বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫

★★ সমাজের অলিখিত সংবিধান ★★

বাংলাদেশের সবকটি গণমাধ্যমেই বেশ ফলাও করে আলোচিত হচ্ছে সংবাদটি। ‘মাদ্রাসা ছাত্রের ধর্ষণ, প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণ করেছে মাদ্রাসাছাত্র, তরুণীকে মাদ্রাসাছাত্রের ধর্ষণ।’ সংবাদটি প্রায় এ রকম। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি গ্রামে শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে হাত বেঁধে ধর্ষণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে এক মাদ্রাসা ছাত্র। রোববার মিরসরাইয়ের বারইয়ারখালি গ্রামের ১৭ বছরের মেয়েটি বাড়িতে রেখে প্রতিবেশীর বাড়িতে তার বাবা মা বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে এই ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসা ছাত্রটি বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
এ ধরণের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম নয়। বাংলাদেশের নিত্যদিনের সংবাদ। নৌকায় ধর্ষণ, বনে ধর্ষণ, প্রাইভেটকারে ধর্ষণ, জঙ্গলে ধর্ষণ, শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, বিধবাকে ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, গারো তরুণীকে ধর্ষণ, প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণ। ধর্ষণ খেলায় মেতে উঠেছে ধর্ষক নামের পশুরা। এত ধর্ষণের সংবাদ পত্রিকার সাদাকালো পাতায় ¯’ পেলেও হঠাৎ করে মাদ্রাসা ছাত্রের ধর্ষণের সংবাদটি পত্রিকায় বেশ ফলাও করে ¯’ নিয়েছে।
ধর্ষক মাদ্রাসার ছাত্র হোক বা অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোক সে ধর্ষক এবং তার যথাযথ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। আইনের ফ্যাঁকরা, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়া, দুর্নীতি, পুলিশের দুর্বল তদন্ত রিপোর্ট, আইনজীবীর মারপ্যাঁচের কাছে অসহায় সমাজ, অধিকাংশ নির্যাতিতা মেয়ে গরীব কিংবা আদালতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পয়সা সংগ্রহ করতে না পারা বা হুমকি ধামকিতে বাধ্য হয়ে নতি স্বীকার করে। কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অর্থাৎ একটি মেয়ে ধর্ষণ হয় না তা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় অথচ আজীবন মানসিক অশান্তি আর বিপর্যস্ত জীবনধারণে জীবিত অথচ মৃতপ্রায় হয়ে থাকে। এজন্যে ধর্মে ধর্ষকদের কঠিন শাস্তি দেবার বিধান রয়েছে। ধর্ষক যদি বিবাহিত হয় তাহলে তাকে পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদন্ড করার কথা বলা হয়েছে। আর যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তাকে কমপক্ষে ১’শ দোররা মারার কথা বলা হয়েছে।
অধিকাংশ নারীবাদি বা মানবাধিকার রক্ষার কথা যারা বলেন, তাদের কাছে ধর্ষককে এধরনের কঠিন শাস্তি দেবার পক্ষপাতি নন। তারা এও বলেন, এটা মধ্যযুগীয় শাস্তি। এখানে নিরব সমাজ, প্রশ্নবিদ্ধ বিবেক। ফলে ধর্ষকদের পোয়াবারো। তবে ধর্ষকের নামের শুরুতে মাদ্রাসা শব্দটি যোগ রয়েছে। ধর্ষক একজন হুজুর, ধর্ষককে একজন হুজুর বলে চিনে সমাজ। বিষয়টা অস্বাভাবিক কিš‘ কারো কারো কাছে যেন উপাদেয় কোনো ব¯‘। পাওয়া গেছে। এবার তবে কেল্লা ফতে।
হুজুররা অন্যায় করলে সমাজ কাঁপবে এটাও স্বাভাবিক। হুজুরদের অন্যায় করা নিষেধ, হুজুরদের প্রেম করা নিষেধ, হুজুরদের গান বাজনা নিষেধ, হুজুরদের মেয়েদের দিকে তাকানো নিষেধ, হুজুরদের সিনেমা দেখা নিষেধ। এটা সমাজের অলিখিত সংবিধান। সমাজের মানুষদেরও অলিখিত সংবিধান। তবে এ হুজুররা যে এ সমাজেরই মানুষ, এ সমাজেরই চরিত্র আমরা ভুলে গেছি। ভুলে গেছি হুজুরদের গায়ে আমাদের মতই রক্ত, সে শয়তানের চক্রান্তে পড়ে পথভ্রষ্ট হতে পারে অন্যকোনো সাধারণ মানুষের মত। আমাদের মতই কামনা, বাসনা ও নফসে লাওয়ামা, নফসে আম্মারা বাস করে। হুজুরদের ভুল করতে নেই, হুজুরদের গোনাহ করতে নেই এ মানসিকতা কি হুজুরদের নষ্ট মানসিকতার পরিচয় না সমাজের নষ্ট ও মিডিয়ার নিচু মানসিকতার পরিচয়।
হুজুরদের অন্যায়টা সমাজের আট দশটা মানুষের মত বিবেচনা করা হয় না কারণ তাদের সম্পর্কে সমাজে একটা স্চ্ছ ও পবিত্র ধারণা ছিল এবং কিছুটা হলেও অবশিষ্ট রয়েছে। তো সমাজের সব হুজুররাই তো সব মানুষ নয়। ভাল মন্দ সকল সমাজ ও সকল শ্রেণীর মানুষের ভেতরেই রয়েছে।
একজন মাদ্রাসা ছাত্রের অন্যায় কেন ফলাও করে প্রচার হবে আর মাদ্রাসা ছাত্র না হলে তা ভেতরের পাতায় ছাপা হবে। আপত্তি এখানেই। একজন ছাত্র তা সে মাদ্রাসার হোক বা স্কুল কলেজের হোক সে অন্যায় ও ভাল মন্দের মাঝামাঝি চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠে। সমাজে ধর্ষক হবার মত নষ্ট পরিবেশ ও অপসংস্কৃতির উপকরণ এ দুজনকেই আকৃষ্ট করে। তারা পথভ্রষ্ট হয়। তাদের বিচার কঠিন হবে এবং এতে কোনো বৈষম্য করা চলবে না। কিš‘ পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা পেলে সে মাদ্রাসা হোক আর স্কুলের হোক অছাত্র কিংবা যে কোনো অপরাধে অপরাধী হয়ে উঠতে পারে। তবে মাদ্রাসাছাত্র ধর্ষক হলে মিডিয়ার অতিরিক্ত উৎসাহ ধর্ষণকে বন্ধ করতে পারবে না। ধর্ষকের নামের শুরুতে মাদ্রাসাছাত্র যোগ করে সমাজের আরেক ধরনের পঁচন মানসিকতার পরিচয় প্রকাশ পয়েছে
অন্যায়কে অন্যায়, পাপকে ঘৃণা করাই কাম্য। তবে অপরাধের শুরুতে বিশেষণ লাগিয়ে কাউকে ছোট কিংবা বড় করাও কি এক প্রকার অন্যায় নয়? পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়। ধর্ষণ অচিন্তনীয় ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। প্রয়োজন উপযুক্ত ধর্ষকদের শাস্তির মুখোমুখি করা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন