছে। 
(১) যদি আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। 
(২) যখন তাঁর আয়াত বা বাণী তেলাওয়াত করে অথবা শুনে তখন এতে তার ঈমান বৃদ্ধি পায়। ঈমান আরো দৃঢ় হয়। 
(৩) তারা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে। পরবর্তী আয়াতে আরো দুটো গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাহল, সালাত কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে- আল্লাহর পথে দান-সদকা করে। সূরা আনফালের দুই ও তিন নম্বর আয়াতে ঈমানদারদের গুরুত্বপূর্ণ এ পাঁচটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। চার নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, যাদের এ গুণগুলো আছে তারাই সত্যিকার মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের কাছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ গুণগুলো অর্জন করার তাওফীক দান করুন।

হাদিস ১
عَن ابْن عَبَّاسٍ رضي اللَّهُ عنهما قال : قال رسولُ اللَّه صلى اللَّه عليه وآله وسلم : « عُرضَت عليَّ الأمَمُ ، فَرَأيْت النَّبِيَّ وَمعَه الرُّهيْطُ والنَّبِيَّ ومَعهُ الرَّجُل وَالرَّجُلانِ ، وَالنَّبِيَّ وليْسَ مَعهُ أحدٌ إذ رُفِعَ لِى سوادٌ عظيمٌ فظننتُ أَنَّهُمْ أُمَّتِي ، فَقِيلَ لِى: هذا موسى وقومه ولكن انظر إلى الأفق فإذا سواد عظيم فقيل لى انظر إلى الأفق الآخر فإذا سواد عظيم فقيل لي : هَذه أُمَّتُكَ ، ومعَهُمْ سبْعُونَ أَلْفاً يَدْخُلُونَ الْجَنَّة بِغَيْرِ حِسَابٍ ولا عَذَابٍ » ثُمَّ نَهَض فَدَخَلَ منْزِلَهُ ، فَخَاض النَّاسُ في أُولَئِكَ الَّذينَ يدْخُلُون الْجنَّةَ بِغَيْرِ حسابٍ وَلا عذابٍ ، فَقَالَ بعْضهُمْ : فَلَعَلَّهُمْ الَّذينَ صَحِبُوا رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، وقَال بعْضهُم : فَلعَلَّهُمْ الَّذينَ وُلِدُوا في الإسْلامِ ، فَلَمْ يُشْرِكُوا باللَّه شيئاً وذَكَروا أشْياء فَخرجَ عَلَيْهمْ رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ سَلَّم فَقَالَ : « مَا الَّذي تَخُوضونَ فِيهِ ؟ » فَأخْبَرُوهُ فَقَالَ : « هُمْ الَّذِينَ لا يرقُونَ، وَلا يَسْتَرْقُونَ ، وَلاَ يَتَطيَّرُون ، وَعَلَى ربِّهمْ يتَوكَّلُونَ » فقَامَ عُكَّاشةُ بنُ محْصن فَقَالَ : ادْعُ اللَّه أنْ يجْعَلَني مِنْهُمْ ، فَقَالَ : « أنْت مِنْهُمْ » ثُمَّ قَام رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ : ادْعُ اللَّه أنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ فقال : «سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ » متفقٌ عليه .
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার সম্মুখে সকল উম্মতকে পেশ করা হল। (এভাবে যে,) আমি একজন নবীকে ছোট একটি দলসহ দেখলাম। কয়েকজন নবীকে একজন বা দু’জন অনুসারীসহ দেখলাম। আরেকজন নবীকে দেখলাম তার সাথে কেউ নেই। ইতিমধ্যে আমাকে একটি বড় দল দেখানো হল। আমি মনে করলাম এরা হয়ত আমার উম্মত হবে। কিন্তু আমাকে বলা হল, এরা হল মূসা আলাইহিস সালাম ও তার উম্মত। আমাকে বলা হল, আপনি অন্য প্রান্তে তাকান। আমি তাকিয়ে দেখলাম, সেখানে বিরাট একটি দল। আবার আমাকে বলা হল, আপনি অন্য প্রান্তে তাকান। তাকিয়ে দেখলাম, সেখানেও বিশাল এক দল। এরপর আমাকে বলা হল, এসব হল আপনার উম্মত। তাদের সাথে সত্তর হাজার মানুষ আছে যারা বিনা হিসাবে ও কোনো শাস্তি ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ পর্যন্ত বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ঘরে চলে গেলেন। এরপর লোকেরা সেসব মানুষ- যারা বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে- তারা কারা হবে, সে সম্পর্কে আলোচনা শুরু করে দিল।

কেউ বলল, এরা হচ্ছে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহচর্য লাভ করেছে। আবার কেউ বলল, এরা হবে যারা ইসলাম অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেছে আর আল্লাহর সাথে কখনো শরীক করেনি, তারা। এভাবে সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এসে বললেন, তোমরা কী বিষয়ে আলোচনা করছ ? সাহাবিগণ আলোচনার বিষয়বস্তু সম্বন্ধে তাকে জানালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তারা হচ্ছে এমনসব লোক যারা ঝাড়-ফুঁক করেনা। ঝাড়-ফুঁক চায়না। কোনো কুলক্ষণে-শুভাশুভে বিশ্বাস করেনা। এবং শুধুমাত্র নিজ প্রতিপালকের উপর তাওয়াক্কুল করে।” এ কথা শুনে উক্কাশা ইবনে মিহসান দাঁড়িয়ে বলল, আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। এরপর আরেকজন উঠে বলল, আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “উক্কাশা এ ব্যাপারে তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।”
(বর্ণনায় : বুখারি ও মুসলিম)

হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
· এক. কেয়ামত সংঘটিত হবার পর হাশরের ময়দানে যা ঘটবে, তার কিছু চিত্র আল্লাহ আহকামুল হাকেমীন তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখিয়েছেন।
· দুই. হাশরের ময়দানে উম্মতের সংখ্যার বিচারে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত সংখ্যাগরিষ্ঠ হবেন। অন্য এক হাদীসে এসেছে তিনি উম্মাতের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গর্ব করবেন।
· তিন. অনেক নবী এমন হবেন, যাদের কোনো অনুসারী থাকবে না। এটাকে তাদের ব্যর্থতা বলে গণ্য করা হবে না। কারণ তারা উম্মাতের হেদায়েতের জন্য যথাসাধ্য মেহনত করেছিলেন। ফলাফল তো তাদের আয়ত্বে ছিল না।
· চার. উম্মতে মুহাম্মদীর থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে যাবে। কারণ, তারা তাওয়াক্কুলের পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেছে।
· পাঁচ. তাদের তাওয়াক্কুলের প্রকাশ ছিল এমন যে, তারা কারো ঝাড়-ফুঁক করেনি। ঝাড়-ফুঁকের জন্য কারো কাছে যায়নি। তারা অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করেনি। অন্য বর্ণনায় আরেকটি গুণের কথা আছে। আর তা হল, তারা আগুনের ছ্যাকা দেয়নি।
· ছয়. ইসলাম কোনো কিছুকে অশুভ লক্ষণ মনে করা অনুমোদন করে না। মানুষের সমাজে অনেক অশুভ লক্ষণের ধারনা আছে। যেমন, কালো বিড়ালকে অশুভ ভাবা হয়। তের সংখ্যাকে অশুভ ধরা হয়। কোনো কোনো তারিখকে অশুভ বলে গণ্য করা হয়। কখনো কখনো পশু পাখির হাক ডাককে অশুভ ধারনা করা হয় ইত্যাদি। যত প্রকার অশুভ লক্ষণ বলে মানুষ ধারনা করে, সব ইসলাম বাতিল করে দিয়েছে।
· সাত. ঝাড়-ফুঁক দু ধরনের। শরিয়ত অনুমোদিত ঝাড়-ফুঁক আর শরিয়ত পরিপন্থী ঝাড়-ফুঁক। যে সকল ঝাড়-ফুঁক কোরআন বা সহিহ হাদীস অনুযায়ী হবে তা জায়েয। আর যা এর বাহিরে হবে তা শিরক বলে বিবেচিত হবে। যারা জায়েয ঝাড়-ফুঁক-কেও পরিহার করে চলে এ হাদীসে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে । না জায়েয ঝাড়-ফুঁকতো শুধু তাওয়াক্কুলেরই খেলাফ নয়। তা তাওহীদেরও খেলাফ। এ হাদীসে যে ঝাড়-ফুঁককে তাওয়াক্কুলের খেলাফ বলা হয়েছে তাহল জায়েয ঝাড়-ফুঁক। আর না জায়েয ঝাড়-ফুঁক করলে তো তাওয়াক্কুল দূরের কথা ঈমানই থাকে কিনা সন্দেহ।
· আট. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী ও হাদীস নিয়ে গবেষণা করার বৈধতা প্রমাণিত হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরাম তাঁর কথা ও বাণী নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাতে বাধা দেননি। বরং সেই সত্তর হাজার লোক কারা হবে, তা প্রথমে বলেননি। বিষয়টি গোপন রেখে তাদের গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনা করতে উৎসাহিত করেছেন।
· নয়. যে সকল ঝাড়-ফুঁক বৈধ, তাহল, কোরআনের আয়াত, হাদীসে বর্ণিত কোনো দুআ দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা। কেউ এ রকম ঝাড়-ফুঁক করলে কোনো গুনাহ হবে না। যদি কেউ ঝাড়-ফুঁকের জন্য আসে তখন তাকে বৈধ পন্থায় ঝাড়-ফুঁক না করে ফিরিয়ে দেয়াও ঠিক হবে না।
· দশ. ভাল কাজে সাহাবায়ে কেরাম প্রতিযোগিতা করতেন। কেউ পিছনে থাকতে চাইতেন না। উক্কাশা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর দুআ চাওয়া ও অন্যান্য সাহাবীদের এ মর্যাদা কামনা করার মাধ্যমে এটা আমাদের বুঝে আসে।
· এগার. কোন নেককার আলেম, বুযুর্গ ব্যক্তিকে ‘আমার জন্য দুআ করুন’ বলা না জায়েয নয়। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এ রকম বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলে যাওয়ার পর সাহাবাগণ এ রকম বলতেন। যেমন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্বাস রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত থাকাকালে আমরা দুআ করার সময় তার অসিলা নিতাম। মানে তাকে দুআ করতে বলতাম। এখন তিনি নেই। আমরা আপনার অসিলা নিচ্ছি, বৃষ্টির জন্য আপনাকে দুআ করতে অনুরোধ করছি।

হাদিস ২ 
عَنْ ابْن عبَّاس رضي اللَّه عنهما أيْضاً أَنَّ رسول اللَّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم كانَ يقُولُ : «اللَّهُم لَكَ أسْلَمْتُ وبِكَ آمنْتُ ، وعليكَ توَكَّلْتُ ، وإلَيكَ أنَبْتُ ، وبِكَ خاصَمْتُ . اللَّهمَّ أعُوذُ بِعِزَّتِكَ، لا إلَه إلاَّ أنْتَ أنْ تُضِلَّنِي أنْت الْحيُّ الَّذي لا تمُوتُ ، وَالْجِنُّ وَالإِنْسُ يمُوتُونَ» متفقٌ عليه .
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, “ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি। আপনার উপরই ঈমান এনেছি। আপনার উপরই তাওয়াক্কুল (ভরসা) করেছি। আপনার দিকেই মনোনিবেশ করেছি। আপনার জন্যই তর্ক করেছি। হে আল্লাহ! আপনার সম্মানের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আর আপনি ছাড়াতো কোনো উপাস্য নেই- যেন আমাকে পথভ্রষ্ট না করেন। আপনি চিরঞ্জীব সত্তা, যিনি মৃত্য বরণ করেন না। আর মানুষ ও জিন মৃত্যু বরণ করে।”
(বর্ণনায় : বুখারি ও মুসলিম)

হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
· এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা যে সকল দুআ করতেন তার মধ্যে একটি হল:
· দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআতে বলেছেন, আমি আপনার উপরই তাওয়াক্কুল করলাম। এ কথা থেকে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা ও তার ঘোষণা দেয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
· তিন. আমাদের সকলের উচিত দুআটি মুখস্থ করে নেয়া ও সময় সুযোগমত অর্থ বুঝে পাঠ করা।

হাদীস – ৩. 
عن ابْنِ عَبَّاس رضي اللَّه عنهما أيضاً قال : «حسْبُنَا اللَّهُ ونِعْمَ الْوكِيلُ قَالَهَا إبْراهِيمُ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم حينَ أُلْقِى في النَّارِ ، وَقالهَا مُحمَّدٌ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم حيِنَ قَالُوا: «إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إيماناً وقَالُوا : حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوكِيلُ » رواه البخارى
وفي رواية له عن ابْنِ عَبَّاسٍ رضي اللَّه عنهما قال : « كَانَ آخِرَ قَوْل إبْراهِيمَ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم حِينَ ألْقِي في النَّارِ « حسْبي اللَّهُ وَنِعمَ الْوَكِيلُ » .
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হল, তখন তিনি বললেন, হাসবুনাল্লাহু ওয়া-নিমাল ওয়াকীল (আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি উত্তম অভিভাবক)।আর লোকেরা যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথীদের বলল, ( শত্র“ বাহিনীর) লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হচ্ছে, তাই তোমরা তাদের ভয় কর, তখন তাদের ঈমান বেড়ে গেল এবং তারা বলল, হাসবুনাল্লাহু ওয়া-নিমাল ওয়াকীল (আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট তিনি উত্তম অভিভাবক)। (বর্ণনায় : বুখারি)
ইবনে আব্বাস থেকে বুখারির আরেকটি বর্ণনায় আছে, আগুনে নিক্ষেপকালে ইবারহীম আলাইহিস সালামের শেষ কথা ছিল, হাসবুনাল্লাহু ওয়া-নিমাল ওয়াকীল (আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট তিনি উত্তম অভিভাবক)।

হাদীসের শিক্ষা ও মাসায়েল -
· এক. হাসবুনাল্লাহু ওয়া-নিমাল ওয়াকীল দুআটির ফজিলত প্রমাণিত হল। এ দুআটি যেমন মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম চরম বিপদের মুহূর্তে পাঠ করেছিলেন। তেমনি সাইয়েদুল মুরাসলীন সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামও বিপদের সময় তা পাঠ করেছেন।
· দুই. মানুষের পক্ষ থেকে আগত আঘাত, আক্রমণ ও বিপদের সময় এ দুআটি পাঠ করা আল্লাহ তাআলার প্রতি তাওয়াক্কুলের একটি বড় প্রমাণ। তাইতো যখন মানুষেরা ইবারহীম আলাইহিস সালাম- কে আগুনে নিক্ষেপ করেছিল তখন তিনি এ দুআটি পড়েই আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের প্রমাণ রেখেছিলেন। একইভাবে উহুদ যুদ্ধের প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতির পর যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম আবার শত্রু বাহিনীর আক্রমণের খবর পেলেন, তখন তারা এ দুআটি পাঠ করে আল্লাহর উপর নির্ভেজাল তাওয়াক্কুলের প্রমাণ দিয়েছেন।
· তিন. এ দুআটি আল্লাহর কাছে এত প্রিয় যে, তিনি তাঁর পবিত্র কালামে এ দুআ পড়ার ঘটনাটি তুলে ধরেছেন। আর যারা এটি পড়েছে তাদের প্রশংসা করেছেন।
· চার. শত্র“র পক্ষ থেকে আগত ভয়াবহ বিপদ বা আক্রমণের মুখে এ দুআটি সে-ই পড়তে পারে যার ঈমান তখন বেড়ে যায়। যে পাঠ করে তার ঈমান যে বৃদ্ধি পেয়েছে তা-ও বুঝা যায়।
· পাঁচ. দুআটি পাঠ করতে হবে অন্তর দিয়ে। অর্থ ও মর্ম উপলদ্ধি করে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এমনভাবে পাঠ করেছিলেন বলেই আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। আর সাইয়েদুল আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম এমনভাবে পাঠ করতে পেরেছিলেন বলেই তো তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছিল, ফলে শত্রুরা ভয়ে পালিয়েছিল। এমন যদি হয় যে, শুধু মুখে বললাম, কন্তু কি বললাম তা বুঝলাম না। তাহলে এতে কাজ হবে না বলেই ধরে নেয়া যায়।
· ছয়- ‘হাসবুনাল্লাহ’ আর ‘হাসবিআল্লাহ’ এর পার্থক্য হল এক বচন ও বহু বচনের। প্রথমটির অর্থ আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর দ্বিতীয়টির অর্থ হল, আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। এক বচনে হাসবি আল্লাহ. . আর বহু বচনে হাসবুনাল্লাহ. . . বলতে হয়। ইবারহীম আলাইহিস সালাম ছিলেন একা। তাই তিনি হাসবি আল্লাহ . . . বলেছেন।

হাদিস ৪- 
عَن أبي هُرَيْرةَ رضي اللَّه عنه عن النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أقْوَامٌ أفْئِدتُهُمْ مِثْلُ أفئدة الطَّيْرِ » رواه مسلم . قيل معْنَاهُ مُتوَكِّلُون ، وقِيلَ قُلُوبُهُمْ رقِيقةٌ .
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, “জান্নাতে এমন কিছু সম্প্রদায় প্রবেশ করবে, যাদের অন্তর পাখির অন্তরের মত হবে।” বর্ণনায় : মুসলিম

অন্তর হবে পাখিদের অন্তরের মত। এর অর্থ হল, তারা পাখিদের মত তাওয়াক্কুলকারী। বা তারা কোমল হৃদয়ের মানুষ।
হাদীসের শিক্ষা ও মাসায়েল -
· এক. ‘যাদের অন্তর পাখির অন্তরের মত হবে’ এ কথার অর্থ হল অন্তরের দিকে দিয়ে পাখি যেভাবে আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল করে, তারাও তেমনি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করত।পাখিরা আল্লাহর উপর কিভাবে তাওয়াক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন