বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০১৫

আকীদাহ্ সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলাহ্

                                          بسم الله الرحمن الرحيم
ভূমিকা
প্রতিটি মুসলিমের জেনে রাখা উচিত যে, আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নাহভিত্তিক বিশুদ্ধ ‘আমল ছাড়া অন্যকিছু আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলার নিকট গৃহীত হবে না; আর বিশুদ্ধ ‘আমলের অপরিহার্য পূর্বশর্ত ‘‘ইসলাহুল ‘আকীদাহ বা ‘আকীদাহ্ সংশোধন করা। কারণ বিশুদ্ধ ‘আকীদাহ সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন এবং তা মনে-প্রাণে লালন করা ব্যতীত একজন মুসলিম আপাদমস্তক খাঁটি মুমিন হতে পারবে না। এটা অপ্রিয় সত্য যে, বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমগণ তাওহীদ তথা একত্ববাদ, আল্লাহর পরিচয় ও অবস্থান এবং রিসালাত ও ইসলামের অন্যান্য হুকুম-আহকাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ‘আকীদাহ্ পোষণ করে থাকেন: তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, ঈমানের অস্তিত্বই হুমকির মুখে নিপতিত হয়েছে। সে সকল বিভ্রান্ত মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথের দিশা দিতে ঈমানী দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের এ প্রয়াসকে কবুল করুন এবং পথহারা পথিককে সিরাতে মুস্তাকিমের দিশা দান করুন। আমীন।
‘আকীদার শাব্দিক বিশ্লেষণ:
كلمة "عقيدة" مأخوذة من العقد والربط والشدّ بقوة، ومنه الإحكام والإبرام، والتماسك والمراصة. (بيان عقيدة أهل السنة والجماعة ولزوم اتباعها 1/4)
‘আকীদাহ্ শব্দটি ‘আক্দ মূলধাতু থেকে গৃহীত। যার অর্থ হচ্ছে, সূদৃঢ়করণ, মজবুত করে বাঁধা। (বায়ানু আকীদাতু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, ১/৪)
‘আকীদার পারিভাষিক অর্থ:
العقيدة الإسلامية: هي الإيمان الجازم بالله، وملائكته، وكتبه، ورسله، واليوم الآخر، والقدر خيره وشره، وبكل ما جاء في القرآن الكريم، والسنة الصحيحة من أصول الدين، وأموره، وأخباره. (رسائل الشيخ محمد بن إبراهيم في العقيدة 7/2).
“শারী‘আতের পরিভাষায় ‘আকীদাহ্ হচ্ছে, মহান আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, শেস দিবস তথা মৃত্যু পরবর্তী যাবতীয় বিষয় ও তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি এবং আল-কুরআনুল হাকীম ও সহীহ হাদীসে উল্লেখিত দীনের সকল মৌলিক বিষয়ের প্রতি অন্তরের সুদৃঢ় মজবুত ও বিশুদ্ধ বিশ্বাসের নাম ‘আকীদাহ।” (রিসালাতুম শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম ফিল ‘আকীদাহ্ ৭/২)
‘আকীদার গুরুত্ব:
আকীদার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে এর গুরুত্ব বহনকারী কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো:
১. এক আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসীগণ প্রশান্তচিত্তের অধিকারী, বিপদে-আপদে, হর্যে-বিষাদে তারা শুধু তাঁকেই আহ্বান করে, পক্ষান্তরে বহু-ঈশ্বরবাদীরা বিপদক্ষণে কাকে ডাকবে, এ সিদ্ধান্ত নিতেই কিংকর্তব্য বিমুঢ়।
২. মহান আল্লাহ সর্বোজ্ঞ, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা সুতরাং তিনি সব জানেন, সব দেখেন এবং সব শোনেন। কোনো কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়-এমন বিশ্বাস যিনি করবেন, তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল পাপ হতে মুক্ত থাকতে পারবেন।
৩. নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের অতি নিকটবর্তী। তিনি দো‘আকারীর দো‘আ কবুল করেন, বিপদগ্রস্তকে বিপদমুক্ত করেন। বিশুদ্ধ ‘আকীদাহ্ বিশ্বাস লালনকারীগণ এটি মনেপ্রাণে গ্রহণ করে সর্বাবস্থায় তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে। পক্ষান্তরে একাধিক মা‘বুদে বিশ্বাসীগণ দোদুল্যমান অবস্থায় অস্থির-অশান্ত মনে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করে।
আমরা এ ক্ষুদ্র পুস্তিকায় মহান আল্লাহর সত্তা সংক্রান্ত এবং তিনি তাঁর নিজের সম্পর্কে যে সকল সুন্দর নাম উন্নত গুণাবলী ও কর্মের কথা ব্যক্ত করেছেন, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার প্রয়াস পাব ইনশা-আল্লাহ।
প্রশ্নোত্তর
১. প্রশ্ন: আল্লাহ কোথায়?
উত্তর: মহান আল্লাহ স্ব-সত্তায় সপ্ত আসমানের উপর অবস্থিত মহান আরশের উপরে আছেন। দলীল: কুরআন, সুন্নাহ ও প্রসিদ্ধ চার ইমামের উক্তি- মহান আল্লাহর বাণী:
﴿ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ ٥﴾ [طه: ٥]
“রহমান (পরম দয়াময় আল্লাহ) ‘‘আরশের উপর উঠেছেন।” [সূরা ত্বা-হা: ২০: ৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন দাসীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন:
«أَيْنَ اللهُ؟» قَالَتْ: فِي السَّمَاءِ، قَالَ: «مَنْ أَنَا؟» قَالَتْ: أَنْتَ رَسُولُ اللهِ، قَالَ: «أَعْتِقْهَا، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ»
“আল্লাহ কোথায়? দাসী বলল: আসমানের উপরে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি কে? দাসী বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: একে আজাদ (মুক্ত) করে দাও, কেননা সে একজন মুমিনা নারী।” (সহীহ মুসলিম: ১২২৭)
ইমাম আবু হানীফাহ (র)-এর উক্তি:
ইমাম আবু হানীফাহ রহ. বলেন,
«من قال: لا أعرف ربي في السماء أو في الأرض فقد كفر، وكذا من قال: إنه على العرش ولا أدري العرش أفي السماء أو في الأرض، والله تعالى يُدعى من أعلى لا من أسفل» [الفقه الأكبر (1/135)]
“যে ব্যক্তি বলবে, আমি জানি না, আমার রব আসমানে না জমিনে - সে কাফির। অনুরূপ (সেও কাফির) যে বলবে, তিনি আরশে আছেন, তবে আমি জানি না, ‘আরশ আসমানে না জমিনে। (আল ফিকহুল আকবার: ১/১৩৫)
ইমাম মালিক (র)-এর উক্তি:
তার ছাত্র ইয়াহইয়া ইবন ইয়াহইয়া বলেন, একদা আমরা ইমাম মালিক ইবন আনাস রহ. এর কাছে বসা ছিলাম, এমন সময় তার কাছে এক লোক এসে বলল,
«يا أبا عبد الله، (الرحمن على العرش استوى)، كيف استوى؟ قال: فأطرق مالك رأسه، حتى علاه الرحضاء، ثم قال: الاستواء غير مجهول، والكيف غير معقول، والإيمان به واجب، والسؤال عنه بدعة، وما أراك إلا مبتدعاً، فأمر به أن يخرج. وفي رواية: الاستواء معلوم والكيف غير معلوم، والإيمان به واجب، والسؤال عنه بدعة. [الاعتقاد للبيهقي (1/67)، حاشية السندي على ابن ماجه (1/167)، حاشية السندي على النسائي (6/38)، مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح (2/17، و13/89)]
“হে আবু ‘আব্দুল্লাহ! (মহান আল্লাহ বলেন) ‘‘রহমান (পরম দয়াময় আল্লাহ) ‘আরশের উপর উঠেছেন” (সূরা ত্বাহা: ২০:৫)। এই উপরে উঠা কীভাবে? এর রূপ ও ধরণ কেমন? প্রশ্নটি শোনামাত্র ইমাম মালিক (র) মাথা নীচু করলেন, এমনকি তিনি ঘর্মাক্ত হলেন: অতঃপর তিনি বললেন: ইসতিওয়া শব্দটির অর্থ (উপরে উঠা) সকলের জানা, কিন্তু এর ধরণ বা রূপ অজানা, এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এর ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা বিদ‘আত। আর আমি তোমাকে বিদ‘আতী ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। অতঃপর তিনি (র) তাকে মজলিস থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। (ইতিকাদ লিল বাইহাকী ১/৬৭, হাশিয়াতুস সিন্ধী ‘আলা ইবনি মাজাহ ১/১৬৭, মিরকাতুল মাফাতীহ ২/১৭, ১৩/৮৯)।
ইমাম শাফি‘ঈ (র)-এর উক্তি:
«وأن الله على عرشه في سمائه» تهذيب سنن أبي داود، وإيضاح مشكلاته (2/406).
আর নিশ্চয় আল্লাহ আসমানের উপরে স্বীয় আরশের উপর উঠেছেন। (তাহযীবু সুনানে আবী দাউদ ২/৪০৬)
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বাল (র)-এর উক্তি:
মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আল-কাইসী বলেন, আমি ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বলকে জিজ্ঞেস করলাম,
«يُحكى عن ابن المبارك أنه قيل له: كيف يُعرف ربنا؟ قال: في السماء السابعة على عرشه، قال أحمد: هكذا هو عندنا» تهذيب سنن أبي داود وإيضاح مشكلاته (2/406).
“এ মর্মে ইবনুল মুবারাক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল, ‘‘আমাদের রবের পরিচয় কীভাবে জানবো? উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘সাত আসমানের উপর ‘আরশে। (এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?) ইমাম আহমাদ (র) বললেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নিকট এ রকমই। (তাহযীবু সুনানে আবী দাউদ ২/৪০৬)
উল্লিখিত দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা মহান আল্লাহ তা‘আলার পরিচয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
২. প্রশ্ন: মহান আল্লাহ ‘আরশে আযীমের উপরে আছেন-এটা আল-কুরআনের কোন সূরায় বলা হয়েছে?
উত্তর: এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট সাতটি আয়াত রয়েছে:
১. সূরা আল-‘আরাফ ৭:৫৪
২. সূরা ইউনুস ১০:৩
৩. সূরা আর-রা‘দ ১৩:২
৪. সূরা ত্বা-হা ২০:৫
৫. সূরা আল-ফুরকান ২৫:৫৯
৬. সূরা আস-সাজদাহ্ ৩২:৪
৭. সূরা আল-হাদীদ ৫৭:৪
৩. প্রশ্ন : পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে, ‘‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”-[সূরা আল বাকারাহ্ ২:১৫৩], ‘‘আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছে-[সূরা আল-বাকারাহ্ ২:১৯৪), ‘‘আর আমরা গ্রীবাদেশ/শাহারগের থেকেও নিকটে”- [সূরা ক্ব-ফ :১৬], ‘‘যেখানে তিনজন চুপে চুপে কথা বলেন সেখানে চতুর্থজন আল্লাহ” [সূরা আল-মুজাদালাহ্:৭] -তাহলে এই আয়াতগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা কী?
উত্তর: মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতার মাধ্যমে সকল সৃষ্টির সাথে আছেন। অর্থাৎ তিনি সপ্ত আসমানের উপর অবস্থিত ‘আরশের উপর থেকেই সব কিছু দেখছেন, সব কিছু শুনছেন, সকল বিষয়ে জ্ঞাত আছেন। সুতরাং তিনি দূরে থেকেও যেন কাছেই আছেন।
সাথে থাকার অর্থ, গায়ে গায়ে লেগে থাকা নয়। মহান আল্লাহ মূসা ও হারূন আলাইহিমাস সালামকে ফির‘আওনের নিকট যেতে বললেন, তারা ফির‘আওনের অত্যাচারের আশংকা ব্যক্ত করলেন। আল্লাহ তাদের সম্বোধন করে বললেন,
﴿قَالَ لَا تَخَافَآۖ إِنَّنِي مَعَكُمَآ أَسۡمَعُ وَأَرَىٰ ٤٦﴾ [طه: ٤٦]
‘‘তোমরা ভয় পেও না। নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি। (অর্থাৎ) শুনছি এবং দেখছি।” [সূরা ত্ব-হা ২০:৪৬]
এখানে ‘‘সাথে থাকার অর্থ এটা নয় যে, মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে মহান আল্লাহ তা‘আলাও ফির‘আওনের দরবারে গিয়েছিলেন। বরং ‘‘সাথে থাকার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই করছেন এই বলে যে, ‘‘শুনছি এবং দেখছি।”
অতএব আল্লাহর সাথে ও কাছে থাকার অর্থ হলো জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতার মাধ্যমে, আর স্ব-সত্তায় তিনি ‘আরশের উপর রয়েছেন।
০৪. প্রশ্ন : ‘‘মুমিনের কলবে আল্লাহ থাকেন বা মুমিনের কলব আল্লাহর ‘আরশ’ কথাটির ভিত্তি কী?
উত্তর: কথাটি ভিত্তিহীন, মগজপ্রসূত, কপোলকল্পিত। এর সপক্ষে একটিও আয়াত বা সহীহ হাদীস নেই।
আছে জনৈক কথিত বুজুর্গের উক্তি, (قلب المؤمن عرش الله) ‘‘মুমিনের কলব আল্লাহর ‘আরশ। (আল মাওযূ‘আত লিস্ সাগানী বা সাগানী প্রণীত জাল হাদীসের সমাহার/ভান্ডার- ১/৫০, তাযকিরাতুল মাউযূ‘আত লিল-মাকদিসী ১/৫০)
সাবধান!!! আরবী হলেই কুরআন-হাদীস হয় না। মনে রাখবেন, দীনের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ ব্যতীত বুজুর্গের কথা মূল্যহীন-অচল।
উপরোক্ত উক্তিকারীদের মহান আল্লাহ ও তাঁর মহান ‘আরশের বিশালতা সম্পর্কে ন্যূনতমও ধারণাও নেই। তারা জানেন না যে, স্রষ্টা সৃষ্টির মাঝে প্রবেশ করেন না এবং স্রষ্টাকে ধারণ করার মত এত বিশাল কোনো সৃষ্টিও নেই। বর্তমান পৃথিবীতে দেড়শত কোটি মুমিনের দেড়শত কোটি কলব আছে। প্রতি কলবে আল্লাহ থাকলে আল্লাহর সংখ্যা কত হবে? যদি বলা হয় মুমিনের কলব আয়নার মত। তাহলে বলব, আয়নায় তো ব্যক্তি থাকে না, ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি থাকে। ব্যক্তি থাকার জায়গা আয়না ব্যতীত অপর একটি স্থান।
তবে এ কথা অমোঘ সত্য যে, মুমিনের কলবে মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসা আর আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকারের অদম্য মোহ স্পৃহা থাকে।
﴿وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ حَبَّبَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَزَيَّنَهُۥ فِي قُلُوبِكُمۡ﴾ [الحجرات: ٧]
‘‘বরং মহান আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করে তুলেছেন এবং সেটাকে সৌন্দর্য মন্ডিত করেছেন তোমাদের হৃদয়ের গহীনে।” [সূরা আল-হুজুরাত ৪৯:৭]
০৫. প্রশ্ন : “মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান” কথাটা কি সঠিক?
উত্তর: কথাটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ, যদি এর দ্বারা উদ্দেশ্য করা হয় যে, ‘‘স্বয়ং আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান” তাহলে সঠিক নয়। আর যদি এর দ্বারা বুঝানো হয় যে, ‘‘মহান আল্লাহর ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান” তাহলে সঠিক; কেননা আমরা জানি আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী প্রেরণ করতে মাধ্যম হিসেবে জিবরীল আলাইহিস সালামকে ব্যবহার করেছেন।
﴿نَزَلَ بِهِ ٱلرُّوحُ ٱلۡأَمِينُ ١٩٣ عَلَىٰ قَلۡبِكَ﴾ [الشعراء: ١٩٣، ١٩٤]
‘‘এটাকে (কুরআনকে) রুহুল আমীন (জিবরীল) আলাইহিস সালাম আপনার হৃদয়ে অবতীর্ণ করেছেন।” [সূরা আশ-শু‘আরা: ১৯৩-১৯৪]
তিনি নিজেই সর্বত্র বিরাজ করলে মাধ্যমের দরকার হল কেন?
আমরা আরও জানি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সাথে অত্যন্ত নিকট থেকে কথোপকথন করার জন্য মি‘রাজ রজনীতে সাত আসমানের উপর আরোহণ করেছিলেন। [সূরা আন-নাজম ৫৩:০১-১৮]
মহান আল্লাহ যদি সর্বত্রই থাকবেন, তাহলে মিরাজে যাওয়ার প্রয়োজন কী?
অতএব ‘‘মহান আল্লাহ স্ব-সত্তায় সর্বত্র বিরাজমান”এ কথাটি বাতিল, কুরআন-হাদীস পরিপন্থী ও আল্লাহর জন্য মানহানীকর। বরং তাঁর জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান।
০৬. প্রশ্ন: মহান আল্লাহর অবয়ব সম্পর্কে একজন খাঁটি মুসলিমের ‘‘আকীদাহ্-বিশ্বাস কীরূপ হবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহর চেহারা বা মুখমন্ডল, হাত, চক্ষু আছে কি? থাকলে তার দলীল প্রমাণ কী?
উত্তর: মহান আল্লাহ মানব জাতিকে আল-কুরআনের মাধ্যমেই পথের দিশা দান করেছেন। আল্লাহ বলেন:
﴿كُلُّ مَنۡ عَلَيۡهَا فَانٖ ٢٦ وَيَبۡقَىٰ وَجۡهُ رَبِّكَ ذُو ٱلۡجَلَٰلِ وَٱلۡإِكۡرَامِ ٢٧﴾ [الرحمن: ٢٦، ٢٧]
‘‘(কিয়ামাতের দিন) ভূপৃষ্ঠে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। (হে রাসূল) আপনার রবের মহিমাময় ও মহানুভব চেহারা (সত্তাই) একমাত্র অবশিষ্ট থাকবে।” [সূরা আর-রহমান ৫৫: ২৬-২৭]
এ আয়াতে মহান আল্লাহর চেহারা প্রমাণিত হয়।
মহান আল্লাহর হাত আছে। এর স্বপক্ষে আল কুরআনের দলীল:
﴿قَالَ يَٰٓإِبۡلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسۡجُدَ لِمَا خَلَقۡتُ بِيَدَيَّۖ﴾ [ص: ٧٥]
‘‘আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস! আমি নিজ দু’হাতে (আদমকে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সামনে সাজদাহ্ করতে তোমাকে কিসে বাধা দিলো?” [সূরা সাদ ৩৮:৭৫]
অনুরূপ ভাবে মহান আল্লাহর চক্ষু আছে। যেমন: আল্লাহ নবী মূসা আলাইহিস সালামকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন:
﴿وَأَلۡقَيۡتُ عَلَيۡكَ مَحَبَّةٗ مِّنِّي وَلِتُصۡنَعَ عَلَىٰ عَيۡنِيٓ ٣٩ ﴾ [طه: ٣٩]
“আর আমি আমার পক্ষ হতে তোমার প্রতি ভালোবাসা বর্ষণ করেছিলাম, যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও।” [সূরা ত্বাহা ২০:৩৯]
তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন:
﴿وَٱصۡبِرۡ لِحُكۡمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعۡيُنِنَاۖ ﴾ [الطور: ٤٨]
“(হে রাসূল!) আপনি আপনার রবের নির্দেশের কারণে ধৈর্যধারণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি আমার চোখেন সামনেই রয়েছেন।” [সূরা আত-তূর ৫২:৪৮]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٌ ١﴾ [المجادلة: ١]
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা শ্রবণ করেন ও দেখেন।” [সূরা আল-মুজা-দালাহ্ ৫৮:১]
উল্লিখিত আয়াতসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহর চেহারা, হাত, চোখ, আছে; তিনি অবয়বহীন নন; বরং তাঁর অবয়ব রয়েছে যদিও আমরা সেটার ধরণ বা রূপ সম্পর্কে কোনো কিছুই জানি না। তবে আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহর শ্রবণ-দর্শন ইত্যাদি মানুষের শ্রবণ-দর্শনের অনুরূপ নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [الشورا: ١١]
‘‘আল্লাহর সাদৃশ্য কোনো বস্তুই নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন।” [সূরা আশ্-শূরা ৪২:১১]
মহান আল্লাহর এ তিনটি গুণাবলীসহ যাবতীয় গুণাবলীর ক্ষেত্রে চারটি বিষয় মনে রাখতে হবে:
১. এগুলো অস্বীকার করা যাবে না
২. অপব্যাখ্যা করা যাবে না
৩. সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দেয়া যাবে না এবং
৪. কল্পনায় ধরণ, গঠন আঁকা যাবে না।
০৭. প্রশ্ন : একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েবের খবর বলতে পারে কী?
উত্তর: অবশ্যই না; একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সৃষ্টির আর কেউ গায়েব এর খবর রাখে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنِّيٓ أَعۡلَمُ غَيۡبَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَأَعۡلَمُ مَا تُبۡدُونَ وَمَا كُنتُمۡ تَكۡتُمُونَ ٣٣﴾ [البقرة: ٣٣]
‘‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) আসমান ও জমিনের যাবতীয় গায়েবী বিষয় সম্পর্কে খুব ভালভাবেই অবগত আছি এবং সে সকল বিষয়েও জানি যা তোমরা প্রকাশ করো, আর যা তোমার গোপন রাখো।” [সূরা আল-বাকারাহ্ ২:৩৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ ۞وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ ﴾ [الانعام: ٥٩]
‘‘সে মহান আল্লাহর কাছে গায়েবী জগতের সকল চাবিকাঠি রয়েছে।” সেগুলো একমাত্র তিনি (আল্লাহ) ছাড়া আর কেউই জানে না।” [সূরা আল-আন‘আম ৬:৫৯]
০৮. প্রশ্ন : আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী গায়েব এর খবর বলতে পারতেন?
উত্তর: আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর জানতেন না। তবে মহান আল্লাহ ওয়াহীর মাধ্যমে যা তাঁকে জানিয়েছেন- তা ব্যতীত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِيَ ٱلسُّوٓءُۚ إِنۡ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٞ وَبَشِيرٞ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ١٨٨ ﴾ [الاعراف: ١٨٨]
‘‘(হে মুহাম্মাদ!) আপনি ঘোষণা করুণ, একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ, লাভ-ক্ষতি, কল্যাণ-অকল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমার কোনোই হাত নেই। আর আমি যদি গায়েব জানতাম, তাহলে বহু কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোনো প্রকার অকল্যাণ আমাকে স্পর্শ করতে পারত না।” [সূরা আল-আ‘রাফ ৭:১৮৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবূওয়াতি জীবনেই এ কথার প্রমাণ মেলে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি গায়েব জানতেন, তাহলে অবশ্যই উহুদের যু্দ্ধ এবং তায়েফসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতেন না।
যেখানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব রাসূলুল্লাহ (সা) গায়েব জানতেন না, সেখানে অন্য কারো পক্ষেই গায়েব জানা অসম্ভব। সুতরাং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েব জানে না- আর এ সম্পর্কে কারো মনে বিন্দুমাত্রও সংশয় থাকলে, সে স্পষ্ট শির্কের গুনাহে নিমজ্জিত হবে, যা আন্তরিক তাওবাহ্ ছাড়া ক্ষমার অযোগ্য।
০৯. প্রশ্ন: ইহ-জীবনে মুমিন বান্দাদের পক্ষে স্বপ্নযোগে বা স্বচক্ষে মহান আল্লাহর দর্শন লাভ করা সম্ভব কি?
উত্তর: আল-কুরআনের আয়াত দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, দুনিয়ার জীবনে একনিষ্ঠ মুমিন বান্দাগণও স্বচক্ষে মহান আল্লাহকে দেখতে পাবেন না।
আল্লাহ বলেন:
﴿ قَالَ رَبِّ أَرِنِيٓ أَنظُرۡ إِلَيۡكَۚ قَالَ لَن تَرَىٰنِي﴾ [الاعراف: ١٤٣]
‘‘তিনি (মুসা আলাইহিস সালাম) আল্লাহকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, হে আমার রব! তোমার দীদার আমাকে দাও; যেন আমি তোমার দিকে তাকাব। মহান আল্লাহ (মূসাকে) বলেছিলেন, হে মূসা! তুমি আমাকে কখনো দেখতে পাবে না।” [সূরা আল-আ‘রাফ ৭:১৪৩]
এ আয়াতসহ অন্যান্য আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, সৃষ্টিজীবের কেউ এমনকি নবী রাসূলগণও আল্লাহকে চর্মচক্ষু দ্বারা দুনিয়ার জীবনে দেখতে পান নি। তবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নযোগে মহান আল্লাহকে দেখেছেন। (সিলসিলা সহীহাহ্ ৩১৬৯)
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বপ্ন দেখাকে পুঁজি করে যে সকল কথিত পীর-ফকীর মহান আল্লাহকে মুহুর্মূহু দর্শন করার দাবী করেন তা মিথ্যা বৈ কিছু নয়।
আর যারা তাদের এ কথার উপর অণু পরিমাণও বিশ্বাস স্থাপন করবে, তারাও ধোঁকা ও প্রতারণার সাগরে নিমজ্জিত।
১০. প্রশ্ন: কথিত আছে যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ আলাইহিস সালাম নূরের তৈরি। এ কথার কোনো ভিত্তি-প্রমাণ আছে কি?
উত্তর: আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের নয়, বরং অন্যান্য মানুষ যেভাবে জন্মলাভ করেন সেভাবে তিনিও জন্মলাভ করেছেন। আর প্রথম মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা মাটি দ্বারা তৈরী করেছেন একজন প্রকৃত মুসলিমকে অবশ্যই এ বিশ্বাস পোষণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন:
﴿ قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَيَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ﴾ [الكهف: ١١٠]
‘‘(হে রাসূল! আপনার উম্মাতকে) আপনি বলে দিন যে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি ওয়াহী নাযিল হয় যে, নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ বা উপাস্য একজনই।” [সূরা আল-কাহাফ ১৮:১১০]
একজন মানুষের যে দৈহিক বা মানসিক চাহিদা রয়েছে, নবী মুহা্ম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরও তেমনি দৈহিক বা মানসিক চাহিদা ছিল। তাই তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাওয়া-দাওয়া, প্রাকৃতিক প্রয়োজন, বিবাহ-শাদী, ঘর-সংসার সবই আমাদের মতই করতেন। পার্থক্য শুধু এখানেই যে, তিনি আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল ছিলেন: তাঁর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের হিদায়াতের জন্য ওয়াহী নাযিল হত। আর যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অতি প্রশংসা করতে গিয়ে তাঁকে নূরের নবী বলে আখ্যায়িত করল, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিলো।
এভাবেই একশ্রেণীর মানুষ বলে থাকেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ তা‘আলা আসমান-জমিন, ‘আরশ কুরসী কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এ কথাগুলিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও সর্বৈব মিথ্যা। কারণ, কুরআন ও সহীহ হাদীসে এর সপক্ষে কোনোই দলীল-প্রমাণ নেই বরং এ সকল অবান্তর কথাবার্তা আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থী। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে,
﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [الذاريات: ٥٦]
‘‘আমি জিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ‘ইবাদত করার জন্য।” [সূরা আয-যারিয়াত ৫১:৫৬)]
১১. প্রশ্ন: অনেকেই এ ‘আকীদাহ্ বিশ্বাস পোষণ করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যান নি বরং তিনি জীবিত; এ সম্পর্কিত শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّكَ مَيِّتٞ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ ٣٠﴾ [الزمر: ٣٠]
“নিশ্চয় আপনি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।”
১২. প্রশ্ন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যে সালাত পাঠ করি, তা-কি তাঁর নিকট পৌঁছে?
উত্তর: আমাদের পঠিত সালাত আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে পৌছান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না এবং আমার কবরকে উৎসবস্থলে পরিণত করো না; আর আমার উপর সালাত পাঠ করো; কেননা, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের পঠিত সালাত আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
১৩. প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা কোনো মৃত বা অনুপস্থিত ওলী-আওলিয়াকে মাধ্যম করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা বা বিপদাপদে সাহায্য চাওয়া যাবে কি?
উত্তর: নবী-রাসূল, ওলী-আওলিয়াসহ সকল সৃষ্টির একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার কাছেই মানুষ যাবতীয় চাওয়া-পাওয়ার প্রার্থনা করবে। আল্লাহ বলেন:
﴿فَٱبۡتَغُواْ عِندَ ٱللَّهِ ٱلرِّزۡقَ وَٱعۡبُدُوهُ﴾ [العنكبوت: ١٧]
“তোমরা আল্লাহর কাছে (সরাসরি) রিযিক চাও এবং তাঁরই ‘ইবাদাত করো।” [সূরা আল-‘আনকাবূত ২৯:১৭]
﴿ أَمَّن يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ﴾ [النمل: ٦٢]
“বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ডাকে (আল্লাহ ছাড়া) কে সাড়া দেয়, যখন সে ডাকে; আর (আল্লাহ ছাড়া) কে তার কষ্ট দূর করে?” [সূরা আন্-নামল ২৭:৬২]
উল্লিখিত আয়াতদ্বয় ছাড়াও আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, আল্লাহ ছাড়া মৃত বা অনুপস্থিত কোনো ওলী-আওলিয়া, পীর-মাশায়েখ এমনকি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও মাধ্যম করে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া জায়েয নয়। পক্ষান্তরে মানুষের যা কিছু চাওয়া-পাওয়া রয়েছে, তা সরাসরি আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে।
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمۡثَالُكُمۡۖ ﴾ [الاعراف: ١٩٤]
‘‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাকো, তারা তো সবাই তোমাদের মতই বান্দা।” [সূরা আল-আ‘রাফ ৭:১৯৪]
﴿ أَمۡوَٰتٌ غَيۡرُ أَحۡيَآءٖۖ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ ٢١ ﴾ [النحل: ٢١]
‘‘তারা তো মৃত, প্রাণহীন এবং তাদেরকে কবে পুনরূত্থান করা হবে তারা তাও জানে না।” [সূরা আন-নাহল ১৬:২১]
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচাতো ভাই ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাসকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘যখন তুমি কোনো কিছু চাইবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছে চাইবে। আর যখন তুমি কোনো সাহায্য চাইবে, তখনও একমাত্র মহান আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।” এমনকি জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও আল্লাহর কাছেই তা চাইতে বলা হয়েছে।
১৪. প্রশ্ন: উপস্থিত জীবিত ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চাওয়া সম্পর্কিত শরী‘আতের বিধান কী?
উত্তর: উপস্থিত জীবিত ব্যক্তি যে সমস্ত বিষয়ে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন, সে সমস্ত বিষয়ে তার কাছে চাওয়া যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَٱسۡتَغَٰثَهُ ٱلَّذِي مِن شِيعَتِهِۦ عَلَى ٱلَّذِي مِنۡ عَدُوِّهِۦ فَوَكَزَهُۥ مُوسَىٰ فَقَضَىٰ عَلَيۡهِۖ﴾ [القصص: ١٥]
‘‘মূসা (আ)-এর দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে মূসা আলাইহিস সালাম-এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল, তখন মূসা আলাইহিস সালাম তাকে ঘুষি মারলেন, এভাবে তিনি তাকে হত্যা করলেন।” [সূরা আল-ক্বাসাস ২৮:১৫]
আল্ল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন