আমাদের মনে রাখতে হবে, সৃষ্টির উপাদানের উপর ভিত্তি করে কোন ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা সরাসরি কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা। কারণ মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেনঃ. ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻧَّﺎ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎﻛُﻢ ﻣِّﻦ ﺫَﻛَﺮٍ ﻭَﺃُﻧﺜَﻰ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻛُﻢْ ﺷُﻌُﻮﺑًﺎ ﻭَﻗَﺒَﺎﺋِﻞَ ﻟِﺘَﻌَﺎﺭَﻓُﻮﺍ ﺇِﻥَّ ﺃَﻛْﺮَﻣَﻜُﻢْ ﻋِﻨﺪَ ﺍﻟﻠَّـﻪِ ﺃَﺗْﻘَﺎﻛُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّـﻪَ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﺧَﺒِﻴﺮٌ (সূরা হুজুরাত: ১৩)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ হে মানব মণ্ডলি! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক এক, সাবধান! কোন আরবীর আজমীর (অনারব) উপর, কোন আজমীর আরবীর উপর প্রাধান্য নেই। অনুরূপভাবে কোন লাল বর্ণের ব্যক্তির কালো ব্যক্তির উপর, কোন কালো ব্যক্তির লাল বর্ণের ব্যক্তির উপর প্রাধান্য নেই। প্রাধান্য একমাত্র তাকওয়া পরহেযগারিতার ভিত্তিতে হবে। ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’
এ জন্যই তো আযরের মত মূর্তী পুজারী মুশরিক ব্যক্তির ঔরষজাত সন্তান ইবরাহীম (আলাইহিস্ সালাম) অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবী, শুধু কি তাই মহান আল্লাহর খলীল তথা অন্তরঙ্গ বন্ধুও বটে, তার মিল্লাতের অনুসরন করার নির্দেশ আমাদের নবীকেও করা হয়েছে। পক্ষান্তরে নূহ নবীরমত আঃ একজন সম্মানিত ব্যক্তির ঔরষজাত সন্তান কাফের হওয়ার জন্য নুহ আঃ এর সন্তান নিকৃষ্ট ব্যক্তিতে পরিনত হয়েছে।বীর্য থেকে মানুষ সৃষ্টি হলেও মানুষই বীর্য অপেক্ষা উত্তম। এমনকি তুলনা করাটাও অনর্থক। আদী পিতা আদম (আলাইহিস্ সালাম) মাটির তৈরী হলেও মাটির থেকে তিনি সন্দেহাতীতভাবে উত্তম, এমনকি তুলনা করাটাও বাহুল্য কাজ..। আবু লাহাব সম্মানিত কুরাইশ বংশের হয়েও অতি নিকৃষ্ট কাফের, যার শানে আল্লাহ সূরা (লাহাব) নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ এই সূরায় বলেনঃ পরম করুনাময়, দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। ‘আবু লাহাবের দুটি হাত ধ্বংস হোক, সে নিজেও ধ্বংস হোক। তার সম্পদ, ও যা সে উপার্জন করেছে -কোনই কাজে আসেনি। সে অচিরেই লেলিহান অগ্নিতে প্রবেশ করবে। এবং তার স্ত্রীও-যে ইন্ধন বহন করে, তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে।(সূরা লাহাব)
এ থেকেই অকাট্যভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার জন্মের উপাদানের উপর ভিত্তিশীল নয়। বরং এই শ্রেষ্টত্ব এবং সম্মান তাক্বওয়ার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। কাজেই নবী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নূর থেকে সৃষ্টি না হয়ে মাটি থেকে সৃষ্টি হওয়া তাঁর জন্য মোটেও মানহানিকর বিষয় নয় যেমনটি অসংখ্য বিদআতী তাই ধারণা করে বসেছে। বরং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী হয়েও সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব, সর্বাধিক মুত্তাক্বী-পরহেযগার। সমস্ত সৃষ্টি কুলের সর্দার, নবীকুল শিরোমণী, আল্লাহর খালীল-অন্তরঙ্গ বন্ধু। আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হাশরের মাঠে মহান শাফাআতের অধিকারী, হাওযে কাউছারের অধিকারী, সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী। মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী, রহমাতুল লিল আলামীন, শাফিঊল মুযনিবীন। এসব বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাঝে কোনই দ্বিমত নেই। ইহাই ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম,তাবে তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিশ্বাস। যুগ পরম্পরায় এই বিশ্বাসই করে আসছেন সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকাবিরীন।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ হে মানব মণ্ডলি! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক এক, সাবধান! কোন আরবীর আজমীর (অনারব) উপর, কোন আজমীর আরবীর উপর প্রাধান্য নেই। অনুরূপভাবে কোন লাল বর্ণের ব্যক্তির কালো ব্যক্তির উপর, কোন কালো ব্যক্তির লাল বর্ণের ব্যক্তির উপর প্রাধান্য নেই। প্রাধান্য একমাত্র তাকওয়া পরহেযগারিতার ভিত্তিতে হবে। ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’
এ জন্যই তো আযরের মত মূর্তী পুজারী মুশরিক ব্যক্তির ঔরষজাত সন্তান ইবরাহীম (আলাইহিস্ সালাম) অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবী, শুধু কি তাই মহান আল্লাহর খলীল তথা অন্তরঙ্গ বন্ধুও বটে, তার মিল্লাতের অনুসরন করার নির্দেশ আমাদের নবীকেও করা হয়েছে। পক্ষান্তরে নূহ নবীরমত আঃ একজন সম্মানিত ব্যক্তির ঔরষজাত সন্তান কাফের হওয়ার জন্য নুহ আঃ এর সন্তান নিকৃষ্ট ব্যক্তিতে পরিনত হয়েছে।বীর্য থেকে মানুষ সৃষ্টি হলেও মানুষই বীর্য অপেক্ষা উত্তম। এমনকি তুলনা করাটাও অনর্থক। আদী পিতা আদম (আলাইহিস্ সালাম) মাটির তৈরী হলেও মাটির থেকে তিনি সন্দেহাতীতভাবে উত্তম, এমনকি তুলনা করাটাও বাহুল্য কাজ..। আবু লাহাব সম্মানিত কুরাইশ বংশের হয়েও অতি নিকৃষ্ট কাফের, যার শানে আল্লাহ সূরা (লাহাব) নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ এই সূরায় বলেনঃ পরম করুনাময়, দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। ‘আবু লাহাবের দুটি হাত ধ্বংস হোক, সে নিজেও ধ্বংস হোক। তার সম্পদ, ও যা সে উপার্জন করেছে -কোনই কাজে আসেনি। সে অচিরেই লেলিহান অগ্নিতে প্রবেশ করবে। এবং তার স্ত্রীও-যে ইন্ধন বহন করে, তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে।(সূরা লাহাব)
এ থেকেই অকাট্যভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার জন্মের উপাদানের উপর ভিত্তিশীল নয়। বরং এই শ্রেষ্টত্ব এবং সম্মান তাক্বওয়ার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। কাজেই নবী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নূর থেকে সৃষ্টি না হয়ে মাটি থেকে সৃষ্টি হওয়া তাঁর জন্য মোটেও মানহানিকর বিষয় নয় যেমনটি অসংখ্য বিদআতী তাই ধারণা করে বসেছে। বরং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী হয়েও সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব, সর্বাধিক মুত্তাক্বী-পরহেযগার। সমস্ত সৃষ্টি কুলের সর্দার, নবীকুল শিরোমণী, আল্লাহর খালীল-অন্তরঙ্গ বন্ধু। আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হাশরের মাঠে মহান শাফাআতের অধিকারী, হাওযে কাউছারের অধিকারী, সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী। মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী, রহমাতুল লিল আলামীন, শাফিঊল মুযনিবীন। এসব বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাঝে কোনই দ্বিমত নেই। ইহাই ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম,তাবে তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিশ্বাস। যুগ পরম্পরায় এই বিশ্বাসই করে আসছেন সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকাবিরীন।
‘সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্ব অজর্ন করে’ এটা ইবলীস শয়তানের ধারণা ও দাবী মাত্র। এই অলিক ধারণার ভিত্তিতেই সে আগুনের তৈরী বলে মাটির তৈরী আদমকে সিজদাহ করতে অস্বীকার করে ছিল। অথচ আল্লাহ অন্যান্য ফেরেশতাদের সাথে তাকেও আদমকে আঃ সিজদা করার নির্দেশ করে ছিলেন। তার উচিত ছিল আদমকে আঃ সেজদা করা কিন্তু সে তা না করে নিজ সৃষ্টির উপাদানের খোড়া যুক্তি দেখিয়ে নিজেকে উত্তম ও আদম (আলাইহিস্ সালাম)কে অধম মনে করে আদমকে সিজদা করা থেকে বিরত হয়ে ছিল।
মহান আল্লাহ সূরা আরাফে তার ঘটনাটি এইভাবে উদ্ধৃত করেছেনঃ
ﻭَﻟَﻘَﺪ ﺧَﻠَﻘﻨﺎﻛُﻢ ﺛُﻢَّ ﺻَﻮَّﺭﻧﺎﻛُﻢ ﺛُﻢَّ ﻗُﻠﻨﺎ ﻟِﻠﻤَﻼﺋِﻜَﺔِ ﺍﺳﺠُﺪﻭﺍ ﻟِﺂﺩَﻡَ ﻓَﺴَﺠَﺪﻭﺍ ﺇِﻟّﺎ ﺇِﺑﻠﻴﺲَ ﻟَﻢ ﻳَﻜُﻦ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴّﺎﺟِﺪﻳﻦَ
আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-আদমকে সেজদা কর তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। (সূরাহ আল্ আরাফঃ১১)
ﻗﺎﻝَ ﻣﺎ ﻣَﻨَﻌَﻚَ ﺃَﻟّﺎ ﺗَﺴﺠُﺪَ ﺇِﺫ ﺃَﻣَﺮﺗُﻚَ ﻗﺎﻝَ ﺃَﻧﺎ ﺧَﻴﺮٌ ﻣِﻨﻪُ ﺧَﻠَﻘﺘَﻨﻲ ﻣِﻦ ﻧﺎﺭٍ ﻭَﺧَﻠَﻘﺘَﻪُ ﻣِﻦ ﻃﻴﻦٍ
আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।(সূরাহ আল্ আরাফঃ১২)
ﻗﺎﻝَ ﻓَﺎﻫﺒِﻂ ﻣِﻨﻬﺎ ﻓَﻤﺎ ﻳَﻜﻮﻥُ ﻟَﻚَ ﺃَﻥ ﺗَﺘَﻜَﺒَّﺮَ ﻓﻴﻬﺎ ﻓَﺎﺧﺮُﺝ ﺇِﻧَّﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼّﺎﻏِﺮﻳﻦَ
বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।(সূরাহ আল্ আরাফঃ১৩)
অতএব যারা সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত করার পক্ষপাতি তাদের উপর্যুক্ত আয়াতগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, চিন্তা করা উচিত যুক্তিটি কোন্ ভদ্রলোকের? ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নূরের তৈরী গণ্য করা হলে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ হবে, আর মাটির তৈরী গণ্য করলে সেই শ্রেষ্ঠত্ব বিলুপ্ত হবে, তাতে তার মানহানী হবে’ মর্মের যুক্তিটি শয়তানের যুক্তির সাথে মিলে কিনা চিন্তা-ভাবনা করার উদাত্ত আহ্বান রইল।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নূরের তৈরী এসব বিশ্বাস জাল এবং জয়ীফ হাদীছ নির্ভরশীল। কারন পবিত্র কুরআনে মাটির তৈরি হওয়ার অকাট্য দলিল রয়েছে। নবী(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী এই বিষয়ে অতীতে তাবেঈ,তাবে তাবেঈ,আয়ীম্মায়ে মুজতাহিদীনদের মাঝে কোনই বিতর্ক ছিল না। এখনও যারা প্রকৃত হক্কানি আলেম তারাও এই মর্মে ঐক্যমত যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন, তিনি অন্যান্য সকল মানুষের মত পিতা-মাতার মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছেন।উনার নিজের ও সন্তান সন্ততি ছিল। বিদাআতীরা এটাও বিশ্বাস করে যে, মানুষ মাটির তৈরী, ফেরেস্তা নূরের এবং জ্বিনজাত আগুনের তৈরী যেমনটি স্বয়ং নবী বলেছেন (মুসলিম,যুহুদ ও রাক্বায়িক্ব অধ্যায়,হা/৫৩৪) । কারণ এই মর্মে কুরআন ও হাদীছের বাণী একেবারে স্পষ্ট। এর পরও বিদআতে যাদের আপাদমস্তক নিমজ্জিত,তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বিষয়ে বিতর্ক উঠায়। তারা বলতে চায়, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী, তার ছায়া ছিল না..ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই আমরা বিষয়টির ফায়ছালা সরাসরি কুরআন ও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীছ থেকে নিব। কারণ মহান আল্লাহ বলেনঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّـﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮِ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّـﻪِ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟﻠَّـﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ ﺫَٰﻟِﻚَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻭَﺃَﺣْﺴَﻦُ ﺗَﺄْﻭِﻳﻠًﺎ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, এবং তাদের কর যারা তোমাদের (ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় বিষয়ে) নেতৃত্ব দানকারী, আর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিতর্ক কর, তবে বিষয়টিকে আল্লাহ এবং তদীয় রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, ইহাই উত্তম এবং ব্যাখ্যার দিক দিয়ে সর্বোৎকৃষ্ট’। (আন্ নিসাঃ ৫৯)
পর্ব –তিন।
মাটি থেকে নবীর সৃষ্টি হওয়ার প্রমাণঃ(ক) কুরআন থেকেঃ
আমার নিকট আশ্চর্য লাগে যে বিদআতীরা কেমন করে মহান আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন বাণীকে অস্বীকার করে বলে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়াসাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং নূরের তৈরী। কারণ মহান আল্লাহ একাধিক স্থানে বলেছেন যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) সৃষ্টিগত দিক থেকে ﺑﺸﺮ তথা আমাদের মতই একজন মানুষ। যেমনঃ
1. সূরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ
ﻗُﻞ ﺇِﻧَّﻤﺎ ﺃَﻧﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِﺜﻠُﻜُﻢ ﻳﻮﺣﻰ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤﺎ ﺇِﻟـﻬُﻜُﻢ ﺇِﻟـﻪٌ ﻭﺍﺣِﺪٌ ﻓَﻤَﻦ ﻛﺎﻥَ ﻳَﺮﺟﻮ ﻟِﻘﺎﺀَ ﺭَﺑِّﻪِ ﻓَﻠﻴَﻌﻤَﻞ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﺻﺎﻟِﺤًﺎ ﻭَﻻ ﻳُﺸﺮِﻙ ﺑِﻌِﺒﺎﺩَﺓِ ﺭَﺑِّﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ
(হে রাসূল!) বলুনঃআমিওতোমাদেরমতইএকজনমানুষ, আমারপ্রতিপ্রত্যাদেশহয়যে, তোমাদেরইলাহইএকমাত্রইলাহ। অতএব, যেব্যক্তিতারপালনকর্তারসাক্ষাতকামনাকরে, সেযেন, সৎকর্মসম্পাদনকরেএবংতারপালনকর্তারএবাদতেকাউকেশরীকনাকরে।
(সূরা আল্ কাহাফঃ ১১০)
2. অন্যত্রে মহান আল্লাহ বলেনঃ
ﺃَﻭ ﻳَﻜﻮﻥَ ﻟَﻚَ ﺑَﻴﺖٌ ﻣِﻦ ﺯُﺧﺮُﻑٍ ﺃَﻭ ﺗَﺮﻗﻰ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤﺎﺀِ ﻭَﻟَﻦ ﻧُﺆﻣِﻦَ ﻟِﺮُﻗِﻴِّﻚَ ﺣَﺘّﻰ ﺗُﻨَﺰِّﻝَ ﻋَﻠَﻴﻨﺎ ﻛِﺘﺎﺑًﺎ ﻧَﻘﺮَﺅُﻩُ ﻗُﻠﺴُﺒﺤﺎﻥَ ﺭَﺑّﻲ ﻫَﻞ ﻛُﻨﺖُ ﺇِﻟّﺎ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَﺳﻮﻟًﺎ
অথবাআপনারকোনসোনারতৈরীগৃহহবেঅথবাআপনিআকাশেআরোহণকরবেনএবংআমরাআপনারআকাশেআরোহণকেকখনওবিশ্বাসকরবনা, যেপর্যন্তনাআপনিঅবতীর্ণকরেনআমাদেরপ্রতিএকগ্রন্থ, যাআমরাপাঠকরব। বলুনঃপবিত্রমহানআমারপালনকর্তা, একজনমানব, একজনরসূলবৈআমিকে?(সূরা বনী অথবাআপনারকোনসোনারতৈরীগৃহহবেঅথবাআপনিআকাশেআরোহণকরবেনএবংআমরাআপনারআকাশেআরোহণকেকখনওবিশ্বাসকরবনা, যেপর্যন্তনাআপনিঅবতীর্ণকরেনআমাদেরপ্রতিএকগ্রন্থ, যাআমরাপাঠকরব। বলুনঃপবিত্রমহানআমারপালনকর্তা, একজনমানব, একজনরসূলবৈআমিকে?(সূরা বনী ইসরাইল: ৯৩)
3. তিনি আরো বলেনঃ ﻟَﻘَﺪْ ﻣَﻦَّ ﺍﻟﻠَّـﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺇِﺫْ ﺑَﻌَﺚَ ﻓِﻴﻬِﻢْ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻣِّﻦْ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ﻭَﺇِﻥ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞُ ﻟَﻔِﻲ ﺿَﻠَﺎﻝٍ ﻣُّﺒِﻴﻦٍ
‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরাহ আলে ইমরানঃ ১৬৪)
4. তিনি আরো বলেনঃ ﻟَﻘَﺪ ﺟﺎﺀَﻛُﻢ ﺭَﺳﻮﻝٌ ﻣِﻦ ﺃَﻧﻔُﺴِﻜُﻢ ﻋَﺰﻳﺰٌ ﻋَﻠَﻴﻪِ ﻣﺎ ﻋَﻨِﺘُّﻢ ﺣَﺮﻳﺺٌ ﻋَﻠَﻴﻜُﻢ ﺑِﺎﻟﻤُﺆﻣِﻨﻴﻦَ ﺭَﺀﻭﻑٌ ﺭَﺣﻴﻢٌ
তোমাদের নিকট আগমন করেছে, তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি হচ্ছেন তোমাদের খুবই হিতাকাঙ্খী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুনাপরায়ণ। (সূরা তাওবা: ১২৮)
5. তিনি আরো বলেনঃ ﺃَﻛﺎﻥَ ﻟِﻠﻨّﺎﺱِ ﻋَﺠَﺒًﺎ ﺃَﻥ ﺃَﻭﺣَﻴﻨﺎ ﺇِﻟﻰ ﺭَﺟُﻞٍ ﻣِﻨﻬُﻢ ﺃَﻥ ﺃَﻧﺬِﺭِ ﺍﻟﻨّﺎﺱَ ﻭَﺑَﺸِّﺮِ ﺍﻟَّﺬﻳﻦَ ﺁﻣَﻨﻮﺍ ﺃَﻥَّ ﻟَﻬُﻢ ﻗَﺪَﻡَ ﺻِﺪﻕٍ ﻋِﻨﺪَ ﺭَﺑِّﻬِﻢ ﻗﺎﻝَ ﺍﻟﻜﺎﻓِﺮﻭﻥَ ﺇِﻥَّ ﻫـﺬﺍ ﻟَﺴﺎﺣِﺮٌ ﻣُﺒﻴﻦٌ
এ লোকদের জন্যে এটা কী বিস্ময়কর হয়েছে যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন কর এবং যারা ঈমান এনেছে তাদরকে এই সুসংবাদ দাও যে, তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট (পূর্ণ মর্যাদা) লাভ করবে, কাফেররা বলতে লাগলো যে, এই ব্যক্তি তো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর। (সূরা ইউনুস: ২)
6. তিনি আরো বলেনঃ ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻌَﺚَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄُﻣِّﻴِّﻴﻦَ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻣِّﻨْﻬُﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ﻭَﺇِﻥ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞُ ﻟَﻔِﻲ ﺿَﻠَﺎﻝٍ ﻣُّﺒِﻴﻦ
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের নিকট, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। (সূরা-আল্ জুমুআহ: ২)
7. আল্লাহ আরো বলেনঃ ﻛَﻤَﺎ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﻓِﻴﻜُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻜُﻢْ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻜُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ
আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমাদের নিকট আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর তোমরা যা অবগত ছিলে না তা শিক্ষা দান করেন। (সূরা বাকারা ১৫১)
পর্ব – চার।
এখানে উপরে উল্লেখিত কয়েকটি আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব লোকদেরই একজন, তিনি তাদের বাইরের কোন লোক নন। এছাড়া এধরনের আরও অনেক আয়াত আছে যা দ্বারা আল্লাহ বলেছেন রাসুল সঃ নুরের তৈরী নয় বরং মাটির তৈরী। কাজেই ঐসব লোক যদি নূরের তৈরী হন, তাহলে নবী(ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম)ও নূরের তৈরী হবেন, আর যদি তারা নূরের তৈরী না হন তবে তিনিও নূরের তৈরী হবেন না এটাইতো স্বাভাবিক। আসলে বিদআতীরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ আয়ত্ব করতে এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করা থেকে চির ব্যর্থ, তাই তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা বলে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী। অথচ এভাবে তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অধিক সম্মান দিতে গিয়ে আরো তাঁকে খাটো করে দিয়েছে। কারণ নূরের তৈরী ফেরেশতার উপর আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম)কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাদেরকে দিয়ে আদমের সিজদা করিয়ে নিয়েছেন। (দ্রঃসূরা আল বাকারাহ: ৩৪, সূরা আল্ আ’রাফ: ১১) তাহলে কার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল? নূরের তৈরী ফেরেশতাদের নাকি মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সাল্লাম)এর? অবশ্যই মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল। তবে আমরা তর্কের খাতিরে এটা বললেও আমাদের বিশ্বাস, আদম (আলাইহিস্ সালাম) ফেরেশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ছিলেন তাঁর ইলমের মাধ্যমে। আর এটা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহেই হয়ে ছিল। তিনিই আদমের প্রতি অনুগ্রহ করে ফেরেশতাদের চেয়ে তাকে বেশি ইলম দান করে ছিলেন।
আমি বিশ্বের সকল বিদআতীকে বলতে চাই, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল (অনেকে বলেনঃ নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা হলঃ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। এভাবে বলে থাকেন, এটা প্রমাণ করে তারা ঐমর্মে নবী এর কোন হাদীছ অবগত হন নি। মুসনাদ আহমাদ, ছহীহ ইবনু ইব্বান প্রভৃতিতে নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা একলক্ষ চব্বিশ হাজার বলা হয়েছে, আরো বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রাসূলদের সংখ্যা সর্ব মোট ৩১৫ জন দ্রঃ মুসনাদ আহমাদ ৫/১৭৯,হা/২১৫৯২, ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/ প্রভৃতি হাদীছ ছহীহ, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ ছহীহাহ ) এর মধ্যে শুধু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে নূরের তৈরী হলেন? যদি তাঁকে নূরের তৈরী না বলায় তার মান খাটো করা হয়,তবে বাকী এক লক্ষ তেইশ হাজার নয়শো নিরানব্বই জন নবী রাসূলকে মাটির তৈরী বলে কি তাদের মান খাটো করা হয় না? নাকি তারাও নূরের তৈরী? কৈ কোন বিদআতীকে তো বলতে শুনি না যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত বাকী সমস্ত নবী, রাসূলগণও নূরের তৈরী! বরং তারা এমনটি শুধু নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্ষেত্রেই বলে থাকে। সুতরাং বাকী সমস্ত নবীকে মাটির তৈরী বলায় যেমন তাদের মান হানী হয় না, তদ্রƒপ আমাদেরনবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কেও মাটির তৈরী বলায় তার মানহানী হবে না। তবে কেন বিষয়টি নিয়ে এত বাড়াবাড়ি?
এমনকি অনেক মূর্খ বিদআতী নবীকে যারা মাটির তৈরী মানুষ বলে তাদের সকলকে কাফের ফাৎওয়া মেরে দেয়! একজন মুসলিমকে কাফের বলা কী এতই সহজ? না, কখনই নয়, বরং এই বিষয়টি অতীব জটিল এবং সুকঠিন। কারণ একজন মুসলিম ব্যক্তিকে কাফির ফাৎওয়া দেওয়ার অর্থই হলঃ সে জীবিত অবস্থায় থাকলে তার সাথে তার স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। নিজ মুসলিম সন্তান-সন্ততির উপর তার অবিভাবকত্ব চলবে না। সে মৃত্যু বরণ করলে তাকে গোসল দেওয়া যাবে না, কাফন পরানো যাবে না, তার জানাযা ছালাত আদায় করা যাবে না। তার জন্য মাগফেরাতের দুআ করা যাবে না, মুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তার কোন মুসলিম আত্মীয় স্বজন তার মীরাছ পাবে না, বরং তার সমুদয় ধন-সম্পদ সরকারী বায়তুল মালে জমা হয়ে যাবে। পরকালে সে জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে…প্রভৃতি। আর যদি সে প্রকৃত অর্থে কাফের না হয় তবে কাফের ফাৎওয়া দাতা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী বলে গণ্য হবে ফলে সে সর্বাধিক যালিমে পরিণত হবে। আর তার একমাত্র বাসস্থান হবে জাহান্নাম (দ্রঃ আরাফঃ)। এবং তাকে অন্যায়ভাবে কাফের বলার জন্য নিজেই কাফিরে পরিণত হবে (বুখারী প্রভৃতি)। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় বিষয়টি কত জটিল এবং সুকঠিন। এজন্যই বড় বড় ওলামায়েদ্বীন মুসলিম ব্যক্তিকে সহজে কাফের বলেন না,বরং সে ক্ষেত্রে বহু সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন) তাদের এই মূর্খামীদুষ্ট ফাৎওয়া অনুযায়ী সালাফে ছালেহীনের সকলই কাফের গণ্য হবে। কারণ তারা সৃষ্টি গত দিক থেকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাটির তৈরী মানুষই মনে করতেন। তাঁরা আদৌ তাঁকে নূরের তৈরী গণ্য করতেন না।
মহান আল্লাহ সূরা আরাফে তার ঘটনাটি এইভাবে উদ্ধৃত করেছেনঃ
ﻭَﻟَﻘَﺪ ﺧَﻠَﻘﻨﺎﻛُﻢ ﺛُﻢَّ ﺻَﻮَّﺭﻧﺎﻛُﻢ ﺛُﻢَّ ﻗُﻠﻨﺎ ﻟِﻠﻤَﻼﺋِﻜَﺔِ ﺍﺳﺠُﺪﻭﺍ ﻟِﺂﺩَﻡَ ﻓَﺴَﺠَﺪﻭﺍ ﺇِﻟّﺎ ﺇِﺑﻠﻴﺲَ ﻟَﻢ ﻳَﻜُﻦ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴّﺎﺟِﺪﻳﻦَ
আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-আদমকে সেজদা কর তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। (সূরাহ আল্ আরাফঃ১১)
ﻗﺎﻝَ ﻣﺎ ﻣَﻨَﻌَﻚَ ﺃَﻟّﺎ ﺗَﺴﺠُﺪَ ﺇِﺫ ﺃَﻣَﺮﺗُﻚَ ﻗﺎﻝَ ﺃَﻧﺎ ﺧَﻴﺮٌ ﻣِﻨﻪُ ﺧَﻠَﻘﺘَﻨﻲ ﻣِﻦ ﻧﺎﺭٍ ﻭَﺧَﻠَﻘﺘَﻪُ ﻣِﻦ ﻃﻴﻦٍ
আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।(সূরাহ আল্ আরাফঃ১২)
ﻗﺎﻝَ ﻓَﺎﻫﺒِﻂ ﻣِﻨﻬﺎ ﻓَﻤﺎ ﻳَﻜﻮﻥُ ﻟَﻚَ ﺃَﻥ ﺗَﺘَﻜَﺒَّﺮَ ﻓﻴﻬﺎ ﻓَﺎﺧﺮُﺝ ﺇِﻧَّﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼّﺎﻏِﺮﻳﻦَ
বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।(সূরাহ আল্ আরাফঃ১৩)
অতএব যারা সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত করার পক্ষপাতি তাদের উপর্যুক্ত আয়াতগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, চিন্তা করা উচিত যুক্তিটি কোন্ ভদ্রলোকের? ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নূরের তৈরী গণ্য করা হলে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ হবে, আর মাটির তৈরী গণ্য করলে সেই শ্রেষ্ঠত্ব বিলুপ্ত হবে, তাতে তার মানহানী হবে’ মর্মের যুক্তিটি শয়তানের যুক্তির সাথে মিলে কিনা চিন্তা-ভাবনা করার উদাত্ত আহ্বান রইল।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নূরের তৈরী এসব বিশ্বাস জাল এবং জয়ীফ হাদীছ নির্ভরশীল। কারন পবিত্র কুরআনে মাটির তৈরি হওয়ার অকাট্য দলিল রয়েছে। নবী(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী এই বিষয়ে অতীতে তাবেঈ,তাবে তাবেঈ,আয়ীম্মায়ে মুজতাহিদীনদের মাঝে কোনই বিতর্ক ছিল না। এখনও যারা প্রকৃত হক্কানি আলেম তারাও এই মর্মে ঐক্যমত যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন, তিনি অন্যান্য সকল মানুষের মত পিতা-মাতার মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছেন।উনার নিজের ও সন্তান সন্ততি ছিল। বিদাআতীরা এটাও বিশ্বাস করে যে, মানুষ মাটির তৈরী, ফেরেস্তা নূরের এবং জ্বিনজাত আগুনের তৈরী যেমনটি স্বয়ং নবী বলেছেন (মুসলিম,যুহুদ ও রাক্বায়িক্ব অধ্যায়,হা/৫৩৪) । কারণ এই মর্মে কুরআন ও হাদীছের বাণী একেবারে স্পষ্ট। এর পরও বিদআতে যাদের আপাদমস্তক নিমজ্জিত,তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বিষয়ে বিতর্ক উঠায়। তারা বলতে চায়, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী, তার ছায়া ছিল না..ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই আমরা বিষয়টির ফায়ছালা সরাসরি কুরআন ও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীছ থেকে নিব। কারণ মহান আল্লাহ বলেনঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّـﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮِ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻓَﺈِﻥ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّـﻪِ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟﻠَّـﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ ﺫَٰﻟِﻚَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻭَﺃَﺣْﺴَﻦُ ﺗَﺄْﻭِﻳﻠًﺎ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, এবং তাদের কর যারা তোমাদের (ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় বিষয়ে) নেতৃত্ব দানকারী, আর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিতর্ক কর, তবে বিষয়টিকে আল্লাহ এবং তদীয় রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, ইহাই উত্তম এবং ব্যাখ্যার দিক দিয়ে সর্বোৎকৃষ্ট’। (আন্ নিসাঃ ৫৯)
পর্ব –তিন।
মাটি থেকে নবীর সৃষ্টি হওয়ার প্রমাণঃ(ক) কুরআন থেকেঃ
আমার নিকট আশ্চর্য লাগে যে বিদআতীরা কেমন করে মহান আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন বাণীকে অস্বীকার করে বলে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়াসাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং নূরের তৈরী। কারণ মহান আল্লাহ একাধিক স্থানে বলেছেন যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) সৃষ্টিগত দিক থেকে ﺑﺸﺮ তথা আমাদের মতই একজন মানুষ। যেমনঃ
1. সূরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ
ﻗُﻞ ﺇِﻧَّﻤﺎ ﺃَﻧﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِﺜﻠُﻜُﻢ ﻳﻮﺣﻰ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤﺎ ﺇِﻟـﻬُﻜُﻢ ﺇِﻟـﻪٌ ﻭﺍﺣِﺪٌ ﻓَﻤَﻦ ﻛﺎﻥَ ﻳَﺮﺟﻮ ﻟِﻘﺎﺀَ ﺭَﺑِّﻪِ ﻓَﻠﻴَﻌﻤَﻞ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﺻﺎﻟِﺤًﺎ ﻭَﻻ ﻳُﺸﺮِﻙ ﺑِﻌِﺒﺎﺩَﺓِ ﺭَﺑِّﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ
(হে রাসূল!) বলুনঃআমিওতোমাদেরমতইএকজনমানুষ, আমারপ্রতিপ্রত্যাদেশহয়যে, তোমাদেরইলাহইএকমাত্রইলাহ। অতএব, যেব্যক্তিতারপালনকর্তারসাক্ষাতকামনাকরে, সেযেন, সৎকর্মসম্পাদনকরেএবংতারপালনকর্তারএবাদতেকাউকেশরীকনাকরে।
(সূরা আল্ কাহাফঃ ১১০)
2. অন্যত্রে মহান আল্লাহ বলেনঃ
ﺃَﻭ ﻳَﻜﻮﻥَ ﻟَﻚَ ﺑَﻴﺖٌ ﻣِﻦ ﺯُﺧﺮُﻑٍ ﺃَﻭ ﺗَﺮﻗﻰ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤﺎﺀِ ﻭَﻟَﻦ ﻧُﺆﻣِﻦَ ﻟِﺮُﻗِﻴِّﻚَ ﺣَﺘّﻰ ﺗُﻨَﺰِّﻝَ ﻋَﻠَﻴﻨﺎ ﻛِﺘﺎﺑًﺎ ﻧَﻘﺮَﺅُﻩُ ﻗُﻠﺴُﺒﺤﺎﻥَ ﺭَﺑّﻲ ﻫَﻞ ﻛُﻨﺖُ ﺇِﻟّﺎ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَﺳﻮﻟًﺎ
অথবাআপনারকোনসোনারতৈরীগৃহহবেঅথবাআপনিআকাশেআরোহণকরবেনএবংআমরাআপনারআকাশেআরোহণকেকখনওবিশ্বাসকরবনা, যেপর্যন্তনাআপনিঅবতীর্ণকরেনআমাদেরপ্রতিএকগ্রন্থ, যাআমরাপাঠকরব। বলুনঃপবিত্রমহানআমারপালনকর্তা, একজনমানব, একজনরসূলবৈআমিকে?(সূরা বনী অথবাআপনারকোনসোনারতৈরীগৃহহবেঅথবাআপনিআকাশেআরোহণকরবেনএবংআমরাআপনারআকাশেআরোহণকেকখনওবিশ্বাসকরবনা, যেপর্যন্তনাআপনিঅবতীর্ণকরেনআমাদেরপ্রতিএকগ্রন্থ, যাআমরাপাঠকরব। বলুনঃপবিত্রমহানআমারপালনকর্তা, একজনমানব, একজনরসূলবৈআমিকে?(সূরা বনী ইসরাইল: ৯৩)
3. তিনি আরো বলেনঃ ﻟَﻘَﺪْ ﻣَﻦَّ ﺍﻟﻠَّـﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺇِﺫْ ﺑَﻌَﺚَ ﻓِﻴﻬِﻢْ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻣِّﻦْ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ﻭَﺇِﻥ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞُ ﻟَﻔِﻲ ﺿَﻠَﺎﻝٍ ﻣُّﺒِﻴﻦٍ
‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরাহ আলে ইমরানঃ ১৬৪)
4. তিনি আরো বলেনঃ ﻟَﻘَﺪ ﺟﺎﺀَﻛُﻢ ﺭَﺳﻮﻝٌ ﻣِﻦ ﺃَﻧﻔُﺴِﻜُﻢ ﻋَﺰﻳﺰٌ ﻋَﻠَﻴﻪِ ﻣﺎ ﻋَﻨِﺘُّﻢ ﺣَﺮﻳﺺٌ ﻋَﻠَﻴﻜُﻢ ﺑِﺎﻟﻤُﺆﻣِﻨﻴﻦَ ﺭَﺀﻭﻑٌ ﺭَﺣﻴﻢٌ
তোমাদের নিকট আগমন করেছে, তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি হচ্ছেন তোমাদের খুবই হিতাকাঙ্খী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুনাপরায়ণ। (সূরা তাওবা: ১২৮)
5. তিনি আরো বলেনঃ ﺃَﻛﺎﻥَ ﻟِﻠﻨّﺎﺱِ ﻋَﺠَﺒًﺎ ﺃَﻥ ﺃَﻭﺣَﻴﻨﺎ ﺇِﻟﻰ ﺭَﺟُﻞٍ ﻣِﻨﻬُﻢ ﺃَﻥ ﺃَﻧﺬِﺭِ ﺍﻟﻨّﺎﺱَ ﻭَﺑَﺸِّﺮِ ﺍﻟَّﺬﻳﻦَ ﺁﻣَﻨﻮﺍ ﺃَﻥَّ ﻟَﻬُﻢ ﻗَﺪَﻡَ ﺻِﺪﻕٍ ﻋِﻨﺪَ ﺭَﺑِّﻬِﻢ ﻗﺎﻝَ ﺍﻟﻜﺎﻓِﺮﻭﻥَ ﺇِﻥَّ ﻫـﺬﺍ ﻟَﺴﺎﺣِﺮٌ ﻣُﺒﻴﻦٌ
এ লোকদের জন্যে এটা কী বিস্ময়কর হয়েছে যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন কর এবং যারা ঈমান এনেছে তাদরকে এই সুসংবাদ দাও যে, তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট (পূর্ণ মর্যাদা) লাভ করবে, কাফেররা বলতে লাগলো যে, এই ব্যক্তি তো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর। (সূরা ইউনুস: ২)
6. তিনি আরো বলেনঃ ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻌَﺚَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄُﻣِّﻴِّﻴﻦَ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻣِّﻨْﻬُﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ﻭَﺇِﻥ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞُ ﻟَﻔِﻲ ﺿَﻠَﺎﻝٍ ﻣُّﺒِﻴﻦ
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের নিকট, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। (সূরা-আল্ জুমুআহ: ২)
7. আল্লাহ আরো বলেনঃ ﻛَﻤَﺎ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﻓِﻴﻜُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻜُﻢْ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻜُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ
আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমাদের নিকট আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর তোমরা যা অবগত ছিলে না তা শিক্ষা দান করেন। (সূরা বাকারা ১৫১)
পর্ব – চার।
এখানে উপরে উল্লেখিত কয়েকটি আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব লোকদেরই একজন, তিনি তাদের বাইরের কোন লোক নন। এছাড়া এধরনের আরও অনেক আয়াত আছে যা দ্বারা আল্লাহ বলেছেন রাসুল সঃ নুরের তৈরী নয় বরং মাটির তৈরী। কাজেই ঐসব লোক যদি নূরের তৈরী হন, তাহলে নবী(ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম)ও নূরের তৈরী হবেন, আর যদি তারা নূরের তৈরী না হন তবে তিনিও নূরের তৈরী হবেন না এটাইতো স্বাভাবিক। আসলে বিদআতীরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ আয়ত্ব করতে এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করা থেকে চির ব্যর্থ, তাই তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা বলে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী। অথচ এভাবে তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অধিক সম্মান দিতে গিয়ে আরো তাঁকে খাটো করে দিয়েছে। কারণ নূরের তৈরী ফেরেশতার উপর আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম)কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাদেরকে দিয়ে আদমের সিজদা করিয়ে নিয়েছেন। (দ্রঃসূরা আল বাকারাহ: ৩৪, সূরা আল্ আ’রাফ: ১১) তাহলে কার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল? নূরের তৈরী ফেরেশতাদের নাকি মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সাল্লাম)এর? অবশ্যই মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল। তবে আমরা তর্কের খাতিরে এটা বললেও আমাদের বিশ্বাস, আদম (আলাইহিস্ সালাম) ফেরেশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ছিলেন তাঁর ইলমের মাধ্যমে। আর এটা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহেই হয়ে ছিল। তিনিই আদমের প্রতি অনুগ্রহ করে ফেরেশতাদের চেয়ে তাকে বেশি ইলম দান করে ছিলেন।
আমি বিশ্বের সকল বিদআতীকে বলতে চাই, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল (অনেকে বলেনঃ নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা হলঃ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। এভাবে বলে থাকেন, এটা প্রমাণ করে তারা ঐমর্মে নবী এর কোন হাদীছ অবগত হন নি। মুসনাদ আহমাদ, ছহীহ ইবনু ইব্বান প্রভৃতিতে নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা একলক্ষ চব্বিশ হাজার বলা হয়েছে, আরো বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রাসূলদের সংখ্যা সর্ব মোট ৩১৫ জন দ্রঃ মুসনাদ আহমাদ ৫/১৭৯,হা/২১৫৯২, ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/ প্রভৃতি হাদীছ ছহীহ, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ ছহীহাহ ) এর মধ্যে শুধু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে নূরের তৈরী হলেন? যদি তাঁকে নূরের তৈরী না বলায় তার মান খাটো করা হয়,তবে বাকী এক লক্ষ তেইশ হাজার নয়শো নিরানব্বই জন নবী রাসূলকে মাটির তৈরী বলে কি তাদের মান খাটো করা হয় না? নাকি তারাও নূরের তৈরী? কৈ কোন বিদআতীকে তো বলতে শুনি না যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত বাকী সমস্ত নবী, রাসূলগণও নূরের তৈরী! বরং তারা এমনটি শুধু নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্ষেত্রেই বলে থাকে। সুতরাং বাকী সমস্ত নবীকে মাটির তৈরী বলায় যেমন তাদের মান হানী হয় না, তদ্রƒপ আমাদেরনবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কেও মাটির তৈরী বলায় তার মানহানী হবে না। তবে কেন বিষয়টি নিয়ে এত বাড়াবাড়ি?
এমনকি অনেক মূর্খ বিদআতী নবীকে যারা মাটির তৈরী মানুষ বলে তাদের সকলকে কাফের ফাৎওয়া মেরে দেয়! একজন মুসলিমকে কাফের বলা কী এতই সহজ? না, কখনই নয়, বরং এই বিষয়টি অতীব জটিল এবং সুকঠিন। কারণ একজন মুসলিম ব্যক্তিকে কাফির ফাৎওয়া দেওয়ার অর্থই হলঃ সে জীবিত অবস্থায় থাকলে তার সাথে তার স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। নিজ মুসলিম সন্তান-সন্ততির উপর তার অবিভাবকত্ব চলবে না। সে মৃত্যু বরণ করলে তাকে গোসল দেওয়া যাবে না, কাফন পরানো যাবে না, তার জানাযা ছালাত আদায় করা যাবে না। তার জন্য মাগফেরাতের দুআ করা যাবে না, মুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তার কোন মুসলিম আত্মীয় স্বজন তার মীরাছ পাবে না, বরং তার সমুদয় ধন-সম্পদ সরকারী বায়তুল মালে জমা হয়ে যাবে। পরকালে সে জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে…প্রভৃতি। আর যদি সে প্রকৃত অর্থে কাফের না হয় তবে কাফের ফাৎওয়া দাতা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী বলে গণ্য হবে ফলে সে সর্বাধিক যালিমে পরিণত হবে। আর তার একমাত্র বাসস্থান হবে জাহান্নাম (দ্রঃ আরাফঃ)। এবং তাকে অন্যায়ভাবে কাফের বলার জন্য নিজেই কাফিরে পরিণত হবে (বুখারী প্রভৃতি)। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় বিষয়টি কত জটিল এবং সুকঠিন। এজন্যই বড় বড় ওলামায়েদ্বীন মুসলিম ব্যক্তিকে সহজে কাফের বলেন না,বরং সে ক্ষেত্রে বহু সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন) তাদের এই মূর্খামীদুষ্ট ফাৎওয়া অনুযায়ী সালাফে ছালেহীনের সকলই কাফের গণ্য হবে। কারণ তারা সৃষ্টি গত দিক থেকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাটির তৈরী মানুষই মনে করতেন। তাঁরা আদৌ তাঁকে নূরের তৈরী গণ্য করতেন না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন