মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫

ইতিহাস পাল্টে দেয়া পাঁচটি রমজানের ইতিহাস!

লিখেছেন : মাওলানা সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর
১. বদর যুদ্ধ : ইসলাম এবং মুসলমানদের ইতিহাসে বদর যুদ্ধের প্রভাব কতটুকু, তা আমরা সবাই জানি। রাসুল সা. ও তাঁর গুটিকয়েক জানবাজ সাহাবি রমজান মাসের প্রখর রোদ উপেক্ষা করে জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। তাদের এই অনমনীয় দৃঢ়তা ও অসম সাহসের এই নজির পেশ করবার কারণে আল্লাহ পাক ফেরেশতা নাজিল করে তাদের সাহায্য করেছিলেন। ৩১৩ জনের সেই মহিমান্বিত সেনাবাহিনী সুসজ্জিত সহস্রাধিক মুশরিক সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে নবজাত সেই ইসলামি আন্দোলনকে রক্ষা করেছিলেন। দিনটি ছিলো ২ হিজরির ১৭ রমজান (১৩ মার্চ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ)।
২. মক্কা বিজয় : রাসুল সা.-এর নবুওয়াতি জীবনের পূর্ণতা আসলো যেন নিজের জন্মভূমি মক্কা রক্তপাতহীন এক অভিযানে জয় করে নেবার মাধ্যমে। সারাটা জীবন যে লোকেরা তাঁকে ও তাঁর সম্মানিত সাহাবিদের ওপর নির্মম অত্যাচার ষড়যন্ত্র চালিয়েছিলো, তাদের একবাক্যে ক্ষমা করে দিয়ে ইসলামের শ্বাশত সৌন্দর্যকে পৃথিবীর ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখলেন তিনি। কাবা শরিফের ভেতর থেকে সকল মূর্তি উচ্ছেদ করলেন, তুলে দিলেন মানুষে মানুষে ভেদাভেদের সকল বাধা। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমেই ইসলামের দাওয়াত এবং জিহাদ বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত হতে লাগে। আন্তর্জাতিক ইসলামের গোড়াপত্তন হয় মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে। নবম হিজরির রমজান মাসের (১১ জানুয়ারি ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) এক পবিত্র দিনে এই বিজয় অর্জিত হয়।
৩. গোয়াডিলথের যুদ্ধ ও স্পেন বিজয় : ৯২ হিজরির (১৯ জুলাই ৭১১ খ্রিস্টাব্দ) রমজান মাসের এক পবিত্র দিনে মরক্কোর উপকূল থেকে জাহাজে সাগর পার হয়ে ইউরোপের মাটিতে পা রাখেন বীরকেশরী তারিক বিন জিয়াদ। বিস্ময়ের বিষয় হলো, মরক্কোর এই মানুষটি জন্ম নেন দাস হিসেবে। আর মৃত্যবরণ করেন নিঃস্ব অবস্থায়। সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি সমগ্র ইউরোপের ইতিহাস পাল্টে দিয়েছিলেন দুঃসাহসী নেতৃত্ব দিয়ে। জাবালুত্তারিক (জিব্রালটার প্রণালি) এর পাড়ে তারিক বিন জিয়াদ নেমেই তার জাহাজগুলো পুড়িয়ে দেন। সামনে থাকলো দুর্ধর্ষ ভিসিগথ রাজা রডারিকের বিশাল সেনাবাহিনী, আর পেছনে ভূমধ্যসাগরের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিমালা। এক আল্লাহর উপর ভরসা রেখে রোজাদার সেনাবাহিনী নিয়ে তিনগুণ বেশি স্প্যানিশ সেনাবাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরপর বাকিটা ইতিহাস! এভাবেই স্থাপিত হয় আন্দালুসিয়ায় খেলাফতের ভিত্তি। যার হাত ধরে জন্ম নেয় আলোকিত মুসলিম স্পেনের ৮০০ বছরের গৌরবময় ইতিহাস এবং ধীরে ধীরে তা রূপ নেয় ইউরোপিয়ান রেনেসাঁতে।
৪. ২য় ক্রুসেড : হাত্তিনের যুদ্ধ ও সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি : মহান শাসক এবং অসম সাহসী যোদ্ধা মিসরীয় সুলতান গাজি সালাহউদ্দিন আইয়ুবি মুসলিম জাহানের এক অতুল্য বীর। ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের ৮৮ বছরের নিষ্পেষণ থেকে প্রায় বিনা রক্তপাতে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেছিলেন তিনি। ক্রুসেডারদের দলপতি রাজা রিচার্ডের সাথে মহানুভব আচরণের প্রবাদতুল্য ইতিহাস আমরা সবাই জানি। শুধু যেটা জানি না সেটা হলো, এই জেরুজালেম বিজয়ের পথের প্রধানতম নিয়ামক হাত্তিনের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে তিনি জয়লাভ করেছিলেন পবিত্র রামাদান মাসে। ২৭ রমজান সারারাত ইবাদত বন্দেগিতে কাটিয়ে দেবার পর ভোরে শুরু হয় আক্রমণ এবং মুসলিম সেনাবাহিনী জয়লাভ করে। সুলায়মান আ. নির্মিত মসজিদুল আকসা, যা পুনরুদ্ধার করেছিলেন ফারুকে আজম উমর রা. তা আবার মুসলমানদের করতলগত হয়। দিনটি ছিলো ৪ জুলাই ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ।
৫. আইনে জালুতের যুদ্ধ ও তাতারি প্রতিরোধ : মুসলমান সারাজ্যের তখন এক ক্ষয়িষ্ণু দশা। হালাকু খানের মঙ্গল সেনাবাহিনীর প্রবল আক্রমণে একের পর এক রাজ্যের পতন হচ্ছে; তাতারিদের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে মুসলিম খেলাফতের এক বিশাল অংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। প্রায় সমগ্র ইসলামি সারাজ্যই পদানত করে ফেনেছিলো এই তাতারি সেনাদল। শুধু একটা এলাকা ছাড়া, মিসর! মিসরের মামলুক সুলতান কুতুজ সিদ্ধান্ত নেন তাতার প্রতিরোধের। ৬৫৮ হিজরির ২৫ রমজানে (৩ সেপ্টেম্বর ১২৬০ খ্রিস্টাব্দ) তার সেনাবাহিনী রুখে দাঁড়ায় প্রবল প্রতাপশালী মঙ্গোলবাহিনীর এবং তুমুল সেই যুদ্ধের ফলে প্রথমবারের মতো পরাজয়ের স্বাদ পায় তাতারিরা। পুনঃজাগরণ হয় ইসলামি শক্তির। আইনে জালুতের এই যুদ্ধের পথ ধরেই অবশেষে তাতারিদের তাড়িয়ে দিতে শুরু করলো মুসলিম সেনাবাহিনী।
(সূত্র : মুসলিম ম্যাটারস অবলম্বনে)
লিখেছেন : মাওলানা সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন